ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার সাড়ে ১০ ঘণ্টা পর আজ শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পৈরতলা লেভেলক্রসিং এলাকায় (বিশ্বরোড গেট) মালবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। উদ্ধার কার্যক্রমে শেষে আজ ভোরে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। কিন্তু এক ঘণ্টা পর একই স্থানে কক্সবাজার এক্সপ্রেসের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। পরে বগিটি উদ্ধারের পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত সোয়া ১০টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী মালবাহী একটি কনটেইনার ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন অতিক্রম করে। রাত ১০টা ২২ মিনিটের দিকে জেলা শহরের পৈরতলা লেভেলক্রসিং এলাকায় (বিশ্বরোড গেট) মালবাহী কনটেইনার ট্রেনের পেছন থেকে ১১ নম্বর বগির ট্রলি থেকে উল্টে চট্টগ্রাম অভিমুখী ডাউনলাইনে গিয়ে পড়ে। এতে ওই বগির কয়েকটি চাকা–ট্রলি খুলে রেললাইনের ওপর পড়ে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা–সিলেট রেলপথের আপ ও ডাউনলাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে পৈরতলা লেভেলক্রসিং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের মধ্যে পড়েছে। পৈরতলা লেভেলক্রসিং এলাকায় বগি উল্টে যাওয়ায় কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আজ ভোর পাঁচটার দিকে আখাউড়া রেলওয়ে জংশন থেকে আসা উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেন মালবাহী বগিটি উদ্ধার করে লাইন সচল করে। সাড়ে সাত ঘণ্টা পর সড়ক পথে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এদিকে লাইনচ্যুত হওয়া মালবাহী ট্রেনের বগি উদ্ধারের পর একই স্থানে আবারও আজ ভোর ছয়টার দিকে যাত্রীবাহী কক্সবাজারগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেসের একটি বগির দুটি চাকা লাইনচ্যুত হয়। এতে ডাউনলাইনে চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সকাল সাড়ে আটটার দিকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আখাউড়া থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন আসার পর আজ ভোরে মালবাহী ট্রেনের বগি উদ্ধার করে। এর এক ঘণ্টা পর একই স্থানে কক্সবাজার এক্সপ্রেসের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। উদ্ধারকারী ট্রেন আগে থেকে ঘটনাস্থলে থাকায় বগিটি দ্রুততম সময়ে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। সকাল সাতটার আপলাইনে এবং সাড়ে আটটায় ডাউনলাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় একই স থ ন আজ ভ র প রতল

এছাড়াও পড়ুন:

অনলাইন জুয়ায় সর্বস্ব হারিয়ে দুধ দিয়ে গোসল, ভিডিও ভাইরাল

প্রথমে কাপড়চোপড় এবং পরে পুরাতন মোটরসাইকেলের প্রায় ২১ বছরের ব্যবসা কুষ্টিয়ার কুমারখালীর যুবক সাগর হোসেনের। ব্যবসায়ের টাকা দিয়ে তিলেতিলে গড়েছেন পাকা প্রাচীরে ঘেরা টিনশেডের বিলাসবহুল আধাপাকা বাড়ি। চলতেন দামি মোটরসাইকেলে। সবমিলিয়ে প্রায় ৩৬ লাখ টাকার সম্পত্তির মালিক ছিলেন সাগর। 

তবে এসব এখন তার কাছে শুধুই স্মৃতি। একবছরের মাথায় অনলাইন জুয়ায় সর্বস্ব হারিয়ে পথের ফকির। এমন সর্বনাশা জুয়া আর খেলবেন না বলে সবার সামনে দুধ দিয়ে গোসল করেছেন তিনি। 

শুক্রবার (৯ মে) সন্ধ্যায় কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের পান্টি গোলাবাড়ি বাজারে ঘটে এ গোসলের ঘটনা। সাগর হোসেন ওই এলাকার মো. চাঁদ আলীর ছেলে। পরে রাতে সেই গোসলের এক মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও স্যোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় কয়েকজন প্লাস্টিকের মগ ও কোমল পানিয়ের কাটা বোতল দিয়ে সাগরের মাথায় দুধ ঢালছেন। উৎসুক জনতা ভিড় করেছেন। কেউ কেউ মোবাইলে তা ভিডিও ধারণ করছেন। আর সাগর বলছেন, ‘‘ প্রিয় ভাই ও বন্ধুরা। আমার ছিল বিলাসিতার জীবন। পান্টি একটা মোটরসাইকেলের শোরুম ছিল। আমি খুব সখ করে একটা বাড়ি করেছিলাম। এই মোবাইলে খেলা করে আমার শোরুম চলে গেছে, বাড়ি চলে গেছে। আমার এ দৃশ্য দেখে আপনারা শিক্ষা নেন। কেউ জুয়ো খেলবেন না। অসৎ পথে কেউ বড়লোক হতি পারে না।”

