মাগুরা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এম আবু তাহের ওরফে সবুজের বাড়ি থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করেছে যৌথ বাহিনী। তার আগে তাঁকে আটক করে সেনাবাহিনী। আজ মঙ্গলবার বিকেলে তাঁকে সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়।

মাগুরা সেনা ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা তিনটার দিকে পৌরসভার ভিটাসাইর এলাকায় আবু তাহেরের বাড়িতে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের একটি দল। অভিযান শেষে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাড়ির শৌচাগারের ছাদে থাকা ব্যাগে ১টি ওয়ান শুটারগান, ১টি গুলি ও ১৫টি ইয়াবা বড়ি এবং ঘরের মধ্যে থেকে ১টি রামদা জব্দ করা হয়েছে।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের ভায়না এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তুতির সময় আবু তাহেরকে আটক করে সেনাবাহিনী। ঘটনাস্থল থেকে মাগুরা সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর শাফিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘তার (আবু তাহের) বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ আমাদের কাছে ছিল। বিভিন্ন সময়ে ১৩ থেকে ১৪টা লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। সে জমি দখলসহ নানা রকম নাশকতামূলক কার্যক্রম করে আসছে। তার বাসায় আমরা একবার অভিযান চালিয়েছিলাম। তখন তার বাসায় তেমন কিছু আমাদের চোখে পড়েনি। কিছু মাদকদ্রব্য ছিল হালকা–পাতলা। তখন তাকে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়।’

এই সেনা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আজ আমাদের কাছে তথ্য ছিল, আগের দিন (১৫ জুন দিবাগত রাত) আবু তাহেরের বাসায় যৌথ বাহিনীর অভিযানের বিরুদ্ধে একটি বিক্ষোভ মিছিল করার প্রস্তুতি চলছিল। সবচেয়ে অ্যালার্মিং বিষয় হচ্ছে, তার পরিকল্পনা ছিল, ওখান (ভায়না এলাকা) থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পের সামনে যাওয়া। তার চেয়ে খারাপ যে জিনিস ছিল, সেটা হচ্ছে বিএনপির ব্যানার ব্যবহার করে সে এটা করতে চেয়েছিল; কিন্তু আমরা ওখানে গিয়ে যেটা জানতে পারলাম, ওখানে বিএনপির কোনো লোকজন ছিল না। যাদের ওখানে আনা হয়েছিল, তারা কেউ দুই হাজার টাকা, দেড় হাজার টাকা বা কাউকে মোটরসাইকেলে তেল ভরে দেওয়ার কথা বলে আনা হয়েছিল।’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী আহমেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবুজ (আবু তাহের) দলের দুঃসময়ের পরীক্ষিত ছাত্রদল নেতা। আগে তাঁর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে কিছু পায়নি। আজ আবার তাঁর বাড়িতে অভিযানে টয়লেটের ছাদ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় অস্ত্র পেয়েছে। এটা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কেউ রেখে যেতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আমরা সন্দিহান। এটা সঠিক তদন্ত করে দেখা উচিত।’

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

আইয়ুব আলী সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদলের ওই নেতাকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল

এছাড়াও পড়ুন:

কারো চোখে পানি, ফেলছেন স্বস্তির শ্বাস: মামদানির জয়ে কী বললেন গার্ডিয়ানের পাঠকেরা

‘নিউইয়র্ককে যেন আবার নিউইয়র্ক বলে মনে হচ্ছে। এটা শুধু একটা নির্বাচন ছিল না। সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন, যেন বহুদিন ধরে লাখ লাখ মানুষ তাঁদের শ্বাস আটকে রেখেছিলেন।’ কথাগুলো বলছিলেন নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটান এলাকার বাসিন্দা কেইথ অ্যালান ওয়াটস। শহরের মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির জয়ে যারপরনাই খুশি তিনি।

নিউইয়র্কের বাসিন্দারা মামদানির জয়ে খুশি হবেন—এটাই স্বাভাবিক। তাঁদের সমর্থনেই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে মেয়র পদে জিতেছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির এই প্রার্থী। তবে নিউইয়র্কের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য শহরের বাসিন্দারাও মামদানিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তাঁর ওপর ভরসা করছেন। তাঁরা বলছেন, ‘মামদানির জয় নির্মল বাতাসে নতুন করে শ্বাস নেওয়ার মতো।’

গত মঙ্গলবার স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে টপকে বিজয়ী হন ৩৪ বছর বয়সী মামদানি। এ নিয়ে পাঠকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। এর জবাবে নিউইয়র্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের শত শত পাঠক তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার গার্ডিয়ানের ওয়েবসাইটে সেগুলো প্রকাশ করা হয়েছে।

তরুণদের আস্থা

নির্বাচনী প্রচারে নিউইয়র্কবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মামদানি। ম্যানহাটানের বাসিন্দা অ্যালান ওয়াটস দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে নিউইয়র্কবাসী একধরনের গ্লানির মধ্যে ছিলেন। বাড়িভাড়া বাড়ছিল, বেতন বৃদ্ধি থমকে ছিল, আশা হারিয়ে গিয়েছিল। তবে মামদানি যখন মুখ খুললেন, মনে হলো তিনি মানুষের জন্যই কথা বলছেন।’

