ষাটের দশক থেকে হাজার হাজার যাত্রী ও শত শত গাড়ির সমাগম ঘটত আরিচা ঘাটে। লঞ্চ ও ফেরির হুইসেল এবং মানুষের চলাচলে আরিচা ঘাট ছিল কোলাহল ও কর্মমুখর। হকার ও ফেরিওয়ালাদের হইহুল্লোড় ও হাঁকডাকে সরগরম থাকত পুরো ঘাট এলাকা। দেশের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের মানুষের রাজধানীতে যাতায়াতের একমাত্র পথ ছিল আরিচা ঘাট। এ ঘাটকে ঘিরেই সে সময় থেকেই গড়ে ওঠে ব্যবসাকেন্দ্র। হোটেল, রেস্তোরাঁ ও বোর্ডিংয়ের ব্যবসাও ছিল জমজমাট। অনেকের জীবন–জীবিকা নির্বাহ হতো এ ঘাটকে ঘিরে। লাল বাহিনী ও সাদা বাহিনী—দুটি দলে সহস্রাধিক কুলির সংসার চলত এ ঘাটের আয়ে।
এরও আগে ব্রিটিশ আমলে আরিচায় ছিল পাটের বড় গুদাম। স্টিমার (জাহাজ) ও ছান্দিনৌকায় (বিশালাকৃতির নৌকা) করে এ ঘাট থেকে পাট কিনে কলকাতায় নিয়ে যেতেন ব্যবসায়ীরা। তবে সময়ের পরিবর্তনে আরিচা ঘাটের সেই কর্মচাঞ্চল্য আর নেই। কালের বিবর্তনে আরিচা ঘাট হারিয়েছে তার জৌলুশ। সে সময়ের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, হোটেল ও বোর্ডিংগুলো বন্ধ হওয়ায় কুলি, ফেরিওয়ালাসহ অসংখ্য মানুষ বেকার হয়ে পড়েন। এখন চিরচেনা সেই আরিচা ঘাট শুধুই স্মৃতি। তবে আজও আরিচা ঘাটের সেই নানা স্মৃতি গেঁথে আছে অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে।
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় যুমনা নদীর পূর্ব পাড়ে গড়ে ওঠে আরিচা ঘাট। জেলা সদর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার পশ্চিমে এ ঘাটের অবস্থান।
যেভাবে গড়ে ওঠে আরিচা ঘাট
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমল থেকেই স্টিমার ও জাহাজে করে কলকাতা থেকে বিভিন্ন পণ্য আসামে আনা–নেওয়া করা হতো। যাত্রাপথে এসব স্টিমার ও জাহাজ আরিচা এলাকায় ভিড়ত। এ ছাড়া মানিকগঞ্জ ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকার কৃষিপণ্য, বিশেষ করে পাট কলকাতায় নিয়ে যেতেন ব্যবসায়ীরা। নৌপথে চলাচলে সহজ, একমাত্র মাধ্যম ও সাশ্রয়ী হওয়ায় ঘাটকেন্দ্রিক ব্যবসা–বাণিজ্য গড়ে ওঠে। উনিশ শতকের শুরুর দিকে আরিচা এলাকায় যমুনা নদীর পাড়ে বড় বড় স্টিমার ও জাহাজ ভিড়ত। পরবর্তী সময়ে ঘাটে গড়ে উঠেছিল পাটের বিশাল গুদাম। সে সময় থেকেই আরিচা ঘাটের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে।
এক সময় যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল আরিচা ঘাটের নিত্য দিনের চিত্র.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
যেভাবে এনবিআর দুই ভাগ করা হয়েছে, তা ঠিক হয়নি: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুই ভাগ করাটা ঠিক হয়েছে। এটা আমাদের শ্বেতপত্রের সুপারিশেও ছিল। কিন্তু যেভাবে করা হয়েছে, সেটি ঠিক হয়নি।’
তাঁর মতে, আলোচনা ছাড়া পেশাজীবীদের জায়গাকে সংকুচিত করে এবং অন্যান্য স্বায়ত্তশাসনের জায়গাকে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণে রেখে যেভাবে ভাগ করা হয়েছে, এই পদ্ধতি ঠিক হয়নি। এখন এটাকে ঠিকমতো ভাগ করাটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আজ সোমবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘নীতি সংস্কার ও আগামীর জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত সংলাপে এ কথা বলেন তিনি।
সংলাপে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিগত সরকারের সময় চোরতন্ত্র বা লুটপাটতন্ত্রে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে জড়িত রাজনীতিবিদেরা পালিয়ে গেছেন, ব্যবসায়ী গোষ্ঠীরা ম্রিয়মাণ (নির্জীব) হয়ে আছে। আর আমলারা আবার পুনরুজ্জীবিত হয়েছেন।
অর্থনৈতিক সংস্কারে সরকারের মনোযোগ কম উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমাদের সাধারণ আক্ষেপ হলো সরকারের পক্ষ থেকে অন্যান্য সংস্কারে যতখানি মনোযোগ দেওয়া হয়, অর্থনৈতিক সংস্কারের ব্যাপারে অতখানি মনোযোগ আমরা দেখি না। এটা একটা বড় ধরনের সমস্যা এবং ওনারা অনুধাবন করেন না। অর্থনীতিতে যদি স্বস্তি না থাকে তাহলে অন্য কোনো সংস্কার কিন্তু স্বস্তিতে থাকবে না।’
তারপরও এত কিছু অসম্পূর্ণতা বা অসংগতি থাকার পরও বাজেট কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সেটি চারটি বিষয়ের ওপর অনেকখানি নির্ভর করবে বলে মনে করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘আমাদের যে ঐক্য প্রক্রিয়ার আলোচনা চলছে, এর ফলাফল; নির্বাচন সম্বন্ধে একটি নির্দিষ্ট পথরেখা পাওয়া; যে বিচারের কথা বলা হচ্ছে, তা আগে হবে, না পরে হবে ইত্যাদির পাশাপাশি শান্তিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার বিষয়ের ওপরে নির্ভর করবে।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘বিনিয়োগের জন্য যেসব উপাদান থাকে, এই মুহূর্তে সেগুলো আমাদের খুব বেশি উৎসাহিত করতে পারছে না। ফলে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। শ্রমিকদের মজুরি বাড়ার হার মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে নিচে। অর্থাৎ তাদের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। তাহলে আমরা অর্থনৈতিকে ঘুরে দাঁড়াতে দেখছি কি না, সেটি খুব বেশি শক্তি দিয়ে বলা যাচ্ছে না।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।