টানা চার সপ্তাহ বৃদ্ধির পর বিশ্ববাজারে আজ কমেছে ডলারের মান
Published: 19th, May 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঋণমান কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে বিশ্বের মুদ্রাবাজারে। আজ সোমবার সকালে এশিয়ার বাজারে লেনদেন শুরুর পরই ডলারের ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ছেদ পড়েছে। এর আগে টানা চার সপ্তাহ ডলার শক্তিশালী হয়েছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে অস্থায়ী বাণিজ্য সমঝোতার কারণে বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা কিছুটা প্রশমিত হয়েছিল। ফলে প্রধান মুদ্রাগুলোর বিপরীতে ডলারের বিনিময়হার শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তবে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি ব্যয় বাড়ছে আর সে কারণে ভোক্তাদের আস্থা কমছে।
এই প্রেক্ষাপটে গত শুক্রবার ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান মুডিস যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌম ঋণমান এক ধাপ নামিয়ে আনে। যুক্তরাষ্ট্রের মোট ঋণ ৩৬ ট্রিলিয়ন বা ৩৬ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এই ঋণের চাপ নিয়েই আশঙ্কা জানিয়েছে মুডিস। এর আগে আরও দুটি আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান কমিয়েছে।
আজ সকালে এশিয়ার বাজারে ইয়েনের বিপরীতে ডলারের মান কমেছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ; প্রতি ডলারে এখন পাওয়া যাচ্ছে ১৪৫ দশমিক ২২ ইয়েনে। সুইস ফ্রাঁর বিপরীতেও ডলারের মান পড়েছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।
অন্যদিকে টানা তিন দিন দরপতনের পর অস্ট্রেলীয় ডলারের মান বেড়েছে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন, অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামীকাল মঙ্গলবার নীতি সুদহার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ কমাতে পারে, বর্তমানে যা ৪ দশমিক ১০ শতাংশ।
ইউরোপের মুদ্রা ইউরোর দরও বেড়েছে। আজ সকালে ইউরোর দর শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে এখন ১ দশমিক ১১ ডলার। অন্যদিকে ব্রিটিশ পাউন্ড শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৩২ ডলার। নিউজিল্যান্ডের কিউই ডলারও শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫৯ সেন্ট।
অস্ট্রেলিয়ার এএনজেড ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা গবেষণা বিভাগের প্রধান মাহজাবীন জামান বলেন, মার্কিন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ এবং প্রশাসনের নীতিগত অবস্থানের কারণে বিনিয়োগ ও লেনদেনের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ডলারের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
গতকাল রোববার একাধিক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানান, যেসব বাণিজ্য অংশীদার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘সদ্বিশ্বাসে’ আলোচনার টেবিলে বসবে না, তাদের পণ্যে গত মাসে যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল, শেষমেশ সেই হারেই শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে পাইকারি হারে করছাড়ের বিল পাসের চেষ্টা করছেন, রিপাবলিকান দলীয় সংসদ সদস্যরাই তার বিরোধিতা করছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আগামী এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ তিন থেকে পাঁচ ট্রিলিয়ন বা তিন লাখ কোটি ডলার থেকে পাঁচ লাখ কোটি ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। সেটা হলে ডলারের দরে চাপ পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ন য দশম ক দশম ক ১ ঋণম ন
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদাবাজি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে ‘ট্রাফিক সহায়ক গ্রুপ’ ভেঙে নতুন পথে শিক্ষার্থীদের একাংশ
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর সড়ক নিয়ন্ত্রণে নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুপস্থিতিতে তাঁদের দায়িত্বশীল ভূমিকা তখন প্রশংসিত হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই গত বছরের ১৭ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয় ট্রাফিক সহায়ক গ্রুপ (ট্যাগ)। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও সম্মানীর ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই সংগঠনকে তখন সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর আশার আলো হিসেবে দেখা হয়েছিল।
