পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে অনিশ্চিত সময় পার করছে উপমহাদেশের ক্রিকেটও। এ মাসেই পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফর এখন অনিশ্চিত।

আজ বিসিবির কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে বসেন বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ। সভার পর আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বিসিবি যদিও জানিয়েছে, পাকিস্তান সফরের আগে হতে যাওয়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজটি ঠিক সময়ে হবে, তবে পাকিস্তান সফর হবে কি না তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফদের নিরাপত্তাই বিসিবির কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সফর (পাকিস্তান) নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করে নেওয়া হবে, যেটা বাংলাদেশ ক্রিকেট ও দলের সর্বোচ্চ স্বার্থ দেখবে।’

এই বিবৃতির একটু আগেই মিরপুরের জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্সে সাঁতার ফেডারেশনের এক অনুষ্ঠানে কথা বলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সফর ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি, ‘বর্তমানে যে পরিস্থিতি, এর মধ্যে কোনো প্রকার ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না। পাকিস্তান অ্যাম্বাসি থেকেও আমাদের নিরাপত্তাঝুঁকির বিষয়টি জানিয়েছে। বিসিবি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা জানাবে।’

পাকিস্তান সফর এখনো স্থগিত করা না হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে হয়তো সে পথেই যাবে বিসিবি, পিছিয়ে দেওয়া হতে পারে এফটিপির অধীন সিরিজটি। পরিচালকদের আজকের সভায়ও সে রকম আলোচনা হয়েছে বলেই জানা গেছে। তবে বিসিবি চায়, দুই বোর্ডের বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে ঘোষণাটি আসুক পিসিবি থেকে। তাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সৌজন্যটা অন্তত রক্ষা হয়।

পাকিস্তান সফরে বাংলাদেশ দলের যাওয়ার কথা শারজায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুটি টি-টোয়েন্টির সিরিজ খেলে। বিসিবি জানিয়েছে, আমিরাত সিরিজটি নির্ধারিত সূচি অনুযায়ীই হবে। এ সময়ে পাকিস্তানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে বিসিবি। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে বলে আজ এক্স হ্যান্ডলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেটি হলে পরিস্থিতি বদলাতেও পারে।

ওদিকে পিএসএল খেলতে যাওয়া বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটার রিশাদ হোসেন ও নাহিদ রানা পাকিস্তান থেকে এরই মধ্যে দুবাই হয়ে দেশে ফিরেছেন। পিএসএলও আপাতত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ক স ত ন সফর পর স থ ত আম র ত

এছাড়াও পড়ুন:

বৈষম্যের খাঁচা আদৌ কি আমরা ভাঙতে চাই

বাংলাদেশে বৈষম্য বলতে আমরা সাধারণত আয়, সুযোগ বা সামাজিক মর্যাদার পার্থক্য বুঝি। কিন্তু এই বৈষম্যের সবচেয়ে গভীর ও নীরব রূপটি লুকিয়ে আছে আমাদের চিন্তায়, সংস্কৃতিতে ও দৈনন্দিন আচরণে। এটিকে বলা যায় অন্তর্নিহিত বা মানসিক বৈষম্য।

চাকরিপ্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা হয়ে গেছে। প্রায় ১০০ জনের মধ্য থেকে মাত্র ৫ জনকে ডাকা হয়েছে মৌখিক পরীক্ষার জন্য। তাঁদের একজন নারী। লিখিত পরীক্ষায় তিনি সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলেন। শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক থেকেও তিনি এগিয়ে।

ইন্টারভিউ বোর্ডে আমি ছাড়া সবাই নারী। তাঁদের প্রায় সবাই উপমহাদেশের প্রখ্যাত জেন্ডারবিশেষজ্ঞ প্রয়াত কমলা ভাসিনের দীক্ষাপ্রাপ্ত। আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, চারজন পুরুষ প্রার্থীকে যেসব প্রশ্ন করা হয়নি, নারী প্রার্থীকে সেসব প্রশ্ন করা হচ্ছে।

প্রার্থীকে সক্ষমতা যাচাইমূলক প্রশ্নের বদলে তাঁর পারিবারিক দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন করার প্রতিযোগিতায় সবাই মেতে উঠলেন। তাঁর বিয়ের পরিকল্পনা, বিয়ের প্রথম বছরে সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা–অনিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন করা হলো। মা-বাবা মফস্​সলে থাকেন, তাঁরা ঢাকায় এসে মেয়ের সঙ্গে থাকতে চাইবেন কি না; ভবিষ্যৎ স্বামীর যদি বদলির চাকরি হয়, তাহলে তিনি এই চাকরির হ্যাপা সামলাতে পারবেন কি না, তা–ও বাদ গেল না। এ রকম ঘটনা এক–দুবার নয়, বারবার ঘটেছে।

