‘শিক্ষকদের মর্যাদা না দিলে জাতি এগোতে পারে না’
Published: 8th, August 2025 GMT
বাংলাদেশে শিক্ষার মানোন্নয়নে অনেক শিক্ষানীতি, শিক্ষা কমিশন হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র এখনো শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদা দিতে পারেনি। শিক্ষকদের মর্যাদা না দিলে জাতি এগোতে পারে না। বাংলাদেশ এখনো শিক্ষাবান্ধব কোনো সরকার পায়নি। তাঁরা সবাই একটা শিক্ষাবান্ধব সরকারের অপেক্ষায় আছেন, যে সরকার শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদা দেবে।
যশোরে ‘আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা ২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা এ কথাগুলো বলেন। আজ শুক্রবার বিকেলে শহরের সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মিলনায়তনে এ সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে কত প্রাণ হলো বলিদান’ শীর্ষক দেশাত্মবোধক গানটি গেয়ে শোনান সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের সভাপতি দীপঙ্কর দাস। সুধী সমাবেশে যশোরের শিক্ষক, সাহিত্যিক, লেখকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আলোচনায় অংশ নেন।
সুধী সমাবেশে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, বেগম রোকেয়া পদকজয়ী উন্নয়নকর্মী ও জয়তী সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক অর্চনা বিশ্বাস, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু মুর্তজা, যশোর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি শ্রাবণী সুর, সুরধনী সংগীত নিকেতনের সভাপতি হারুন অর রশিদ, মধুসূদন তারাপ্রসন্ন (এমএসটিপি) বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ খাইরুল আনাম, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম, ডাক্তার আবদুর রাজ্জাক মিউনিসিপাল কলেজের অধ্যক্ষ জে এম ইকবাল হোসেন, সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নাসরিন শিরিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর যশোর প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেন যশোর বন্ধুসভার সদস্যরা।
অনুষ্ঠানে ‘আখতার স্যার’ ও ‘মজুমদার স্যার’ শিরোনামে দুটি ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। শিক্ষকদের প্রতি সম্মান জানানো ভিডিও চিত্র দেখে উপস্থিত অতিথিরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এরপর দাঁড়িয়ে শিক্ষকদের প্রতি সম্মান জানান অতিথিরা।
আরও পড়ুন‘আমরা শিক্ষকেরা সঠিক থাকলে, শিক্ষার্থীরা উন্নতি করবেই’৪ ঘণ্টা আগেঅনুষ্ঠানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের সভাপতি দীপঙ্কর দাস বলেন, ‘বাংলাদেশ এখনো শিক্ষাবান্ধব কোনো সরকার পায়নি। আমাদের পরিবারে তিনজন শিক্ষক। কিন্তু সমাজে এবং রাষ্ট্রে শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হয়নি।’
কবি ও লেখক কাজী মাজেদ নেওয়াজ বলেন, ‘প্রাথমিক গণ্ডি পার করেছি ৪০ বছর আগে। শৈশবের যে শিক্ষকদের মুখ চোখের সামনে সামনে ভেসে উঠছে। তিনি ছিলেন লাইব্রেরিয়ান। শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে তিনি আমাদের ক্লাস নিতেন। তিনি আমাদের বড় বড় লেখকের গল্প শোনাতেন। আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। বড় হওয়ার পরে আমরা তাঁর সেই শিক্ষার গুরুত্ব বুঝেছি।’
আইপিডিসির ব্যবস্থাপক জসীম উদ্দীন বলেন, ‘শিক্ষকদের কারণে আজ আমি এখানে কথা বলতে পারছি। শিক্ষকেরা শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আবেগের একটা বড় জায়গা।’
২০১৯ সাল থেকে প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা দেওয়া শুরু হয়। এ বছর পঞ্চমবারের মতো এ সম্মাননা দেওয়া হবে আগামী অক্টোবর মাসে। আয়োজকেরা জানান, আগ্রহী ব্যক্তিরা অনলাইনে (www.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র প রথম আল অন ষ ঠ ন ন নয়ন
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি, এখন কী করবে ভারত-ইসরায়েল
বহু দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্য একের পর এক যুদ্ধের বৃত্তে ঢুকে পড়েছে। একের পর এক দেশ আক্রমণের শিকার হয়েছে, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। সব দিক বিবেচনায় মধ্যপ্রাচ্য হয়ে উঠেছে বিশ্বশক্তিগুলোর যুদ্ধক্ষেত্র। মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি নিয়ে তাদের উদ্বেগ কম, আগ্রহের জায়গা প্রাকৃতিক সম্পদ।
কাতারের দোহায় ইসরায়েলের হামলার পর উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর মধ্যে ‘মার্কিন নির্ভরযোগ্যতা’ নিয়ে ক্রমে সন্দেহ বাড়ছে। দ্য টাইমস অব ইসরায়েলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দোহায় হামলার আগে নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। যদিও ট্রাম্প পরে তা অস্বীকার করেছেন।
