ম্যানসিটির বাতিল ডি ব্রুইনিকে নিয়ে লিভারপুল-নাপোলির টানাটানি
Published: 9th, May 2025 GMT
মৌসুম শেষে ম্যানচেস্টার সিটি ছাড়বেন। এই খবর কেভিন ডি ব্রুইনি নিজের মুখেই দিয়েছেন। তবে বিস্ময়ের সঙ্গে। ম্যানসিটি তার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করবে না এই সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছিলেন তিনি। তবে বেলজিয়াম তারকা যে ফুরিয়ে যাননি তার প্রমাণ শেষ কয় ম্যাচেই দিয়েছেন।
বয়স ৩৩ বছর। শীর্ষ পর্যায়ে আরও অন্তত দুই বছর খেলার সামর্থ্য আছে ডি ব্রুইনির। এমনটাই বিশ্বাস করেন বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা এই মিডফিল্ডার। ক্রমাগত ইনজুরিতে পড়ায় সিটিজেনরা তার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করছে না। সৌদি কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের কোন ক্লাবেই তার ভবিষ্যত দেখা হচ্ছিল।
তবে ইউরোপের শীর্ষ পর্যায়ের ক্লাব ব্রুইনিকে দলে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সংবাদ মাধ্যম দ্য টাইমস দাবি করেছে, ইতালির লিগ জিততে যাওয়া নাপোলি শিবিরে সিটিজেন মিডফিল্ডারকে দেখতে চান অ্যান্তোনিও কন্তে। আগামী মৌসুমে শিরোপা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জের সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভালো করতে চান কন্তে।
নাপোলির আগ্রহের চেয়ে বড় খবর ডি ব্রুইনির প্রতি লিভারপুলের আগ্রহ। সাংবাদিক জিয়ানলুকা ডি মারজিও দাবি করেছে, ফ্রি এজেন্টে ডি ব্রুইনির মতো মিডফিল্ডার পাওয়া বড় ব্যাপার মনে করছে রেডসরা। ডি ব্রুইনি যোগ দিলে ট্রেন্ট অ্যালেক্সজান্ডার অর্নাল্ডের অভিজ্ঞতার অভাব পূরণ হবে, সঙ্গে মাঝমাঠ হবে শক্ত; এমনই মনে করছে লিভারপুল।
এর আগে ডি ব্রুইনিকে দলে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে ইংলিশ লিগের অ্যাস্টন ভিলা। উনাই এমেরি তার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছে বলে দাবি করেছে সংবাদ মাধ্যম। তখন ডি ব্রুইনিকে দলে নেওয়ার দৌঁড়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো ফায়ার। অ্যাস্টন ভিলার পক্ষ থেকে নাকি বলা হয়েছিল, ম্যানসিটির মতো বেতন দিতে না পারলেও ইউরোপে খেললে শীর্ষ পর্যায়ে থেকে বিশ্বকাপ খেলবে পারবেন ডি ব্রুইনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ভ ন ড ব র ইন ফ টবল দলবদল ব র ইন ক
এছাড়াও পড়ুন:
সেরা প্রধান শিক্ষিকা: শিক্ষক হয়ে ওঠার কারিগর বাবা
সরকারি ভালো চাকরি পেলেও বাবা করতে দেননি। শিক্ষক হয়ে ওঠার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তাঁর থেকে পেয়েছি। শিক্ষাজীবনে এমন কয়েকজন শিক্ষক পেয়েছি, যারা আমাকে শিখিয়েছেন– সফলতা পেতে হলে সব সময় সৎ, কর্মঠ ও প্রগতিশীল মানুষ হতে হবে। এসব ভালো মানুষের আশীর্বাদ দেশসেরা হতে সহায়তা করেছে।
কথাগুলো বলছিলেন নীলফামারীর সৈয়দপুরের সাবর্ডিনেট কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিউলি সুলতানা। তিনি সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ক্যাটেগরিতে প্রথম হয়েছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, একই স্কুলড্রেসে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছে। শিক্ষকরাও পরেছেন অ্যাপ্রোন। পরিপাটি শ্রেণিকক্ষ। পড়ার উপকরণের অভাব নেই। বিদ্যালয় মাঠের কোনায় ফুলের বাগান। সুন্দর খেলার মাঠ। প্রধান শিক্ষকের কক্ষের শোভা বাড়িয়েছে সিটিজেন চার্টার ও সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার।
