তিন বছর চিকিৎসা দেওয়ার পর জানা গেল তিনি ভুয়া
Published: 15th, May 2025 GMT
নামের পাশে ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে জটিল রোগের চিকিৎসা দেন। বিপদে পড়লে করেন সাংবাদিকতা। এভাবে কেটে গেছে তিন বছর। সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক যুবক তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে বিষয়টি জানাজানি হয়। ঘটনাটি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায়। এ উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের দইখাওয়া বাজারে মায়ের দোয়া চিকিৎসালয় নামে চেম্বার খুলে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে আসছিলেন রবিউল ইসলাম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) তালিকাভুক্ত মেডিকেল বা ডেন্টাল ইনস্টিটিউট অনুমোদিত এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া কেউ নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। রবিউল ইসলামের এ-সংক্রান্ত কোনো সনদ নেই। ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (এমডিএফ) বা লোকাল মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যান্ড ফ্যামিলি প্ল্যানিং (এলএমএএফ) সনদও নেই তাঁর।
অভিযুক্ত রবিউল ইসলামের বাড়ি গোতামারী ইউনিয়নের দইখাওয়া এলাকায়। তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এইচএসসি ও ডিগ্রি পাস করেন স্থানীয় কলেজ থেকে। সাধারণ প্রতিষ্ঠান থেকে লেখাপড়া করলেও প্রতারণার মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। একই এলাকার রকিবুল হাসান উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। আবাসিক মেডিকেল অফিসার আনোয়ারুল হক সত্যতা যাচাই করতে বিএমডিসির ওয়েবসাইটে ঢুকে রবিউলের ব্যবস্থাপত্র ও সাইনবোর্ডে উল্লিখিত ডি-৩০২২০৯, ০৯৫২ রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি চেক করেন। ওই রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি একজন নারী চিকিৎসকের।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ মে রোগী সেজে দইখাওয়া বাজারের রবিউলের চেম্বারে যান সমকালের প্রতিবেদক। বাইরে অনেক রোগী অপেক্ষা করছিলেন। ছিলেন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরাও। ভেতরে রোগী দেখছিলেন রবিউল ইসলাম। কৌশলে এক রোগীর ব্যবস্থাপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে তাঁকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে।
এ সময় কথা হয় রবিউল ইসলামের সঙ্গে। এমডিএফ ও এলএমএএফ সনদে ডাক্তার পরিচয় দিতে পারেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, অনেক পল্লিচিকিৎসক নামের আগে ডাক্তার লেখেন। আমিও লিখছি। আমার ভুল হয়েছে। তবে সনদের সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি। সাংবাদিকতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, এতে দোষের কী হলো? একপর্যায়ে প্রতিবেদকের পরিচয় জানতে পেরে কৌশলে চেম্বার থেকে চলে যান।
চেম্বারের বাইরে এসে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিউল ইসলাম ১০০ টাকা ভিজিট নেন। প্রতিদিন ৫০ জনেরও বেশি রোগী দেখেন। তিন বছর ধরে তিনি চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আ.
