Prothomalo:
2025-11-17@06:55:06 GMT

আরিচা ঘাটের সেকাল আর একাল

Published: 19th, May 2025 GMT

ষাটের দশক থেকে হাজার হাজার যাত্রী ও শত শত গাড়ির সমাগম ঘটত আরিচা ঘাটে। লঞ্চ ও ফেরির হুইসেল এবং মানুষের চলাচলে আরিচা ঘাট ছিল কোলাহল ও কর্মমুখর। হকার ও ফেরিওয়ালাদের হইহুল্লোড় ও হাঁকডাকে সরগরম থাকত পুরো ঘাট এলাকা। দেশের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের মানুষের রাজধানীতে যাতায়াতের একমাত্র পথ ছিল আরিচা ঘাট। এ ঘাটকে ঘিরেই সে সময় থেকেই গড়ে ওঠে ব্যবসাকেন্দ্র। হোটেল, রেস্তোরাঁ ও বোর্ডিংয়ের ব্যবসাও ছিল জমজমাট। অনেকের জীবন–জীবিকা নির্বাহ হতো এ ঘাটকে ঘিরে। লাল বাহিনী ও সাদা বাহিনী—দুটি দলে সহস্রাধিক কুলির সংসার চলত এ ঘাটের আয়ে।

এরও আগে ব্রিটিশ আমলে আরিচায় ছিল পাটের বড় গুদাম। স্টিমার (জাহাজ) ও ছান্দিনৌকায় (বিশালাকৃতির নৌকা) করে এ ঘাট থেকে পাট কিনে কলকাতায় নিয়ে যেতেন ব্যবসায়ীরা। তবে সময়ের পরিবর্তনে আরিচা ঘাটের সেই কর্মচাঞ্চল্য আর নেই। কালের বিবর্তনে আরিচা ঘাট হারিয়েছে তার জৌলুশ। সে সময়ের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, হোটেল ও বোর্ডিংগুলো বন্ধ হওয়ায় কুলি, ফেরিওয়ালাসহ অসংখ্য মানুষ বেকার হয়ে পড়েন। এখন চিরচেনা সেই আরিচা ঘাট শুধুই স্মৃতি। তবে আজও আরিচা ঘাটের সেই নানা স্মৃতি গেঁথে আছে অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে।

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় যুমনা নদীর পূর্ব পাড়ে গড়ে ওঠে আরিচা ঘাট। জেলা সদর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার পশ্চিমে এ ঘাটের অবস্থান।

যেভাবে গড়ে ওঠে আরিচা ঘাট

স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমল থেকেই স্টিমার ও জাহাজে করে কলকাতা থেকে বিভিন্ন পণ্য আসামে আনা–নেওয়া করা হতো। যাত্রাপথে এসব স্টিমার ও জাহাজ আরিচা এলাকায় ভিড়ত। এ ছাড়া মানিকগঞ্জ ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকার কৃষিপণ্য, বিশেষ করে পাট কলকাতায় নিয়ে যেতেন ব্যবসায়ীরা। নৌপথে চলাচলে সহজ, একমাত্র মাধ্যম ও সাশ্রয়ী হওয়ায় ঘাটকেন্দ্রিক ব্যবসা–বাণিজ্য গড়ে ওঠে। উনিশ শতকের শুরুর দিকে আরিচা এলাকায় যমুনা নদীর পাড়ে বড় বড় স্টিমার ও জাহাজ ভিড়ত। পরবর্তী সময়ে ঘাটে গড়ে উঠেছিল পাটের বিশাল গুদাম। সে সময় থেকেই আরিচা ঘাটের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে।

এক সময় যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল আরিচা ঘাটের নিত্য দিনের চিত্র.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সড়ক যেন মরণফাঁদ

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। এসব গর্তের পাশ দিয়ে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পথচারী ও যানবাহন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধের দুই পাশে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও সড়কের পিচ উঠে গেছে, কোথাও আবার গর্তের গভীরতা এত বেশি যে, ছোট যানবাহন উল্টে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে দুর্ঘটনায় কলেজছাত্রের মৃত্যু, ট্রাকে আগুন

সিলেটে বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষ, বাবা-মেয়ে নিহত

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও, এর ওপরে নির্মিত পাকা সড়কটি সওজ বিভাগের আওতাধীন। এ সড়কটি ব্যবহার করে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর যানবাহন চলাচল করে।

স্থানীয় অটোরিকশা চালক রোবেল হোসেন বলেন, ‍“নির্মাণের দুই-তিন বছর যেতে না যেতেই সড়কের দুই পাশে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রতিদিন গাড়ি চালাতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। একটু অসাবধান হলেই ঘটবে দুর্ঘটনা।”

মোটরসাইকেল চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “দিনে কোনোভাবে পার হওয়া যায়, কিন্তু রাতের পরিস্থিতি থাকে ভয়ঙ্কর। কারণ, অনেক সময় দূর থেকে গর্ত দেখা যায় না। এই সড়কে খুব ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।” 

পিকআপ ভ্যানের চালক আব্দুর রহমান বলেন, “কয়েক বছর না যেতেই রাস্তা গর্তে ভরে গেছে। রাতের বেলায় গর্তগুলো বোঝা যায় না, তাই সব সময় আতঙ্ক নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”

কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কটি এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। এখন গর্তের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত মেরামতের জন্য আমরা একাধিকবার জানিয়েছি।”

মতলব উত্তর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, “এই বেড়িবাঁধ শুধু মতলব নয়, পুরো অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান সড়ক। তাই সওজ বিভাগের উদাসীনতা জনজীবনে ঝুঁকি তৈরি করছে। বর্ষার আগেই এই সড়কটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার জরুরি।”

চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অতিবৃষ্টির কারণে গর্ত তৈরি হয়েছে। আমরা সড়কটি মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছি।”

উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, মতলব ব্রিজ থেকে বেড়িবাঁধের পূর্ব অংশে সংস্কার কাজের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। পশ্চিম অংশ এখনও ঠিকাদারের দায়িত্বে আছে, তাদেরকেও মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দাঃ) সেলিম শাহেদ বলেন, “বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও এর ওপরে থাকা পাকা সড়ক সওজ বিভাগের দায়িত্বে। বেড়িবাঁধের যদি কোথাও ক্ষতি হয়, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই; সড়ক সংস্কার কাজ সওজ বিভাগকেই করতে হয়।”

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত দেখা গেছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।”

ঢাকা/অমরেশ/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