শিউলি বাংলাদেশ ডাকবিভাগে উচ্চ পদে চাকরি পান। তাঁর বাবা অবসরপ্রাপ্ত রেল কর্মকর্তা আব্বাস আলী চেয়েছেন, তাঁর মেয়ে শিক্ষক হোক। এজন্য যোগদান করতে দেননি। ২০০৭ সালে বাবার ইচ্ছাপূরণ হয়। শিউলি জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ দুরাকুঠি বাহাগিলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। পরে ২০০৯ সালে বদলি হয়ে আসেন সাবর্ডিনেট কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
গত ১০ মে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে শিউলিকে জাতীয় শিক্ষাপদক দেওয়া হয়। তবে গর্বের পদকটি বাবার হাতে তুলে দিতে পারেননি তিনি।
পদকটি নিয়ে ট্রেনে করে রাজধানী থেকে গ্রামের বাড়ি নওগাঁর আত্রাইয়ের শাহাগোলায় ফিরছিলেন শিউলি। জয়দেবপুর রেলস্টেশনে পৌঁছে তাঁর ৮৫ বছর বয়সী বাবার মৃত্যুর সংবাদ পান। বাবার দাফনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সম্প্রতি শিউলি ফিরেছেন প্রিয় কর্মস্থলে।
সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা সংবর্ধনার প্রস্তুতি নিলেও শিউলির অনুরোধে তা বাতিল করা হয়। তবে আগেই তারা বাবার মৃত্যুতে সমবেদনার পাশাপাশি দেশসেরা হওয়ায় ফোন করে ও এসএমএস পাঠিয়েছেন।
শিক্ষকতাকে শিউলি চাকরি নয়, ব্রত মনে করেন। শিক্ষক তাঁর ছাত্রের কাছের বন্ধু, তাঁর জীবনের দর্শন এমনকি পরিচালকও। ফলে শিক্ষককে চিন্তাচেতনা ও নৈতিকতায় সেভাবে গড়ে উঠতে হয়। শিউলি মনে করেন, বর্তমানে শিক্ষকরা এ দর্শন থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন। আবার শাসনের পরিমাণও অনেক কমে গেছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক স্খলনের প্রবণতা বেশি। পরিস্থিতির উত্তরণ এবং সুন্দর সমাজ গঠনে অভিভাবকসহ সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
দেশসেরা সাফল্যের বিষয়ে শিউলি সুলতানা জানান, পেশাদারিত্বে তিনি কোনো আপস করেন না। ফজর নামাজের পর থেকে শুরু করেন দিনের কর্মসূচি। শিক্ষার্থীদের আজ নতুন কী শিখাবেন, সে চিন্তা থেকে অন্তত একটি ভিডিও কনটেন্ট বানান। তাঁর মৌলিক পাঁচ শতাধিক শ্রেণি পাঠদানের কনটেন্ট রয়েছে।
স্কুলে এসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম তদারকির পর দাপ্তরিক কাজ করেন। ক্লাস শুরুর আগে সহকর্মী শিক্ষকদের নিয়ে সারাদিনের পাঠদানের পরিকল্পনা ঠিক করেন। সহকারী শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন কিনা, তা তদারকি করেন। দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা পাঠদানের ব্যবস্থা করেন। এমনকি বাড়িতে গিয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন শিক্ষার্থীর। অভিভাবক সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও সমাজের দক্ষ মানুষের পরামর্শ নিয়ে স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা করে সফলতা পেয়েছেন বলে জানান শিউলি।
সৈয়দপুরের সাবর্ডিনেট কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৪০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। অবকাঠামো সংকটের কারণে গত তিন বছর তৃতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সৈয়দপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল আলম জানান, শিউলি সুলতানা মেধাবী ও সৃজনশীল প্রধান শিক্ষিকা। দেশসেরা হতে যেসব সূচক প্রয়োজন, সবই অর্জন করেছেন তিনি।