মামদানিকে নিয়ে একই ধারণা নিউইয়র্কের বাসিন্দা মার্গারেট কোগানের। ৮১ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা এখন অবসর যাপন করছেন। তাঁর আশা—মামদানির নেতৃত্বে নিউইয়র্ক শহরে বসবাস করাটা আরও সাশ্রয়ী হবে; বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণি সুবিধা পাবেন, যাঁদের ওপর সবাইকে নির্ভর করতে হয়। মামদানির জয় ‘ঘুমিয়ে থাকা’ ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য একটি জাগরণের বার্তা বলে মনে করেন তিনি।

মার্গারেট কোগানের বয়স হয়েছে। মার্কিন রাজনীতির বহু কিছু দেখেছেন তিনি। সেদিক দিয়ে ৩২ বছর বয়সী ডিলান এখন তরুণ। তিনি রাজনীতিতে আগ্রহ হারাচ্ছিলেন। তবে মামদানির প্রচারে মুগ্ধ ডিলান বলেন, তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারি বা প্রার্থী বাছাইপর্বে ভোট দেননি। শেষ পর্যন্ত প্রচারে মামদানির উৎসাহ–উদ্দীপনা দেখে মেয়র নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন।

নিউইয়র্কের বাইরেও আনন্দের ছোঁয়া

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রক্ষণশীল রাজনীতির মুখে মামদানির এই জয়ের আনন্দে ভাগ বসিয়েছেন নিউইয়র্কের বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা। যেমন ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা স্কট রিচিংয়ের কথা বলা যায়। ‘মেধাবী তরুণ’ মামদানি যেভাবে সাহসিকতার সঙ্গে ট্রাম্প ও ধনকুবেরদের একহাত নিয়েছেন, তা মন জয় করে নিয়েছে ৭৪ বছর বয়সী এই নারীর। রিচিংয়ের এখন নজর নিউইয়র্কের ভবিষ্যতের দিকে।

স্কট রিচিং বলেন, ‘আমি জানি, প্রচারে মামদানি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার সব কটি পূরণ করতে পারবেন না। তবে আশা করি, নিউইয়র্কের যোগাযোগব্যবস্থা ও খাদ্যস্বল্পতার সমস্য নিয়ে কিছু করবেন। পাশাপাশি ধনীদের ওপর কর আরোপ করতে পারবেন। তিনি এগুলো করতে পারলে, আশা করা যায় তা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অন্যান্য নির্বাচনী প্রার্থীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’

মামদানির জয়ের খবরে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি টেনেসি অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা কেফিয়াস স্ট্রাচান (৫৪)। তিনি বলেন, বহু বছরের মধ্যে এই প্রথম ঘুম থেকে উঠে কোনো ভালো খবর পেয়েছেন। আর মিশিগানের বাসিন্দা ৩২ বছর বয়সী ডেভন বলেন, ‘মামদানিকে কেন্দ্রীয় সরকার নানাভাবে বাধা দেবে জানি। আশা করি, ভোটাররা তা বুঝতে পারবেন এবং বামপন্থী রাজনীতির প্রতি আশা হারাবেন না।’

আরও পড়ুনপ্রভাবশালী মার্কিন ডানপন্থীরা কীভাবে মামদানিকে আইএসের সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন৭ ঘণ্টা আগেউদ্বিগ্ন অনেকে

মামদানিকে নিয়ে আশাবাদের পাশাপাশি তাঁর সামনে থাকা কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন অনেকে। ফ্লোরিডার বাসিন্দা ৭১ বছর বয়সী ব্রুস ওয়েকস বলেন, মামদানির জয় নিউইয়র্ক ও পুরো দেশের জন্য বড় একটি মোড়বদল। তাঁকে এখন বড় লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে। ট্রাম্প প্রশাসন যেকোনো উপায়ে মেয়র হিসেবে তাঁর যাত্রায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে।

মেয়র হিসেবে মামদানির কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই—এ বিষয় নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন বলেন, মামদানি নিউইয়র্ক নিয়ে যেসব পরিকল্পনা করেছেন, তার অনেকগুলো ‘অবাস্তব’। তাই ভবিষ্যতে সেগুলো কতটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে শঙ্কা আছে তাঁর।

তবে উদ্বেগ ও শঙ্কার মধ্যেও সবশেষে নিউইয়র্কের জন্য ভালোটাই হবে বলে গার্ডিয়ান–এর কাছে আশা প্রকাশ করেছেন বেশির ভাগ নিউইয়র্কবাসী। আগামী জানুয়ারিতে মেয়র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন মামদানি। শহরটির বাসিন্দা, ৩৩ বছর বয়সী কিম্বারলি মাইকেল বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, ভালো কিছু হবে। এখন যেটি দরকার, তা হলো আমাদের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকা।’

আরও পড়ুনমামদানি একই সঙ্গে ভারতের গর্ব, আবার মোদির মতো নেতাদের কঠোর সমালোচক৩ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