ভিডিওতে আরো বলতে শোনা যায়, “দেহ শরীর সব নষ্ট করে ফেলেছি। আত্মহত্যার পথ বাঁচে নিছিলাম। তিনডে মেয়ে সন্তান আছে। সেজন্য আর কোনোদিন এই জুয়ো খেলব না, খেলব না, খেলব না। মোবাইলের জুয়ো আমি কোনোদিন খেলব না।”

রাতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পান্টি গোলাবাড়ি বাজারের পাশেই সাগরের বিক্রি হওয়া আধাপাকা বাড়ি। পাকা প্রাচীরে ঘেরা বাড়িটিতে লোহার কেচি গেট। বাড়ির ভিতরে ও প্রাচীরে জ্বলছে বাহারি রঙের আলো। ভিতরের কক্ষগুলো সাজানো ও পরিপাটি। খাট ও আসবাবপত্র নেই। উৎসুক জনতা বাড়িতেও ভিড় করেছেন।

এসময় আলাপকালে সাগর হোসেন বলেন, “মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। প্রথমে কাপড়চোপড়ের ব্যবসা ছিল। পরে পুরাতন মোটরসাইকেলের শোরুম দিছিলাম। আল্লাহর রহমতে ভালই চলছিল। মাসে প্রায় ৪০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় হতো। প্রায় ২১ বছর ধরে সৎ পথে আয় করে বাড়ি, গাড়ি সব করেছিলাম। কিন্তু মাত্র এক বছরে অনলাইন জুয়া ‘ওয়ান এক্স বেট’ ও ‘গ্লোরি ক্যাসিনো’ খেলে সর্বশান্ত হয়েছি। ২১ লাখ টাকায় বাড়ি এবং ১৫ লাখ টাকার শোরুম বিক্রি করেও দেনা শোধ করতে পারিনি।” 

তিনি আরো বলেন, “ব্যবসা বন্ধ করে ধারদেনা ও সুদে টাকা নিয়ে জুয়া খেলতাম। পরে সবকিছু বিক্রি করে দিয়েও এখনও সাড়ে ৩ লাখ টাকা দেনা। গত বৃহস্পতিবার আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছিলাম। পরে স্থানীয়রা টের পেয়ে দুধ দিয়ে গোসলের আয়োজন করে।”

তিনি বলেন, “পান্টি এলাকার শত শত মানুষ এই জুয়া খেলেন। আর কেউ যেন লোভে পড়ে সর্বশান্ত না হন। মানসম্মান ত্যাগ করে জনসম্মুখে দুধ দিয়ে গোসল করেছি। জুয়ায় একদিনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পেয়েছি। আর খোয়া গেছে প্রায় তিন লাখ টাকা।”

যাওয়ার জায়গা নেই। ক্রেতা মানবিক কারণে এখনও বিক্রিত বাড়িতেই থাকতে দিয়েছেন বলে জানালেন সাগরের স্ত্রী কনা খাতুন। তিনি বলেন, “অনলাইন জুয়ায় আমার বাড়ি, গাড়ি, গহনা, আসবাবপত্র, সম্পদ সব চলে গেছে। আর কেউ কারো সাথে যেন এমন না হয়। সেজন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।”

পান্টি বাজারের রাসেল কম্পিউটার দোকানের প্রোফাইটর রাসেল হোসেন বলেন, “সাগরের আগে মোটরসাইকেলের শোরুম ছিল। দামি গাড়ি ও বাড়ি ছিল। তবে জুয়া খেলে এখন পথের ফকির। আর জুয়া খেলবে না বলে আজ দুধ দিয়ে গোসল করেছেন তিনি।”

প্রতিবেশি রাশিদুল ইসলাম বলেন, “সবকিছু হারিয়ে সাগর আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। কিন্তু আমরা ১০ লিটার দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে তওবা পড়িয়েছি। যেন আর জুয়া না খেলে। আর অন্যরাও যেন সতর্ক হন। সেজন্য জনসম্মুখে গোসল করানো হয়েছে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, “দুধ দিয়ে গোসল করানোর খবর পেয়েছি। তবে সঠিক কারণ জানা যায়নি। অনলাইন জুয়ার বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/কাঞ্চন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