তল্লাশির নামে মব সৃষ্টি করে টাকা ‘লুটপাট’ করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
Published: 5th, July 2025 GMT
রাজশাহী নগরীর ভদ্রা পারিজাত আবাসিক এলাকার একটি ভবনের ফ্ল্যাটে নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনির সন্ধানে সেখানে তল্লাশি চালানোর নামে মব সৃষ্টি করে নগদ ২ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার ‘লুট’ করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
আজ শনিবার বেলা ১১টায় নগরীর একটি রেস্তোরায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সেই ফ্ল্যাট মালিকের স্ত্রী হাবিবা আক্তার মুক্তা।
তিনি বলেন, ভদ্রা পারিজাত আবাসিক এলাকার ২ নম্বর রোডের ১৫ নম্বর বাড়ির লিফটের ৫ এর ৬ নম্বর ফ্ল্যাটের বাসিন্দা। গত ৩ জুলাই দুপুর আনুমানিক দুইটার দিকে আমার একমাত্র মেয়ের জামাইয়ের ভাই মাহমুদ হাসান সিসিল একদল সন্ত্রাসী এনে আমার ফ্ল্যাটের সামনে মব সৃষ্টি করে বাড়িতে থাকা নগদ দুই লাখ টাকা এবং স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায় এবং আমাকে নির্যতন করে, যা ডাকাতির সামিল। এ সময় আমি বাসায় একা ছিলাম। পরে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সিসিল বিকেল আনুমানিক ৪টার দিকে পুলিশ ও স্থানীয় কিছু মানুষ নিয়ে এনে আবারও আমার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তল্লাশির নাটক সাজায়। যার পুরো সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পুলিশসহ আমাদের কাছে রয়েছে। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে চন্দ্রিমা থানায় একটি মামলা লিপিবদ্ধ করেছি। সেই সাথে পুলিশকে সব তথ্যাদি প্রদান করা হয়েছে।
হাবিবা আক্তার মুক্তা আরও বলেন, মব সৃষ্টিকারী সিসিলের এসবের পেছনে রয়েছে তার ভাই ও আমার মেয়ে জামাই সিজারের পৈত্রিক সম্পত্তি আত্মসাৎ করা। আমার জামাই মেহেদী হাসান সিজারের বাবা রাজশাহীর একজন পরিচিত ঠিকাদার ছিলেন। তিনি ২০২১ সালে মারা যান। এরপর তার রেখে যাওয়া বহু মূল্যবান সম্পত্তি নিজে ভোগ দখলের জন্য আমার জামাইকে নানাভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে এই সিসিল। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ জুন আমার জামাইয়ের বাড়িতে সিসিল সন্ত্রাসী নিয়ে গিয়ে হামলা চালায়। কোনোক্রমে তিনি লুকিয়ে থেকে রক্ষা পান। আমার স্বামী ও আমি যেহেতু সিজারের শ্বশুর ও শাশুড়ি। সে কারণে আমাদেরকে জিম্মি করে সিজারকে তার কথামতো পরিচালনা করতে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালায় সিসিল। এর পেছনে রাজনৈতিক কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সম্পত্তি আত্মসাতের উদ্দেশ্য নিয়ে এই হামলা করা হয়। সিসিল নিজে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
মুক্তা আরও বলেন, আমার স্বামী এবং আমার মেয়ে জামাই কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নয়। তবে সিসিল তার ভাই সিজারকে তার পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে পুরো সম্পত্তি নিজে আত্মসাতের জন্য এই মব সৃষ্টি করে আমাদেরকে জিম্মি করার পাশাপশি বাড়িতে ডাকাতি ও আমার মেয়ে জামাই সিজারকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই ষড়যন্ত্র করে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মব স ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
করোনায় ফুসফুসের শক্তি প্রায় হারিয়ে ফেলা সেই মানুষটাই যেভাবে হলেন পর্বতারোহী
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছিল তখন। বনানীর একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। লকডাউনের মধ্যেই অফিসে যাই। এই করতে গিয়ে আমার শরীরে করোনা হানা দিল। কয়েক দিন রুমে বন্দী থাকলাম। আমার সেবা করতে গিয়ে মা–ও করোনা পজিটিভ হলেন। শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলাম। অবস্থা খারাপ হতে থাকলে ২০২১ সালের ২৭ মার্চ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হলাম। মাকেও আমার সঙ্গে ভর্তি করানো হলো।
প্রতিদিনই ওয়ার্ডের কেউ না কেউ মারা যাচ্ছেন। আমি একেবারেই শ্বাস নিতে পারছিলাম না। দিন–রাত অক্সিজেন সাপোর্টে থাকি। তিন-চার দিন পর টেস্ট করে দেখা গেল আমার ফুসফুসের ৮০ শতাংশই সংক্রমিত হয়েছে। ভয় পেয়ে গেলাম। হাসপাতালের ২৪ ঘণ্টাকে মনে হচ্ছিল ২৪ দিন। মাথায় সব সময় মৃত্যুচিন্তা—জীবনে কী করতে পারতাম, কী করিনি। একদিন মনে পড়ে গেল ২০০৭ সালের একটা প্রতিজ্ঞার কথা। মজা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের বলেছিলাম, ২০২০ সালের মধ্যে এভারেস্ট অভিযানে যাব। কিন্তু পড়াশোনা, চাকরি আর সংসারের দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়ায় সে পথে আর হাঁটাই হয়নি।
হাসপাতালে ভর্তির সপ্তম কি অষ্টম দিনে আবার শারীরিক অবস্থা ভীষণ খারাপ হলো। মাকে একপাশে ডেকে নিয়ে ডাক্তার যখন বলল, তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন, কথাটা তখন আমার কানেও এল। দেখলাম, কথাটা শুনে মা ভেঙে পড়েছেন। তারপরও আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ‘তোর কিছু হবে না।’
আমিও মাকে বললাম, ‘হ্যাঁ মা, আমাকে বাড়ি যেতেই হবে।’
মনে মনে সারাটা সময় নিজেকে আবিষ্কার করতাম কোন পাহাড়চূড়ায়, ঝিরিপথে। নিজে নিজেই নতুন করে বাঁচার জন্য পণ করতাম। এভাবেই নবমতম দিনে একটু ভালো বোধ করলাম। মনের জোর এতটাই বৃদ্ধি পেল যে সকালে মাকে বললাম, আমার অক্সিজেন মাস্কটা খুলে দাও!
মা ভয়ে ভয়ে খুললেন। অক্সিজেন ছাড়াও আর অসুবিধা হলো না।
১১ দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে মনে হচ্ছিল, নতুন জীবন নিয়ে বাসায় ফিরছি।
প্রতিজ্ঞা করলাম, এই জীবনকে আর হেলায় হারাব না।
বান্দরবানের গহিন পাহাড়ে