আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১–এর বিচারকক্ষে ডিজিটালপ্রযুক্তি স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এর ফলে ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে বিচার কার্যক্রম সরাসরি কিংবা ধারণ করে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ‍্যমে প্রচার করা যাবে।

ট্রাইব্যুনালের বিচারকক্ষে প্রযুক্তি স্থাপনের বিষয়টি আজ মঙ্গলবার দুপুরে ফেসবুকে পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। ফেসবুক পোস্টে বিচারকক্ষের ছবি ও ভিডিও দিয়েছেন তিনি।

চিফ প্রসিকিউটর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন‍্য কোর্টরুম ডিজিটাল প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করা হয়েছে। ট্রায়ালের যেকোনো পর্ব আদালতের অনুমতিক্রমে সরাসরি কিংবা রেকর্ডকৃত পদ্ধতিতে গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক মাধ‍্যমে প্রচারিত হতে পারবে।’

গত বছরের ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলছে ট্রাইব্যুনালে। পাশাপাশি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম, খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারও এই ট্রাইব্যুনালে হচ্ছে। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এখন বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ট্রাইব্যুনালে। বিচার কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে ৮ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা এখন পর্যন্ত দুটি মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এই দুটি তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করছে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়। নিয়ম অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা প্রথমে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর চিফ প্রসিকিউটর সেই তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেন এবং আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আকারে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। শিগগিরই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হতে পারে ট্রাইব্যুনালে।

যে দুটি মামলায় তদন্তের কাজ শেষ করে প্রতিবেদন দিয়েছে তদন্ত সংস্থা, তার একটিতে আসামি করা হয়েছে গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে। অন্য মামলাটি চাঁনখারপুলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায়। এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার (ডিএমপি) হাবিবুর রহমানসহ আটজনকে আসামি করা হয়েছে।

বিচারে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য ট্রাইব্যুনালের বিচারকক্ষে ক্যামেরা ও সাউন্ডসিস্টেম স্থাপনসহ সব ধরনের ডিজিটালাইজেশনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ, যাঁরা ট্রাইব্যুনালে আসতে পারেন না, তাঁরাও যেন যাঁর যাঁর অবস্থানে থেকে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম দেখতে পারেন।

এই প্রসিকিউটর বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন–১৯৭৩ এর সংশোধন আনা হয় ২০২৪ সালে। এর মধ্যে একটি সংশোধনী ছিল—যে বিচারকাজ চলবে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে ধারণ (রেকর্ড) করা যাবে এবং সম্প্রচার (ব্রডকাস্ট) করা যাবে। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে বিচার কার্যক্রম সরাসরি ব্রডকাস্ট (সম্প্রচার) করা যাবে। অথবা বিচার কার্যক্রম ধারণ করে পরবর্তী সময়ে তা ট্রাইব্যুনালের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে।

সাক্ষীদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, যদি ট্রাইব্যুনাল মনে করেন কোনো ক্ষেত্রে সাক্ষীর জন্য বিষয়টি হুমকি হতে পারে, তখন সেই সাক্ষীর শুধু বক্তব্য প্রচার করা হবে তাঁকে না দেখিয়ে। অথবা বিচারপ্রক্রিয়ার কোনো কার্যক্রমকে যদি ট্রাইব্যুনালের কাছে স্পর্শকাতর মনে হয়, তবে সেই অংশটুকু বাদ দিয়ে প্রচার করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অপর ধ র ব চ র ব চ রকক ষ র ব চ রক

এছাড়াও পড়ুন:

গেইল-পেরেরাদের পারিশ্রমিক, হোটেল বিল না দিয়েই লিগের আয়োজকেরা পালিয়েছেন

টুর্নামেন্টের নাম ইন্ডিয়ান হেভেনস প্রিমিয়ার লিগ বা আইএইচপিএল। ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরে আয়োজিত টুর্নামেন্টটি ক্রিস গেইল, থিসারা পেরেরাদের জীবনে নিয়ে এসেছে মহা বিড়ম্বনা। বিশ্ব ক্রিকেটের নামি এই খেলোয়াড়দের হোটেলে রেখে শহর থেকে পালিয়ে গেছেন লিগের আয়োজকেরা। খেলোয়াড়, ম্যাচ কর্মকর্তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি, পরিশোধ করা হয়নি হোটেলের বিলও।

ঘটনাটি ঘটেছে ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে। গত ২৫ অক্টোবর আট দল নিয়ে শুরু হওয়া আইএইচপিএল শেষ হওয়ার কথা ছিল ৮ নভেম্বর। কিন্তু শনিবার সকালে খেলোয়াড়দের জানানো হয়, কারিগরি কারণে দিনের খেলা বাতিল করা হয়েছে। এরপর রোববার সকালে হোটেলে থাকা খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা জানতে পারেন, আয়োজকেরা আগের রাতে শ্রীনগর ছেড়ে চলে গেছেন।

হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, আয়োজকদের কাছ থেকে তারা কোনো বিল পায়নি। সেই সময় প্রায় ৪০ জনের মতো খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা হোটেলেই আটকা পড়েছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) কর্মকর্তা মেলিসা জুনিপার আইএইচপিএলে আম্পায়ারিং করতে গিয়েছিলেন। শ্রীনগরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আয়োজকেরা হোটেল থেকে পালিয়ে গেছেন। তারা হোটেল, খেলোয়াড় বা আম্পায়ার কারও বিল পরিশোধ করেননি। আমরা হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতায় এসেছি যেন সবাই বেরিয়ে যেতে পারে।’

শ্রীনগরের যে হোটেলে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছিল, সেখানকার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আয়োজকেরা ১০ দিন আগে খেলোয়াড়দের জন্য ১৫০টি কক্ষ চেয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, ক্রিস গেইলের মতো তারকার কারণে কাশ্মীরের পর্যটন উপকৃত হবে। কিন্তু রোববার সকালে দেখি তাঁরা উধাও হয়ে গেছেন। আমাদের বিলও দেননি। গেইলসহ কয়েকজন খেলোয়াড় শনিবারই হোটেল ছেড়ে চলে গেছেন।’

গেইল ছাড়াও টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা, নিউজিল্যান্ডের জেসি রাইডার, দক্ষিণ আফ্রিকার রিচার্ড লেভি এবং ওমানের আয়ান খান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টুর্নামেন্টের প্রচারণায় যে সব পোস্টার ব্যবহার করা হয়েছে, তার একটিতে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের ছবিও বড় আকারে দেখা গেছে।

ভারতের সাবেক ক্রিকেটার পারভেজ রসুল এই টুর্নামেন্টে খেলেছিলেন। তিনি জানান, কয়েকজন বিদেশি খেলোয়াড় হোটেলে আটকা পড়েছিলেন। পরে ব্রিটিশ হাইকমিশনের সহায়তায় তাঁরা বেরিয়ে যান, ‘এক ইংলিশ আম্পায়ার হাইকমিশনে যোগাযোগ করেছিলেন’।

স্থানীয় এক ক্রিকেটার জানান, আয়োজকেরা সম্ভবত ধারণাই করতে পারেননি এমন একটি টুর্নামেন্ট চালাতে কত বড় বাজেট প্রয়োজন। শেষ মুহূর্তে স্পনসররা সরে যাওয়ায় অর্থ সংকট তৈরি হয়েছিল, ‘প্রথম দিন নির্ধারিত পোশাকও ছিল না, স্থানীয়ভাবে কিনে আনা হয়েছিল। কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গেও লিখিত চুক্তি করা হয়নি।’

টুর্নামেন্টটির আয়োজক ছিল যুবা সোসাইটি মোহালি নামের একটি সংস্থা। সহযোগিতায় ছিল জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর স্পোর্টস কাউন্সিল। কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা জানান, আইএইচপিএল সভাপতি আশু দানি পুলিশের ছাড়পত্র ও মাঠ ব্যবহারের অনুমতি নিয়েছিলেন, ‘তারা আমাদের টাকা দিয়েছে। এখানে সরকারের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা নেই। কেন লিগ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেল, আমরা জানি না।’

তবে ২২ অক্টোবরের একটি সরকারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভাগীয় কমিশনার অংশুল গার্গের সভাপতিত্বে আইএইচপিএল নিয়ে এক প্রস্তুতি সভার কথা উল্লেখ ছিল, যেখানে অনুমান করা হয়েছিল বকশি স্টেডিয়ামে ২৫–৩০ হাজার দর্শক উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু বাস্তবে দর্শক উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। টিকিটের দাম কমিয়েও সাড়া মেলেনি।

এ ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