প্রস্তাবিত ভোলা-বরিশাল সেতু কেন ‘গেম চেঞ্জার’ হবে
Published: 11th, November 2025 GMT
ভোলায় ইতিমধ্যে ইলিশাসহ মোট যে নয়টি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, সেগুলোয় প্রাপ্ত গ্যাসের সম্ভাব্য পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছে প্রায় ১ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ভোলা দ্বীপটি প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর ভাসছে। যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে এই দ্বীপে গ্যাস অনুসন্ধান চালালে এখানকার বিভিন্ন স্থানে আরও আট টিসিএফের বেশি গ্যাস পাওয়া যাবে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিবছর গ্যাস ব্যবহৃত হয় প্রায় এক টিসিএফ। সে হিসাবে শুধু ভোলার গ্যাস দিয়ে বাংলাদেশের গ্যাসের চাহিদা মেটানো যাবে প্রায় ১০ বছর।
এটা যে দেশের জন্য কত বড় সুখবর, সেটা বোঝা যাবে একটি খবর থেকে—এখন দেশের এলএনজি চাহিদা মেটানোর জন্য প্রতিবছর আমাদের এলএনজি আমদানিতে ব্যয় করতে হচ্ছে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দামে যে উল্লম্ফন ঘটেছে, তার ফলে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ এলএনজি আমদানিও করতে পারছি না। সে কারণে দেশের অনেকগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাসের অভাবে বন্ধ রাখতে হচ্ছে। অথচ ভোলার গ্যাস দেশের গ্যাস গ্রিডে আনা যাচ্ছে না পাইপলাইন না থাকার কারণে।
আরও পড়ুনভোলার গ্যাস কেন বরিশালবাসী পাবেন না?২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪বছরের পর বছর ধরে জ্বালানিবিষয়ক নীতিনির্ধারকদের পরিচিত গলাবাজির বুলি ছিল, পাইপলাইনের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিধায় অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না। এটা একটা ভুল যুক্তি, কোনো বিশ্বাসযোগ্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়নি।
ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, বিগত স্বৈরশাসক হাসিনার আমলে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর মুনাফাবাজিকে টিকিয়ে রাখার জন্যই ২০০৯ সাল থেকে দেশের স্থলভাগ এবং বিপুল সমুদ্রাঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকে অবহেলা করা হয়েছে। ২০১২ সালে মিয়ানমার এবং ২০১৪ সালে ভারতের বিরুদ্ধে সমুদ্রসীমা–সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মামলা জেতার মাধ্যমে বাংলাদেশ ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমার ওপর নিয়ন্ত্রণাধিকার (এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন) অর্জন করা সত্ত্বেও গত ১২ বছরে এই বিশাল সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া শুরুই করতে পারেনি।
ভোলায় যদি ৮ থেকে ১০ টিসিএফ গ্যাস সত্যিই আবিষ্কৃত হয়, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভোলা-বরিশাল সেতু-কাম-পাইপলাইন সবচেয়ে বড় ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠবে।সন্দেহ করার কারণ রয়েছে যে বিগত সরকারের প্রিয়পাত্র প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই ভোলার গ্যাস এত দিনেও দেশের গ্যাস গ্রিডে নিয়ে আসার ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি!
অতএব মূল সমস্যাটি হলো, ভোলায় ইতিমধ্যে প্রাপ্ত গ্যাসকে কীভাবে অর্থনৈতিকভাবে যুক্তিসংগত উপায়ে দেশের মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসা যায়। ভবিষ্যতে যদি ভোলায় আরও গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়, তাহলে ব্যাপারটি দেশের অর্থনীতিতে বড় এক ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠবে নিঃসন্দেহে।
২০২৩ সালে ১১ মে একটি জাতীয় দৈনিকের সংবাদে জানা গিয়েছিল, ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র ও ভোলা নর্থ গ্যাসক্ষত্র থেকে বরিশালের লাহারহাট পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস বরিশালে নিয়ে আসার জন্য ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব ওই সময় সরকারের পরিকল্পনা কমিশনে নাকি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছিল।
আরও পড়ুনজ্বালানি সংকট: ভোলা-বরিশাল পাইপলাইন প্রকল্পে দেরি কেন০৬ জুন ২০২৩পরবর্তী সময়ে এই গ্যাস পাইপলাইন কুয়াকাটা-বরিশাল-গোপালগঞ্জ-খুলনা পাইপলাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্যাস গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা। যদি এই প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রকৃত বাস্তবায়ন ব্যয় পরবর্তী সময়ে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যায়, তারপরও এটাকে অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় বিবেচনা করতে হবে। কারণ, বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম এক এমএমবিটিইউ ১৪ থেকে ১৬ ডলার। তাহলে ভোলার ১ দশমিক ৭৫ টিসিএফ গ্যাসের মোট মূল্য দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকার পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে যদি আগামী দুই বছরের মধ্যে আমরা এই ১ দশমিক ৭৫ টিসিএফ গ্যাস জাতীয় গ্রিডে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে এই পাইপলাইন অর্থনীতির জন্য কতখানি উপকার বয়ে আনতে পারবে, সেটা কি অনুধাবন করতে পারছি?
প্রস্তাবিত পাইপলাইনটি আরেক দিক থেকেও বাংলাদেশকে সুফল দেবে। বর্তমানে বাংলাদেশের এলএনজি আমদানির টার্মিনালগুলো মহেশখালী-কক্সবাজার অঞ্চলে স্থাপন করা হয়েছে।
ভবিষ্যতে মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো বৈরিতা দেখা দিলে ভোলায় আরেকটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করে প্রস্তাবিত ভোলা-বরিশাল পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা এলএনজি জাতীয় গ্রিডে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
তবে আমার মতে, প্রস্তাবিত পাইপলাইনটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভবিষ্যৎ ব্যবহার নিশ্চিত হবে, যদি বাংলাদেশ গভীর সমুদ্রের ব্লকগুলোয় গ্যাস পেয়ে যায়। তখন এলএনজির আকারে গভীর সমুদ্রের গ্যাস জাতীয় গ্রিডে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই পাইপলাইন সবচেয়ে ব্যয়সাশ্রয়ী উপায় হয়ে উঠবে। এমনকি এ সম্ভাবনা মাথায় রেখে পাইপলাইনের ব্যাস ৩০ ইঞ্চি থেকে আরও বাড়ানো যুক্তিসংগত বিবেচিত হতে পারে।
প্রস্তাবিত ভোলা-বরিশাল গ্যাস পাইপলাইনটি অবিলম্বে একনেকে উপস্থাপন করে অনুমোদনের ব্যবস্থা করা সরকারের অগ্রাধিকারের দাবি রাখে। ভোলা-বরিশাল সড়কসেতু স্থাপনের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালানো হচ্ছে বলে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে।
যদি এই সেতু স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, তাহলে সেতুর ওপর দিয়ে গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনই যুক্তিসংগত হবে। বিষয়টি বিবেচনায় নিলে চাঁদপুর-শরীয়তপুর সেতু স্থাপনের চেয়েও ভোলা-বরিশাল সেতু অনেক বেশি অগ্রাধিকার দাবি করে। মনে রাখতে হবে, ভোলায় যদি ৮ থেকে ১০ টিসিএফ গ্যাস সত্যিই আবিষ্কৃত হয়, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভোলা-বরিশাল সেতু-কাম-পাইপলাইন সবচেয়ে বড় ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠবে।
ড.
মইনুল ইসলাম অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট স এফ গ য স প রস ত ব ত বর শ ল স ত প রকল প র জন য ব যবস আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রস্তাবিত ভোলা-বরিশাল সেতু কেন ‘গেম চেঞ্জার’ হবে
ভোলায় ইতিমধ্যে ইলিশাসহ মোট যে নয়টি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, সেগুলোয় প্রাপ্ত গ্যাসের সম্ভাব্য পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছে প্রায় ১ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ভোলা দ্বীপটি প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর ভাসছে। যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে এই দ্বীপে গ্যাস অনুসন্ধান চালালে এখানকার বিভিন্ন স্থানে আরও আট টিসিএফের বেশি গ্যাস পাওয়া যাবে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিবছর গ্যাস ব্যবহৃত হয় প্রায় এক টিসিএফ। সে হিসাবে শুধু ভোলার গ্যাস দিয়ে বাংলাদেশের গ্যাসের চাহিদা মেটানো যাবে প্রায় ১০ বছর।
এটা যে দেশের জন্য কত বড় সুখবর, সেটা বোঝা যাবে একটি খবর থেকে—এখন দেশের এলএনজি চাহিদা মেটানোর জন্য প্রতিবছর আমাদের এলএনজি আমদানিতে ব্যয় করতে হচ্ছে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দামে যে উল্লম্ফন ঘটেছে, তার ফলে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ এলএনজি আমদানিও করতে পারছি না। সে কারণে দেশের অনেকগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাসের অভাবে বন্ধ রাখতে হচ্ছে। অথচ ভোলার গ্যাস দেশের গ্যাস গ্রিডে আনা যাচ্ছে না পাইপলাইন না থাকার কারণে।
আরও পড়ুনভোলার গ্যাস কেন বরিশালবাসী পাবেন না?২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪বছরের পর বছর ধরে জ্বালানিবিষয়ক নীতিনির্ধারকদের পরিচিত গলাবাজির বুলি ছিল, পাইপলাইনের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিধায় অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না। এটা একটা ভুল যুক্তি, কোনো বিশ্বাসযোগ্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়নি।
ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, বিগত স্বৈরশাসক হাসিনার আমলে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর মুনাফাবাজিকে টিকিয়ে রাখার জন্যই ২০০৯ সাল থেকে দেশের স্থলভাগ এবং বিপুল সমুদ্রাঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকে অবহেলা করা হয়েছে। ২০১২ সালে মিয়ানমার এবং ২০১৪ সালে ভারতের বিরুদ্ধে সমুদ্রসীমা–সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মামলা জেতার মাধ্যমে বাংলাদেশ ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমার ওপর নিয়ন্ত্রণাধিকার (এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন) অর্জন করা সত্ত্বেও গত ১২ বছরে এই বিশাল সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া শুরুই করতে পারেনি।
ভোলায় যদি ৮ থেকে ১০ টিসিএফ গ্যাস সত্যিই আবিষ্কৃত হয়, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভোলা-বরিশাল সেতু-কাম-পাইপলাইন সবচেয়ে বড় ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠবে।সন্দেহ করার কারণ রয়েছে যে বিগত সরকারের প্রিয়পাত্র প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই ভোলার গ্যাস এত দিনেও দেশের গ্যাস গ্রিডে নিয়ে আসার ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি!
