আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি কাজী মুনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টা বন্দরের কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন না রাখলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতার দায়িত্ব কারখানা মালিকরা নেবেন না।

আজ বুধবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বিজিএমইএর নির্বাচনকেন্দ্রীক জোট সম্মিলিত পরিষদের ইশতেহার ঘোষণা উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে কাজী মনিরুজ্জামান এসব কথা বলেন। তিনি সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি। অনুষ্ঠানে সম্মিলিত পরিষদের দলনেতা আবুল কালাম ইশতেহার তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে তৈরি পোশাক খাতের অগ্রযাত্রার ইতিহাস তুলে ধরেন কাজী মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, এক সময়ের মাত্র ১২ হাজার ডলারের রপ্তানি এখন প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অতীতে উদ্যোক্তারা এ খাতের উন্নয়নে কাজ করেছে, ভবিষ্যতেও করবে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরে নানা সমস্যা রয়েছে। কোনো কার্যক্রম হচ্ছে না সেখানে। আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে না। চীন থেকে ১৪ দিনে চট্টগ্রাম বন্দরে কাঁচামাল আসছে কিন্তু ঢাকায় পণ্য আসতে লাগছে ১৮ দিন। এত সময় ব্যয় হলে ব্যবসা চলবে কীভাবে?

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, অনেক ইস্যু আছে, সংস্কার করুন, কিন্তু ব্যবসায়ীদের কবর দিয়ে নয়, শিল্প ধ্বংস করে নয়। আমদানি-রপ্তানি সচল রাখতে বন্দরের কার্যক্রম ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে হবে। তা না হলে ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার দায়িত্ব শিল্পের মালিকেরা নিতে পারবেন না। কারণ বন্দর সচল না থাকলে রপ্তানি হবে না। কনটেইনার রাস্তায় পড়ে থাকবে। তাহলে মালিকরা কোথায় টাকা পাবে? শ্রমিকের বেতন-ভাতা দিবে কীভাবে?

উল্লেখ্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির প্রতিবাদে সংস্থাটির সারাদেশের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গত সপ্তাহ থেকে কলম বিরতি পালন করে আসছেন। এতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে।

কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে পোশাকশিল্পের মালিকদের গাড়ি-বাড়ি বিক্রি করা হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। অত্যন্ত কষ্টের ও লজ্জার। এই লজ্জা থেকে পরিত্রাণ চায় মালিকরা। সে জন্য যেসব শিল্পমালিক কারখানা চালু রাখতে পারবেন না, তাদের নিরাপদে প্রস্থানের নীতি প্রণয়নের দাবি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন মালিকরা।

অনুষ্ঠানে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, এখনও এলডিসি গ্রাজুয়েশনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নয় বাংলাদেশ। এটি আরও কয়েক বছর পেছানো দরকার।

সংগঠনটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল্লাহিল রাকিব বলেন, সামনে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আসছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাত্রা অনেক বাড়ছে। এক্ষেত্রে প্রতিযোগী দেশ, ভিয়েতনাম, চীন ও ভারতসহ অন্য দেশগুলো শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধিতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। এদিক থেকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে।

অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৈরি পোশাক শিল্পের সামনে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যে পৌঁছাতে ১২ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার মো.

আবুল কালাম।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানার জন্য নীতিগত, আর্থিক ও কাঠামোগত সহায়তায় ‘এসএমই সাপোর্ট সেল’ চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি জানান, তারা ভ্যাট, এইচএস কোড, অর্ডার বাতিল, বিলম্বিত পেমেন্ট ও চুক্তি সংক্রান্ত আইনি জটিলতা নিরসনে সরকারের সঙ্গে কাজ করবেন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতি ও গ্রিন ফান্ডিং ডেস্ক চালু করা হবে। পোশাক শিল্পের শ্রমিক ও ব্যবস্থাপকদের জন্য এআই, আইওটি, ইআরপি, ইএসজি ও কোয়ালিটি কন্ট্রোলে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও সবুজ অর্থায়নের জন্য ‘গ্রিন ফান্ডিং ডেস্ক’ গঠন করা হবে।

মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ ও ইউরোপ-আমেরিকার ওপর নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আঞ্চলিক বাণিজ্য সংস্থা ও চেম্বারগুলোর সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর, বিটুবি মিশন, এক্সপো ও সোর্সিং ফেয়ারে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় বাজারে প্রবেশ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। শুল্ক সুবিধা কমে যাওয়া ঠেকাতে স্মার্ট রাজস্ব নীতি ও প্রণোদনার মাধ্যমে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও মজুরি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

আবুল কালাম বলেন, এই নীতি স্মার্ট রাজস্ব ব্যবস্থা, ক্রেতা-সহযোগিতা ও খাতভিত্তিক সহায়তার মাধ্যমে সব ধরনের কারখানা-বিশেষ করে এসএমইকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সহায়তা করবে। বন্ড সুবিধা, গ্রিন চ্যানেল চালু, সোর্স ট্যাক্স হ্রাসসহ কাস্টমস-বন্ড-ভ্যাট ব্যবস্থার যুগোপযোগী সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিয়ের কথা জানিয়ে আবুল কালাম বলেন, বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ে প্রিমিয়াম পণ্যের প্রচারণা, ডিজাইন-ভিত্তিক প্রদর্শনী ও ভিজ্যুয়াল ব্র্যান্ডিং সাপোর্টে আমরা ‘মেইড ইন বাংলাদেশ প্রিমিয়াম এডিশন’ নামে একটি গ্লোবাল ব্র্যান্ডিং ক্যাম্পেইন চালু করা হবে, যেখানে বাংলাদেশকে কেবল সস্তা উৎপাদনের দেশ নয়, বরং আধুনিক, টেকসই ও মূল্যনির্ভর সোর্সিং ডেস্টিনেশন হিসেবে পরিচিত করা হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব জ এমইএ মন র জ জ ম ন অন ষ ঠ ন ব যবস থ র জন য ম ল কর

এছাড়াও পড়ুন:

‘মালিকের সম্পত্তি বিক্রি করে শ্রমিক‌দের বকেয়া পরিশোধ করা হবে’

টিএনজেড লিমিটেড ও মাহমুদ গ্রুপের মালিকানাধীন জমি, বাড়ি, ফ্যাক্টরি ও অন্যান্য স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে তাদের সব শ্রমিকের পাওনা দ্রুত পরিশোধ করা হবে ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

মঙ্গলবার (২০ মে) সচিবালয়ে  শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত এক সভায় তি‌নি এ কথা বলেন।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, “টিএনজেড লিমিটেড ও মাহমুদ গ্রুপের কর্তৃপক্ষকে আধ এ বিষয়ে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য যেসব ফ্যাক্টরির মালিকের কাছে শ্রমিকদের বকেয়া রয়েছে তাদের তালিকা প্রস্তুত করে বকেয়া পরিশোধ করা হবে।”

উপদেষ্টা অন্যান্য মালিকদের দ্রুত বকেয়া পরিশোধ করার আহ্বান জানান অন্যথায় একইভাবে তাদের জমি, বাড়ি, ফ্যাক্টরি ও অন্যান্য স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে তাদের সব শ্রমিকের পাওনা দ্রুত পরিশোধ করা হবে ব‌লেও হুঁশিয়া‌রি দেন।

তিনি বলেন,“টিএনজেড লিমিটেড ও মাহমুদ গ্রুপের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া ডার্ড গ্রুপ, টিএনজেড গ্রুপ, জেনারেশন নেক্সট, রোয়ারর ফ্যাশন এর মালিকদের দেশে ফেরানোর জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

এ সময় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিকেএমইএ সভাপতি, বিজিএমইএ প্রতিনিধি এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘মালিকের সম্পত্তি বিক্রি করে শ্রমিক‌দের বকেয়া পরিশোধ করা হবে’