এই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ লইয়া আমরা কী করিব
Published: 9th, August 2025 GMT
কৌতুকের বিষয় হলো যেসব রাজনৈতিক দল জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে খুব সোচ্চার ছিল, এটি প্রকাশের পর তারা হতাশা ব্যক্ত করেছে, আর যেসব দল ঘোষণাপত্র নিয়ে এত দিন তেমন উৎসাহ দেখায়নি, তারা অকুণ্ঠচিত্তে স্বাগত জানিয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, আজ (৫ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টা দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন, একটি জুলাই ঘোষণাপত্র, আরেকটি জাতির উদ্দেশে ভাষণের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা। আমরা দুটিকেই স্বাগত জানাই। ঘোষণাপত্রকে স্বাগত জানিয়েছে নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিও। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা.
সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে কিছু বিষয় অনুপস্থিত থেকে গেছে। তাঁর ভাষায় ‘ঘোষণাপত্রে উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ের কথা বলা হয়েছে; কিন্তু এই ভূখণ্ডের মানুষের উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ের অন্যতম রেফারেন্স পয়েন্ট ১৯৪৭-কে এখানে উল্লেখ করা হয়নি। আমরা মনে করি, এই বাংলাদেশের বা এই ভূখণ্ডের একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র পাওয়ার পেছনে ১৯৪৭, ১৯৭১ এবং আমাদের চব্বিশের আন্দোলন, এই সবকিছুর একটি সম্মিলন এই ঘোষণাপত্রকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারত।’
সার্বভৌম রাষ্ট্র পাওয়ার পেছনে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা থাকলেও ১৯৪৭ কীভাবে ভূমিকা রেখেছে, তা বোধগম্য নয়। সাতচল্লিশের দ্বিজাতিতত্ত্ব নাকচ করেই একাত্তর হয়েছে। তদুপরি ১৯৪৭ সালে বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্ত বাংলা বিভক্ত হোক, চায়নি। চেয়েছে বাঙালি হিন্দু মধ্যবিত্ত (দেখুন বেঙ্গল ডিভাইডেড, জয়া চ্যাটার্জী)।
খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার পাঠ করা জুলাই ঘোষণাপত্র, ঘোষণার আয়োজন এবং একটিমাত্র দলের সঙ্গে আলাপের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা—সবকিছুই প্রমাণ করে, ইসলামপন্থীদের মতামত, আত্মত্যাগ ও সাংগঠনিক ভূমিকাকে অবজ্ঞা করা হয়েছে।’
আরও পড়ুনজুলাই ঘোষণাপত্র: জন-আকাঙ্ক্ষা এবং রাষ্ট্রের অভিপ্রায়০৮ আগস্ট ২০২৫২০১৩ সালের শাপলা চত্বর গণহত্যা ও পিলখানা ট্র্যাজেডির পাশাপাশি ১৯৪৭ সালের আজাদির উল্লেখ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। গণ অধিকার পরিষদ বলেছে, ‘মিথ্যা ইতিহাসের ওপর জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে।’ ঘোষণাপত্রের সমালোচনা করেছে গণফোরামও, তবে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে।
স্বাধীন বাংলাদেশে ’৪৭-এর আজাদি নিয়ে যাঁরা কান্নাকাটি করছেন, তাঁদের রাজনৈতিক চরিত্র বুঝতে গবেষণার প্রয়োজন হয় না। অতীতের ‘লিগ্যাসি’ যাঁদের তাড়িয়ে বেড়ায়, তাঁরা এই কাজ করবেনই। কিন্তু যে তরুণেরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সাতচল্লিশের আজাদির প্রতি তঁাদের মোহগ্রস্ততা আমাদের উদ্বিগ্ন করে।
উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ২৮ অনুচ্ছেদের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন এবং গণ-অভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতির ঘোষণা দেন। ঘোষণাপত্র ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে রাজনীতিকদের দলীয় ও ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে; কিন্তু ইতিহাসের কঠিন সত্য অস্বীকার বা অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে ওয়ার ক্রাইম ফাইলসখ্যাত যুক্তরাজ্যের সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের প্রতিক্রিয়াটি বিশ্লেষণ করা যেতে পারে (আশির দশকে এই প্রামাণ্যচিত্র করে তিনিই প্রথম একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন)।
ঘোষণাপত্রের বিচারে আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও আগামী ভোটের হিসাব–নিকাশ থাকা অস্বাভাবিক নয়; কিন্তু সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের পর্যবেক্ষণ অবশ্যই এসবের ঊর্ধ্বে। যাঁরা আজ তাঁর ইতিহাস বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময় তাঁর লেখাগুলো পুনঃপাঠ করতে বলব।নিজের ফেসবুক পোস্টে বার্গম্যান লিখেছেন, ‘এই ঘোষণাপত্রে তুলে ধরা ইতিহাসের বেশির ভাগ অংশ, একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ নিয়ে বর্ণনা অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট ও একতরফা। যাঁরা আওয়ামী লীগকে ঘৃণা করেন, এতে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। এই ঘৃণা দলটি সরকারে থাকাকালে যা করেছে, শুধু সে জন্য নয়; বরং দলটি সম্পর্কে তাঁদের মনোভাবের জন্য, এটিকে একটি রাজনৈতিক বৈরিতা বলা যায়।
ঘোষণাপত্রের অনেকটাই পড়ে মনে হয়, যেন এটি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের বিরোধী ও সমালোচকদের লেখা একটি রাজনৈতিক বক্তব্য।’ তাঁর অভিযোগ, ১৯৭১ সালের যুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগ যে রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক ইতিহাস ব্যবহার করেছিল, এই বয়ান তার চেয়ে বেশি সমস্যা তৈরি করতে পারে।
ডেভিড বার্গম্যানের মতে, ঘোষণাপত্রে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনকালকে শুধু একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশালের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। যুদ্ধপরবর্তী জাতিগঠনে আওয়ামী লীগ যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করেছিল, সেগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে।
আরও পড়ুনজুলাই ঘোষণা, জুলাই সনদ এবং গণমাধ্যম০৩ জুলাই ২০২৫ঘোষণাপত্রে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে; কিন্তু এই মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব কারা দিয়েছিলেন, তাঁদের নাম নেই। এতে ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতি, এর কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের ফলে স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের জন–আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু গত ৫৩ বছরে কোনো সরকার জন–আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পেরেছে, এমন প্রমাণ নেই। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখার নজিরও নেই।
ঘোষণাপত্রে আওয়ামী লীগের একদলীয় শাসন কায়েম এবং ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহি-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যে স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও ৩ নভেম্বর যে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়, তার উল্লেখ না থাকারও সমালোচনা করেন বার্গম্যান। ঘোষণাপত্রে আশির দশকে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯় বছর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের কথা আছে; কিন্তু খন্দকার মোশতাক আহমদের সামরিক শাসন জারির কথা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনজুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে যা যা থাকা উচিত১৯ এপ্রিল ২০২৫ঘোষণাপত্রে এক–এগারোর ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদের পথ সুগম করার কথা বলা হয়। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনের উল্লেখ না থাকাটা সত্য লুকানোরই প্রয়াস। ঘোষণাপত্রে তিনটি প্রহসনমূলক নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে, (২০১৪, ২০১৮ ও ২০১৮)।
ঘোষণাপত্রে হাসিনা সরকারের আমলে তাঁরই নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক, দুর্নীতিগ্রস্ত ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার কথা বলা হয়েছে, তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলবে না। কিংবা প্রশ্ন তুলবে না আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি–শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকারের অভিপ্রায় নিয়েও।
২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের রায়ের মর্যাদা আওয়ামী লীগ রক্ষা করেনি, সে কথা আমরা জোর দিয়েই বলব। তারা তিনটি প্রহসনমূলক নির্বাচন করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চেয়েছিল, তা–ও সত্য। কিন্তু ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনার ক্ষমতা আরোহণের কথা বলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারীদেরও আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়, যাঁদের কেউ কেউ বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন।
ঘোষণাপত্রের বিচারে আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও আগামী ভোটের হিসাব–নিকাশ থাকা অস্বাভাবিক নয়; কিন্তু সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের পর্যবেক্ষণ অবশ্যই এসবের ঊর্ধ্বে। যাঁরা আজ তাঁর ইতিহাস বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময় তাঁর লেখাগুলো পুনঃপাঠ করতে বলব।