নারীর প্রতি বৈষম্য না করার প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আমরা যতই অংশগ্রহণ করি না কেন, আমাদের মনমগজে গেঁথে থাকা বৈষম্যের লেজ সোজা হওয়ার নয়। এই সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া বা সোশ্যালাইজেশন প্রসেস আমাদের মগজে-মেজাজে গজানো বৈষম্যের চারায় সার–পানি দিতে থাকে। তাতে গাছটি তরতর করে বড় হতে থাকে।

এই বিষবৃক্ষ এতই ‘পয়মন্ত’ যে সেটি চিন্তায়, ভাবনায়, মননে সংস্কৃতির পরতে পরতে বৈষম্যকে বসিয়ে দেয়। ফলে মনের অজান্তেই আমরা বৈষম্যমূলক আচরণ করি। একেই মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, অবচেতন পক্ষপাত বা আনকনসাস বায়াস। সেখান থেকেই চাকরির সাক্ষাৎকারে নারী প্রার্থীকে বিব্রতকর প্রশ্ন করা হয়।

যাঁরা ফার্মগেট থেকে বাসে উঠে এদিক-ওদিক যাতায়াত করেন, তাঁরা লক্ষ করবেন, স্কুল-কলেজে যাওয়ার সময় শুধু ড্রেস দেখার পর বাসের চালকের সহকারী বা কন্ডাক্টরের গলার স্বর ও কথা বলার ভঙ্গি বদলে যায়। বাজারে কদর বেশি, এমন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আচরণ আর কম কদরের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আচরণের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য চোখে পড়ে।

আমাদের স্কুলেও দেখেছি, ঈদের ছুটির পর অনেকেই স্কুলড্রেসের বদলে ঈদের জামা পরে আসত। সেদিন শিক্ষকদের চোখেমুখে একধরনের অচেতন পক্ষপাতের ছাপ পড়তই। আমাদের অবচেতন মন কীভাবে যেন শিখিয়ে দিয়েছিল, পুরুষেরা পরিবারের কর্তা হবে, মেয়েদের দায়িত্ব সীমিত। 

ভিন্ন ধর্ম, জাতি বা পেশার মানুষকে মনে মনে অনুৎকৃষ্ট বা দ্বিতীয় শ্রেণির ভাবার কাজটাও শুরু হয় অবচেতন পক্ষপাত থেকে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কাছে বাড়ি ভাড়া না দেওয়া, ফ্ল্যাট বিক্রি না করা, শুভেচ্ছা বিনিময় থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি নানা কর্মকাণ্ড দেখা যায়।

বৈষম্য মগজে বাসা বাঁধে কীভাবে

আমাদের লোকগাথা, রূপকথা, প্রচলিত বাগ্​ধারা, শ্লোক—সর্বত্রই হয় বৈষম্যকে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে অথবা বৈষম্যের প্রচার–প্রসার করার চেষ্টা করা হয়েছে। ‘গরিবের আবার মান-ইজ্জত কী’—এসব কথা আমাদের মনের গভীরে আটকে থাকা এক অবচেতন বৈষম্যমূলক মনোভাবের আলামত।

আমাদের প্রবাদ-প্রবচন ও লোককথাও এই বৈষম্যের পক্ষে দাঁড়িয়ে যায়। কিছু দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক।

১. লিঙ্গবৈষম্য

মেয়েদের স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল ও অক্ষম হিসেবে তুলে ধরার জন্য বলা হয়, ‘মেয়ে মানুষের মাথায় বুদ্ধি কম।’ নিজের গর্ভে বা ঔরসে জন্ম নেওয়া মেয়েটিকে লক্ষ্মী বললেও তাকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার সুদূরপ্রসারী চিন্তা থেকে বলি, ‘মেয়ে মানেই পরের ধন।’ মেয়েকে পরিবারের সম্পদ নয়, বোঝা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। মেয়েদের একটা ‘লক্ষণরেখার’ মধ্যে আটকে রাখার ইচ্ছা থেকে বলি, ‘নারীর স্থান রান্নাঘরে’। এটা মেয়েদের ঘরোয়া কাজেই সীমাবদ্ধ রাখার সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে ভূমিকা রাখে।

শিক্ষার্থীরাও শ্রেণিকক্ষে ও রাস্তাঘাটে নানা বৈষম্যের শিকার হয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