পদ্মা সেতু চালুর তিন বছরে দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ সহজ হয়েছে। কিন্তু শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেছে। ২০২৫ সালে দিনে গড়ে ৪১ হাজার ৬০০ যান চলাচল করবে– সমীক্ষায় এ তথ্য থাকলেও, চলছে ২৩ হাজার। সেতুর টোল নির্ধারণে সময় প্রক্ষেপণের চেয়েও দিনে চার হাজার যানবাহন কম চলছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.
সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দেশের ১ দশমিক ২৩ এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। তিন বছরেও তা হয়নি। কেন হয়নি, এ মূল্যায়নও করা হয়নি।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর সরকারিভাবে পদ্মা সেতু নিয়ে বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই। তবে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ, টোল আদায়সহ কারিগরি কাজ আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগ করা কোরিয়ান এক্সপ্রেস করপোরেশন এবং নির্মাতা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন করছে। পাঁচ বছরের জন্য প্রতিষ্ঠান দুটি ৬৯৩ কোটি টাকা নেবে।
২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের দিন থেকে চলে যানবাহন। প্রথম দুই বছর টোল আদায় হয় ১ হাজার ৬৪৫ কোটি ২৪ লাখ ৯৮ হাজার ১৫০ টাকা। গত এক বছর হয়েছে আরও ৯৫৪ কোটি টাকা। তিন বছরে আদায় হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। এ থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট পেয়েছে সরকার। ভ্যাটের টাকা বাদ দিয়েও পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ঋণের কিস্তির চেয়ে বেশি আয় হচ্ছে সেতুতে।
সমীক্ষার চেয়ে কম গাড়ি
সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের এপ্রিলে ৭ লাখ ১ হাজার ৮৯০টি যানবাহন পদ্মা সেতু পারাপার হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলে চলাচল করেছে ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৫৪। গত ৫ জুন রেকর্ড ৫২ হাজার ৪৮৭টি যানবাহন পারাপার হয়। এতে রেকর্ড ৫ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা টোল আদায় হয়।
২০০৩ সালে শুরু হয়ে পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা শেষ হয় ২০০৫ সালের মার্চে। তাতে বলা হয়েছিল, সেতুতে ২০১৫ সালে দিনে গড়ে ২১ হাজার ৩০০ এবং ২০২৫ সালে চলবে ৪১ হাজার ৬০০। অবশ্য ২০০৯ সালে নির্মাণ শুরু ধরা হয়েছিল। কিন্তু ২০২৫ সালে সেতুতে গড়ে দিনে ২৩ হাজার যান চলাচল করছে।
২০১৪ সালে সেতুর নির্মাণ চুক্তির সময়, পরবর্তী ৩৫ বছরে প্রতিদিন কত সংখ্যক যানবাহন চলাচল করবে, পূর্বাভাস দেওয়া হয়। তাতে ২০২৫ সালে দিনে ২৬ হাজার ৯৫৪টি যান চলাচল করার কথা। টোল নির্ধারণের সময় সেতু বিভাগ প্রক্ষেপণ করেছিল, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৫৪ কোটি ৮ লাখ টাকা আদায় হবে। ওই বছর আয় হয় ৮৩০ কোটি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭৮৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা আয়ের প্রক্ষেপণ ছিল; হয়েছে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা।
যেভাবে নির্মাণ পদ্মা সেতু
১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনা সেতু উদ্বোধনের পরের মাসে মন্ত্রিসভার বৈঠকে শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নির্দেশ দেন। ১৯৯৯ সালের মে মাসে এ কাজ শুরু হয়। প্রাক-সম্ভাব্যতায় মাওয়া-জাজিরা এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া– দুই অ্যালাইনমেন্টে নির্মাণের প্রাক-সমীক্ষা হয়। ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রাক-সমীক্ষার প্রতিবেদনের পর ৪ জুলাই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শেখ হাসিনা।
২০০১ সালের ১০ অক্টোবর ক্ষমতায় এসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পদ্মা সেতু প্রকল্প এগিয়ে নেন। তাঁর সরকারের অনুরোধে জাইকার অনুদানে ২০০৩ সালের ১৬ মে শুরু হয় সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চার এলাকায় যাচাই-বাছাই শেষে মাওয়া-জাজিরায় নির্মাণের সুপারিশ করে ২০০৫ সালের মার্চে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। নদী শাসন ব্যয় কম, জমি অধিগ্রহণে কম মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে– এ যুক্তিতে সরকার ২০০৪ সালের ১৭ জুলাই মাওয়া-জাজিরায় নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।
৮ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরে ২০০৫ সালের ১৯ অক্টোবর পদ্মা সেতুর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। ২০০৬ সালে প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন কর্মপরিকল্পনা ও পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা হয়। ২০০৭ সালের ১১ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা গ্রহণের ২২ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এইকমকে নকশা প্রণয়নে নিয়োগ দেয়। সেতুতে রেল চলাচল সুবিধা যুক্ত করারও নির্দেশ দেয়। নকশা চূড়ান্ত করে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ডিপিপি সংশোধনে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। সেতুর দৈর্ঘ্যও ৫ দশমিক ৫৮ থেকে বেড়ে ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার হয়। এর মধ্যে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার মূল সেতু।
২০১১ সালের এপ্রিলে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ করে বাংলাদেশ। পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পরের বছরের ৩০ জুন চুক্তি বাতিল করে। সরে যায় জাইকা, এডিবি এবং আইডিবি, যা রাজনীতিতে আলোড়ন তোলে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পদ ম স ত ২০২৫ স ল প রকল প সরক র দশম ক বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
আজ টিভিতে যা দেখবেন (২৩ জুন ২০২৫)
ক্লাব বিশ্বকাপে আজ সকালে সিটি, রাতে আতলেতিকো ও পিএসজি মাঠে নামবে। হেডিংলি টেস্টের চতুর্থ দিন আজ।
হেডিংলি টেস্ট-৪র্থ দিনইংল্যান্ড-ভারত
বিকেল ৪টা, সনি স্পোর্টস ১ ও ৫
ম্যান সিটি-আল আইন
সকাল ৭টা, ডিএজেডএন ওয়েবসাইট ও অ্যাপ
আতলেতিকো-বোতাফোগো
রাত ১টা, ডিএজেডএন ওয়েবসাইট ও অ্যাপ
সিয়াটল-পিএসজি
রাত ১টা, ডিএজেডএন ওয়েবসাইট ও অ্যাপ