শহরের মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তদের মধ্যে গাড়ি কেনায় আগ্রহ বেড়েছে। সন্তানদের স্কুল–কলেজে আনা–নেওয়া আর নিজের অফিসে যাতায়াতসহ দৈনন্দিন চলাচলের জন্যই মূলত তাঁরা ব্যক্তিগত গাড়ি কিনতে চান। কষ্টের টাকায় প্রথম গাড়ি কেনার আগে একজন ক্রেতাকে নানা দিক ভাবতে হয়। দেখা যাক, গাড়ি কেনার আগে একজন ক্রেতাকে কোন কোন বিষয় বিবেচনায় রাখতে হয়।
১.
প্রয়োজন বুঝে গাড়ির ধরন ঠিক করুন
কেন গাড়ি কিনছেন, এটা ভাবতে হবে। দৈনন্দিন অফিস যাতায়াত ও পরিবার নিয়ে ভ্রমণ, নাকি দীর্ঘ দূরত্বে যাওয়া? যদি শহরের ভেতরে ছোট পরিবার নিয়ে চলাফেরা করেন, তাহলে হ্যাচব্যাক বা সেডান শ্রেণির ছোট গাড়ি যথেষ্ট। বড় পরিবার বা ঘন ঘন দূরপাল্লার ভ্রমণের জন্য এসইউভি ধরনের গাড়ি বেছে নিতে পারেন।
২. নতুন না পুরোনো গাড়ি
বাংলাদেশের বাজারে নানা দামের গাড়ি পাওয়া যায়। রিকন্ডিশন্ড বা পুরোনো গাড়ির দাম কিছুটা কম। রিকন্ডিশন্ড গাড়ির মধ্যে সবচেয়ে বড় হিস্যা জাপানি টয়োটা ব্র্যান্ডের। নতুন গাড়ির চেয়ে দামও বেশ কম। পুরোনো গাড়ি কেনার আগে একজন দক্ষ মেকানিকের মাধ্যমে গাড়িটি দেখিয়ে নেওয়া ভালো।
পুরোনো গাড়িতে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কিছুটা বেশি। নতুন গাড়িতে এই খরচ কিছুটা কম। নতুন গাড়ি কিনলে প্রথম কয়েক বছর রক্ষণাবেক্ষণে বড় কোনো খরচ হয় না।
৩. সবকিছুর আগে দাম
গাড়ি কেনার আগে ক্রেতাদের নিজ নিজ সামর্থ্যের কথা ভেবে গাড়ি পছন্দ করতে হয়। সে জন্যই হয়তো সব মিলিয়ে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দিকেই বাংলাদেশের ক্রেতাদের বেশি ঝোঁক। তবে স্বপ্নের সঙ্গে সামর্থ্যের সংযোগ ঘটাতে না পারলে অনেকে আবার দেশে ব্যবহৃত পুরোনো গাড়ি কেনেন। যা–ই হোক, ব্যক্তিগত গাড়ি হিসেবে ১৫০০ সিসির গাড়িই বেশি পছন্দ ক্রেতাদের।
বর্তমানে ২০০০ সাল থেকে শুরু করে পরের বছরগুলোর মডেলের পুরোনো গাড়ি বেশি বিক্রি হয়। দাম কমবেশি ১০ লাখ টাকা থেকে হয়। অন্যদিকে ১৫০০ সিসির নতুন গাড়ি কিনতে আপনাকে ২৫ লাখ টাকার বেশি বাজেট নিয়ে নামতে হবে।
৪. ঋণ নেবেন কি না, ভাবুন
গাড়ি কেনার আগে টাকার জোগান কীভাবে হবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা দরকার। গাড়ি কেনার জন্য অনেকেই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিগত বা গাড়ির ঋণ নিয়ে থাকেন। আপনার আয় যদি নিয়মিত হয় এবং কিস্তি পরিশোধের সামর্থ্য থাকে, তাহলে গাড়ির ঋণ পাওয়া যায়। তবে মাসিক কিস্তি যেন আপনার মোট আয়ের পাঁচ ভাগের এক ভাগের বেশি না হয়, এটা বিবেচনায় রাখতে হবে। এটা মাথায় রাখুন।
অনেকে নিজের কিছু জমানো টাকার পাশাপাশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েও গাড়ি কেনা ভালো। ধরুন, আপনার নিজের ১০ লাখ টাকা আছে। ব্যাংক থেকে আরও ২০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনতে পারবেন। এতে ঋণের কিস্তির চাপ কম হবে। বর্তমানে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত গাড়ির ঋণ পাওয়া যায়। হাইব্রিড গাড়ির ক্ষেত্রে দামের ৭০ শতাংশ ঋণ মেলে।
৫. শুধু দাম নয়, খরচও ধরুন
অনেকে শুধুই গাড়ির মূল দাম হিসাব করেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, মোট খরচে আছে, যেমন নিবন্ধন ফি, লাইসেন্স ও ফিটনেস খরচ, সার্ভিসিং, চালকের বেতন, মাসিক জ্বালানি খরচ। এসব খরচ চালাতে পারবেন কি না, তা বিবেচনায় রেখে গাড়ি কেনার কথা ভাবুন। এ ছাড়া ইএমআই (ঋণের কিস্তি) থাকলে, সেটাও মাসিক বাজেটের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।
৬. যন্ত্রাংশের বাজারও গুরুত্বপূর্ণ
শুধু গাড়ি কিনলেই হবে না, গাড়ি কেনার পর যেকোনো সময়ে গাড়ির সমস্যা হতে পারে। নির্দিষ্ট সময় পরপর গাড়ির কিছু যন্ত্র বা যন্ত্রাংশও পাল্টানোর দরকার পড়ে। ওই সব যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ যদি বাজারে না পাওয়া যায় কিংবা সহজলভ্য না হয়, তাহলে তো বিপদ। তাই গাড়ির যন্ত্রাংশ সহজে পাওয়া যায়, এমন গাড়ি কিনতেই বেশি আগ্রহী হন ক্রেতারা।
৭. গাড়ির কাগজপত্র যাচাই করুন
গাড়ির মালিকানা, ফিটনেস সনদ, ইনস্যুরেন্স, করপত্র সব হালনাগাদ আছে কি না, বিশেষ করে পুরোনো গাড়ির ক্ষেত্রে এগুলো অবশ্যই যাচাই করতে হবে।
৮. বিমা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করুন
গাড়ির জন্য তৃতীয় পক্ষের বিমা করা বাধ্যতামূলক। দুর্ঘটনা বা ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক চাপ এড়াতে বিমা থাকা খুবই জরুরি।
৯. বিক্রি করলে দাম কেমন
গাড়ি কেনার সময় বিক্রির কথাও ভাবেন অনেক ক্রেতা। কয়েক বছর ব্যবহারের পরে বিক্রি করতে চাইলে কোন গাড়ির দাম কত পাওয়া যেতে পারে, তা চিন্তা করেও অনেক ক্রেতা কোন কোম্পানির গাড়ি কিনবেন, তা ঠিক করেন। পুরোনো গাড়ি বেচাকেনায় বাংলাদেশে টয়োটা গাড়ির বাজারই সবচেয়ে ভালো। কারণ, দেশের বাজারে এই ব্র্যান্ডের গাড়ির যন্ত্রাংশই অধিকতর সহজলভ্য।
১০. নিজেকে তিনটি প্রশ্ন করুন
গাড়ি কেনার আগে নিজেকে তিনটি প্রশ্ন করেন। প্রথমত, আমি কি এই গাড়ি চালাতে জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন খরচে প্রস্তুত? দ্বিতীয়ত, আমার প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত গাড়িটি কি পেয়েছি? তৃতীয়ত, ভবিষ্যতে যদি গাড়িটি বিক্রি করি, তাহলে যথাযথ মূল্য পাব কি? এসব প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গে লুকিয়ে আছে আপনার গাড়ির স্বপ্ন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ন র আগ নত ন গ ড় র জন য আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
অ-অভিবাসী ৮০ হাজার ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন শপথ নেওয়ার পর থেকে প্রায় ৮০ হাজার অ-অভিবাসী ভিসা বাতিল করেছে। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, হামলা ও চুরির মতো অপরাধের অভিযোগ রয়েছে—এমন অ–অভিবাসীদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
ওয়াশিংটন এক্সামিনারের প্রথম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর থেকে অভিবাসনবিরোধী ব্যাপক অভিযান শুরু হয়েছে। এই অভিযানের অংশ হিসেবে বৈধ ভিসাধারী অনেক অভিবাসীকেও তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রেও কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। নতুন নিয়মে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যাচাই-বাছাই আরও কঠোর করা হয়েছে এবং আবেদনকারীদের স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া বাড়ানো হয়েছে।
অ-অভিবাসী ভিসা বাতিলের মধ্যে প্রায় ১৬ হাজারটি ঘটেছে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর কারণে। হামলা করার জন্য বাতিল করা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার ভিসা এবং চুরির জন্য আরও ৮ হাজার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, এই তিন ধরনের অপরাধ চলতি বছরের মোট ভিসা বাতিলের প্রায় অর্ধেক।
গত আগস্টে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছিলেন, ওয়াশিংটন মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া ও আইন লঙ্ঘনের কারণে ছয় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভিসা বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে ‘সন্ত্রাসবাদে সমর্থন’ দেওয়াসংক্রান্ত অভিযোগও ছিল।
গত মাসে মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রভাবশালী ডানপন্থী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ড–সম্পর্কিত মন্তব্য করায় অন্তত ছয়জনের ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
মে মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছিলেন, তিনি শত শত—সম্ভবত হাজারো মানুষের ভিসা বাতিল করেছেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থীও আছেন। কারণ, তাঁরা এমন কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
চলতি বছরের নির্দেশনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনীতিকদের বলা হয়েছে, বিদেশে থাকা আবেদনকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে, যাঁদের যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বৈরী মনোভাব থাকতে পারে অথবা যারা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন এবং গাজার যুদ্ধে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনার কারণে শিক্ষার্থী ও গ্রিন কার্ডধারী ভিসাধারীরা দেশ থেকে বহিষ্কৃত হতে পারেন। তাঁদের এসব কর্মকাণ্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির জন্য হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং অভিযোগ করা হয়েছে, তারা হামাসপন্থী।