শারীরিক প্রতিবন্ধিতাকে জয় অদম্য হোসনার
Published: 8th, March 2025 GMT
শারীরিক প্রতিবন্ধী হোসনা আক্তার। উচ্চতা ৩৯ ইঞ্চি। প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষকে স্বাবলম্বী করতেই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
ময়মনসিংহ নগরীর ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের চর কালিবাড়ী এলাকার কুদরত আলী ও আলেয়া বেগম দম্পতির মেয়ে হোসনা আক্তার। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটাতে চেষ্টার কমতি নেই তাঁর। এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ছুটে বেড়ান শুধু প্রতিবন্ধীর খোঁজে। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘অগ্রণী প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থা’ নামে একটি সংগঠন। এ সংগঠনের প্রতিবন্ধীরা হোসনাকে বানিয়েছেন সভাপতি।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর ঈশ্বরদিয়া, চর নিলক্ষীয়া ইউনিয়নসহ নগরীর ওয়ার্ডগুলোতে রয়েছে আট শতাধিক প্রতিবন্ধী। শুয়ে-বসে খাওয়া ছাড়া পরিবারের জন্য তাদের কিছুই করার ছিল না। কিন্তু কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের আর্থিকভাবে সচ্ছল করার উদ্যোগ নেন হোসনা আক্তার। সরকারি-বেসরকারিভাবে পাওয়া সহায়তা হোসনা পৌঁছে দেন প্রতিবন্ধীদের হাতে। নানা প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের করছেন দক্ষ। অনেকে হয়েছেন স্বাবলম্বী।
এখানেই থেমে থাকেননি হোসনা আক্তার। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে করেন বৃক্ষরোপণ। এভাবে সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখায় হোসনা বিভাগীয় পর্যায়ে অদম্য নারী সম্মাননা পুরস্কার ২০২৪ এবং ময়মনসিংহ সদর উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কার পেয়েছেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধী মালেকা খাতুন বলেন, ‘পরিবার অবহেলা না করলেও এক সময় নিজেকে পরিবারের বোঝা মনে করতাম। হোসনা আমাদের বাড়িতে এসে সেলাইয়ের কাজসহ বাটিকের কাজ শিখতে উৎসাহ দেয়। তার কথামতো কাজ শিখে এখন টাকা রোজগার করতে পারছি।’
কথা হয় হোসনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনপথে চলার শুরুটা ছিল অনেক কঠিন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ছিল আমার সব সমস্যার প্রধান। স্বাভাবিক জীবন ছিল না বিধায় সবার সঙ্গে মিশে পড়ালেখা হয়নি। তাই ঘরের চার দেয়ালের মাঝে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখতাম। আমার সঙ্গে মা-বাবাকেও সামাজিকভাবে অনেক হয়রানির শিকার হতে হতো। আমি অন্য সবার চেয়ে শারীরিক গঠনে অনেক ছোট বিধায় স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারতাম না। আমার উচ্চতা মাত্র ৩৯ ইঞ্চি।’ তিনি বলেন, ‘আমি সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে, আর্থসামাজিক নির্যাতনের কথা ভুলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করি। আমাকে সাহায্য করেছিল প্রতিবন্ধী কমিউনিটি সেন্টার। তাদের সহায়তা আর পরামর্শে নিজেকে ঘরের বাইরে উপস্থাপন করতে শুরু করি। নতুন করে পড়ালেখায় মন দেই। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। আমার স্বামীও একজন প্রতিবন্ধী। আমি তাঁর সহযোগিতায় চলাফেরা করি। আমাদের একটি কন্যাসন্তান আছে।’
হোসনার বাবা কুদরত আলীর ভাষ্য,
এক সময় ঘর থেকে বের হতে চাইত না হোসনা, লজ্জা পেত। ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সব প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে অন্যদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তাকে নিয়ে এখন গর্ব হয়।
মা আলেয়া বেগম বলেন, ‘মায়ের কাছে সব সন্তান সমান। হোসনাকে কখনোই আলাদা চোখে দেখিনি। তার মেধা ভালো। সমাজে ভালো কাজ করছে আমার মেয়ে। তাকে ছোটরা সম্মান করে, বড়রা স্নেহ করে। এমন দৃশ্য দেখে মা হিসেবে আনন্দ পাই।’
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ময়মনসিংহের অঞ্চলের পরিচালক নাঈমা হোসেন জানান, সমাজ উন্নয়নে হোসনা আক্তার সংবর্ধনা পেয়েছেন। এটি নিঃসন্দেহে তাঁর জন্য গর্বের।
জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, নারী-পুরুষ সবাইকেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় সকালে মুষলধারে বৃষ্টি, নগরজীবনে ভোগান্তি
সাত সকালেই মুষলধারে বৃষ্টিতে ভিজেছে ঢাকা। ভোর থেকেই আকাশ কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন ছিল। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি।
ভারী বৃষ্টিতেই ঢাকার ধানমন্ডি, বাংলামোটর, মগবাজার, মালিবাগ, কারওয়ান বাজার ও মতিঝিল এলাকার কিছু সড়কে পানি জমে যায়। কোথাও কোথাও রিকশা ও মোটরসাইকেল বন্ধ হয়ে পড়ে। বৃষ্টির কারণে অফিসগামী মানুষের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রবিবার (১৭ আগস্ট) রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু এলাকায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেটের কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময়ে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
সোমবারও রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু এলাকায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে, তবে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
আগামী ১৯ আগস্ট
রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু এলাকায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এ সময় দিন ও রাতের তাপমাত্রায় তেমন পরিবর্তন হবে না।
এচাড়া, ২০ আগস্ট
রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কারণে এ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টির এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে আরো কয়েকদিন।
ঢাকা/ইভা