সমর্থকদের জন্য শিরোপায় জিততে চায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
Published: 9th, May 2025 GMT
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে (ইপিএল) ১৫তম অবস্থানে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। অথচ এই দলটাই ইউরোপা লিগে এবারের মৌসুমে অদম্য। যে অ্যাথলেটিকো বিলবাও গোটা মৌসুমে লা লিগায় ১০ গোল হজম করেছিল, তাদেরই সেমিফাইনালের দুই লেগ মিলিয়ে ৭টা গোল দিয়েছে রেড ডেভিলসরা।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ইউরোপা লিগের ফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করেছেন। বৃহস্পতিবার (৮ মে) সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ৪-১ গোলে জয় পেয়েছে রেড ডেভিলরা। ম্যাচ জয়ের পর ইউনাইটেডের ম্যানেজার রুবেন আমোরিম বলেছেন, ক্লাবটির তাদের সমর্থকদের জন্য এই শিরোপা জয়ে দায়বদ্ধ।
প্রথম লেগে বিলবাওয়ের মাঠ থেকে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও বৃহস্পতিবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ফিরতি লেগে নেমেছিল ইউনাইটেড। প্রথমার্ধে বিলবাওয়ের হয়ে মিকেল জাউরেগিজারের ৩০ গজ দূর থেকে করা গোল তাদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেয়।
আরো পড়ুন:
ইপিএলে অবনমনের শঙ্কায় থাকা স্পার্সের ইউরোপায় চমক
‘ফুটবল ঈশ্বর আমাদের সঙ্গে নেই’- স্পার্স কোচ
ঠিক তখনই দৃশ্যপটে আবির্ভাব মেসন মাউন্টের। লেনি ইয়োরোর ছোট্ট পাস ধরে প্রতিপক্ষ বক্সে টার্ন করে বুলেট গতির শটে বল জড়ান জালে। ইউনাইটেডের হয়ে এটি তার তৃতীয় গোল হলেও তা ছিল নিঃসন্দেহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই গোলেই ধূলিসাৎ হয়ে যায় বিলবাওয়ের ইতিহাস গড়ার আশার প্রদীপ।
বিরতির পর গোলের খেলা আরও জমে ওঠে। ক্যাসেমিরো ও রাসমুস হইলুন্ডের গোলে ব্যবধান বাড়ায় ইউনাইটেড। ম্যাচের ক্লাইম্যাক্সে আবারও আলো ছড়ান মাউন্ট, ৪৫ গজ দূর থেকে দুর্দান্ত এক শটে বল জাল ছোঁয়ান ফাঁকা পোস্টে।
একটি হতাশাজনক মৌসুম থেকে কিছু সাফল্য পাওয়ার সুযোগ এসেছে ইউনাইটেডের। দলটির পর্তুগিজ কোচ আমোরিম বলেন, “এই কঠিন মৌসুমে যে সমর্থন (সমর্থকরা) দিয়েছে, তার জন্য এটি (শিরোপা) আমাদের তরফ থেকে ন্যূনতম প্রতিদান হওয়া উচিত। তবে আমি এখনই ফাইনাল নিয়ে চাপ অনুভব করছি। যদি আপনি জিততে না পারেন, তাহলে তার কোনো মূল্য নেই। আমরা সেখানে পৌঁছাতে পেরে খুশি। দেখা যাক কী হয়।”
ইউনাইটেড এই শিরোপা জেতার অর্থ হচ্ছে আগামী মৌসুমে ইউরোপের সেরা ক্লাব প্রতিযোগিতা চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলবে। যারা বর্তমানে প্রিমিয়ার লিগ টেবিলের ১৫তম স্থানে আছে। অনেকটা একই অবস্থা তাদের ফাইনালের প্রতিপক্ষে টটেনহ্যামে হটস্পারেরও। লন্ডনের ক্লাবটি ইপিএল টেবিলের ১৬তম অবস্থানে। অন্যদিকে স্পার্সের সাথে শেষ তিন দেখায় হেরেছে রেড ডেভিলরা।
“আমরা শেষ তিনটি ম্যাচ হেরেছি, তাই এই ম্যাচটি জিততেই পারি। আপনি যদি পরিসংখ্যানের দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন সেটা আমাদের জেতার পক্ষ্যেই আছে। উভয় দলই সবটা উজাড় করে খেলবে। দুই কোচের অবস্থা একই রকম। আমি জানি এঞ্জের আরও এক বছর সময় আছে, কিন্তু আমরা দুজনেই সংগ্রাম করছি। আমাদের বুঝতে হবে, একটি ফাইনাল প্রিমিয়ার লিগের থেকে একেবারেই আলাদা।”
টটেনহ্যামের বিপক্ষে ২১ মে বিলবাওয়ের সান মামেসে ইউরোপা লিগের ফাইনালে মুখোমুখি হতে চলেছে ইউনাইটেড।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র ফ ইন ল অবস থ ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
সেরা প্রধান শিক্ষিকা: শিক্ষক হয়ে ওঠার কারিগর বাবা
সরকারি ভালো চাকরি পেলেও বাবা করতে দেননি। শিক্ষক হয়ে ওঠার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তাঁর থেকে পেয়েছি। শিক্ষাজীবনে এমন কয়েকজন শিক্ষক পেয়েছি, যারা আমাকে শিখিয়েছেন– সফলতা পেতে হলে সব সময় সৎ, কর্মঠ ও প্রগতিশীল মানুষ হতে হবে। এসব ভালো মানুষের আশীর্বাদ দেশসেরা হতে সহায়তা করেছে।
