নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার মহেশপুর গ্রামের রশিদুল ইসলাম (৩৮) রিকশাচালক। জীবনের রং বোঝার জন্য কখনো কারখানায়, কখনো খেতে, কখনো সবজি বিক্রেতা কিংবা নির্মাণশ্রমিকের কাজ করেন। নিয়ম করে প্রতিদিন চার ঘণ্টা পড়াশোনা করেন, মাসে কেনেন দুটি বই। তাঁর মাটির ঘরে আলু-পেঁয়াজের বস্তার পাশে থাকে তলস্তয়, গোর্কির মতো বিশ্বখ্যাত লেখকের বই। কবিতাও লেখেন রশিদুল ইসলাম। এরই মধ্যে বেরিয়েছে তাঁর কাব্যগ্রন্থ সেই কালপুরুষ। প্রকাশের অপেক্ষায় আছে উপন্যাস গৌরীর পান্তাবেলা। প্রথম আলোর প্রথম পাতায় রশিদুলের এমন গল্প যেন সমাজের প্রান্তিক কণ্ঠের অসীম সম্ভাবনা ও অনুপ্রেরণার আলো ছড়ায়। 

সংবাদপত্র কেবল খবরের বাহন নয়, সমাজচিন্তারও প্রতিচ্ছবি। একটি পত্রিকার দর্শন, সংবাদ নির্বাচনের দৃষ্টিভঙ্গি ও উপস্থাপনার ভেতর দিয়েই বোঝা যায়—সমাজের কোন শক্তিকে প্রতিষ্ঠানটি মূল্য দেয়, কোন স্বরকে সামনে আনে। প্রথম আলো তার সূচনালগ্ন থেকেই এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে মানুষের ভেতর, মানুষের আশাবাদ ও সম্ভাবনার ভেতর। কঠিন বাস্তবতা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও সমাজে যাঁরা আলো জ্বালিয়ে রাখেন, প্রথম আলো তাঁদেরই গল্প বলে। কারণ, ভালো খবর বলা মানে কেবল আশাবাদ ছড়ানো নয়, বরং সমাজের ভিতকে শক্ত করা। প্রথম আলো এই কাজ নিয়মিত করে আসছে—একটি সংবাদপত্র হিসেবে, আবার একটি সামাজিক শক্তি হিসেবেও। 

প্রথম আলোয় ছাপা ‘সুখবর’ অথবা ‘অন্য খবর’গুলো কৃষি, শিক্ষা, খেলাধুলা এবং সমাজসেবার ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও সমাজের অসাধারণ সব অবদানের গল্প সামনে আনে। যেমন দিনাজপুরের আমিনুলের সমন্বিত কৃষি ক্লিনিক কৃষকদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য সমাধান ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। কারও লাউগাছের পাতা হলদে হয়েছে, গোড়ায় ধরেছে পচন, কিংবা পাতা কুঁচকে গেছে শিমগাছের, পুকুরের মাছ মরে যাচ্ছে—২৬ বছর ধরে এসব সমস্যার সমাধান দিয়ে চলেছেন আমিনুল ইসলাম। 

আমরা আরও জানতে পারি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার রায়হান মিয়ার গল্প, একটি কম্পিউটার কিনতে চাওয়ায় যাঁর বাবাকে বেচতে হয়েছিল তিনটি বসতঘরের একটি। ফ্রিল্যান্সিং করে সেই রায়হানই পরে হন কোটি টাকার মালিক। 

আমরা বলি রাজশাহী শহরের শেখ মনিরুল আলমগীর ক্রীড়া পাঠাগার ও সংগ্রহশালার কথা, ১৯৯৭ সাল থেকে তিল তিল করে গড়ে তোলা যে পাঠাগার এখন ক্রীড়া প্রকাশনার একটি সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা। 

যখন আমরা প্রথম আলোয় ঠাকুরগাঁও সদরের সানজিদা, শারমিন, রুপিয়া, রাশিদাদের লড়াই আর সংগ্রামের গল্প প্রকাশ করি, পাঠকের সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও খুব আনন্দ হয়। অজপাড়াগাঁয়ে জন্ম এই মেয়েদের। এখন তাঁরা খেলছেন জাতীয় পর্যায়ে। কেউ হকি, কেউ রাগবি, কেউবা বাস্কেটবল, আর্চারিতে। তিল তিল করে এই মেয়েদের যিনি গড়ে তুলেছেন, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর উচ্চবিদ্যালয়ের শরীরচর্চার সেই শিক্ষক মাসুদ রানার প্রতি অন্য রকম শ্রদ্ধাবোধ চলে আসে। 