সে সময়ে এই সাংবাদিক ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলার বিচারপ্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে তথ্যপ্রমাণসহ এর সমালোচনা করেছেন। এ কারণে তিনি আওয়ামী লীগ শাসনামলে বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় অবাঞ্ছিত ছিলেন। জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে তাঁর বর্তমান পর্যবেক্ষণও সেই সত্যানুসন্ধানের অংশ বলে মনে করি।
● সোহরাব হাসান প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি
[email protected]
* মতামত লেখকের নিজস্ব
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড ভ ড ব র গম য ন র র জন ত ক সরক র র আম দ র প রক শ উল ল খ প ঠ কর আওয় ম আগস ট ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
উড়োজাহাজের চাকার বক্সে ঢুকে কাবুল থেকে দিল্লিতে আফগান কিশোর
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে এক কিশোর উড়োজাহাজের চাকা রাখার বক্সে ঢুকে (ল্যান্ডিং গিয়ার বক্স) ভারতের রাজধানী দিল্লি পৌঁছে গেছে। তবে সে সুস্থ আছে।
অবশ্য ১৩ বছর বয়সী ওই আফগান কিশোর ভারত নয়, যেতে চেয়েছিল ইরানে। এ লক্ষ্যে রোববার ভোরে সে গোপনে কাবুল বিমানবন্দরের ভেতরে ঢুকেছে। তারপর সবার চোখ এড়িয়ে যাত্রীদের একটি দলের সঙ্গে রানওয়েতে চলে যায়। সেখানে সে কেএএম এয়ারের উড়োজাহাজের চাকা রাখার বক্সের ভেতর লুকিয়ে পড়ে। তাঁর কাছে শুধু একটি লাল রঙের অডিও স্পিকার ছিল।
আফগান কিশোর যে উড়োজাহাজের চাকা রাখার বক্সে লুকিয়ে পড়েছিল, সেটি প্রায় ৯০ মিনিটের উড়াল শেষে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। কেএএম এয়ার আফগানিস্তানের বেসরকারি মালিকানাধীন একটি বিমান সংস্থা।
আফগান কিশোর যে উড়োজাহাজের চাকা রাখার বাক্সে লুকিয়ে পড়েছিল, সেটি প্রায় ৯০ মিনিটের উড়াল শেষে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।উড়োজাহাজটি বিমানবন্দরে অবতরণের পর বিস্ময়করভাবে ওই কিশোর জীবিত এবং একদম অক্ষত অবস্থায় চাকা রাখার বক্স থেকে বেরিয়ে আসে।
বিমানবন্দরের কর্মীরা রানওয়েতে সাদা রঙের কুর্তা-পায়জামা পরা একটি কিশোরকে এলোমেলোভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের জানান। তখনই কাবুল থেকে এক কিশোরের বিস্ময়কর যাত্রা সম্পর্কে তারা জানতে পারেন।
পরে সেদিন সন্ধ্যায় ওই কিশোরকে কাবুলগামী একটি ফ্লাইটে উঠিয়ে দেওয়া হয়।
সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্সের (সিআইএসএফ) এক কর্মকর্তা বলেন, ওই বালক আফগানিস্তানের কেএএম এয়ারের কাবুল থেকে দিল্লিগামী একটি উড়োজাহাজের চাকা রাখার বক্সে গোপনে উঠে পড়ে। রোববার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ২০ মিনিটে সেটি দিল্লি পৌঁছায়।
সিআইএসএফের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে উড়োজাহাজের পেছন দিকের ল্যান্ডিং গিয়ার বক্সের ভেতর লুকিয়েছিল। সে আফগানিস্তানের কুন্দুজ শহরের বাসিন্দা।’
বিকেল ৪টার দিকে একই উড়োজাহাজে করে তাকে কাবুলে ফেরত পাঠানো হয়।...কিশোর বেরিয়ে আসার পর উড়োজাহাজটিতে প্রথমে নিরাপত্তা তল্লাশি চালানো হয়। পরে প্রকৌশলীরা সেটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি আছে কি না, তা পরীক্ষা করেন। পেছনের ল্যান্ডিং গিয়ার বক্সে একটি ছোট লাল রঙের অডিও স্পিকার পাওয়া যায়।
ওই কিশোরকে বিমানবন্দরের অভিবাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে নেওয়ার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারপর বিকেল ৪টার দিকে একই উড়োজাহাজে করে কিশোরকে কাবুলে ফেরত পাঠানো হয়।
বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ সাধারণত ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার ফুট উচ্চতা দিয়ে ওড়ে। ওই উচ্চতায় তাপমাত্রা মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যায়। এ ছাড়া উড়োজাহাজ যখন অত উঁচুতে ওড়ে, তখন প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হয়।
ইউএস ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৩২ জন এ কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।কেবিন চাপমুক্ত রাখার ব্যবস্থা থাকলেও নিচের চাকা রাখার বাক্সে তেমন ব্যবস্থা থাকে না। তাই সেখানে কেউ থাকলে তার অক্সিজেনের অভাবে, প্রচণ্ড চাপে এবং ঠান্ডায় জমে মরে যাওয়ার কথা। এমনকি চাকা ওঠা-নামার সময় মারাত্মক আঘাত পাওয়া বা পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে।
উড়োজাহাজের চাকা রাখার বক্সে লুকিয়ে দেশ ছাড়ার চেষ্টা এটাই প্রথম নয়। এমন ঘটনায় মৃত্যুর ঝুঁকি ৭৭ শতাংশের বেশি।
ইউএস ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ কাজ করতে গিয়ে ১৯৪৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৩২ জন প্রাণ হারিয়েছেন।