অতএব মূল সমস্যাটি হলো, ভোলায় ইতিমধ্যে প্রাপ্ত গ্যাসকে কীভাবে অর্থনৈতিকভাবে যুক্তিসংগত উপায়ে দেশের মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসা যায়। ভবিষ্যতে যদি ভোলায় আরও গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়, তাহলে ব্যাপারটি দেশের অর্থনীতিতে বড় এক ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠবে নিঃসন্দেহে।
২০২৩ সালে ১১ মে একটি জাতীয় দৈনিকের সংবাদে জানা গিয়েছিল, ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র ও ভোলা নর্থ গ্যাসক্ষত্র থেকে বরিশালের লাহারহাট পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস বরিশালে নিয়ে আসার জন্য ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব ওই সময় সরকারের পরিকল্পনা কমিশনে নাকি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছিল।
আরও পড়ুনজ্বালানি সংকট: ভোলা-বরিশাল পাইপলাইন প্রকল্পে দেরি কেন০৬ জুন ২০২৩পরবর্তী সময়ে এই গ্যাস পাইপলাইন কুয়াকাটা-বরিশাল-গোপালগঞ্জ-খুলনা পাইপলাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্যাস গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা। যদি এই প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রকৃত বাস্তবায়ন ব্যয় পরবর্তী সময়ে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যায়, তারপরও এটাকে অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় বিবেচনা করতে হবে। কারণ, বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম এক এমএমবিটিইউ ১৪ থেকে ১৬ ডলার। তাহলে ভোলার ১ দশমিক ৭৫ টিসিএফ গ্যাসের মোট মূল্য দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকার পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে যদি আগামী দুই বছরের মধ্যে আমরা এই ১ দশমিক ৭৫ টিসিএফ গ্যাস জাতীয় গ্রিডে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে এই পাইপলাইন অর্থনীতির জন্য কতখানি উপকার বয়ে আনতে পারবে, সেটা কি অনুধাবন করতে পারছি?
প্রস্তাবিত পাইপলাইনটি আরেক দিক থেকেও বাংলাদেশকে সুফল দেবে। বর্তমানে বাংলাদেশের এলএনজি আমদানির টার্মিনালগুলো মহেশখালী-কক্সবাজার অঞ্চলে স্থাপন করা হয়েছে।
ভবিষ্যতে মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো বৈরিতা দেখা দিলে ভোলায় আরেকটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করে প্রস্তাবিত ভোলা-বরিশাল পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা এলএনজি জাতীয় গ্রিডে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
তবে আমার মতে, প্রস্তাবিত পাইপলাইনটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভবিষ্যৎ ব্যবহার নিশ্চিত হবে, যদি বাংলাদেশ গভীর সমুদ্রের ব্লকগুলোয় গ্যাস পেয়ে যায়। তখন এলএনজির আকারে গভীর সমুদ্রের গ্যাস জাতীয় গ্রিডে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই পাইপলাইন সবচেয়ে ব্যয়সাশ্রয়ী উপায় হয়ে উঠবে। এমনকি এ সম্ভাবনা মাথায় রেখে পাইপলাইনের ব্যাস ৩০ ইঞ্চি থেকে আরও বাড়ানো যুক্তিসংগত বিবেচিত হতে পারে।
প্রস্তাবিত ভোলা-বরিশাল গ্যাস পাইপলাইনটি অবিলম্বে একনেকে উপস্থাপন করে অনুমোদনের ব্যবস্থা করা সরকারের অগ্রাধিকারের দাবি রাখে। ভোলা-বরিশাল সড়কসেতু স্থাপনের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালানো হচ্ছে বলে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে।
যদি এই সেতু স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, তাহলে সেতুর ওপর দিয়ে গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনই যুক্তিসংগত হবে। বিষয়টি বিবেচনায় নিলে চাঁদপুর-শরীয়তপুর সেতু স্থাপনের চেয়েও ভোলা-বরিশাল সেতু অনেক বেশি অগ্রাধিকার দাবি করে। মনে রাখতে হবে, ভোলায় যদি ৮ থেকে ১০ টিসিএফ গ্যাস সত্যিই আবিষ্কৃত হয়, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভোলা-বরিশাল সেতু-কাম-পাইপলাইন সবচেয়ে বড় ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠবে।
ড. মইনুল ইসলাম অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়