দৌলতদিয়ায় মাদক মামলার এক আসামিকে কুপিয়ে হত্যা
Published: 23rd, June 2025 GMT
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় নজরুল ব্যাপারী (৩০) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আজ সোমবার সকালে নিজ বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে দৌলতদিয়া যৌনপল্লিসংলগ্ন একটি ডোবার পাশ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশ।
নজরুল ব্যাপারী দৌলতদিয়া ইমানখার পাড়ার বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও জুয়া আইনে দুটি মামলা আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে এক জোড়া স্যান্ডেল, একটি মুঠোফোন, একটি চাবির ছোড়া ও একটি পাঞ্জাবি আলামত হিসেবে জব্দ করেছে পুলিশ।
নজরুলের আরেক ভাই আরশাদ ব্যাপারী ২০১৬ সালে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। তাঁর বিরুদ্ধেও মাদক, জুয়া ও ছিনতাইয়ের বেশ কয়েকটি মামলা ছিল।
নিহত ব্যক্তির বড় ভাই এরশাদ ব্যাপারী বলেন, নজরুল দৌলতদিয়া পূর্বপাড়া যৌনপল্লির ভেতর পান-সিগারেটের দোকান করতেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় দোকান থেকে বাড়ি আসেন। রাতের খাওয়া শেষে ১০টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। সকালে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাইয়ের লাশ পান। নজরুলের স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে আছে। কে বা কারা, কী কারণে ওকে মেরেছে, তিনি বলতে পারছেন না। তিনি ভাই হত্যার বিচার চান।
সকাল আটটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, লাশের চারপাশে ভিড় করছেন স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সদস্যরা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলামসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ঘটনাস্থল রেলওয়ের সীমানা পিলারের মধ্যে থাকলেও রেলওয়ে পুলিশ সুরতহালে অস্বীকৃতি জানায়। পরে গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশ সুরতহাল শেষ করে ময়নাতদন্তের প্রস্তুতি নেয়। সকাল ৯টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, নিহত নজরুল ব্যাপারীর মাথার ডান পাশে, ঘাড়, পিঠ, শরীরের কয়েকটি স্থানে, ঊরু, হাঁটুর নিচে ও হাতে ধারালো অস্ত্রের ছয় থেকে সাতটি কোপের চিহ্ন আছে। প্রতিটি আঘাতের অনেক গভীর ক্ষত আছে।
ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ববিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ নজরুলকে হত্যা করেছে। গতকাল রাত থেকে আজ ভোরের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ধারাবাহিক বিপর্যয় বাকৃবির
বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিং ২০২৫’ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রকাশিত ‘ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিং ২০২৫’-এ দেখা গেছে, বাকৃবির অবস্থান উঠে এসেছে ১০০১ থেকে ১৫০০ এর মধ্যে। অথচ ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিং ২০২২-এ বাকৃবির অবস্থান ছিল ৬০১-৮০০ এর মধ্যে। যা পরের বছর নেমে যায় ৮০১–১০০০ এ। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ধারাবাহিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে দেশের এই কৃষিভিত্তিক প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়টি।
টিএইচই ওয়েবসাইটের র্যাঙ্কিং প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অগ্রগতির ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ১৩০টি দেশ ও অঞ্চলের ২,৫২৬টি বিশ্ববিদ্যালয়কে এই র্যাঙ্কিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। বাংলাদেশের আরো সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় এবারের ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিংয়ে বাকৃবির সঙ্গে একই ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন সূচকে অবস্থান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এসডিজির দরিদ্র বিলোপ, মানসম্মত শিক্ষা, জলজ জীবন ও লক্ষ্য পূরণে অংশীদারিত্ব এই চারটি লক্ষ্যে পূরণের সূচকে বাকৃবি র্যাংকিং-এ অবস্থান করছে। মানসম্মত শিক্ষা (এসডিজি ৪) সূচকে ২০২২ সালে বাকৃবির অবস্থান ছিল ৩০১–৪০০, যা ২০২৪ সালে নেমে আসে ৪০১–৬০০ এবং ২০২৫ সালে আরো পিছিয়ে ৬০১–৮০০ অবস্থানে যায়।
তবে আশার কথা হলো, জলজ জীবন (এসডিজি -১৪) ও দারিদ্র্য বিলোপ (এসডিজি -১) সূচকে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান তুলনামূলকভাবে কিছুটা উন্নত হয়েছে। জলজ জীবন সূচকে বাকৃবি রয়েছে ১০১–২০০ এবং দারিদ্র্য বিলোপ সূচকে রয়েছে ২০১–৩০০ অবস্থানে। লক্ষ্য পূরণে অংশীদারিত্ব (এসডিজি -১৭) সূচকে গতবারের তুলনায় অগ্রগতি দেখা গেছে; ২০২৪ সালে যেখানে অবস্থান ছিল ১০০১–১৫০০, সেখানে ২০২৫ সালে ৬০১–৮০০ এর মধ্যে উঠে এসেছে।
জানা যায়, ‘ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিং ২০২৫-এ বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান লাভ করেছে। এর মধ্যে ১০১-২০০ এর মধ্যে জায়গা করে নেওয়া দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ( ডিআইইউ)।
এছাড়া, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ র্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠান কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডস (কিউএস) বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ২০২৬ সালের বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংঙ্কিং প্রকাশ করেছে। এতে বাংলাদেশের ১৫টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেলেও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল অনুপস্থিত। গত ৪ বছরেও কিউএস র্যাঙ্কিংয়ে একবারো জায়গা করে নিতে পারেনি বাকৃবি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নির্ধারণে টিএইচই ও কিউএস র্যাঙ্কিং আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বস্ত সূচক হিসেবে বিবেচিত। এই দুই র্যাঙ্কিংয়ে বারবার পিছিয়ে পড়া দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি উদ্বেগের বার্তা বহন করছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণা করছেন ঠিকই, কিন্তু অনেকেই সেই গবেষণা সঠিকভাবে ওয়েবসাইটে আপলোড করছেন না। এতে আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে তথ্য ঘাটতি দেখা দেয় এবং আমরা পিছিয়ে পড়ি।”
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব গবেষণা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বা উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে, সেগুলো নিয়মিত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল কাজ করছে এবং ভবিষ্যতে বিষয়টি আরও উন্নত করার চেষ্টা করছে।”
ঢাকা/লিখন/মেহেদী