ব্যাংকে নৈতিকতার ঘাটতি থাকলে মারাত্মক পরিণতি
Published: 23rd, May 2025 GMT
বাংলাদেশের ব্যাংক খাত গভীর নৈতিক সংকটের মুখোমুখি। আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য যা হুমকি। নৈতিকতার এ ঘাটতি মোকাবিলা করা জরুরি। এ কাজে ব্যর্থ হলে অর্থনীতিতে মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও ক্ষমতাশালী ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে যোগসাজশের কারণে নিরপেক্ষতা উপেক্ষা করা হয়েছে। ব্যাংক খাতের ব্যর্থতার পেছনে প্রযুক্তিগত ব্যর্থতার চেয়ে নৈতিক অবক্ষয় বেশি দায়ী।
গতকাল রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত ২২তম নূরুল মতিন স্মারক বক্তৃতায় এসব কথা বলেন বাংলাদেশি-আমেরিকান অর্থনীতিবিদ ড.
বিআইবিএম প্রতিবছর ‘এথিকস ইন ব্যাংকিং’ শীর্ষক নূরুল মতিন স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে। নূরুল মতিন ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, ব্যাংক খাতে যার বড় অবদান রয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, বিআইবিএম, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, গবেষকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
ড. মোহাম্মদ কবির হাসান বলেন, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে ঋণ অনুমোদন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার বা নৈকট্য ব্যাংকিং ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। এ ধরনের ব্যর্থতা জনসাধারণের আস্থা ব্যাহত করে এবং ব্যাংকগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে। নৈতিক ব্যর্থতা ঠেকাতে এবং স্বচ্ছতা বাড়াতে কঠোর আইন ও বিধিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে স্বাধীন পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা এবং নৈতিক শাসন ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাব এবং যোগসাজশ, দুর্নীতি, দুর্বল শাসন ব্যবস্থার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় উল্লেখযোগ্য এবং বৃহৎ আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালের পর অর্থনৈতিক বা নৈতিক বিবেচনার পরিবর্তে রাজনৈতিক স্বার্থে প্ররোচিত হয়ে সরকার নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়। অর্থনীতিবিদদের সতর্কতা উপেক্ষা করে নতুন ব্যাংক দেওয়া হয়। এতে করে ব্যাপক অসদাচরণ এবং দুর্নীতি দেখা দেয়। রাজনৈতিক প্রভাব সরকারি তহবিলের আত্মসাৎকে সহজ করেছে। যে কারণে প্রচুর অর্থ পাচার হয়েছে। বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, জনতা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক, আইএফআইসি এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মতো কেলেঙ্কারির কারণে এ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ধরনের কেলেঙ্কারির পেছনে নৈতিক ত্রুটি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, দুর্নীতি ও দুর্বল শাসন ব্যবস্থা অন্যতম দায়ী।
কবির হাসান বলেন, ব্যাংক, আমানতকারী এবং ঋণগ্রহীতার মধ্যে বোঝাপড়ার ভিত্তি হলো আস্থা। প্রতারণামূলক আচরণ এবং দায়িত্বের অভাব বিশ্বাসযোগ্যতাকে দুর্বল করে দেয়। সমগ্র ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করে তোলে। বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে ব্যাংকগুলো জনসাধারণের আমানতের রক্ষক হিসেবে কাজ করে।
আমানতকারীদের তহবিল রক্ষা এবং যথাযথভাবে ঋণ বিতরণের জন্য একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। এই বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করলে জনসাধারণের আস্থার ক্ষতি হয়, যার ফলে ব্যাংক খাতে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। ব্যাংক নির্বাহীদের কাছ থেকে নিরপেক্ষ এবং স্বার্থের দ্বন্দ্ব থেকে বিরত থাকার আশা করা হয়। তবে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ক্ষমতাশালী ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে সহযোগিতার কারণে বাংলাদেশে নৈতিক নিরপেক্ষতাকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ বলেন, অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা দুটি খাত রেমিট্যান্স এবং তৈরি পোশাক। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ব্যাংক খাতের ভূমিকা অনেক। তবে সাংগঠনিক অদক্ষতা, দুর্বল শাসন ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা এ খাতের পদ্ধতিগত দুর্বলতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সম্পদ ও মূলধন সঞ্চয় বাড়ার সঙ্গে দুর্নীতির মাত্রা বেড়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ মঞ্জুরিতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ একটি সাধারণ অভ্যাস ছিল। যার ফলে ব্যাংক খাতে সংকট দেখা দেয়। গত দশকে খেলাপি ঋণ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত আর থ ক দ র বল ক ষমত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।
অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।
আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগেএ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।
সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।
এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।
আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে