গতকালই তো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে ‘কূটনৈতিক সমাধান’ চাইছিলেন। এখন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর ইসরায়েলের অবৈধ আক্রমণে যোগ দিয়েছে। শনিবার দেশটি ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, যা ট্রাম্প ‘অত্যন্ত সফল আক্রমণ’ বলে গর্বভরে তুলে ধরেছেন। 

ইসরায়েলি ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সমর্থক নয় এমন যে কারও কাছে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট– ইরানের ওপর মার্কিন আক্রমণের ফল ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ভোগ করবেন। তিনিই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে এক ঢিলে সব পাখি মারছেন।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান গণহত্যা থেকে বিশ্বের মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নেতানিয়াহু দেশে অসংখ্য দুর্নীতির অভিযোগে নিজের জড়িত থাকার বিষয়ও ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিদিন গণহত্যায় খাদ্য ও অন্যান্য সাহায্যের খোঁজে বের হওয়া ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হচ্ছে। 
ইরানের সঙ্গে কূটনীতির বিনিময়ে ট্রাম্পের প্রাথমিক জেদ স্বাভাবিকভাবেই নেতানিয়াহুর হতাশা বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু গ্রীষ্মের মাঝামাঝি এক রাতে বোমা হামলার মাধ্যমে পরিস্থিতি এখন বদলে দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, এরই মধ্য দিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘ধ্বংস’ হয়ে গেছে।  

নিশ্চিতভাবেই ইরান দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রের কোপদৃষ্টিতে আছে। বহু মার্কিন প্রতিষ্ঠানের হর্তাকর্তা দেশটিতে বোমা হামলার অপেক্ষায় ছিলেন। কেউ কেউ অন্যদের তুলনায় বেশি প্রকাশ্যে নিজেদের ইচ্ছা প্রকাশও করেছেন। যেমন জাতিসংঘের সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনে অল্পকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ২০১৫ সালে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের মতামত পাতায় লিখেছিলেন– ‘ইরানের বোমা থামাতে ইরানে বোমা ফেলুন।’

আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনকারী এমন স্পষ্ট আহ্বানের ক্ষেত্রেও মার্কিন পত্রিকার সম্পাদকরা চোখ রাঙাননি। এতে বোঝা যায়, মার্কিন সমাজ ও সংবাদমাধ্যমে ইরান কতটা ভয়াবহভাবে নিন্দিত। স্মরণ করুন, ২০০২ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ইরাক ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ইরানকে তার কুখ্যাত বাণী ‘অশুভ অক্ষ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চোখের একটি অবিরাম কাঁটা হলেও ইরানের আচরণ স্পষ্টতই অন্যান্য আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ের ভূমিকার তুলনায় কম ‘মন্দ’ ছিল। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই। ইরান বর্তমানে কোটি কোটি ডলার সরবরাহ করে কোনো গণহত্যায় অর্থায়ন করছে না। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মতো কয়েক দশক ধরে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে বোমা হামলা এবং মানুষকে বিরক্ত করছে না। লাতিন আমেরিকায় ডানপন্থি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস থেকে শুরু করে ভিয়েতনামে গণহত্যা চালানো পর্যন্ত নানা অপকর্মে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে। তা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র গোপন পারমাণবিক অস্ত্রের শক্তিধর রাষ্ট্র ইরান নয়, বরং ইসরায়েল। এই দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) স্বাক্ষরে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং তাদের স্থাপনাগুলোতে জাতিসংঘ সুরক্ষা ব্যবস্থার কখনও অনুমোদন করেনি।

যারা ইরান সরকারের ‘নিপীড়নমূলক’ আচরণের কথা বলে ইরানের ওপর হামলার প্রশংসা করেন, তাদের উচিত ইরানে নিপীড়নকে ইন্ধন দেওয়ার মার্কিন ট্র্যাক রেকর্ড পুনর্বিবেচনা করা। ১৯৫৩ সালে সিআইএ ইরানের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা মোহাম্মদ মোসাদ্দেকের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেছিল, যা নিপীড়নবাদী শাহের দীর্ঘস্থায়ী রাজত্বের পথ প্রশস্ত করেছিল।
সম্প্রতি নেতানিয়াহু বলেন, ট্রাম্পের পদক্ষেপ ‘ইতিহাস বদলে দেবে’, যেন বিশ্বকে আরও যুদ্ধক্ষেত্র করে তুলতে এগুলো নতুন কিছু। আর যখন মার্কিন মিডিয়া একটি সার্বভৌম জাতির ওপর অবৈধ আক্রমণকে ন্যায্যতা দেওয়ায় তৎপর, তখন দুটি ভারী পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশের পারমাণবিক ‘হুমকি’র নজরদারির ভণ্ডামি অতিরঞ্জিত বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। 
স্বতঃস্ফূর্ত ও উন্মত্ত আচরণের জন্য গর্বিত ট্রাম্প পরে কী করবেন, তা যে কেউ অনুমান করতে পারেন। তবে নিশ্চিত থাকুন, যা-ই ঘটুক না কেন, অস্ত্রশিল্পে শিগগিরই দুর্ভিক্ষ আসবে না। 

বেলেন ফার্নান্দেজ: আলজাজিরার কলামিস্ট; আলজাজিরা থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর
ইফতেখারুল ইসলাম 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র গণহত য র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

এশিয়া কাপে আচরণবিধি ভঙ্গের শাস্তি পেলেন রউফ-সূর্যকুমারসহ পাঁচজন

এশিয়া কাপ-২০২৫ এ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনা কেবল মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, পৌঁছে গেছে শৃঙ্খলাজনিত ব্যবস্থাতেও। খেলোয়াড়দের আচরণবিধি ভঙ্গের ঘটনায় এবার শাস্তির মুখে পড়েছেন দুই দেশের কয়েকজন তারকা ক্রিকেটার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) সূর্যকুমার যাদব ও হারিস রউফের ওপর জরিমানা ও ‘ডিমেরিট পয়েন্ট’ আরোপ করেছে। আর ভারতীয় পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ পেয়েছেন আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা।

