সন এখন ‘কিংবদন্তি’, ১৭ বছর পর টটেনহামের ঘরে ট্রফি
Published: 22nd, May 2025 GMT
বেচারা হ্যারি কেইন!
টটেনহামে ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে নিজেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করলেও শিরোপা জেতা হয়নি। মনের দুঃখে উত্তর লন্ডনের ক্লাবটি ছেড়ে যোগ দেন বায়ার্ন মিউনিখে। সেখানে এ মৌসুমে অবশেষে বুন্দেসলিগা শিরোপার দেখা পান। তখন অনেকেই মজা করে বলেছিলেন, বুন্দেসলিগা ট্রফি দেখতে তো শিল্ডের মতো, কেইন তাই চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বটে কিন্তু শিরোপা জয়ের অপেক্ষা কাটেনি। কেইন ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিলে কাল রাতে টটেনহামকে দেখে তাঁর আনন্দের পাশাপাশি একটু দুঃখও লাগার কথা—হাজার হোক, ইউরোপা লিগের ট্রফি নিয়ে তো আর অমন মজা করার সুযোগ নেই!
আরও পড়ুনহতে চেয়েছিলেন ফুটবলার, হয়ে গেলেন জেমস বন্ড১ ঘণ্টা আগেবিলবাওয়ের সান মামেসে কাল রাতে ইউরোপা লিগের ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ১-০ গোলে হারিয়ে ১৭ বছরের শিরোপাখরা ঘুচিয়েছে টটেনহাম। ২০০৮ সালে লিগ কাপ জয়ের পর এটাই প্রথম শিরোপা টটেনহামের। ইউরোপের মঞ্চে ক্লাবটি শিরোপা জিতল ৪১ বছর পর—সর্বশেষ জিতেছিল ১৯৮৪ সালে এই ইউরোপা লিগেরই পূর্ববর্তী সংস্করণ উয়েফা কাপ।
৪২ মিনিটে ফরোয়ার্ড ব্রেনান জনসনের করা গোলটি গড়ে দিয়েছে ম্যাচের ভাগ্য। শেষ বাঁশি বাজার পর টটেনহামের দক্ষিণ কোরিয়ান অধিনায়ক সন হিউং-মিন ট্রফি বুঝে নেওয়ার সময় খেলোয়াড় এবং গ্যালারিতে সমর্থকদের উল্লাস ছিল দেখার মতো। ১০ বছর আগে ক্লাবটিতে যোগ দেওয়ার পর স্পার্সদের হয়ে এটা সনেরও প্রথম শিরোপা জয়।
শুধু তাই নয়, অ্যাঞ্জ পোস্তেকোগলু অস্ট্রেলিয়ার কোচ থাকতে ২০১৫ সালে এশিয়ান কাপ ফাইনালে ওশেনিয়ার দলটির কাছে হেরেছিল সনের দক্ষিণ কোরিয়া। ম্যাচ শেষে মাঠেই কান্নায় ভেঙে পড়া সনকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন পোস্তেকোগলু। নিয়তির কী লীলা, অস্ট্রেলিয়ান এ কোচের হাত ধরেই টটেনহামে শিরোপা জিতলেন সন, যেটা তাঁর ক্লাব ক্যারিয়ারে প্রথম শিরোপাও। দক্ষিণ কোরিয়া অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে ২০১৮ সালে এশিয়ান গেমস জিতেছেন সন, যেটা এত দিন ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের একমাত্র শিরোপা।
আরও পড়ুনআনচেলত্তির ব্রাজিল দলে ফিরতে কতটা প্রস্তুত নেইমার৯ ঘণ্টা আগেমৌসুমের শুরুতে সন বলেছিলেন, টটেনহামের কিংবদন্তি হতে চান। কিন্তু তেমন কিছু হতে পারবেন সেটি তাঁর মনে হয়নি। কাল রাতে শিরোপা জয়ের পর সনকে প্রসঙ্গটি মনে করিয়ে দিতে কোরিয়ান এ ফরোয়ার্ড বলেছেন, ‘ঠিক আছে, আমি কিংবদন্তি। কেন নয়? শুধু আজকের জন্য তো! ১৭ বছর ধরে এটা কেউ করতে পারেনি। অসাধারণ কিছু খেলোয়াড়দের কল্যাণে আজ (কাল রাতে) সেই দিনটা চলেই এল। আজ বলতে পারি যে আমি এই ক্লাবের কিংবদন্তি।’
