ভিসা–জটিলতায় কপ৩০ সম্মেলনে যেতে পারল না নওশীন ও নুর
Published: 11th, November 2025 GMT
ভিসা–জটিলতার কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় শিশুদের প্রতিনিধি হিসেবে সাতক্ষীরার দুই শিক্ষার্থী ব্রাজিলে জাতিসংঘের জলবায়ু-সংক্রান্ত ৩০তম সম্মেলন বা কপ৩০ সম্মেলনে অংশ নিতে পারছে না। গতকাল সোমবার রাত একটায় এমিরেটস এয়ারলাইনসে নওশীন ইসলাম ও নুর আহমদের ব্রাজিলে রওনা দেওয়ার কথা ছিল।
দুই শিক্ষার্থীর এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের সুযোগ এসেছিল বেসরকারি সংস্থা জাগ্রত যুব সংঘের (জেজেএস) ‘স্ট্রেংদেনিং চিলড্রেনস ভয়েস অ্যান্ড লিডারশিপ ইন অ্যাড্রেসিং ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডিজাস্টার রিস্ক ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের মাধ্যমে। এই প্রকল্পের প্রোগ্রাম ব্যবস্থাপক নবকুমার সাহা জানান, জাতিসংঘের ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি) থেকে আমন্ত্রণ পাওয়ায় ওই দুই শিক্ষার্থী ব্রাজিলে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশে কর্মরত ব্রজিলের দূতাবাসে ভিসার জন্য অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে আবেদন করে। দূতাবাস থেকে গত ৩০ অক্টোবর প্রথম দফায় সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে আবার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। বিকেল চারটার দিকে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, ব্রাজিল থেকে অনুমোদন না আসায় আপাতত ভিসা দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে কপ৩০ জলবায়ু সম্মেলনে দুই শিক্ষার্থী যোগ দিতে পারছে না।
ব্রাজিলের আমাজনের শহর বেলেমে বসছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবায়ু সম্মেলন (কপ৩০)। সম্মেলনে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত পৃথিবীকে রক্ষার নতুন অঙ্গীকার নিয়ে জড়ো হয়েছেন বিশ্বের ১৫০টি দেশের ১২ হাজারের বেশি প্রতিনিধি। বিশাল ওই আয়োজনে অংশ নেওয়ার কথা ছিল সাতক্ষীরার দুই শিক্ষার্থী নওশীন ইসলাম ও নুর আহমদের। বাংলাদেশ থেকে শিশু প্রতিনিধি হিসেবে তাদের এই যাত্রা উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বাস্তবতা তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। নওশীন ইসলাম সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও প্রতাপনগর ইউনাইটেড বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নুর আহমদ শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের যতীন্দ্রনগর গ্রামের বাসিন্দা ও সুন্দরবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
ব্রাজিলে বিশ্ব জলাবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে না পারায় নওশীন ইসলাম ও নুর আহমদ জানায়, এ ঘটনায় তারা হতাশ। তারা বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের কথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে পারল না। জানাতে পারল না কীভাবে তারা আন্দোলন ও সংগ্রাম করে বেঁচে আছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নওশ ন ইসল ম ন র আহমদ জলব য়
এছাড়াও পড়ুন:
জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিতে ব্রাজিল যাচ্ছে সাতক্ষীরার নওশীন ও নুর
জাতিসংঘের জলবায়ু-সংক্রান্ত ৩০তম সম্মেলন বা কপ-৩০ শুরু হচ্ছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের বেলেম শহরে। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু ঝুঁকিতে বিপর্যস্ত পৃথিবীকে রক্ষার অঙ্গীকারে জড়ো হচ্ছেন ১৫০ দেশের ১২ হাজারের বেশি প্রতিনিধি। এই মঞ্চে বাংলাদেশ থেকে শিশু প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিচ্ছে সাতক্ষীরার দুই শিক্ষার্থী।
এই দুজন হলো নওশীন ইসলাম ও নুর আহমদ। উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বাস্তবতা তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়েই আজ সোমবার রাত একটার দিকে তাদের বেলেমের পথে রওনা হওয়ার কথা।
নওশীন আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও প্রতাপনগর ইউনাইটেড বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা শহীদুল ইসলাম ও মা জেসমিন দুজনই শিক্ষক। নওশীন ২০২১ সাল থেকে উপকূলের শিশুদের অধিকার ও জলবায়ু ন্যায়ের আন্দোলনে যুক্ত। বর্তমানে সে ‘উপকূলীয় শিশু ফোরাম’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ এবং আশাশুনি উপজেলার সভাপতি।
অন্যদিকে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের যতীন্দ্রনগর গ্রামের বাসিন্দা নুর আহমদ সুন্দরবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা জি. এম. রইসউজ্জামান ও মা লায়েকা খানম শিক্ষক। নুর উপকূলীয় শিশু ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি ও উপজেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে কাজ করছে।
এই দুই শিশু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার বাসিন্দা, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত অনেক বেশি। তাদের কপ-৩০-এ অংশ নেওয়ার সুযোগ এসেছে বেসরকারি সংস্থা জাগ্রত যুব সংঘের (জেজেএস) ‘স্ট্রেংদেনিং চিলড্রেনস ভয়েস অ্যান্ড লিডারশিপ ইন অ্যাড্রেসিং ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডিজাস্টার রিস্ক ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের মাধ্যমে।
প্রকল্পটির প্রকল্প ব্যবস্থাপক নবকুমার সাহা জানান, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটের ১০টি উপজেলায় শিশুদের নেতৃত্ব ও কণ্ঠস্বর শক্তিশালী করতে কাজ করছে জেজেএস। শিশুরা নিজেরাই তাদের সমস্যা ও সমাধান নির্ধারণে অংশ নিক, তাদের কণ্ঠস্বর যেন স্থানীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে শোনা যায়।
একই রকম প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করে নওশীন ইসলাম বলে, ‘উপকূলের শিশুদের দুঃখ-দুর্দশা তুলে ধরতেই ব্রাজিল যাচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়, খাবারের অভাব হয়, বাল্যবিবাহ বাড়ে। আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়া সবার দায়িত্ব। আমি চাই উন্নত দেশের নেতারা ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের শিক্ষা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের বিষয়ে আরও আন্তরিক হোক।’
নুরের কণ্ঠেও শোনা যায় একই রকম দৃঢ়তা। সে বলে, ‘বিশ্বনেতারা নিজেদের অতীতের ভুলের দায় আমাদের ওপর যেন চাপিয়ে না দেন। যারা বেশি কার্বন নিঃসরণ করছে, তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করব।’
সন্তানদের এমন ভূমিকায় গর্বিত বলে জানিয়েছেন নওশীন ও নুরের মা-বাবা। নুরের মা লায়েকা খানম বলেন, ‘আমাদের সন্তানেরা যেন নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে পারে—এই তো সবচেয়ে বড় অর্জন।’