আইসিসির এলিট প্যানেল অব ম্যাচ রেফারিরা সেপ্টেম্বর ১৪, ২১ ও ২৮ তারিখে অনুষ্ঠিত ভারত-পাকিস্তান ম্যাচগুলোর কয়েকটি ঘটনার তদন্ত করেন।

প্রথমবার, সেপ্টেম্বর ১৪:
প্রথম ম্যাচেই মাঠ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই ম্যাচে ভারতের সূর্যকুমার যাদব এবং পাকিস্তানের হারিস রউফ ও সাহিবজাদা ফারহানকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় আইসিসির আচরণবিধির ২.২১ অনুচ্ছেদ ভঙ্গের দায়ে। যেখানে বলা আছে, এমন আচরণ যা খেলাটির সুনাম ক্ষুণ্ন করে।

ফলাফল হিসেবে সূর্যকুমারকে জরিমানা করা হয় ম্যাচ ফি’র ৩০ শতাংশ এবং দেওয়া হয় দুই ডিমেরিট পয়েন্ট। ফারহান পান আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা ও এক ডিমেরিট পয়েন্ট। রউফের শাস্তিও একই; ৩০ শতাংশ জরিমানা ও দুই ডিমেরিট পয়েন্ট।

দ্বিতীয়বার, সেপ্টেম্বর ২১:
এক সপ্তাহ পরের ম্যাচে আবার বিতর্ক। ভারতীয় পেসার অর্শদীপ সিং অভিযুক্ত হন আইসিসির ২.৬ অনুচ্ছেদে, “অপমানজনক ভঙ্গি প্রদর্শনের” অভিযোগে। তবে ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের শুনানিতে প্রমাণ না মেলায় তিনি মুক্তি পান। কোনো শাস্তি হয়নি তার।

ফাইনালের উত্তেজনা, সেপ্টেম্বর ২৮:
এশিয়া কাপের ফাইনালও ছাড় পায়নি শৃঙ্খলাভঙ্গের ছোঁয়া থেকে। ভারতের জাসপ্রিত বুমরাহ স্বীকার করেন যে তিনি খেলাটির মর্যাদাবিরোধী আচরণ করেছেন। ফলে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সতর্ক করা হয় ও দেওয়া হয় এক ডিমেরিট পয়েন্ট। যেহেতু তিনি অপরাধ স্বীকার করেছিলেন, তাই আলাদা শুনানির প্রয়োজন হয়নি।

অন্যদিকে, হারিস রউফ আবারও জড়িয়ে পড়েন একই ধরনের ঘটনায়। ম্যাচ রেফারি রিচি রিচার্ডসনের শুনানিতে দোষী প্রমাণিত হয়ে তিনি আবার জরিমানা পান ম্যাচ ফি’র ৩০ শতাংশ এবং আরও দুই ডিমেরিট পয়েন্ট। এতে তার মোট ডিমেরিট পয়েন্ট দাঁড়ায় চার। যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাকে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞায় ফেলে। ফলে নভেম্বর ৪ ও ৬ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তানের দুইটি ওয়ানডে থেকে ছিটকে গেলেন তিনি।

আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, লেভেল–১ ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ম্যাচ ফি জরিমানা এবং দুই ডিমেরিট পয়েন্ট পর্যন্ত দেওয়া যায়। কোনো খেলোয়াড় যদি ২৪ মাসের মধ্যে চার বা তার বেশি ডিমেরিট পয়েন্ট পান, তবে তা রূপান্তরিত হয় সাসপেনশন পয়েন্টে। অর্থাৎ পরবর্তী ম্যাচে নিষেধাজ্ঞা অবশ্যম্ভাবী।

এশিয়া কাপে শাস্তিপ্রাপ্ত খেলোয়াড়দের তালিকা:

সূর্যকুমার যাদব (ভারত): ম্যাচ ফি’র ৩০% জরিমানা, ২ ডিমেরিট পয়েন্ট।

সাহিবজাদা ফারহান (পাকিস্তান): আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা, ১ ডিমেরিট পয়েন্ট।

হারিস রউফ (পাকিস্তান): দুই আলাদা অপরাধে দু’বার জরিমানা, মোট ৪ ডিমেরিট পয়েন্ট ও ২ ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা।

জাসপ্রিত বুমরাহ (ভারত): সতর্কবার্তা, ১ ডিমেরিট পয়েন্ট।

অর্শদীপ সিং (ভারত): অভিযোগ থেকে মুক্ত, কোনো শাস্তি নয়।

এশিয়া কাপের মাঠে যেমন ব্যাট-বল লড়াই জমেছিল, মাঠের বাইরে ঠিক তেমনই শৃঙ্খলাভঙ্গের নাটকও কম আলোচনার জন্ম দেয়নি। ক্রিকেটের সৌন্দর্য রক্ষায় এবার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে আইসিসি- “খেলা উত্তেজনার হতে পারে, কিন্তু সীমা অতিক্রম নয়।”

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টকে চুমু দেওয়ার চেষ্টা, একজন গ্রেপ্তার
  • চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের মধ্যে বাড়ছে মানসিক সমস্যা
  • এশিয়া কাপে আচরণবিধি ভঙ্গের শাস্তি পেলেন রউফ-সূর্যকুমারসহ পাঁচজন
  • তালেবান এই ‘সুযোগ’ কেন হাতছাড়া করল
  • সুদানের যুদ্ধ ও গণহত্যার পেছনে কারা