প্রিমিয়ার লিগে এক ম্যাচ হাতে রেখে টেবিলে ১৭তম অবস্থানে থাকায় পোস্তেকোগলুর চাকরি নিয়ে টানাটানি শুরুর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে। ইউরোপা লিগ জিতে টটেনহামকে চ্যাম্পিয়নস লিগে তোলার পর পোস্তেকোগলুকে নিয়ে এই গুঞ্জন একটু হলেও থামার কথা। পোস্তেকোগলুর এ নিয়ে মানসিকতা হলো ‘যাই ঘটুক দেখা যাবে।’
টটেনহাম কোচ হিসেবে নিজের দ্বিতীয় মৌসুম ও শততম ম্যাচে ক্লাবটিকে ট্রফি এনে দিয়ে একটি বিষয় স্মরণও করিয়ে দিয়েছেন পোস্তেকোগলু। সেল্টিক, ইয়োকোহামা এফ.
এক ম্যাচ হাতে রেখে লিগ টেবিলে ১৬তম অবস্থানে থাকা ইউনাইটেডের অবস্থা আরও খারাপ। ১৯৭৩-৭৪ মৌসুমের পর এটাই তাদের সবচেয়ে বাজে মৌসুম। আগামী মৌসুমে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় দেখা যাবে না ক্লাবটিকে, যেটা ১৯৯০ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো। হতাশ ক্লাবটির কোচ রুবেন আমোরিম সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘বোর্ড এবং সমর্থকেরা যদি মনে করেন আমি যোগ্য ব্যক্তি নই তাহলে পরের দিনই আমি চলে যাব এবং ক্ষতিপূরণ নিয়ে কোনো বলব না।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চবির হলে পাওয়া আসন স্থগিত করায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শহিদ মো. ফরহাদ হোসেন হল ও অতীশ দীপঙ্কর হলে বৈধভাবে আসন বরাদ্দ দিয়ে পরে তা স্থগিত করায় বিক্ষোভ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকাল ৫টার মধ্যে বিষয়টির সমাধান না করলে হলে ওঠার আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে তারা আল্টিমেটাম দেন।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর ফরহাদ হোসেন হল ও অতীশ দীপঙ্কর হলে আবাসন বরাদ্দের আবেদন নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর ভিত্তিতে ফরহাদ হোসেন হলে বরাদ্দপ্রাপ্তদের নাম উল্লেখ করে ফলাফল দেয় আইসিটি সেল। হলটিতে সিট সংখ্যা ৭০০। এরমধ্যে ৫৩০ জন শিক্ষার্থীর হলে সিট নিশ্চিত করা হয়েছে। বাকি ১৭০ জনের আসন স্থগিত করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
চবিতে শিক্ষক-সাংবাদিকের ওপর হামলা: ৪ জনের শাস্তি, ৬ জনের মুক্তি
জকসু নির্বাচনের দাবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের
অন্যদিকে, একই সমস্যায় অতীশ দীপঙ্কর হলেও প্রায় ৩০ জনের আসন স্থগিত হয়েছে। ইতোমধ্যে বরাদ্দ পাওয়া শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই হলগুলোতে উঠেছেন। ভাইভাতে বাকি ২০০ জন শিক্ষার্থীর সিট স্থগিত রাখা হয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলছেন, বর্ষ নিয়ে প্রশাসন যে সমস্যার কথা জানিয়ে আমাদের সিট স্থগিত রেখেছে, আসলে এতে আমাদের কোনো ভুল ছিল না। আবেদন ফরম অনুযায়ী আমাদের সবকিছু শতভাগ সঠিক। পরে প্রশাসন থেকে এ বিষয়ে যৌক্তিক সমাধানের কথা জানালেও এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। এতে তারা আবাসন সংকট নিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়ছেন।
