ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি নেই। তবে আজ মঙ্গলবার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার যুক্তরাজ্য থেকে ফেরা উপলক্ষে সকাল থেকে সাড়ে ৮ ঘণ্টা এ দুটো বাহন চালানো গেছে।

খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিএনপির নেতা–কর্মীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিড় করায় যানজট হতে পারে, সেই আশঙ্কায় এ দুটো বাহন এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চালানোর অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। আর এই কয় ঘণ্টায় এ দুটো যান কত সংখ্যক চলেছে এবং কত আয় হয়েছে, সে তথ্য জানিয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ ও পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) কোম্পানি লিমিটেড।

এফডিইই কোম্পানি লিমিটেডের অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স বিভাগের ব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) হাসিব হাসান খান আজ প্রথম আলোকে বলেন, সকাল ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে। ২০ টাকা করে টোল আদায় করা হয়েছে। মোট টোল আদায় করা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ৩ হাজার মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলেছে। তবে টোল আদায়ে কড়াকড়ি আরোপ ছিল না। অনেক মোটরসাইকেল টোল দেয়নি, তাদের বাধাও দেওয়া হয়নি। সেই হিসাবে মোটরসাইকেলের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

আজ বেলা সাড়ে ১১টায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী হিসেবে এই প্রতিবেদক এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কুড়িল টোল প্লাজায় যান। ওই সময় তিনি দেখেন, টোল প্লাজার একদম প্রান্ত দিয়ে অটোরিকশাকে যেতে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে হাতে হাতে ২০ টাকা করে টোল নেওয়া হয়। কোনো টোল রসিদ দেওয়া হয়নি।

এ দুটো বাহন কত সংখ্যায় চলেছে, সে হিসাব আলাদা করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে হাসিব হাসান খান বলেন, ৯০ শতাংশই ছিল মোটরসাইকেল। সিএনজিচালিত অটোরিকশা অনেক কম ছিল।

ওই কর্মকর্তা জানান, গতকাল সোমবার ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো.

সরওয়ার বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) কাছে অনুমতি চান। বিবিএ অনুমতি দেওয়ার পর এফডিই কোম্পানি লিমিটেড ২০ টাকা টোলের মাধ্যমে ওই দুটি যান চলাচলের অনুমতি দেয়। তিনি জানান, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৬৫ হাজার যান চলাচল করে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই ব্যক্তিগত গাড়ি। দিনে গড়ে  ৫৫ লাখ টাকার বেশি টোল আদায় হয়।

২০২৩ সালে চালুর পর থেকেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে দুই ও তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। মূলত এক্সপ্রেসওয়েতে জট ও দুর্ঘটনা এড়াতেই এগুলো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রেখেছে এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কয়েক দিন মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল করেছিল ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে। ওই সময় টোলও আদায় করা হয়নি। এ ছাড়া আন্দোলনের সময় টোল প্লাজায় ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের পর এক মাসের বেশি সময় ধরে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখেছিল এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ এখনো চলমান। সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি) হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছের কাওলা থেকে শুরু হয়ে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে গিয়ে শেষ হবে এই উড়ালসড়ক। পুরো উড়ালসড়কের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। হাতিরঝিল-সংলগ্ন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ শেষ হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব হন চ

এছাড়াও পড়ুন:

‘রক্তাক্ত মহাসড়ক’, সাত ঘণ্টায় ৬০ জনকে হত্যা

মহাসড়কের ১ কিলোমিটার অংশ। সেখানে মাত্র সাত ঘণ্টায় হত্যা করা হয় অন্তত ৬০ জন মানুষকে। তাঁদের মধ্যে ৫৬ জন শহীদ হন প্রাণঘাতী গুলিতে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের দিন যাত্রাবাড়ী থানাকেন্দ্রিক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। সেই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা ও প্রমাণ উঠে এসেছে প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্রে। উল্লেখ্য, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে যাত্রাবাড়ী এলাকায় অন্তত মোট ১১৭ জন শহীদ হয়েছেন বলে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

রক্তাক্ত মহাসড়ক: যাত্রাবাড়ী হত্যাকাণ্ড শিরোনামের এই প্রামাণ্যচিত্র গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোর ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হয়। দর্শকেরা প্রথম আলোর ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে গিয়ে এটি দেখতে পারছেন।

আরও পড়ুনআমার ধারণা, শেখ হাসিনার শেষ দিন ভারতেই কাটবে : আসিফ নজরুল১৮ ঘণ্টা আগেযাত্রাবাড়ী হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রথম আলোর প্রামাণ্যচিত্রটি সাংবাদিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় অনুসন্ধান।ডেভিড বার্গম্যান, সাংবাদিক

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে গতকাল দুপুরে প্রামাণ্যচিত্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, পলায়নরত, নিরস্ত্র, মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন—এমন মানুষকে যুদ্ধক্ষেত্রেও হত্যা করা যায় না। পৃথিবীর যেকোনো আইনে এটা যুদ্ধাপরাধ। কিন্তু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে দেখা গেছে, পালিয়ে যাচ্ছেন, এমন মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছে। মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর একজন মানুষ হাতজোড় করছেন, তাঁকে কাছে থেকে গুলি করা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, পুলিশকে যিনি এ রকম একটা অমানুষ, বেপরোয়া, ভয়াবহ বাহিনীতে রূপান্তর করেছেন, তিনি কত বড় অমানুষ?