এই খবরগুলো শুধু ব্যক্তিগত সাফল্যের গল্প নয়, বরং সমাজের সংগ্রাম, সৃজনশীলতা ও ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি। এই গল্পগুলো তুলে ধরে প্রথম আলো সমাজের প্রতিটি স্তরের কণ্ঠকে গুরুত্ব দেয়। 

উদাহরণস্বরূপ, দিনাজপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রূপান্তর বা চিরিরবন্দরে আবাসিক স্কুলের মাধ্যমে শিক্ষার আলো ছড়ানো শিক্ষার প্রতি সমাজের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে। এ ছাড়া ময়মনসিংহের কৃষক আবু হানিফার হারানো ধানবীজ সংরক্ষণের নেশা কিংবা ফুলবাড়িয়ার হোগলাপণ্যের বিদেশে চাহিদার গল্প ব্যক্তিগত আগ্রহ ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমাজে অবদানের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এমনকি বগুড়ার আদমদীঘি রেলস্টেশনে পাঁচ বছর ধরে অনাহারী ও নিরন্ন মানুষের মুখে আহার তুলে দিচ্ছেন যিনি, সেই আজিজুল হক ওরফে রাজা, গরিবের রাজা হিসেবে আজ যাঁর পরিচিতি, তাঁকে তুলে ধরতে পেরে সমাজের জমিতে মানবিকতার বীজই যেন বপন করে প্রথম আলো। আমাদের এমন প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। 

২.

 

শেষ পাতায় ‘পাঠকের লেখা’ প্রথম আলোকে দিয়েছে এক বিশেষ স্বর। এই ধারার মাধ্যমে পাঠক কেবল গ্রহীতা নয়, হয়ে উঠেছেন অংশীদার। পাঠকের নিজের জীবনের বা চোখে দেখা সত্যিকারের গল্প; আনন্দ বা সফলতায় ভরা কিংবা মানবিক, ইতিবাচক বা অভাবনীয় সব ঘটনা ছাপা হয় এই বিভাগে। পত্রিকার সঙ্গে পাঠকের এই যুক্ততা এরই মধ্যে ৭১ পর্ব পেরিয়েছে। করোনাকালে বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া বুয়েট ছাত্রীর অনুভূতি কিংবা ইংল্যান্ডে বেড়াতে গিয়ে উইলিয়াম শেক্​সপিয়ারের বাড়ি ঘুরে আসা, আজিমপুর, গ্রিন রোড ও ধানমন্ডির হারানো সৌন্দর্য, ঢাকা থেকে অনেক বছর পর নিজ শহরে গিয়ে স্কুল-কলেজের বন্ধুদের একে একে চলে যাওয়ার খবর জানা, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে স্কুল পালানোর দিনগুলোর কথা কিংবা লাউ-শোল মাছ, শিম দিয়ে মাগুর মাছের ঝোল, চিতল মাছের কোপ্তা, মাছের ঝোলে ডালের বড়ি, বেগুন–খাসি, কচুর লতি দিয়ে ইলিশ মাছের মাথা—মায়ের হাতের সেসব রান্নার গল্প।

পাঠকের প্রতিটি লেখার সঙ্গে মাসুক হেলাল, আরাফাত করিম কিংবা এস এম রাকিবুর রহমানের ইলাস্ট্রেশন যোগ করে এক অনন্য নান্দনিক মাত্রা, যা লেখার ভাবকে আরও গভীর ও পরিপূর্ণ করে তোলে। সব মিলিয়ে ‘পাঠকের লেখা’ হয়ে ওঠে জীবনের বহুরঙা চিত্রপট। 

৩.

প্রথম আলো অনলাইনে রয়েছে দুটি অনন্য বিভাগ—‘নাগরিক সংবাদ’ ও ‘দূর পরবাস’। দেশের পাঠকের জন্য নাগরিক সংবাদ আর প্রবাসে থাকা পাঠকের জন্য দূর পরবাস। এই দুটি বিভাগ পাঠকের অংশগ্রহণে প্রতিদিন সমৃদ্ধ হয়। পাঠকের পাঠানো লেখা, ছবি, ভ্রমণকাহিনি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ড কিংবা প্রবাসে বাংলাদেশিদের সাফল্যের গল্প—সবই স্থান পায় এখানে। শিক্ষক দিবস, বন্ধু দিবস, মা দিবস, বাবা দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে পাঠকের কাছ থেকে আহ্বান করা হয় লেখা। যুক্তিনির্ভর বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে সেগুলো প্রকাশিত হয়। 

