এ বছরের ১২ থেকে ১৮ মে বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ ঘোষিত সড়ক নিরাপত্তা সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে প্রতি চারজনের একজন পথচারী ও সাইকেল আরোহী, তাই এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে– মেক ওয়াকিং সেফ, মেক সাইক্লিং সেফ। এর মাধ্যমে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে নিরাপদে হাঁটা ও সাইকেল চালনার পরিবেশ নিশ্চিত করার দিকে। এ দুটি ব্যবস্থা যেমন দুর্ঘটনার ঝুঁকি হ্রাস করে, তেমনি মানুষকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে এবং নিরাপদ, টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ কারণে নিরাপদে হাঁটা ও সাইকেল চালনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি।
বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। ২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮ হাজার ৯৫৪ জন মারা যায়, যা প্রতি লাখে ১৫.
বিশ্বজুড়ে সড়ক দুর্ঘটনা থেকে মৃত্যু, পঙ্গুত্ব ও অর্থনৈতিক ক্ষতি রোধে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এসডিজি ২০৩০-এর লক্ষ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা ৫০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যে জাতিসংঘ গ্রহণ করেছে নানা উদ্যোগ। যার মধ্যে রয়েছে ‘গ্লোবাল প্ল্যান ফর সেকেন্ড ডিকেড অব অ্যাকশন ফার রোড সেফটি ২০২১-৩০’ প্রস্তাব; প্রতিবছর রোড সেফটি সপ্তাহ পালন; দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ‘ডে অব রিমেমব্রান্স’ উদযাপন ইত্যাদি।
এ বছর সড়ক নিরাপত্তা সপ্তাহের প্রতিপাদ্যে সাইকেলকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সাইকেল নিরাপদ বাহন হলেও বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও পরিবেশগত প্রেক্ষাপটে মানুষের মধ্যে সাইকেল চালনার প্রবণতা কম এবং এ জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোও গড়ে ওঠেনি। যদিও বিশ্বের অনেক দেশে সাইকেল জনপ্রিয় যানবাহন হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশে গ্রাম ও শহরের অবকাঠামোর মধ্যে বৈচিত্র্য আছে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলাকে সংযুক্তকারী মহাসড়কগুলোও গ্রাম-শহরের ভেতর দিয়ে গেছে। ফলে এখন গ্রাম ও শহরের রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের ধরন প্রায় একই। এই বহুমুখী প্রতিকূলতায় গ্রামীণ সড়কগুলোতে পথচারীবান্ধব, নিরাপদে হাঁটার ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য সড়ক নিরাপত্তা বড় চ্যালেঞ্জ। নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি জানলেও সমাধান খুঁজে বের করা সহজ নয়।
শহরের চিত্র কিছুটা আলাদা। এখানে অনেক রাস্তায় পথচারীদের জন্য ফুটপাত, ওয়াকওয়ে ইত্যাদি রয়েছে। আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে কিছু ফুটপাত তৈরি হয়েছে, যা পথচারীদের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করার কার্যকর পন্থা হিসেবে স্বীকৃত। তবে মূল সমস্যা হচ্ছে এগুলোর ব্যবহার এবং আমাদের আচরণ। আমাদের ফুটপাতগুলোর অবস্থা কেমন, জানি। ফুটপাতে হাঁটতে গেলে দেখা যায় তা দখল করে রেখেছে স্থায়ী ও অস্থায়ী হকাররা। ফুটপাত দখল করে সেখানে রাখা হয় নির্মাণসামগ্ৰী। কোথাও কোথাও ড্রেনের ওপর বানানো ফুটপাতে দেখা যায় ভাঙা আর ডাকনাবিহীন ম্যানহোল। অনেক জায়গাতেই ফুটপাতগুলো অসমতল, নেই ঢাল। চলতে দেখা যায় সাইকেল আর মোটরসাইকেল।
এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধানে প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সম্মিলিত উদ্যোগ। প্রথমেই দরকার দখলমুক্ত করা অথবা ফুটপাত এমনভাবে নকশা করা, যাতে হাঁটা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা না যায়। সবচেয়ে বড় প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অঙ্গীকার ও সদিচ্ছা।
সড়ক নিরাপত্তা সপ্তাহের প্রতিপাদ্য সামনে রেখে পথচারীদের নিরাপদ চলাচল এবং সাইকেলের নিরাপদ পরিবেশ ও অবকাঠামো নিশ্চিত করাই হোক আমাদের সবার অঙ্গীকার।
কাজী বোরহান উদ্দিন: প্রকল্প ব্যবস্থাপক, রোড সেফটি প্রকল্প, সিআইপিআরবি
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন য ব যবস থ ফ টপ ত ন র পদ শহর র পথচ র
এছাড়াও পড়ুন:
ক্যাম্প ন্যুর বাইরে মেসির ভাস্কর্য হবে, নিশ্চিত করল বার্সেলোনা
বার্সেলোনার ক্যাম্প ন্যু স্টেডিয়ামের বাইরে লিওনেল মেসির ভাস্কর্য তৈরি করা হবে—এমন খবর সেই ২০২১ সালেই শোনা গেছে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে বার্সেলোনার পক্ষ থেকে কখনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। এমনকি দুই বছরের বেশি সময় ধরে ক্যাম্প ন্যুতে ব্যাপক সংস্কারকাজ চললেও মেসির ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
অবশেষে ক্যাম্প ন্যুতে মেসির সম্মানে ভাস্কর্য নির্মাণের কথা নিশ্চিত করেছে বার্সা। বৃহস্পতিবার একটি বইয়ের অনুষ্ঠানে বার্সেলোনা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা বলেছেন, ক্যাম্প ন্যুর বাইরে স্থাপনের জন্য মেসির ভাস্কর্যের নকশা তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। লাপোর্তার ঘোষণাটি এসেছে এমন সময়ে, যখন মেসির হঠাৎ ক্যাম্প ন্যু আগমন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উচ্ছ্বাসে ভাসছেন সমর্থকেরা।
আর্জেন্টিনা দলের অনুশীলনের অংশ হিসেবে মেসি গিয়েছিলেন স্পেনে। গত রোববার রাতে আচমকাই ক্যাম্প ন্যুতে যান তিনি। ২০০৪ থেকে ২০২১ পর্যন্ত যে মাঠে খেলে তিনি কিংবদন্তি হয়ে উঠেছেন, সেই মাঠে ঘোরাঘুরির কিছু ছবি পোস্ট করে ইনস্টাগ্রামে তিনি লিখেছিলেন, ‘আশা করি একদিন আমি ফিরে আসতে পারব, শুধু একজন খেলোয়াড় হিসেবে বিদায় জানাতে নয়, সেই সুযোগ তো আমি পাইনি...।’
আবেগ, অর্জন আর অনুভূতির সঙ্গে মিশে থাকা ক্যাম্প ন্যুতে লিওনেল মেসি