জুলাই অভ্যূত্থান গণতন্ত্র, সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিক : ডিসি
Published: 5th, August 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, ২০২৪ এর অভ্যূত্থান কেবল একটি রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়, নয় একটি স্বৈরাচারের পতন।
এই অভূত্থান তরুন সমাজের অদম্য সাহস, ছাত্র-জনতার অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন এবং দেশপ্রেমের যে কাব্য রচনা করেছিলো সেই বীর শহীদদের আত্মত্যাগের এক ভয়ঙ্কর বিস্ফোরন। এই অভ্যূত্থান গণতন্ত্র, সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিক।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস-২০২৫ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সম্মিলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ সম্মিলন অনুষ্ঠিত হয়। কুরআন তেলাওয়াত ও বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এতে অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারীরা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা ২৪ জুলাইয়ের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
এ সময় মো.
এই ঐক্য যদি না থাকে তাহলে যারা শহীদ হয়েছিলো তাদের পরিবারের কাছে আমরা কি জবাব দিবো। তাই নতুন নতুন বাংলাদেশ গড়তে আপনাদের সকলের মাঝে ইস্পাত কঠিন ঐক্য চাই। ’
তিনি বলেন, ১৯৫২, ১৯৭১, ১৯৮৯ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালে রক্ত ঝরেছে আমাদের। আর কত রক্ত ঝরবে, আর কত মায়ের বুক খালি হবে। আমরা সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করতে চাই যা ছিলো আমাদের শহীদ ভাইদের কাঙ্ক্ষিত চাওয়া।
বক্তব্য শেষে শহীদ পরিবারের মাঝে সম্মাননা ক্রেস্ট ও উপহার প্রদান করেন অতিথিবৃন্দ। এর পূর্বে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে জেলা প্রশাসক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এসময় জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের রুহের মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থ্যতা কামনায় দোয়া পরিচালনা করেন কোর্ট মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা হাসানুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ আলমগীর হোসেন, সিভিল সার্জন ডাঃ মশিউর রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মাইনুদ্দিন আহমেদ, মহানগর জামায়াতের আমীর আব্দুল জব্বার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মহানগরের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ পর ব র র অন ষ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা গণতন্ত্রের সঙ্গে ‘ব্লাসফেমি’
এই লেখার যে উপজীব্য, তার বিরুদ্ধ যুক্তি দিয়েই প্রথমে কথা বলা যাক। বেশ কয়েক বছর ধরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা হচ্ছে, হঠাৎ কোনো সামরিক কর্মকর্তার হাত দিয়ে নয়, বরং অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনব্যবস্থার মধ্য দিয়েই বিভিন্ন দেশে ডেমাগগরা ক্ষমতায় আসছেন এবং তাঁদের হাতেই গণতন্ত্র ক্রমাগত ক্ষয় হয়ে নানা ধরনের স্বৈরাচারী ব্যবস্থা মাথাচাড়া দিচ্ছে।
এ পরিস্থিতি গণতন্ত্রের সূতিকাগার ইউরোপ ও আমেরিকার মাটিতে যেমন হয়েছে, হচ্ছে আমাদের ঠিক পাশের দেশটিতেও। আমরা এ তথ্য মাথায় রাখব যে ২০০৬ সালের পর থেকে পৃথিবীতে মোটাদাগে কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংখ্যা নিয়মিতভাবেই কমেছে। লেখাটা পড়ার পরে যে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা আছে, সেটা আগেই করে রাখা যাক—এ পরিস্থিতির মধ্যে তাহলে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রবেশ এবং টিকিয়ে রাখার স্বপ্ন কি তাহলে ইউটোপিয়া?
এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে আরেকটি প্রশ্ন করে পরবর্তী আলোচনায় যাওয়া যাক। ‘শেখ হাসিনা’ কেন বর্বর স্বৈরাচারের প্রতিশব্দ হয়ে উঠেছিলেন? এর জবাব সম্ভবত এভাবে দেওয়া যায়, তিনি যে পথে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন, তাতে তাঁর ‘শেখ হাসিনা’ হয়ে ওঠাই অনিবার্য ছিল। অতীতে আরও অনেকে তাঁর মতো ‘শেখ হাসিনা’ই হয়ে উঠেছিলেন স্রেফ একটি কারণে—তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ক্ষমতায় থাকার জন্য আর জনগণের ম্যান্ডেটের তোয়াক্কা করবেন না।
শেখ হাসিনার সময়ে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা একটা রীতিতে পরিণত হয়েছিল। একটা অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলেই–বা লাভ কী, এ ধরনের আলাপ সামনে আনার চেষ্টা হয়েছে ‘কম গণতন্ত্র, বেশি উন্নয়ন’-এর টোপ দিয়ে।
আমরা মনে রাখব, সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ আর মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদের শাসনামলের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ফোকাস করে আধা স্বৈরাচারী শাসন চাপিয়ে দেওয়ার জন্য ‘এশিয়ান ভ্যালুজ’ (এশীয় মূল্যবোধ) তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টার বিরুদ্ধে অমর্ত্য সেনের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ পণ্ডিতেরা দুর্দান্ত সব যুক্তি ও উদাহরণ আমাদের সামনে এনেছেন।
অবিশ্বাস্যভাবে শেখ হাসিনার পতন এবং পালিয়ে যাওয়ার পর একই আলাপ মাঠে ‘নামানো হয়েছে’। এবার অবশ্য যুক্তি ভিন্ন। অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন, একটা অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলেও তাতে নাকি আবারও ক্ষমতায় লুটপাটকারীরাই আসবে। এবং অদূর ভবিষ্যতে একটা নির্বাচন নাকি বিপ্লবের—জুলাই যদিও বিপ্লব নয়, গণ-অভ্যুত্থান—স্পিরিট নষ্ট করবে। তাঁদের নিদান হলো একটা বিপ্লবী সরকার করে, দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থেকে, সংবিধান নতুন করে লেখাসহ রাষ্ট্রের সব রকমের সংস্কার শেষ করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়া। এতেই নাকি ভবিষ্যতের সব নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিশ্ছিদ্র হয়ে উঠবে। এভাবে ভালো সংবিধান বা আইন বানিয়ে আসলেই কি নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিশ্ছিদ্র করা যায়?
