বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে এখন সবুজের ঢেউ। সেখানে তিলের আবাদ হয়েছে। ক্ষেতের পাশেই মৌবাক্স বসিয়েছেন মৌচাষিরা। মৌমাছির মাধ্যমে তিলের ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। এতে তিলের উৎপাদন বাড়বে, অন্যদিকে পাওয়া যাবে মধু। সমন্বিত এই পদ্ধতিতে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার গৌরীপুরের কৃষক ও মৌচাষি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।
কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় চলতি বছর গৌরীপুর ইউনিয়নের ঘোষের হাওলায় ৫০ থেকে ৬০ জন কৃষক একটি প্রদর্শনী ব্লকের মাধ্যমে ১০০ বিঘা জমিতে বারি-৪ জাতের তিল চাষ করেন। এ উদ্যোগকে সফল করতে বরগুনা থেকে কয়েকজন পেশাদার মৌচাষি আনা হয়েছে। তারা ক্ষেতের দক্ষিণ পাশে সুইডেনপ্রবাসী আরিফুল ইসলামের বাড়ির পাশের বাগানে ১৩০টি মৌমাছির বাক্স স্থাপন করেছেন। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে খরচ বাদে বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ থাকবে কৃষকের। পাশাপাশি মধু বিক্রি করে লাভবান হবেন মৌচাষিরা।
তিল চাষি মো.
কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, এ উদ্যোগ ভাণ্ডারিয়ার কৃষি খাতে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আগামী বছর এই সমন্বিত চাষ আরও বৃদ্ধি করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছিন আরাফাত রানা বলেন, মৌবাক্সের মধু থেকে মৌচাষিরা বাড়তি আয় করেন। ক্ষেতে মৌবাক্স স্থাপনে মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে ফসলের ১০ শতাংশ ফলন বেশি হয়। এখানে দু’পক্ষই লাভবান হবেন। তাই আগামিতে আরও বেশি জমি এ পদ্ধতিতে ব্যবহারের আওতায় আনা হবে। কৃষক ও মৌচাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশের উপস্থিতিতে অপহরণের অভিযোগ, দুইদিনেও উদ্ধার হয়নি পল্লী চিকিৎসক
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে পুলিশের উপস্থিতিতে তরিকুল ইসলাম (৩৫) নামে এক পল্লী চিকিৎসককে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের হাতি চামটার ব্রিজ এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করেন দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, মাথায় হেলমেট এবং পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তার সামনেই কয়েকজন ব্যক্তি তরিকুল ইসলামকে টেনে-হিঁচড়ে একটি অটোভ্যানে তুলছেন। এ সময় আশপাশের কয়েকজন তাকিয়ে দেখেন। তরিকুল তাদের সাহায্য চাইলেও সবাই দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় দুর্বৃত্তদের একজনকে বলতে শোনা যায়, 'এ এখানে প্রশাসনের লোক আছে।'
অপহরণের শিকার তরিকুল ইসলাম ভাতগ্রাম ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর কুটিপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। ভাতগ্রাম বাজারে পল্লি চিকিৎসক হিসেবে তার চেম্বার ও ওষুধের দোকান রয়েছে। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করতেন।
এদিকে অপহরণের দুইদিন পার হলেও পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে না পারায় উদ্বেগ জানিয়েছেন স্বজনরা। তবে অপহরণকারীরা এ পর্যন্ত ৪ থেকে ৫ বার ফোন দিয়ে অপহৃত তরিকুলের ছোটভাই হিরুর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় গত শনিবার রাতে পল্লী চিকিৎসকের ছোটভাই হিরু মিয়া সাদুল্লাপুর থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও সাত-আটজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, তরিকুল ইসলামের ঔষধের দোকানে সুমন নামে এক ব্যক্তি ৬ মাস কাজ করেছেন। পরে তাকে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হলে বিভিন্ন অজুহাতে তিনি টাকা দাবি করে আসছিলেন দোকান মালিক তরিকুলের কাছে। এ নিয়ে কয়েকবার স্থানীয়ভাবে শালিসি বৈঠকও হয়। গত শুক্রবার বিকেলে তরিকুল বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে ভাতগ্রাম বাজারে তার দোকানে যাচ্ছিলেন। পথে সুমনসহ স্থানীয় কয়েকজন দুর্বৃত্ত তার পথরোধ করে মারধর করেন এবং জোরপূর্বক তাকে অটোরিকশা ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়।
পল্লি চিকিৎসকের ছোটভাই হিরু মিয়া বলেন, অভিযোগ দেওয়ার দুইদিন হয়ে গেল, এখনো আমার ভাইকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। অথচ সেখানে সাদুল্লাপুর থানার একজন এএসআই উপস্থিত ছিলেন। অপহরণকারীরা সবার পরিচিত। দিনে দুপুরে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর কারণে ভাইকে নিয়ে খুব দুঃশ্চিন্তায় আছি আমরা। তার দুই মেয়ে শুধু কাঁদছে।
তিনি আরও বলেন, সবশেষ রোববার দুপুরে অপহৃত তরিকুলের কাছে থাকা মোবাইল ফোন থেকে দুর্বৃত্তরা ফোন করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছেন। প্রশাসনের কাছে তার বড়ভাইকে দ্রুত উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
রোববার রাত ৯টায় সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজউদ্দিন খন্দকার সমকালকে বলেন, ‘অপহরণের সময় পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তির উপস্থিতির কথা শুনেছি। কিন্তু স্পষ্ট নয়। অপহরণের শিকার তরিকুল ইসলামকে উদ্ধারে পুলিশের অভিযান চলামান রয়েছে।’