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে নির্বিচারে মানুষ হত্যার অসংখ্য ফুটেজ (ভিডিও) আছে বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি শেখ হাসিনার স্ট্যান্ডার্ডে (মান) বিচার করতাম, তাহলে এই বিচার চার থেকে পাঁচ মাসে হয়ে যেত। আমরা সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক, জাতীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য, ২০ বছর, ৩০ বছর পরও যেন বিচার নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে, সে জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে এবং আইন সংশোধন করে বিচার করছি।’

জুলাই হত্যাযজ্ঞের দায়ে শেখ হাসিনার বিচার শেষ হলেও তাঁকে হয়তো দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না বলে ধারণা করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা, তাঁর শেষ দিন ভারতেই কাটবে।’

৩৫ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্র

প্রথম আলোর প্রামাণ্যচিত্রটি প্রায় ৩৫ মিনিটের। তবে এটি তৈরি করতে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে পাঁচ মাস ধরে। শত শত ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ড ধরে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ড যেখানে হয়েছে, সেখানে একই সময়ে ধারণ করা বিভিন্ন ফুটেজ ফ্রেম ধরে এবং গুলির শব্দ শুনে মিলিয়ে দেখা হয়েছে। এভাবে কয়েকটি ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে কোনো সুনির্দিষ্ট হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ চিত্র দাঁড় করানো হয়েছে। এমনকি কোন ভবন থেকে গুলি করে মানুষ মারা হয়েছে, বিশ্লেষণের মাধ্যমে তা বের করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে বিশেষজ্ঞের মতামত।

প্রামাণ্যচিত্রটি তৈরিতে ভিডিও ধারণকারী ব্যক্তির পাশাপাশি আন্দোলনে যুক্ত অন্তত ৫০ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে শুধু ঘটনা বোঝার জন্য। এর বাইরে সেদিন শহীদ হওয়া ৬০ জনের প্রত্যেকের পরিবারে সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। নিহত ব্যক্তিদের ঘটনাস্থলের ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান, মৃত্যুসনদ বিশ্লেষণ করে তাঁর মৃত্যুর কারণ খোঁজা হয়েছে।

প্রামাণ্যচিত্রটি তৈরি করেছে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ কনটেন্ট ক্রিয়েটর আব্দুল্লাহ আল হোসাইনের নেতৃত্বাধীন একটি দল।

আরও পড়ুনযাত্রাবাড়ী হত্যাযজ্ঞের নির্মম চিত্র২১ ঘণ্টা আগে‘একটি প্রশংসনীয় অনুসন্ধান’

প্রদর্শনী শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বলেন, যাত্রাবাড়ী হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রথম আলোর প্রামাণ্যচিত্রটি সাংবাদিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় অনুসন্ধান। একটি গল্প কীভাবে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়, এটি এমনই একটি অনুসন্ধান।

প্রামাণ্যচিত্রের একটি অংশ দেখা গেছে, কপালে পতাকা বেঁধে ঘুরছেন—এমন একজনের কপালে গুলি করা হয়েছে। সেই কথা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা তাঁর বক্তব্যে বলেন, এমন দৃশ্য দেখার পর কোনো কথা বের হয় না। এর চেয়ে ট্র্যাজেডি আর কী হতে পারে!

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লেখক ও গবেষক গওহার নঈম ওয়ারা, গবেষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ, শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা, কলাম লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী সঞ্জীব দ্রং, সাইটসেভার্সের অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড কমিউনিকেশন কো-অর্ডিনেটর খোন্দকার সোহেল রানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তারিক মনজুর, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবেশ ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক কল্লোল মোস্তফা, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের হেড অব কমিউনিকেশনস আবদুল কাইয়ুম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানসহ জ্যেষ্ঠ কর্মীরা।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রথম আলোর ভূমিকা সম্পর্কে বলেন, তখন তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। যখন সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছিল, এসব তথ্য প্রকাশে বাধা দেওয়া হচ্ছিল। প্রথম আলো সাহসিকতার সঙ্গে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে মৃত্যুর হিসাব রেখেছে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন উৎস থেকে মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর প্রথম আলো তা প্রকাশ করেছে। প্রথম আলোর চেষ্টা ছিল সঠিক তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরও প্রথম আলো নানা উদ্যোগ নিয়ে মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে।

আরও পড়ুন৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশি হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহ চিত্র উঠে এল বিবিসির অনুসন্ধানে০৯ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