ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একই স্থানে দুটি ট্রেন লাইনচ্যুত, সাড়ে ১০ ঘণ্টা পর চলাচল স্বাভাবিক
Published: 10th, May 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার সাড়ে ১০ ঘণ্টা পর আজ শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পৈরতলা লেভেলক্রসিং এলাকায় (বিশ্বরোড গেট) মালবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। উদ্ধার কার্যক্রমে শেষে আজ ভোরে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। কিন্তু এক ঘণ্টা পর একই স্থানে কক্সবাজার এক্সপ্রেসের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। পরে বগিটি উদ্ধারের পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত সোয়া ১০টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী মালবাহী একটি কনটেইনার ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন অতিক্রম করে। রাত ১০টা ২২ মিনিটের দিকে জেলা শহরের পৈরতলা লেভেলক্রসিং এলাকায় (বিশ্বরোড গেট) মালবাহী কনটেইনার ট্রেনের পেছন থেকে ১১ নম্বর বগির ট্রলি থেকে উল্টে চট্টগ্রাম অভিমুখী ডাউনলাইনে গিয়ে পড়ে। এতে ওই বগির কয়েকটি চাকা–ট্রলি খুলে রেললাইনের ওপর পড়ে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা–সিলেট রেলপথের আপ ও ডাউনলাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে পৈরতলা লেভেলক্রসিং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের মধ্যে পড়েছে। পৈরতলা লেভেলক্রসিং এলাকায় বগি উল্টে যাওয়ায় কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আজ ভোর পাঁচটার দিকে আখাউড়া রেলওয়ে জংশন থেকে আসা উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেন মালবাহী বগিটি উদ্ধার করে লাইন সচল করে। সাড়ে সাত ঘণ্টা পর সড়ক পথে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিকে লাইনচ্যুত হওয়া মালবাহী ট্রেনের বগি উদ্ধারের পর একই স্থানে আবারও আজ ভোর ছয়টার দিকে যাত্রীবাহী কক্সবাজারগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেসের একটি বগির দুটি চাকা লাইনচ্যুত হয়। এতে ডাউনলাইনে চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সকাল সাড়ে আটটার দিকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আখাউড়া থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন আসার পর আজ ভোরে মালবাহী ট্রেনের বগি উদ্ধার করে। এর এক ঘণ্টা পর একই স্থানে কক্সবাজার এক্সপ্রেসের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। উদ্ধারকারী ট্রেন আগে থেকে ঘটনাস্থলে থাকায় বগিটি দ্রুততম সময়ে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। সকাল সাতটার আপলাইনে এবং সাড়ে আটটায় ডাউনলাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় একই স থ ন আজ ভ র প রতল
এছাড়াও পড়ুন:
কারো চোখে পানি, ফেলছেন স্বস্তির শ্বাস: মামদানির জয়ে কী বললেন গার্ডিয়ানের পাঠকেরা
‘নিউইয়র্ককে যেন আবার নিউইয়র্ক বলে মনে হচ্ছে। এটা শুধু একটা নির্বাচন ছিল না। সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন, যেন বহুদিন ধরে লাখ লাখ মানুষ তাঁদের শ্বাস আটকে রেখেছিলেন।’ কথাগুলো বলছিলেন নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটান এলাকার বাসিন্দা কেইথ অ্যালান ওয়াটস। শহরের মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির জয়ে যারপরনাই খুশি তিনি।
নিউইয়র্কের বাসিন্দারা মামদানির জয়ে খুশি হবেন—এটাই স্বাভাবিক। তাঁদের সমর্থনেই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে মেয়র পদে জিতেছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির এই প্রার্থী। তবে নিউইয়র্কের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য শহরের বাসিন্দারাও মামদানিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তাঁর ওপর ভরসা করছেন। তাঁরা বলছেন, ‘মামদানির জয় নির্মল বাতাসে নতুন করে শ্বাস নেওয়ার মতো।’
গত মঙ্গলবার স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে টপকে বিজয়ী হন ৩৪ বছর বয়সী মামদানি। এ নিয়ে পাঠকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। এর জবাবে নিউইয়র্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের শত শত পাঠক তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার গার্ডিয়ানের ওয়েবসাইটে সেগুলো প্রকাশ করা হয়েছে।
