সিলেটে বাবাকে হত্যা: ছেলেসহ ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড
Published: 6th, May 2025 GMT
সিলেটে শবেবরাতের রাতে নামাজরত প্রবীণ আইনজীবী শামসুল ইসলাম চৌধুরীকে হত্যা করার মামলায় তার ছেলেসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ মামলায় আরেক আসামিকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ মে) সকালে বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. শাহাদত হোসেন প্রামাণিক এ আদেশ দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, আইনজীবী শামসুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে মাসুদ আহমদ চৌধুরী মুন্না, তার সহযোগী জাহের আলী ও আনসার আহমদ।
বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের পিপি আনছারুজ্জামান জানান, ২০১১ সালের ১৭ জুলাই রাতে প্রবীণ আইনজীবী শামসুল ইসলাম চৌধুরীকে তার ছেলে মাসুদ আহমদ চৌধুরী মুন্না পেছন থেকে প্রথমে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। এরপর শামসুল ইসলাম জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে তাকে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে অচেতন অবস্থায় গাড়িতে তুলে সুনামগঞ্জের ছাতকের মল্লিকপুর এলাকার সুরমা নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
এর কয়েকদিন পর সুনামগঞ্জের ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামে সুরমা নদীতে তার মরদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় মুন্নাকে গাড়িচালকসহ তিনজন সহযোগিতা করেন।
আরো পড়ুন:
আম পাড়তে গিয়ে পড়ে কিশোরের মৃত্যু
আত্মগোপনে থাকা সিরাজগঞ্জ জেলা আ.
মামলার রায়ে ছেলে মাসুদ আহমদ চৌধুরী মুন্না, তার সহযোগী জাহের আলী ও আনসার আহমদকে মৃতদণ্ড এবং গাড়িচালক বোরহান উদ্দিনকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা সবাই পলাতক রয়েছেন। মামলার ৩০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জন স্বাক্ষ্য দেন।
তিনি আরো জানান, নিহত শামসুল ইসলাম চৌধুরীর চার মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় ছেলে মাহমুদ আহমদ চৌধুরী এ মামলার বাদী। বাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন গোলাম এহিয়া চৌধুরী সোহেল।
সিলেটে মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি বদরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, শামসুল ইসলাম চৌধুরীকে জমি সংক্রান্ত মনোমালিন্যের জের ধরে হত্যা করা হয়। এ রায়ের মাধ্যমে হত্যায় জড়িতরা সাজা পাবেন বলে তিনি আশা করেন।
ঢাকা/নূর/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ আহমদ চ ধ র আইনজ ব
এছাড়াও পড়ুন:
তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল: সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ রায়ে অসংগতি তুলে ধরে আপিল মঞ্জুরের আরজি
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলে সর্বোচ্চ আদালতের সংক্ষিপ্ত রায় ও পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্যে অসংগতি রয়েছে দাবি করে ১৪ বছর আগে দেওয়া সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল মঞ্জুরের আরজি জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
বিএনপির মহাসচিবের করা এ-সংক্রান্ত আপিল শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেছেন, সংক্ষিপ্ত রায় ও পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্যে অসংগতি রয়েছে। সংক্ষিপ্ত আদেশের ১৬ মাস পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠের এ রায় আইনের দৃষ্টিতে রায় নয়। আইনগতভাবে তা রিভিউর অপেক্ষা রাখে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে আজ মঙ্গলবার শুনানিতে এ কথা বলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর আজ সপ্তম দিনের মতো শুনানি হয়। আগামীকাল বুধবার আবার শুনানি হবে। গত ২১ অক্টোবর এই শুনানি শুরু হয়।
১৯৯৬ সালে সংবিধানে যোগ হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বাদ পড়ে। তার জন্য সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধন আনা হয়েছিল। ওই সংশোধনের ঠিক আগে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন। সর্বোচ্চ আদালতের ওই রায় হয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে।
গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেন। সেই আবেদনগুলোর ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
‘ভোটাধিকার হরণ সংকটের কারণ’
বিএনপির মহাসচিবের পক্ষে আপিলের পক্ষে শুনানিতে আজ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুসও অংশ নেন। বিচারপতি খায়রুল হক দেওয়া রায় ‘ব্যক্তিগত ইচ্ছার প্রতিফলন’ দাবি করে তিনি বলেন, রায়ে বলা হয়েছে যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাঁরা জনগণের প্রতিনিধি নন এবং তাঁদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। আবার নির্বাচনের ৪২ দিন আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছেন। অর্থাৎ এই সময়ে অনির্বাচিত সরকার থাকতে পারে। এই রায় স্ববিরোধী। বিচারপতি খায়রুল হক শুধু আদালতের প্রতি নয়, বরং পুরো জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে—ওই রায়ের এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে এই আইনজীবী বলেন, দেশের মানুষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা চালু হওয়ার পর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নির্বাচনে ভোট দিতে পেরেছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে বিদ্যমান যে রাজনৈতিক সংকট, তার অন্যতম কারণ হচ্ছে জনগণকে তার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
রুহুল কুদ্দুস বলেন, যখন কোনো রায় হয়, তা পরবর্তী সময় থেকে কার্যকর হয়। আপিল বিভাগ যে রায়ই দেন না কেন, তা পরবর্তী সময় থেকে কার্যকর হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে, তাতে এই আপিল বিভাগের রায়ের প্রভাব পড়বে না। বরং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল হলে তা তার পরবর্তী নির্বাচন থেকে কার্যকর হবে।