আসল ব্যাপার হলো ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা উপভোগ করে। স্বাভাবিকভাবেই এ সন্ধিক্ষণে সবার নজর ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ প্রকল্পের দিকে। কারণ, ইসরায়েলের এই প্রকল্প খোলাখুলিভাবে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর ওপর হুমকি তৈরি করেছে।
আরও পড়ুনযুবরাজ সালমান এক দশকে যেভাবে সৌদি আরবকে পাল্টে দিলেন১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ফলে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক, রাজনীতিবিদ ও গণমাধ্যম বিশ্লেষকেরা ইসরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে এবং সেটি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে আরব-মুসলিম দেশগুলোর সম্পর্ক কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন।
এই প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব ও পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের মধ্যে কৌশলগত প্রতিরক্ষা অংশীদারত্ব চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিতে পারে। এ অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ইউরোপ এবং পাকিস্তানের চিরশত্রু ও বিকাশমান অর্থনৈতিক শক্তি ভারতকে হতবাক করেছে।
সম্প্রতি ভারত যখন ‘ইসরায়েলি ধাঁচের সম্প্রসারণবাদের’ ঘোষণা দিয়ে আক্রমণ করে, তখন পাকিস্তান কার্যকরভাবে নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে। কয়েক বছর আগে প্রয়াত ব্রিটিশ সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক মন্তব্য করেছিলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ক্রমবর্ধমান সংঘাতে ইসরায়েল বড় ভূমিকা রাখছে।
এ বছরের শুরুতে তুরস্ক-পাকিস্তান-আজারবাইজানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তিটি মুসলিম দেশগুলোতে যে শঙ্কা বাড়ছে তারই প্রতিফলন।
পাকিস্তান-সৌদি আরব চুক্তি দিল্লি ও জেরুজালেমে সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হলেও ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ ও ‘অখণ্ড ভারত’ প্রকল্পের কারণে বিশ্বশান্তি হুমকির মুখে পড়ার বিষয়ে কোনো উদ্বেগ দেখা যায় না।ইসরায়েল ও ভারতের জোট এবং তাদের ‘সম্প্রসারণবাদী’ নীতির কারণে উদ্বেগ দিন দিন বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তিকে আগ্রাসী পরিকল্পনা হিসেবে নয়; বরং প্ররোচনাহীন হামলার বিরুদ্ধে একটি আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরেই বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন। গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে, ছয়টি মুসলিম দেশ বোমা হামলা চালিয়ে এবং মুসলমানদের হত্যা, হত্যাচেষ্টা, বাস্তুচ্যুতি ও স্থায়ীভাবে পঙ্গু করার পর নেতানিয়াহু এখন অভিযোগ তুলছেন—বিশ্বে ইসরায়েল যে ক্রমে নিঃসঙ্গ হয়ে উঠছে, এর জন্য দায়ী চীন, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো। তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘আমাদের অস্ত্রশিল্পকে আরও বিকশিত করতে হবে। আমরা একসঙ্গে এথেন্স ও সুপার স্পার্টা হব।’
আরও পড়ুনইসরায়েল-ভারত যেভাবে পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে চেয়েছিল২৬ জুন ২০২৫‘ফিফটি স্টেটস-ওয়ান ইসরায়েল’ শীর্ষক এক বিশাল সমাবেশে নেতানিয়াহু বলেন, ‘জীবনের মূল্য আইনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’। তাঁর এ বক্তব্যে ইঙ্গিত মেলে, সামনে আরও বড় যুদ্ধ অপেক্ষা করছে।
আসলে বৃহত্তর ইসরায়েল প্রকল্পের লক্ষ্য হলো পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশের অংশবিশেষ দখল করে নেওয়া। এর মধ্যে রয়েছে মিসর, জর্ডান, সিরিয়া, লেবানন ও সৌদি আরব। এটি স্বীকার করতেই হবে, এটি নিছক কল্পকাহিনি নয়; বরং ঠেকানো সম্ভব এমন এক বাস্তবতা।
সাম্প্রতিক একটি নিবন্ধে আমি লিখেছিলাম, ইসরায়েল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে একের পর এক মুসলিম দেশ ধ্বংস করছে। পশ্চিমা বিশ্ব ইসরায়েলকে নিঃশর্ত সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে এবং লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান, মিসর, এমনকি আরও দূরে মধ্যপ্রাচ্যে ভূমি দখলের অভিযানকে সমর্থন করছে। ‘ইহুদি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে’ কিংবা ‘বিশ্বকে নিরাপদ করা’—এই যুক্তিকে সামনে আনা হচ্ছে। ইসরায়েলের এ মারাত্মক অভিযান কোথায় গিয়ে শেষ হবে? এরপর কোন দেশ—পাকিস্তান, তুরস্ক, মিসর নাকি সৌদি আরব?
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের পর দুই দেশের নেতারা। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, রিয়াদ