‘ঘরে থাকা কয়ডা চাল-থালাবাটিও নিয়ে গেছে’
Published: 17th, May 2025 GMT
‘আগে অল্প কিছু ভাঙিছেল। কালকে রাত্রি তালা ভাঙে সবকিছু নিয়ে গেছে। ঘরে আর কোনো জিনিস নেই। পানি খাওয়ার কলডাও (নলকূপ) খুলে নিয়ে গেছে। ঘরে থাকা কয়ডা চাল, থালবাটিও নিয়ে গেছে। যা করিছে, তা মাইনষির সাথে মাইনষি করে না।’
গতকাল শুক্রবার দুপুরে কথাগুলো বলছিলেন নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বাবরা–হাচলা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের বৃদ্ধা রাশেদা বেগম। তাঁর অভিযোগ, প্রতিপক্ষ স্থানীয় মিলনপক্ষের লোকজন গত বৃহস্পতিবার তাঁর বাড়িতে হামলা করে এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন। এখন তিনি কোথায় থাকবেন, কী খাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল কাঞ্চনপুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মিলন মোল্যার পক্ষের সঙ্গে পিকুল শেখ ও আফতাব মোল্যার পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পিকুলপক্ষের ফরিদ মোল্যা (৫০) নিহত হন। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষ মিলনদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়। এরপর আসামিপক্ষের লোকজনের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আফতাবপক্ষের লোকজনকে আসামি করে মামলা করা হয়।
পাল্টাপাল্টি মামলার পর গত ২৯ এপ্রিল ফরিদ হত্যা মামলার ১৮ নম্বর আসামি রফিকুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার হয় প্রতিপক্ষ আফতাবপক্ষের একজনের বাড়ির পাশ থেকে। পরে রফিকুলকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে আফতাবপক্ষের লোকজনকে অভিযুক্ত করে আরেকটি মামলা করা হয়। এরপর আসামিপক্ষের লোকজনের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে ওঠে প্রতিপক্ষ মিলনের লোকজনের বিরুদ্ধে।
যেসব বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করার অভিযোগ উঠেছে, তাঁর মধ্যে রাশেদা বেগমের বাড়ি আছে। তাঁর বাড়িতে দুই দফায় ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, রফিকুলের লাশ উদ্ধারের পর তাঁর বাড়িতে অল্প ভাঙলেও এবার তাঁর বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।
আফতাবপক্ষের লোকজনের অভিযোগ, রফিকুলের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আফতাবপক্ষের লোকজনের নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া গত কয়েক দিনে আফতাবপক্ষের অন্তত ৩০টি পরিবারের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করেছেন মিলনপক্ষের লোকজন। এর মধ্যে কয়েকজনের বাড়িতে দফায় দফায় হামলা হয়েছে। এ সময় নলকূপ থেকে শুরু করে পুকুরের মাছ পর্যন্ত ধরে নিয়ে গেছে। পাশাপাশি এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
আফতাবপক্ষের রেবেকা বেগম বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) ওরা আমার বুকে ভেলা (দেশি অস্ত্র) ধরে বলিছে বাড়ি থেকে নাম। ভয়ে আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছি। এরপর আমার ঘরবাড়ি ভাঙচুর করিছে। ঘরে মালমাল যা ছেল, সব নিয়ে গেছে। পুকুরের মাছও ধরে নিয়ে গেছে। টিউবওয়েলও খুলে নিয়ে গেছে, বাথরুমটাও ভেঙে চুরমার করে থুইয়ে গেছে। এখন এই বাড়িতে থাকার কোনো পরিবেশ নেই। পরের বাড়িতে খাচ্ছি।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করছেন মিলন মোল্যার লোকজন। তাঁদের দাবি, মারামারিতে ফরিদ মারা যাওয়ার পর আফতাবদের লোকজন তাঁদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। কয়েক দিন পর আফতাবপক্ষের একজনের বাড়ির পাশ থেকে তাঁদের একজনের লাশ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। এরপর আফতাবপক্ষের লোকজন নিজেরাই বাড়ি থেকে মালামাল সরিয়েছে। তাঁদের কেউ ভাঙচুর বা লুটপাট করেনি। তাঁদের কেউ হুমকিও দিচ্ছে না।
কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন মুঠোফোনে আজ প্রথম আলোকে বলেন, কাঞ্চনপুরের ঘটনাগুলোয় একাধিক মামলা হয়েছে, সেগুলোর তদন্ত চলছে। কোনো অভিযোগ আসলে যাচাইবাছাই করে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এলাকার পরিবেশ বর্তমানে ভালো আছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কজন র ব ড় র ঘরব ড় ঘটন য় র ঘটন আফত ব
এছাড়াও পড়ুন:
এবার ডিএমসি মোড়ে ঢাবি শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা
চায়ের দোকানে বাকবিতণ্ডা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলের এক ছাত্রকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ডিএমসি) মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। তবে তিনি সরে যাওয়ায় তার গায়ে লাগেনি। পরে অভিযুক্ত যুবক পালিয়ে যান।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের মো. তানজীন। তিনি ফজলুল হক হলের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আবাসিক ছাত্র। অন্যদিকে অভিযুক্ত রুবেল মোল্লা ডিএমসি মোড়ের একটি ভ্রাম্যমাণ সাইকেল গ্যারেজে কাজ করেন।
শুক্রবার ঘটনার বিষয়ে তানজীন সমকালকে বলেন, ডিএমসি মোড়ে মো. আলমের চায়ের দোকানে তিনিসহ বন্ধুরা মিলে চা খেতে যান। সেখানে রুবেল মোল্লাকে চা ভালো হয়নি বলে আলমের সঙ্গে দীর্ঘসময় ঝগড়া করতে দেখে তিনি বাঁধা দেন। কথার এক পর্যায়ে রুবেল তাকে বলেন, আমি খুনের আসামি। আমি কিন্তু খুন করবো তোদেরকে। এ কথা বলে সে চলে যায়।
তানজীম আরও বলেন, একটু পরে রুবেল হঠাৎ করে একটি চাকু নিয়ে এসে আমাকে ছুরি মারার চেষ্টা করে। তবে এ সময় অন্যদের চিৎকারের শব্দে আমি সরে যাই। এরপর সে সবাইকে ছুরি দিয়ে আঘাতের চেষ্টা করে। পরে ডিএমসি মোড়ের নির্মাণাধীন গেটের উপরে উঠে মসজিদের ছাদ দিয়ে পালিয়ে যায়। আমরা তাকে আর খুঁজে পাইনি। পরে ভ্রাম্যমাণ সাইকেল গ্যারেজটি শিক্ষার্থীরা ভেঙ্গে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
চায়ের দোকানদার আলম বলেন, ‘সে চা চেয়েছিল। চা দেওয়ার পরে সে ফেলে দিয়ে বলে, আবার বানা। আবার বানিয়ে দেওয়ার পরে সে বলে, চা খাব না। চা আগের থেকেও খারাপ বানাইছস। এরপর সে চায়ের বিল দেওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু করে। এ সময় চায়ের কাপ ভাঙতে গেলে ভাইরা বাঁধা দেয়। এরপরেই সে হুট করে ছুরি নিয়ে মারতে আসে।’
ঘটনার পরে শিক্ষার্থীরা প্রক্টরিয়াল টিমকে ফোন করলে তারাও আসেন। এ বিষয়ে শাহবাগ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। তবে মামলার ঝামেলা এবং নিরাপত্তার শঙ্কায় শুক্রবার সকালে অভিযোগটি তুলে নিয়েছেন বলে জানান তানজীন।
তিনি বলেন, মামলা করলে উকিল নিয়ে আমাকে ছুটতে হবে। এর আগেও আরেকটি ঘটনায় নিজেকেই দৌঁড়াতে হয়েছে। আর ওই ছেলে একটা ভবঘুরে, সে মাদকাসক্ত ছিল। এখন হয়ত আমার চেহারা মনে নাই, তবে পরে আমাকে চিনলে হয়ত আবার আক্রমণ করতে পারে।
তানজীন বলেন, আমি প্রশাসনকে বলবো, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। ডিএমসি মোড়ে তিন হলের ছেলেরা আড্ডা দেয়। এখানে একটা নিরাপত্তা বক্স স্থাপন করা জরুরি। পুরো ক্যাম্পাসে ভবঘুরে, মাদকাসক্তরা ঘুরে বেড়ায়। এটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।
জানতে চাইলে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, জানার পরপরই প্রক্টরিয়াল টিমকে পাঠিয়েছি। কালকে থেকেই ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদেরও আহ্বান জানাবো সতর্ক থাকার জন্য। বিশেষত রাতে বের হওয়ার সময়।
গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে ক্যাম্পাসসংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সাম্যকে হত্যা করা হয়।