এদিকে, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. ড. কামাল উদ্দিন তাদের বৃহস্পতিবার (২২ মে) সমাধানের কথা জানায়। কিন্তু আইসিটি সেল থেকে বলা হয়েছে এখন সমাধান অসম্ভব। বিষয়টির সমাধান কবে হবে তা শিক্ষার্থীদের জানায়নি আইসিটি সেল।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, “প্রশাসন থেকে দেওয়া ফর্ম অনুযায়ী যথাযথ নিয়মে আবেদন করে মেধার ভিত্তিতে শহীদ মো. ফরহাদ হোসেন হলে আসন বরাদ্দ পেয়েছি আমরা। এরপর সাক্ষাৎকারে হঠাৎ বর্ষ সংক্রান্ত সমস্যার কথা উল্লেখ করে আমাদের আসন স্থগিত করে দেয়। সমস্যার সমাধানে প্রাধ্যক্ষ থেকে আইসিটি সেল হয়ে প্রক্টর অফিস, উপ-উপাচার্য অফিসে গত ১৩ এপ্রিল থেকে আমাদের চরকির মতো ঘুরানো হচ্ছে। প্রশাসন থেকে সমাধানের আশ্বাস দিলেও তার কোনো অগ্রগতি নেই।”
তিনি আরো বলেন, “গত ১৭ মে উপ-উপাচার্য স্যার আমাদের বলেছিলেন, আজ (২২ মে) আমাদের বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু আইসিটি সেলের পরিচালক আমাদের জানিয়েছে, এখন সমাধান অসম্ভব। কখন সমাধান হবে সে সম্পর্কেও তিনি কথা বলতে চান না। তিনি বলছেন, এর সমাধান একমাসেও হতে পারে, ছয় মাসও লাগতে পারে। এজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সমস্যার সমাধান না হলে আজ বিকেল ৫টায় আমরা আমাদের বরাদ্দকৃত হলে সবাই উঠে যাব। এছাড়া আমাদের আর কোন পথ নেই।”
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আলমগীর হোসেন বলেন, “দীর্ঘ দেড় মাস ধরে আমরা আমাদের বৈধ আসন নিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছি। প্রশাসন বিষয়টি সমাধান করলেও কার্যত আমাদের দিকে তাদের কোনো দৃষ্টি নেই। সমাবর্তনের পরে ওঠানোর কথা বললেও এখন তাদের কোনো সাড়া নেই। আমরা আর কারো কাছে ঘুরব না। বিকেল ৫টার মধ্যে সমাধান না করলে আমরা হলে উঠে যাব।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল পরিচালক অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, “এটির সমাধান এখন সম্ভব নয়। বর্তমানে ভর্তি কার্যক্রম নিয়ে অনেক ব্যস্ততা চলছে। হলের সিটের সমস্যার চেয়েও আমাদের আরো বড় কাজ আছে। কাজেই প্রাধান্যের দিক দিয়ে যেটি এগিয়ে, সেটিই আগে করছি।”
তিনি বলেন, “কবে নাগাদ এটির সমাধান করতে পারব তা বলতে পারছি না। এটি একমাসও লাগতে পারে, আবার ছয় মাসেও লাগতে পারে। এ বিষয়ে আপাতত শিক্ষার্থীরা যেন আমাাদের অন্যান্য কাজে ব্যাঘাত না ঘটায়।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় আসন বরাদ্দ কমিটির আহ্বায়ক ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “নতুন দুই হলের বর্ষ সংক্রান্ত সমস্যাটি সমাধানের কাজ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব সমাধান হবে। এখন শিক্ষার্থীরা হলে উঠে গেলে এর দায়দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে।”
কবে নাগাদ বিষয়টির সমাধান হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা দিতে পারছি না। তবে ঈদের আগে হলে উঠানোর বিষয়ে তাদের কয়েকবার বলেছি। ঈদের আগে তাদের হলে উঠানো হবে।”
ঢাকা/মিজান/মেহেদী