কথাগুলো বলছিলেন নীলফামারীর সৈয়দপুরের সাবর্ডিনেট কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিউলি সুলতানা। তিনি সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ক্যাটেগরিতে প্রথম হয়েছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, একই স্কুলড্রেসে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছে। শিক্ষকরাও পরেছেন অ্যাপ্রোন। পরিপাটি শ্রেণিকক্ষ। পড়ার উপকরণের অভাব নেই। বিদ্যালয় মাঠের কোনায় ফুলের বাগান। সুন্দর খেলার মাঠ। প্রধান শিক্ষকের কক্ষের শোভা বাড়িয়েছে সিটিজেন চার্টার ও সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার।
শিউলি বাংলাদেশ ডাকবিভাগে উচ্চ পদে চাকরি পান। তাঁর বাবা অবসরপ্রাপ্ত রেল কর্মকর্তা আব্বাস আলী চেয়েছেন, তাঁর মেয়ে শিক্ষক হোক। এজন্য যোগদান করতে দেননি। ২০০৭ সালে বাবার ইচ্ছাপূরণ হয়। শিউলি জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ দুরাকুঠি বাহাগিলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। পরে ২০০৯ সালে বদলি হয়ে আসেন সাবর্ডিনেট কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
গত ১০ মে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে শিউলিকে জাতীয় শিক্ষাপদক দেওয়া হয়। তবে গর্বের পদকটি বাবার হাতে তুলে দিতে পারেননি তিনি।
পদকটি নিয়ে ট্রেনে করে রাজধানী থেকে গ্রামের বাড়ি নওগাঁর আত্রাইয়ের শাহাগোলায় ফিরছিলেন শিউলি। জয়দেবপুর রেলস্টেশনে পৌঁছে তাঁর ৮৫ বছর বয়সী বাবার মৃত্যুর সংবাদ পান। বাবার দাফনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সম্প্রতি শিউলি ফিরেছেন প্রিয় কর্মস্থলে।
সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা সংবর্ধনার প্রস্তুতি নিলেও শিউলির অনুরোধে তা বাতিল করা হয়। তবে আগেই তারা বাবার মৃত্যুতে সমবেদনার পাশাপাশি দেশসেরা হওয়ায় ফোন করে ও এসএমএস পাঠিয়েছেন।
শিক্ষকতাকে শিউলি চাকরি নয়, ব্রত মনে করেন। শিক্ষক তাঁর ছাত্রের কাছের বন্ধু, তাঁর জীবনের দর্শন এমনকি পরিচালকও। ফলে শিক্ষককে চিন্তাচেতনা ও নৈতিকতায় সেভাবে গড়ে উঠতে হয়। শিউলি মনে করেন, বর্তমানে শিক্ষকরা এ দর্শন থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন। আবার শাসনের পরিমাণও অনেক কমে গেছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক স্খলনের প্রবণতা বেশি। পরিস্থিতির উত্তরণ এবং সুন্দর সমাজ গঠনে অভিভাবকসহ সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
দেশসেরা সাফল্যের বিষয়ে শিউলি সুলতানা জানান, পেশাদারিত্বে তিনি কোনো আপস করেন না। ফজর নামাজের পর থেকে শুরু করেন দিনের কর্মসূচি। শিক্ষার্থীদের আজ নতুন কী শিখাবেন, সে চিন্তা থেকে অন্তত একটি ভিডিও কনটেন্ট বানান। তাঁর মৌলিক পাঁচ শতাধিক শ্রেণি পাঠদানের কনটেন্ট রয়েছে।
স্কুলে এসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম তদারকির পর দাপ্তরিক কাজ করেন। ক্লাস শুরুর আগে সহকর্মী শিক্ষকদের নিয়ে সারাদিনের পাঠদানের পরিকল্পনা ঠিক করেন। সহকারী শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন কিনা, তা তদারকি করেন। দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা পাঠদানের ব্যবস্থা করেন। এমনকি বাড়িতে গিয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন শিক্ষার্থীর। অভিভাবক সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও সমাজের দক্ষ মানুষের পরামর্শ নিয়ে স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা করে সফলতা পেয়েছেন বলে জানান শিউলি।
সৈয়দপুরের সাবর্ডিনেট কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৪০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। অবকাঠামো সংকটের কারণে গত তিন বছর তৃতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সৈয়দপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল আলম জানান, শিউলি সুলতানা মেধাবী ও সৃজনশীল প্রধান শিক্ষিকা। দেশসেরা হতে যেসব সূচক প্রয়োজন, সবই অর্জন করেছেন তিনি।