মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডর’ দেওয়া নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে আলোচনা চলছে, সেটিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘অনেকে বলছেন, করিডর বিষয়ে সরকার কথা বলছে না কেন? অস্তিত্বহীন জিনিস নিয়ে কী আলোচনা করব?’

এ বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে খলিলুর রহমান বলেন, ‘মানবিক করিডর হচ্ছে একটা জরুরি সময়ে দুর্যোগপূর্ণ জায়গা থেকে মানুষকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা। এখানে কাউকে সরানো হচ্ছে না। যেটা করা হচ্ছে তাতে এখানে ত্রাণসামগ্রী ও উপকরণ অন্য রুটে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জাতিসংঘ আমাদের এতটুকু বলেছে, পণ্যটি বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে রাখাইনে নেওয়ার জন্য।’

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন খলিলুর রহমান। রাখাইনে মানবিক সহায়তা কোন রুট দিয়ে যাবে, কীভাবে যাবে, তা এখনো ঠিক হয়নি বলে জানান তিনি। খলিলুর রহমান বলেন, ‘রোগী তো এখনো হাসপাতালে। এসব নিয়ে এখনো আলোচনা শুরু হয়নি।’

মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য রাস্তাঘাট দেখতে হবে, নিরাপত্তার বিষয় দেখতে হবে উল্লেখ করে খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখনো সেখানে যাইনি। কোনো কিছু এখনো বিবেচনার জন্য আসেনি।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘মানবিক সহায়তার নিয়ন্ত্রণ থাকবে জাতিসংঘের কাছে, বাংলাদেশের কাজ হবে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করা। মানবিক সহায়তার আড়ালে মাদক যাচ্ছে কি না, অস্ত্র আসছে কি না—সরকার এসব দেখবে। যাতে মানবিক সহায়তা সঠিকভাবে নিয়ে যেতে পারে।’

মানবিক সহায়তা নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো মতপার্থক্য আছে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, ‘সেনাপ্রধানের সঙ্গে এ বিষয়ে আমার বিস্তর আলোচনা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো মতপার্থক্য নেই।’

বাংলাদেশের কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর স্থাপন নিয়ে কয়েক দিন ধরে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে করিডর দেওয়ায় আপত্তি জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এ বিষয়টি পরিষ্কার করতে আজকের সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি, করিডর নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কারও কথা হয়নি। কারও সঙ্গে কথা হবেও না।’ আরাকানের যে অবস্থা তাতে করিডর স্থাপন নিয়ে আলোচনার অবস্থা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘করিডর স্থাপন করে লোকজনের যাতায়াতের প্রয়োজনীয়তা এখন নেই। এখন প্রয়োজন শুধু ত্রাণ পৌঁছানো। আরাকানের অবস্থা যত দিন অস্থিতিশীল থাকবে, তত দিন আমরা প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলতে পারব না।’

এ সময় এক সাংবাদিক উল্লেখ করেন, গত এপ্রিলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন করিডর স্থাপনের বিষয়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তখন খলিলুর রহমান বলেন, ‘পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আমার রোজ কথা হয়। তিনি স্লিপ অব দ্য টাং কথাটি বলেছিলেন। উনি পরে সংশোধন করেছেন। এরপর মানবিক করিডর নিয়ে তিনি আর কোনো কথা বলেননি।’

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান অন্য দেশের নাগরিক বলেও কয়েক দিন ধরে আলোচনা চলছে। এ বিষয়েও নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন তিনি।

তাঁর জাতীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে উল্লেখ করে খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমি শুধু বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশে আসার আগে যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের সঙ্গে থেকেছি। আমার যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট নেই। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশের জাতীয়তা আমার নেই। এখন আমাকে যদি বলা হয়, আমেরিকায় থেকেছি তাই আমি ওই দেশের নাগরিক। তাহলে কাল তারেক রহমানকে একই কথা বলা হবে।’

সবার প্রতি বুঝেশুনে কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে যদি ঢিল নিক্ষেপ করেন, সে ঢিল অন্যের ওপর পড়তে পারে। আমি যেটা নই, আমাকে সেটা বানাবেন না। আর যদি পারেন আদালতে প্রমাণ দিন আমি বিদেশি নাগরিক। প্লিজ স্টপ ইট।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট র খ ইন অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

আজ থেকে নিউমুরিং টার্মিনালের দায়িত্বে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান ড্রাইডক

চুক্তি শেষ হওয়ায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ছেড়েছে সাইফ পাওয়ারটেক। সোমবার (৭ জুলাই) থেকে এনটিসি পরিচালনা করবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড। গতকাল রবিবার (৬ জুলাই) এনসিটি থেকে সাইফ পাওয়ারটেক তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানান, সাইফ পাওয়ারটেক-এর সঙ্গে বন্দরের এনসিটি পরিচালনার চুক্তি রবিবার (৬ জুলাই) শেষ হয়েছে। এই চুক্তি নবায়ন হয়নি। 

আরো পড়ুন: রবিবার থেকে নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনা করবে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান ড্রাইডক

আরো পড়ুন:

হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ 

আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু

তিনি বলেন, “বন্দরের এনসিটি পরিচালনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন ড্রাইডকের সঙ্গে পরিচালনা-চুক্তি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভায় ইতোমধ্যে অনুমোদিত হয়েছে। শুরুতে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজে টার্মিনাল পরিচালনার পরিকল্পনা করলেও সরকারের পক্ষ থেকে নৌবাহিনীকে দায়িত্ব দিতে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়। আইনি জটিলতার কারণে সরাসরি নৌবাহিনীকে না দিয়ে তাদের অধীনস্থ ড্রাইডককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ড্রাইডক আজ সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে এনসিটি পরিচালনায় দায়িত্ব গ্রহণ করবে।”

এ প্রসঙ্গে সাইফ পাওয়ারটেক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন বলেছেন, “আজ ৭ জুলাই নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে ড্রাইডক কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হবে।”

এনসিটি চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় টার্মিনাল। টার্মিনালটিতে পাঁচটি জেটি রয়েছে। এতে চারটি সমুদ্রগ্রামী জাহাজ এবং একটি অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী জাহাজ বার্থিং করতে পারে। ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৬২৭ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করে। যার মধ্যে ১২ লাখ ৮১ হাজার টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে এনসিটিতে। যা বন্দরের মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ৪৪ শতাংশ।

ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