নামের পাশে ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে জটিল রোগের চিকিৎসা দেন। বিপদে পড়লে করেন সাংবাদিকতা। এভাবে কেটে গেছে তিন বছর। সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক যুবক তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে বিষয়টি জানাজানি হয়। ঘটনাটি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায়। এ উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের দইখাওয়া বাজারে মায়ের দোয়া চিকিৎসালয় নামে চেম্বার খুলে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে আসছিলেন রবিউল ইসলাম। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) তালিকাভুক্ত মেডিকেল বা ডেন্টাল ইনস্টিটিউট অনুমোদিত এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া কেউ নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। রবিউল ইসলামের এ-সংক্রান্ত কোনো সনদ নেই। ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (এমডিএফ) বা লোকাল মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যান্ড ফ্যামিলি প্ল্যানিং (এলএমএএফ) সনদও নেই তাঁর। 

অভিযুক্ত রবিউল ইসলামের বাড়ি গোতামারী ইউনিয়নের দইখাওয়া এলাকায়। তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এইচএসসি ও ডিগ্রি পাস করেন স্থানীয় কলেজ থেকে। সাধারণ প্রতিষ্ঠান থেকে লেখাপড়া করলেও প্রতারণার মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। একই এলাকার রকিবুল হাসান উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। আবাসিক মেডিকেল অফিসার আনোয়ারুল হক সত্যতা যাচাই করতে বিএমডিসির ওয়েবসাইটে ঢুকে রবিউলের ব্যবস্থাপত্র ও সাইনবোর্ডে উল্লিখিত ডি-৩০২২০৯, ০৯৫২ রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি চেক করেন। ওই রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি একজন নারী চিকিৎসকের। 

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ মে রোগী সেজে দইখাওয়া বাজারের রবিউলের চেম্বারে যান সমকালের প্রতিবেদক। বাইরে অনেক রোগী অপেক্ষা করছিলেন। ছিলেন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরাও। ভেতরে রোগী দেখছিলেন রবিউল ইসলাম। কৌশলে এক রোগীর ব্যবস্থাপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে তাঁকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে। 

এ সময় কথা হয় রবিউল ইসলামের সঙ্গে। এমডিএফ ও এলএমএএফ সনদে ডাক্তার পরিচয় দিতে পারেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, অনেক পল্লিচিকিৎসক নামের আগে ডাক্তার লেখেন। আমিও লিখছি। আমার ভুল হয়েছে। তবে সনদের সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি। সাংবাদিকতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, এতে দোষের কী হলো? একপর্যায়ে প্রতিবেদকের পরিচয় জানতে পেরে কৌশলে চেম্বার থেকে চলে যান। 

চেম্বারের বাইরে এসে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিউল ইসলাম ১০০ টাকা ভিজিট নেন। প্রতিদিন ৫০ জনেরও বেশি রোগী দেখেন। তিন বছর ধরে তিনি চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। 

স্থানীয় বাসিন্দা আ.

ছালাম জানান, রবিউল ইসলাম বহুদিন ধরে রোগীর সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। কোনো বিপদ হলেই অপকর্ম ঢাকতে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন। 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আনোয়ারুল হক বলেন, অভিযোগ পেয়ে রবিউল ইসলামের চেম্বারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। টের পেয়ে রবিউল চেম্বারের সাইনবোর্ড সরিয়ে তালা দিয়ে পালিয়ে যান। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম মিঞা সমকাল প্রতিবেদককে বলেন, রবিউল ইসলামের চেম্বার সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

৩০ ঘণ্টা পরও খোলা হয়নি শাহ আমানত হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষের তালা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের প্রাধ্যক্ষের কক্ষে আবাসিক শিক্ষার্থীরা তালা দেওয়ার ৩০ ঘণ্টা পর আজ সোমবার দুপুরেও তা খোলা হয়নি। উল্টো আজ শিক্ষার্থীরা প্রধ্যক্ষের কক্ষের নামফলকও সরিয়ে ফেলেন। গতকাল রোববার সকালে আর্থিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা প্রাধ্যক্ষের কক্ষে তালা দেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান আলোচনার প্রস্তাবও দিলেও শিক্ষার্থীরা তা ফিরিয়ে দিয়েছেন। নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ ও অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া আলোচনায় বসবেন না বলে হল সংসদের নেতারা জানিয়েছেন।

আজ দুপুর ১২টার দিকে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক চৌ ধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান হলের গৃহশিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে হলে যান। তিনি হল সংসদের প্রাকর্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে আবাসিক শিক্ষার্থী ও হল সংসদের নেতারা সেখানে উপস্থিত হননি।

প্রাধ্যক্ষ দেখা করতে চাইলেও হল সংসদের সদস্যরা তাতে রাজি হননি বলে জানান শাহ আমানত হল সংসদের ভিপি জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, অভিযোগগুলো তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত আগের মতো সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব নয়। তিনি আরও জানান, দাপ্তরিক কাজ যাতে ব্যাহত না হয়—এ জন্য হলের আরেকটি অফিস কক্ষ খোলা রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মনিরুল হাসান বলেন, ‘আমি গৃহশিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে হলে গিয়েছিলাম আলোচনায় বসতে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আসেননি। পরে সহউপাচার্যের (একাডেমিক) সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি আমাকে দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যেতে বলেন এবং উপাচার্য চীন সফর শেষে দেশে ফিরলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান বলেন, গতকাল হল সংসদের প্রতিনিধিরা তাঁর কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। তিনি সময় চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আজ প্রাধ্যক্ষ এসে জানিয়েছেন, তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করেছেন এবং ভবিষ্যতেও করতে চান। কিন্তু উপাচার্য ও সহউপাচার্য (প্রশাসনিক) অনুপস্থিত থাকায় আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। উপাচার্য দেশে ফিরলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

গতকাল আবাসিক শিক্ষার্থীদের সম্মতিতে হল সংসদের প্রতিনিধিরা প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দায়িত্বে অবহেলা, অসৌজন্যমূলক আচরণ, অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাঁর কক্ষে তালা দেন। অভিযোগে বলা হয়—হল স্টোরের মালামাল নিয়মবহির্ভূতভাবে বিক্রি করা হয়েছে, দরজা-জানালার মেরামত হয়নি, দ্বিতীয় ডাইনিং চালু হয়নি এবং সাইকেল স্ট্যান্ডসহ মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়নি। এসব অভিযোগ তাঁরা সহ–উপাচার্যের কাছে লিখিতভাবে জমা দিয়েছেন। তবে প্রাধ্যক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অনেক কাজই বাজেট ও প্রশাসনিক অনুমোদনের ওপর নির্ভরশীল এবং তিনি নিয়মিতভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