আরও পড়ুনশুধুই নির্বাচন নাকি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন?১৩ জুন ২০২৫একটি ভালো নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র নয়। সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলেই একটি রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এগিয়ে যাবে, এ নিশ্চয়তা নেই। এ সত্য মাথা পেতে স্বীকার করে নিয়েও বলছি, ভালো নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্রের প্রথম পদক্ষেপটি দেওয়া সম্ভব নয়। অধিকন্তু, ভালো নির্বাচনকে ছোট করে দেখার কিছু নেই। একটা ভালো নির্বাচনের প্রভাব গভীর ও ব্যাপক।
জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সরকারের নৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী থাকে। সে রকম একটি সরকার জনস্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে দেশের ভেতরের ও বাইরের যেকোনো শক্তির সঙ্গে দৃঢ়ভাবে যুদ্ধ করতে পারে। সেই সরকারকে এমনকি ইচ্ছা না থাকলেও জনগণের স্বার্থের পক্ষে দাঁড়াতে হয়। কারণ, মেয়াদান্তে তাকে আবার ভোট চাইতে জনগণের কাছেই যেতে হবে। ঠিক একই কারণে প্রতিনিধিত্বশীল সরকার জনগণের ন্যায্য দাবিদাওয়ার প্রতি সংবেদনশীল থাকে, সম্ভব হলে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করে।
গণতন্ত্রের আলাপ করা হবে, কিন্তু নির্বাচনের প্রয়োজন ও উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না, এ দুটি বিষয় একসঙ্গে চলতে পারে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে থেকে এ ধরনের প্রশ্ন গণতন্ত্রের সঙ্গে পরিষ্কার ‘ব্লাসফেমি’। এই ‘ব্লাসফেমি’ সব সময় যে নির্বাচন নাকচ করার মাধ্যমে করা হয় তা নয়, চতুর মানুষেরা এটা করেন নির্বাচনের সঙ্গে কিছু অযৌক্তিক শর্ত জুড়ে দেওয়ার মাধ্যমে।ওদিকে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত না হওয়া সরকার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে রাষ্ট্রের ভেতরের শক্তিশালী কোনো গোষ্ঠীর পক্ষে থাকে। শেখ হাসিনার সময়ে বাংলাদেশে যে চোরতন্ত্র (ক্লেপ্টোক্র্যাসি) চালু হয়েছিল, তাতে ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের সঙ্গে ব্যবসায়ী, সামরিক-বেসামরিক আমলাদের মধ্যে একধরনের চক্র তৈরি হয়েছিল। সরকার কোটি কোটি সাধারণ নাগরিকের স্বার্থ না দেখে দেখত সেই মানুষগুলোর স্বার্থ। এভাবেই নাগরিকদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে অলিগার্কদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রের যাবতীয় নীতি পরিচালিত হতো।
অনির্বাচিত সরকার দেশের বাইরে থেকেও চাপের মধ্যে থাকে। শেখ হাসিনার সরকার শুধু অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বিদেশি নানা শক্তির সঙ্গে আপস করেছিল।
জনগণের রাস্তায় নেমে আসা ছাড়া এভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের আর কোনো ঝুঁকি থাকে না। কারণ, বৃহৎ জনগোষ্ঠী ক্ষুব্ধ হলেও পরবর্তী ভোটে সরকারের হিসাব চুকিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা তাদের হাতে থাকে না। আর মানুষ যখন কোনো ন্যায্য অধিকার নিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মাঠে নামতে চায়, সরকার তখন নিপীড়ক হয়ে ওঠে। কারণ, এ ধরনের সরকার সারাক্ষণ আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ভীত থাকে।
রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের সময় তো বটেই, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে কিশোরদের অরাজনৈতিক আন্দোলনেও সরকারকে ভীত হয়ে তাদের ওপর মারমুখী আচরণ করতে দেখেছি। আর ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটার প্রতিবাদে নামা শিক্ষার্থীদের ওপরে ভয়ংকর আক্রমণের ঘটনাই রচনা করল আমাদের অমোচনীয় ইতিহাস।
নির্বাচনের অপরিহার্যতা যদি আমরা স্বীকার করি, তাহলে তলিয়ে দেখা যাক, বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচন বিলম্বিত করার কোনো সুযোগ আছে কি না। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের ওপর মানুষের গগনচুম্বী প্রত্যাশা ছিল।
একদিকে এর কারণ ছিল শেখ হাসিনার পতন ঘটানোর সাফল্যজনিত প্রত্যাশা ছিল, অন্যদিকে ছিল অধ্যাপক ইউনূসের মতো বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি সরকারপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ। এক বছর পরে এসে আমাদের বলতেই হচ্ছে, দেশটিকে আমরা যে জায়গায় দেখতে চেয়েছিলাম, তার কাছাকাছিও যাওয়া যায়নি। মন্তব্যটি করছি শেখ হাসিনার ভয়ংকর অপশাসনে রাষ্ট্রের সবকিছু ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার বাস্তবতা মাথায় রেখেই।
নির্বাচন