নাগরিক সংবাদ ও দূর পরবাস কেবল সংবাদ প্রকাশের নতুন পদ্ধতি নয়; এটি একধরনের সামাজিক আন্দোলন। এখানে নাগরিকেরা নিজেরাই হয়ে ওঠেন সংবাদ প্রেরক ও সময়ের সাক্ষী। তাঁদের চোখে ধরা পড়ে জীবনের বহু অজানা রং, সমাজের নীরব পরিবর্তন। 

প্রথম আলো সংগ্রামী মানুষের প্রতিটি স্বপ্নের সঙ্গী। প্রথম আলো তুলে ধরে সেসব গল্প, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় প্রতিকূলতার মধ্যেও আশা বাঁচিয়ে রাখা যায়। পাঠকের কলমে, নাগরিকের কণ্ঠে, প্রবাসীর স্মৃতিতে প্রথম আলো যেন গড়ে তুলেছে এক সেতু, যেখানে সংবাদ শুধু তথ্য নয়, একটি সম্ভাবনার আলোকবর্তিকা। এই যাত্রায় প্রথম আলো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রতিটি গল্পে, প্রত্যেক পাঠকের সঙ্গে। 

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল প রক শ র জন য জ বন র র গল প র একট

এছাড়াও পড়ুন:

বেসরকারি সংস্থায় ট্রেইনার পদে নিয়োগ, মাসিক বেতন ৪৫০০০

বেসরকারি সংস্থা কেয়ার বাংলাদেশ গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় ট্রেইনার (সফট স্কিলস) পদে ৮ জন নিয়োগ দেবে। এই প্রকল্পভিত্তিক পদে মাসিক বেতন ধরা হয়েছে ৪৫,০০০ টাকা।

প্রার্থীর সমাজবিজ্ঞান, জেন্ডার স্টাডিজ, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, শিক্ষা বা সমমান বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

আরও পড়ুনট্রাফিক সহায়কের খণ্ডকালীন চাকরি, শিক্ষার্থীদের সুবিধার থেকে শঙ্কা বেশি ১০ ঘণ্টা আগে

প্রার্থীদের বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় যোগাযোগে পারদর্শী হতে হবে। এমএস অফিস এবং ডিজিটাল তথ্য সংগ্রহের টুলে দক্ষতা থাকতে হবে। দলগত পরিবেশে কাজ করার মানসিকতা থাকা জরুরি। চুক্তিভিত্তিক এই নিয়োগ প্রথম ধাপে ৩১ অক্টোবর ২০২৬ তারিখ পর্যন্ত, তবে কর্মদক্ষতা ও তহবিলের প্রাপ্যতার ভিত্তিতে নবায়নযোগ্য। আবেদনের শেষ তারিখ ১৫ নভেম্বর, ২০২৫।

আগ্রহী প্রার্থীদের দ্রুত অনলাইনে আবেদন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। কেয়ার বাংলাদেশ কোনো ব্যক্তিগত তদবির গ্রহণ করে না এবং যোগ্য প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের নিশ্চয়তা রয়েছে।

আরও পড়ুনসহকারী শিক্ষক ১০,২১৯ পদে আবেদন শুরু, দেখুন নির্দেশনা, পদ্ধতি ও শর্তগুলো০৮ নভেম্বর ২০২৫

একনজরে চাকরির বিবরণ—

সংস্থা: কেয়ার বাংলাদেশ

পদ: ট্রেইনার (সফট স্কিলস)

পদসংখ্যা: ৮ জন

কর্মস্থল: গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও আশপাশের এলাকা

বেতন: মাসিক ৪৫,০০০ টাকা

যোগ্যতা: স্নাতকোত্তর ডিগ্রি + ২ বছরের অভিজ্ঞতা

চুক্তির মেয়াদ: ৩১ অক্টোবর ২০২৬ পর্যন্ত (প্রজেক্টভিত্তিক)

আবেদন: অনলাইনে (বিডি জবসের মাধ্যমে)

আবেদনের শেষ তারিখ: ১৫ নভেম্বর, ২০২৫।

ঠিকানা: কেয়ার বাংলাদেশ, রাওয়া কমপ্লেক্স, লেভেল ৭-৮, ভিআইপি রোড, মহাখালী, ঢাকা‑১২০৬

আরও পড়ুনমানবিক বিভাগ থেকে পড়েও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, শাহীন আক্তারের গল্প যেন অনুপ্রেরণার ১০ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