জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর স্মরণে গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলস্টেশনে নির্মিত হয়েছে ‘মুগ্ধ সুপেয় পানির কর্নার’। আজ মঙ্গলবার সকালে এটির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন।

জেলা প্রশাসক বলেন, মুগ্ধ কর্নারটি গাজীপুরের সাধারণ মানুষ ও যাত্রীদের সুবিধার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মুগ্ধের স্মৃতি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জাহিদুল হাসান, পুলিশ সুপার যাবের সাদেকসহ অন্যরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। মুদাচ্ছির বিন আলী জানান, গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি পালন উপলক্ষে ৬৯টি আইডিয়ার মধ্যে এটি চূড়ান্ত হলে গাজীপুর জেলা পরিষদ ৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে মুগ্ধ সুপেয় পানির কর্নারটি নির্মাণ করে।

সুপেয় পানির ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। তাঁদের কয়েকজন জানান, রেলস্টেশনগুলোতে বিনা মূল্যে বিশুদ্ধ পানি তেমন পাওয়া যায় না। জয়দেবপুর রেলস্টেশনে সাধারণ যাত্রীদের বিশুদ্ধ পানির কষ্ট অনেকটা লাঘব হলো।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় গত ১৮ জুলাই উত্তরার আজমপুরে শিক্ষার্থী ও পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মুগ্ধ। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনলাসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী ছিলেন। মারা যাওয়ার ঠিক আগে আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিস্কুট ও পানি বিতরণ করেন মুগ্ধ। এর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলন আরও গতি পায়।

জুলাই শহীদ পরিবার ও যোদ্ধাদের সম্মেলন

একই দিন সকালে গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে জুলাই শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার, যুদ্ধাহতদের সম্মেলন এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।

এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাফিসা আরেফিন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আহাম্মদ হোসেন ভূঁইয়া, গাজীপুর জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার চৌধুরী যাবের সাদেক, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালমা খাতুন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মোতাচেছম বিল্লাহ, জেলার বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত ন র কর কর ন র

এছাড়াও পড়ুন:

কালীগঞ্জ থানায় কনস্টেবলকে রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা

গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানায় মো. আফছার উদ্দিন নামের এক পুলিশ কনস্টেবলকে রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছেন তার সহকর্মীরা। ২৫ বছরের কর্মজীবন শেষে বিদায়বেলায় সহকর্মীদের ভালোবাসায় আপ্লুত তিনি। আফছার উদ্দিনের চাকরিজীবন শুরু হয়েছিল গাজীপুরে, শেষও হলো এ জেলাতেই। গত ৩১ জুলাই (মঙ্গলবার) ছিল মো. আফছার উদ্দিনের শেষ কর্মদিবস।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুরে কালীগঞ্জ থানা প্রাঙ্গণে আবেগঘন পরিবেশে আফছার উদ্দিনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে বিদায়ী সহকর্মীকে থানা ভবন থেকে প্রাইভেটকার পর্যন্ত নিয়ে যান পুলিশের সদস্যরা। গাড়িটি আগে থেকেই ফুলে সাজানো ছিল। 

আফছার উদ্দিন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পিচুরিয়া গ্রামের মৃত শহিদ আলীর ছেলে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনিই বড়। ২০০০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় তার কর্মজীবন। এর পর নেত্রকোনা, পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ (ডিএমপি) বিভিন্ন ইউনিটে নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

আরো পড়ুন:

টাঙ্গাইলে বিএনপির ২ পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

ধর্ষণের অভিযোগে বাবা গ্রেপ্তার

শেষ কর্মস্থল কালীগঞ্জ থানায় তার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ ব্যতিক্রমী আয়োজন করা হয় গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেকের নির্দেশনায়। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলাউদ্দিন এ আয়োজনের নেতৃত্ব দেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আশরাফুল ইসলাম, সেকেন্ড অফিসার মাসুদ রানা শামীম, সব এসআই, এএসআইসহ অন্য সদস্যরা।

অনুষ্ঠানে আফছার উদ্দিনকে ক্রেস্ট ও ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে বিদায় জানানো হয়। সহকর্মীদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় আপ্লুত আফছার উদ্দিন বলেছেন, “চাকরি জীবনের শেষে এমন বিদায় পাব, কখনো ভাবিনি। সহকর্মীদের এ সম্মান আমার জীবনের বড় অর্জন। চেষ্টা করেছি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের। হয়ত সেটাই তাদের ভালো লেগেছে। গাজীপুর দিয়েই আমার চাকরি শুরু, গাজীপুরেই শেষ— এটাও আমার জন্য গর্বের।”

আফছার উদ্দিন এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা। ছেলে মিরপুর বাংলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে এবং মেয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স স্কুল থেকে সদ্য এসএসসি পাস করেছে। 

ওসি মো. আলাউদ্দিন বলেছেন, “আফছার উদ্দিনের সততা, দায়িত্ববোধ ও সহকর্মীসুলভ আচরণ ছিল সবার জন্য শিক্ষনীয়। তার অবসরে যাওয়াকে আমরা সম্মানের সঙ্গে স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছি।”

ঢাকা/রফিক সরকার/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