দুই বছর ধরে নেতৃত্বহীন বরগুনা জেলা বিএনপি
Published: 5th, July 2025 GMT
কমিটি না থাকায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে নেতৃত্বহীন বরগুনা জেলা বিএনপি। দলটির তৃণমূলের কর্মীরা বলছেন, এই দুই বছরে অনেকটা ভেঙে পড়েছে দলীয় শৃঙ্খলা। নেতারা জানান, অভিভাবক শূন্য থাকায় সময়মতো কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। তাদের ধারণা, নেতৃত্ব সঙ্কটের প্রভাব পড়তে পারে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
কেন্দ্রীয় বিএনপির এক নির্বাহী সদস্য জানান, এবার তৃণমূলের ভোটে নির্বাচিত হবে জেলা বিএনপির কমিটি। তৃণমূলের নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে ভোট দিয়ে জেলা বিএনপির নেতৃত্ব বাছাই করবেন।
বিভিন্ন অভিযোগে ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল বরগুনা জেলা বিএনপির ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্র। কমিটি গঠনের ১০ মাসের মধ্যেই তা বিলুপ্ত করা হয়। বিলুপ্ত ওই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন ফারুক মোল্লা ও সদস্য সচিব ছিলেন তারিকুজ্জামান টিটু।
আরো পড়ুন:
বিএনপির সঙ্গে কোনো দলের দ্বন্দ্ব নেই: ফকির মাহবুব
এই দেশ রক্ষায় বিএনপির কোনো বিকল্প নাই: আব্দুস সালাম
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূল বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পালন করছেন দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি।
বরগুনা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মো.
সাবেক ছাত্রদল নেতা হুমায়ুন কবির বলেন, “জেলা বিএনপির কমিটি না থাকায় বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি হয়েছে। আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকি কোন নেতার সঙ্গে গেলে কে আবার অখুশি হবেন তা নিয়ে।”
বরগুনা উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক শিমুল বলেন, “ছয় বছর ধরে জেলা যুবদলের কমিটি হয় না। ছাত্রদলের কমিটি হয় না সাত বছর ধরে। জেলা বিএনপিরও এই হাল। দলকে সুসংগঠিত করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলা বিএনপির কমিটি দরকার।”
বরগুনা সদরের বদরখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম শাহিন বলেন, “জেলা বিএনপি নেতৃত্বহীন। আমরাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকি। তৃণমূল থেকে জেলার নেতাদের কাছে অনেক বিষয় বলার থাকে। কমিটি না থাকায় আমরাও বিভিন্ন সময়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি।”
জেলা বিএনপির সাবেক নেতারা বলছেন, গত ১৭ বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে যারা মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন, কর্মীদের যারা আগলে রেখেছেন তাদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করা উচিত।
বরগুনা সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল ওয়াসি মতিন বলেন, “দীর্ঘ সময় ধরে জেলা বিএনপির কমিটি নেই। এখন তৃণমূলের পুরো চাপ সামলাতে হয় উপজেলার নেতাদের। অন্যান্য দল ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যন্ত কমিটি দিয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করছে নিজেদের। আমাদের জেলা বিএনপির কমিটি খুবই দরকার।”
বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন হাসান শাহীন বলেন, “আগের আহ্বায়ক কমিটি নানা কেলেঙ্কারির কারণে বিলুপ্ত হয়েছে। আমরা পরিচ্ছন্ন কমিটি চাই। যে কমিটির কোনো বিতর্ক থাকবে না। আমি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। যদি আমি যোগ্য হই, তাহলে কেন্দ্র আমাকে মনোনীত করবে। যদি আমার কোনো সহযোদ্ধা যোগ্য হয়, তাহলে তাকে মনোনীত করবে। দলকে সুসংগঠিত রাখতে আমাদের কমিটি দরকার।”
বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক তালিমুল ইসলাম পলাশ বলেন, “শক্ত কমিটি ঘোষণা না করলে এর প্রভাব পড়বে জাতীয় সংদস নির্বাচনে। নির্বাচনী মাঠ গোছাতে জেলা বিএনপির গুরুত্ব অপরিসীম। আমিও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। গত ১৭ বছর মামলা-হামলার শিকার হয়েছি।”
তিনি বলেন, “আন্দোলন সংগ্রামে কখনো ঘরে বসে থাকিনি। ৫ আগস্টের পরে অনেককে দেখি বিদেশ থেকে দেশে এসে নিজেদের নির্যাতিত দাবি করে জেলা বিএনপির পদ-পদবী চাচ্ছেন। কেন্দ্রের কাছে আমরা দাবি জানাই, বরগুনা জেলা বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করে একটি পরিচ্ছন্ন কমিটি গঠনের।”
কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, “সাবেক আহ্বায়ক কমিটির কেলেঙ্কারি নিয়ে বিব্রত কেন্দ্রীয় বিএনপি। তাই এবার তৃণমূলের ভোটে নির্বাচিত হবে জেলা বিএনপির কমিটি। আগামী দুই মাসের মধ্যে ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হবে। তৃণমূলের নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে ভোট দিয়ে জেলা বিএনপির নেতৃত্ব বাছাই করবেন।”
তিনি আরো বলেন, “আমি কেন্দ্রের কাছে তিনটি প্রতিবেদন দিয়েছি। গত ১৭ বছর কোন কোন নেতা নির্যাতনের শিকার হয়েছেনে, মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন, কারা আন্দোলন করেছেন এবং কারা বিদেশে নিরাপদে অবস্থান বেছে নিয়েছিল। এখন শীর্ষ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।”
আসন্ন কমিটিতে বরগুনা জেলা বিএনপির সভাপতি পদে সাতজন ও সাধারণ সম্পাদক পদে অন্তত ৯ জন নেতা প্রার্থী হবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ব এনপ র স ব এনপ র ক আহ ব য ক ন কম ট কম ট র সদস য বরগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি থেকে নির্বাচন করতে চান উপদেষ্টা সাখাওয়াতের ভাই
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেনের ভাই হেমায়েত হোসেন সোহরাব সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।
শনিবার বরিশালের হিজলায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমি বিএনপির মনোনয়ন চাইব। বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনে প্রার্থী হতে চাই।’
হিজলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নে বাড়িসংলগ্ন ডা. খাদেম হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সোহরাবের এ সভায় বিএনপির কোনো নেতাকর্মী ছিলেন না।
ছাত্রজীবনে সোহরাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল করেছেন। তবে এরপর প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে ছিলেন না। ব্যবসায়ী সোহরাব জানান, ১৯৮১-৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের এসএম হল শাখার সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮২-৮৫ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক, ১৯৮৬-৯০ সালে কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসাহিত্য সম্পাদক ছিলেন তিনি।
সোহরাব বলেন, মেঘনাবেষ্টিত হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ উন্নয়নে অনেক পিছিয়ে। এ জনপদের উন্নয়নে আমি প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে চাই।
এ ব্যাপারে হিজলার বাসিন্দা ও উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক দেওয়ান মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘সোহরাব বিএনপির প্রাথমিক সদস্যও নন। তাঁর পরিবারের কেউ সক্রিয়ভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই।’
তিনি বলেন, ‘সোহরাব নির্বাচন করার বিষয়ে স্থানীয় বিএনপির কারও সঙ্গে আলাপ করেননি। এমনকি কারও সঙ্গে যোগাযোগ পর্যন্ত নেই। মনোনয়নের প্রত্যাশা যে কেউ করতে পারেন। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে দলের হাইকমান্ড।’