কিন্তু এক বছরের মাথায় ট্যাগ ঘিরে নানা অভিযোগ জমতে শুরু করেছে। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বেড়েছে। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ট্যাগের একাংশ নতুন সংগঠন ট্রান্সপোর্ট সাপোর্ট ফোর্স (টিএসএফ) গড়ার ঘোষণা দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা জানান, ট্যাগ কার্যকর নয়। তাই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে তাঁরা এখন টিএসএফ নামে নতুন কাঠামোতে কাজ করবেন। এ ক্ষেত্রে কাজ করবে রিফর্ম বাংলাদেশ–সবার জন্য বুদ্ধিদীপ্ত ও নিরাপদ চলাচল (আরবি–আইএসএমএ)।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ট্যাগের অ্যাডমিন হিসেবে দায়িত্বে থাকা বুয়েটের মেকানিক্যাল বিভাগের শিক্ষার্থী দাইয়ান নাফিস প্রধান চাঁদা আদায় করেছেন, ডিএমপির বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন এবং সমালোচনাকারীদের বাদ দিয়েছেন।
নাফিস প্রধানের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক আরমানা হকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের মিথ্যা প্ররোচনা দিয়ে জিডি করিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, অধ্যাপক আরমানা হক যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে প্রশিক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীদের তথ্য পাঠাতেন। অথচ এটিকে ‘ডেটার অপব্যবহার (মিসইউজ)’ আখ্যা দিয়ে আরমানা হকের বিরুদ্ধে ১২ থানায় জিডি করান দাইয়ান নাফিস।
শিক্ষার্থীরা বলেন, শহীদের রক্ত শুকানোর আগেই কেউ কেউ নিজেদের আখের গোছাচ্ছে। এসব অনিয়ম চলতে থাকলে আগামী প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ বার্তা যাবে। তাঁদের মতে, সঠিক নীতিমালা ও কাঠামো থাকলে এসব অপরাধ প্রতিরোধ করা যেত।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা জানান, টিএসএফ পুলিশের সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। তবে তা পরিচালনা করবে একটি স্বতন্ত্র গভর্নিং বডি। এতে পুলিশ, স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পরিবহনবিশেষজ্ঞ ও আট বিভাগ থেকে আটজন ট্যাগ সদস্য যুক্ত থাকবেন।
শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবের মধ্যে নিয়োগ সম্পূর্ণ সরকারি তত্ত্বাবধানে হতে হবে, ন্যূনতম যোগ্যতা এসএসসি পাস, বয়স ১৮ বছর, ছেলেদের উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি, মেয়েদের উচ্চতা ৫ ফুট, পাঠ্যপুস্তকে ট্রাফিক নিয়ম অন্তর্ভুক্তি, মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ ইত্যাদি অন্যতম।
এক মাসের মধ্যে এসব প্রস্তাব কার্যকর না হলে শিক্ষার্থীরা কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ট্যাগের সদস্য জাবেদ মুনতাসির রনি বলেন, প্রশিক্ষণ শেষে দায়িত্বে যোগ দেওয়ার পর প্রতিশ্রুত ৫৬০ টাকার বদলে হাতে পেয়েছেন ৪০৫ টাকা। বাকি টাকা উৎসে করের অজুহাতে কেটে রাখা হয়। কয়েক মাস পর বকেয়া কিছু অর্থ মেটানো হলেও পুরো প্রক্রিয়া ছিল অস্বচ্ছ। এ ছাড়া কর্মীদের বাদ দেওয়ার বিষয়ে কোনো লিখিত নোটিশও দেওয়া হয়নি।
ট্র্যাফিক বিভাগে কর্মরত নুসরাত জাহান নামের আরেক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অ্যাডমিন দাইয়ান নাফিস প্রধান বিসিটিএন নামে একটি সংগঠন তৈরি করে প্রত্যেক সদস্যের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৫০ এবং ট্যাগধারীদের কাছ থেকে মাসে ১০০ টাকা ফান্ড হিসেবে আদায় করতেন। তবে এই ফান্ডের কোনো হিসাব কখনো দেওয়া হয়নি।’
আরেক সদস্য তৌকিতুর রহমান অভিযোগ করেন, দাইয়ানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় তাঁকে ট্যাগ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিলের শিক্ষার্থী ও পরিবেশ গবেষক মাহেরা আফরোজ বলেন, ‘আমি কখনোই চাইনি চাকরি করি। এর মধ্যে দাইয়ানের সিন্ডিকেটে পড়ে গেলাম। সে স্বার্থসিদ্ধি করে বিভিন্ন কর্ম করে গেছে, যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেক সময় হেনস্তা-লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে।’
শিক্ষার্থী মোহাম্মদ দিদার আলম অভিযোগ করেন, ৩২ বছরের বেশি বয়সী সদস্যদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ প্রশিক্ষণকালীন সময়ে তাঁদের যোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল।
অভিযোগের বিষয়ে দাইয়ান নাফিস প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করার জন্য এই ট্যাগ সিস্টেম শুরু করা হয়। আমি এটির অ্যাডমিন হিসেবে কাজ করেছি। এ জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) ট্রাফিক অ্যাডমিন অ্যান্ড রিসার্চ অফিসে অফিস করতাম। আমি অফিশিয়াল ট্যাগ নীতিমালা চেয়েছি। সেটি এখনো ডিএমপি করতে পারেনি।’
চাঁদা তোলার অভিযোগের বিষয়ে নাফিস প্রধান বলেন, শিক্ষার্থীদের জরুরি চিকিৎসা খরচ মেটাতে ফান্ড তৈরি করা হয়েছিল। তাঁর ভাষায়, ‘কোনো শিক্ষার্থী দুর্ঘটনায় পড়লে তাৎক্ষণিক কয়েক হাজার টাকার দরকার হয়। তখন যাতে টাকা জোগাড় করা যায়, এ জন্য আমরা একটা কমন ফান্ড চালু করেছিলাম। এটা ৩০ জুন পর্যন্ত চলার কথা ছিল। পরে অবশিষ্ট টাকা ফেরত দেওয়ার নিয়মও ঠিক করা হয়েছিল।’
এই ফান্ডের জন্য নেওয়া টাকার সব হিসাব আছে বলে জানান নাফিস। তিনি বলেন, ‘কার চিকিৎসার জন্য কখন কত টাকা খরচ হয়েছে, তা লিখিতভাবে সংরক্ষিত আছে।’