তরুণদের আস্থানির্বাচনী প্রচারে নিউইয়র্কবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মামদানি। ম্যানহাটানের বাসিন্দা অ্যালান ওয়াটস দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে নিউইয়র্কবাসী একধরনের গ্লানির মধ্যে ছিলেন। বাড়িভাড়া বাড়ছিল, বেতন বৃদ্ধি থমকে ছিল, আশা হারিয়ে গিয়েছিল। তবে মামদানি যখন মুখ খুললেন, মনে হলো তিনি মানুষের জন্যই কথা বলছেন।’
মামদানিকে নিয়ে একই ধারণা নিউইয়র্কের বাসিন্দা মার্গারেট কোগানের। ৮১ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা এখন অবসর যাপন করছেন। তাঁর আশা—মামদানির নেতৃত্বে নিউইয়র্ক শহরে বসবাস করাটা আরও সাশ্রয়ী হবে; বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণি সুবিধা পাবেন, যাঁদের ওপর সবাইকে নির্ভর করতে হয়। মামদানির জয় ‘ঘুমিয়ে থাকা’ ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য একটি জাগরণের বার্তা বলে মনে করেন তিনি।
মার্গারেট কোগানের বয়স হয়েছে। মার্কিন রাজনীতির বহু কিছু দেখেছেন তিনি। সেদিক দিয়ে ৩২ বছর বয়সী ডিলান এখন তরুণ। তিনি রাজনীতিতে আগ্রহ হারাচ্ছিলেন। তবে মামদানির প্রচারে মুগ্ধ ডিলান বলেন, তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারি বা প্রার্থী বাছাইপর্বে ভোট দেননি। শেষ পর্যন্ত প্রচারে মামদানির উৎসাহ–উদ্দীপনা দেখে মেয়র নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন।
নিউইয়র্কের বাইরেও আনন্দের ছোঁয়ামার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রক্ষণশীল রাজনীতির মুখে মামদানির এই জয়ের আনন্দে ভাগ বসিয়েছেন নিউইয়র্কের বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা। যেমন ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা স্কট রিচিংয়ের কথা বলা যায়। ‘মেধাবী তরুণ’ মামদানি যেভাবে সাহসিকতার সঙ্গে ট্রাম্প ও ধনকুবেরদের একহাত নিয়েছেন, তা মন জয় করে নিয়েছে ৭৪ বছর বয়সী এই নারীর। রিচিংয়ের এখন নজর নিউইয়র্কের ভবিষ্যতের দিকে।
স্কট রিচিং বলেন, ‘আমি জানি, প্রচারে মামদানি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার সব কটি পূরণ করতে পারবেন না। তবে আশা করি, নিউইয়র্কের যোগাযোগব্যবস্থা ও খাদ্যস্বল্পতার সমস্য নিয়ে কিছু করবেন। পাশাপাশি ধনীদের ওপর কর আরোপ করতে পারবেন। তিনি এগুলো করতে পারলে, আশা করা যায় তা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অন্যান্য নির্বাচনী প্রার্থীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’
মামদানির জয়ের খবরে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি টেনেসি অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা কেফিয়াস স্ট্রাচান (৫৪)। তিনি বলেন, বহু বছরের মধ্যে এই প্রথম ঘুম থেকে উঠে কোনো ভালো খবর পেয়েছেন। আর মিশিগানের বাসিন্দা ৩২ বছর বয়সী ডেভন বলেন, ‘মামদানিকে কেন্দ্রীয় সরকার নানাভাবে বাধা দেবে জানি। আশা করি, ভোটাররা তা বুঝতে পারবেন এবং বামপন্থী রাজনীতির প্রতি আশা হারাবেন না।’
আরও পড়ুনপ্রভাবশালী মার্কিন ডানপন্থীরা কীভাবে মামদানিকে আইএসের সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন৭ ঘণ্টা আগেউদ্বিগ্ন অনেকেমামদানিকে নিয়ে আশাবাদের পাশাপাশি তাঁর সামনে থাকা কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন অনেকে। ফ্লোরিডার বাসিন্দা ৭১ বছর বয়সী ব্রুস ওয়েকস বলেন, মামদানির জয় নিউইয়র্ক ও পুরো দেশের জন্য বড় একটি মোড়বদল। তাঁকে এখন বড় লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে। ট্রাম্প প্রশাসন যেকোনো উপায়ে মেয়র হিসেবে তাঁর যাত্রায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে।
মেয়র হিসেবে মামদানির কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই—এ বিষয় নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন বলেন, মামদানি নিউইয়র্ক নিয়ে যেসব পরিকল্পনা করেছেন, তার অনেকগুলো ‘অবাস্তব’। তাই ভবিষ্যতে সেগুলো কতটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে শঙ্কা আছে তাঁর।
তবে উদ্বেগ ও শঙ্কার মধ্যেও সবশেষে নিউইয়র্কের জন্য ভালোটাই হবে বলে গার্ডিয়ান–এর কাছে আশা প্রকাশ করেছেন বেশির ভাগ নিউইয়র্কবাসী। আগামী জানুয়ারিতে মেয়র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন মামদানি। শহরটির বাসিন্দা, ৩৩ বছর বয়সী কিম্বারলি মাইকেল বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, ভালো কিছু হবে। এখন যেটি দরকার, তা হলো আমাদের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকা।’
আরও পড়ুনমামদানি একই সঙ্গে ভারতের গর্ব, আবার মোদির মতো নেতাদের কঠোর সমালোচক৩ ঘণ্টা আগে