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আনোয়ারুল হক বলেন, অভিযোগ পেয়ে রবিউল ইসলামের চেম্বারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। টের পেয়ে রবিউল চেম্বারের সাইনবোর্ড সরিয়ে তালা দিয়ে পালিয়ে যান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম মিঞা সমকাল প্রতিবেদককে বলেন, রবিউল ইসলামের চেম্বার সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সুরা নাস: বাংলা অর্থসহ এবং সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সুরা নাস কুরআনের ১১৪তম এবং শেষ সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ বলে মাক্কী সুরা নামে পরিচিত। এতে মোট ৬টি আয়াত রয়েছে। এই সুরাটি মানুষকে শয়তানের প্রতারণা ও মন্দ প্রভাব থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে শেখায়। এটি ‘মু’আওয়িযাতাইন’ (দুটি আশ্রয়প্রার্থী সুরা: সুরা ফালাক ও সুরা নাস)–এর একটি।
সুরা নাসের বাংলা উচ্চারণ, অর্থ এবং সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা আলোচনা করা হলো।
বাংলা উচ্চারণ ও অর্থউচ্চারণ: কুল আউজু বিরাব্বিন নাস। মালিকিন নাস। ইলাহিন নাস। মিন শাররিল ওয়াসওয়াসিল খান্নাস। আল্লাজি ইউওয়াসউইসু ফি সুদুরিন নাস। মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস।
অর্থ: বলো, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করি মানুষের রবের কাছে। মানুষের অধিপতির কাছে। মানুষের উপাস্যের কাছে। মন্দ প্রবৃত্তির কুমন্ত্রণা থেকে, যে পিছনে লুকায়। যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে। জিন ও মানুষের মধ্য থেকে।
আরও পড়ুনসুরা ফাতিহার বাংলা উচ্চারণ অর্থ ও ফজিলত২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪সুরা নাসের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসুরা নাস মানুষকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে শিক্ষা দেয়। এই সুরায় আল্লাহকে তিনটি গুণে সম্বোধন করা হয়েছে:
রব্বিন নাস (মানুষের রব): আল্লাহ মানুষের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা।
মালিকিন নাস (মানুষের অধিপতি): তিনি মানুষের উপর সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী।
ইলাহিন নাস (মানুষের উপাস্য): তিনিই একমাত্র উপাসনার যোগ্য।
সুরাটি শয়তানের মন্দ প্রভাব থেকে সুরক্ষা প্রার্থনায় জোর দেয়। কেননা, শয়তান ‘ওয়াসওয়াস’ (কুমন্ত্রণা) দেয় এবং ‘খান্নাস’ (পিছনে লুকিয়ে থাকে)। এই কুমন্ত্রণা জিন ও মানুষ উভয়ের থেকে আসতে পারে, যা মানুষের অন্তরে মন্দ চিন্তা ও পাপের প্রতি প্ররোচিত করে।
হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক এবং সুরা নাস পড়তেন, হাতে ফুঁ দিয়ে শরীরে মুছে নিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০১৭)
বোঝা যায়, সুরা নাস পড়া শয়তানের প্রভাব ও অন্যান্য ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেয়।
আরও পড়ুনসুরা কাহাফের ৪ কাহিনিতে সফলতার ৪ শিক্ষা২০ জুলাই ২০২৫সুরা নাসের ফজিলতসুরা নাসের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত আছে, নবীজি (সা.)–কে যখন জাদু করা হয়, তখন সুরা ফালাক ও সুরা নাস নাজিল হয় এবং তিনি এই দুই সুরা পড়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন এবং আরোগ্য লাভ করেন। (সুনান নাসাঈ, হাদিস: ৫৪৩৭)
এই সুরা পড়া শয়তানের কুমন্ত্রণা, জাদু, হিংসা এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। তাফসিরে ইবনে কাসিরে বলা হয়েছে, “সুরা নাস মানুষকে শয়তানের মানসিক ও আধ্যাত্মিক আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।” (তাফসির ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা: ৮/৫৩৬, দারুস সালাম প্রকাশনী, ২০০০)।
সুরা নাস একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ সুরা, যা মানুষকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনার মাধ্যমে শয়তানের মন্দ প্রভাব থেকে রক্ষা করে। আধুনিক জীবনে, যখন আমরা প্রতিনিয়ত নানা প্রলোভন ও মানসিক চাপের মুখোমুখি হই, তখন এই সুরা আমাদের ঈমানকে দৃঢ় করতে পারে। এই সুরা নিয়মিত পাঠ, বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্যায় এবং ঘুমানোর আগে, মুমিনের জীবনে শান্তি ও সুরক্ষা নিয়ে আসে।
আরও পড়ুনসুরা আর-রহমান: সারকথা ও ফজিলত০৮ আগস্ট ২০২৫