বেবিচক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পণ্য পাচারে সহযোগিতার অভিযোগ
Published: 5th, July 2025 GMT
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তা আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে যাত্রীকে পণ্য পাচারে সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে বেবিচক পরিচালক (এভসেক পলিসি এন্ড সার্টিফিকেশন) ইফতেখার জাহান হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো.
তিনি সমকালকে বলেন, সম্প্রতি আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে অবৈধ পণ্য বহনকারী যাত্রীকে সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিলের পর তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিমানবন্দর গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি একটি ফ্লাইটে চীনের গোয়াংজু থেকে ঢাকায় অবতরণ করেন মোহাম্মদ নেওয়াজ এবং মাহমুদুল হাসান নামের দুই যাত্রী। তাদের সঙ্গে থাকা লাগেজ ও ব্যাগ বিমানবন্দর বোর্ডিং ব্রীজ থেকে কোনো প্রকার স্ক্যানিং ছাড়াই ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে। তবে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই যাত্রীদের তল্লাশি করেন। এসময় তাদের কাছ থেকে মোট ২৩৮টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। এর মধ্যে স্যামস্যাং কোম্পানির ৩১টি, আইফোন ১৫৭টি এবং গুগল পিক্সেলের ৫০টি মোবাইল রয়েছে।
কাষ্টমস গোয়েন্দা শাখার এক কর্মকর্তা জানান, চীনের গোয়াংজু থেকে আসা ওই দুই বাংলাদেশির হ্যান্ড লাগেজ থেকে জব্দ করা মোবাইলের চালান আটক করে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
এদিকে অভিযুক্ত বেবিচক কর্মকর্তা মো. আব্দুল লতিফ সমকালকে বলেন, আমি পরিস্থিতির শিকার। এ বিষয়ে মিডিয়ায় কথা বলায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আমার। চীন থেকে আসা ওই দুই যাত্রী আমার পরিচিত। তাদের কাছে বিমানবন্দরের পাস রয়েছে। এ ঘটনায় তাদের পাস জব্দ করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ব চক কর মকর ত তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
৭২ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: প্রত্যাশা পূরণে করণীয়
নানাবিধ ইতিবাচক ও নেতিবাচক ঘটনা পেরিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আজ প্রতিষ্ঠার ৭২ বছরে পদার্পণ করেছে। সন্দেহাতীতভাবে দিনটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবার জন্য আনন্দদায়ক। এ দিবসে সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি জ্ঞানভিত্তিক ও গবেষণায় অনুরাগী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু করে। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার ইনডেক্স’-এর ২০২৫ সালের র্যাঙ্কিংয়ে গবেষণার মান ও সংখ্যার ভিত্তিতে দেশের সেরা উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃতি পেয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের তথ্যমতে, ‘নেচার ইনডেক্স’-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি সার্বিকভাবে বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় এবং একাডেমিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। বিশ্বব্যাপী সার্বিক অবস্থানে এর স্থান ২৭৩৪তম এবং একাডেমিকভাবে ১৮৪৫তম। বিভাগভিত্তিক র্যাঙ্কিংয়েও এটি অনন্য অবস্থান অর্জন করেছে। রসায়ন বিষয়ে বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম এবং বৈশ্বিকভাবে ১৮২১তম স্থানে রয়েছে। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় এবং বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ১৬০৩তম অবস্থানে রয়েছে।
কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিংয়েও বিশ্ববিদ্যালয়টি অগ্রগতি অর্জন করছে। প্রশ্নাতীতভাবে, গবেষণাভিত্তিক কর্মকাণ্ডে অধিকতর প্রণোদনা এবং একাডেমিক কর্মকাণ্ডগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালনা করা গেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উত্তরোত্তর অগ্রগতি অর্জন করবে।
সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যৌথ কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের উদ্যোগ। সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়াইন লুইসের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল রাবি উপাচার্যের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করেন। এ সময় তারা পঠন-পাঠনের অগ্রগতি, ২০২৪-এর বিপ্লব পরবর্তী সময়ে নারীর ক্ষমতায়ন ও মূলধারায় তরুণ নারীদের অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ এবং নারীদের হয়রানি ও কটূক্তি রোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা বিষয়ে আলোচনা করেন। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়টিকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া উন্নত দেশগুলোর শিক্ষা সহায়তায় উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং শিক্ষা গবেষণায় পারস্পরিক সহযোগিতার লক্ষ্যে বহির্বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজেজ (আইইওএল) এবং ডাড ইনফরমেশন সেন্টার, ঢাকার যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারের মাধ্যমে রাবির অনেক শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থী জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছেন। সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গেও শিক্ষা ও গবেষণায় সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। সম্প্রতি নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় রাবির সঙ্গে আইন শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
শুধু আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অংশগ্রহণ বাড়ানই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক ও একাডেমিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ধারাবাহিক এবং কিছু ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো, শিক্ষার্থী-প্রশাসন সম্পর্কোন্নয়ন। শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এ বছরের শুরু থেকে অনুষদভিত্তিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও ক্লাস প্রতিনিধিদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরামর্শগুলো পর্যালোচনার আলোকে প্রায় ২০০টি ইস্যু চিহ্নিত করেছে এবং প্রকৃতি ও পরিধি বিবেচনায় এসব বিষয়কে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় অগ্রাধিকার নির্ধারণপূর্বক বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে ৩০০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাজ সহজ করতে ডিজিটাল সেবা শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী মেডিকেল সেন্টারকে আরও উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আবাসিক হলগুলোতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সিট বরাদ্দ প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হচ্ছে।
তবে প্রকৃত অর্থে একটি আন্তর্জাতিকমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিগণিত হতে হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও অনেকদূর যেতে হবে। শুধু ভালো ভালো প্রত্যাশা না করে, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিধি অনুযায়ী তার আপন গতিতে চলতে দিতে হবে। এ জন্য প্রথম করণীয় হলো ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি এড়িয়ে চলা। সবকিছুতেই রাজনীতিকরণ আর জাতীয় রাজনীতির অস্থিরতা মূলত শিক্ষাঙ্গনগুলোর শিক্ষা ও গবেষণার আশানুরূপ অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা। এ ক্ষেত্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও ব্যতিক্রম নয়। দেশের রাজনৈতিক সংস্কারের মধ্যে শিক্ষাঙ্গনকে রাজনীতিমুক্ত করার কোনো প্রয়াস কি আমরা লক্ষ্য করছি?
যাহোক, আমরা চাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চতর শিক্ষাঙ্গনগুলো রাজনীতির পঠন-পাঠন, অধ্যয়ন ও গবেষণার জায়গা হিসেবে গড়ে উঠুক, সবাই রাজনৈতিক কর্মী হয়ে ওঠার বদলে রাজনীতিসচেতন হয়ে উঠুক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক একাডেমিক কার্যক্রমের আর একটি সফল উদ্যোগ হলো সেমিস্টার সিস্টেম চালু। সব অনুষদই তাদের ব্যাচেলর ও মাস্টার্স প্রোগ্রাম বিভাগগুলোর নিজস্ব তত্ত্বাবধানে সেমিস্টার ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে। এখন সবার প্রত্যাশা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন্দ্রীয়ভাবে একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সেমিস্টার সিস্টেম পরিচালনা করুক। এতে করে সব বিভাগ একই সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা গ্রহণ করতে পারবে এবং সেমিস্টার ব্রেকগুলোতে শিক্ষকরা পরবর্তী সেমিস্টারের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ এবং গবেষণামূলক কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেওয়ার জন্য সময় পাবেন।
এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে সেমিস্টার সিস্টেম চালু করুক। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরিমুখী করার উদ্যোগ নেওয়া হোক। তারা যেন ফটোকপি নোট না পড়ে লাইব্রেরিতে থাকা হার্ড/সফট শিক্ষাসামগ্রী ব্যবহারে মনোযোগী হন, সে ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি।
পরিশেষে আরেকটি প্রত্যাশার কথা বলতে চাই। সেটি হলো, রাজশাহী বিশ্বাবিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে যে অধ্যাদেশ দ্বারা পরিচালিত হয়, তা মেনেই যেন আগামীতে উপাচার্য নিয়োগের ধারা চালু হয়। এ জন্য ১৯৭৩ সালের অ্যাক্ট অনুযায়ী সিনেট নির্বাচনের ব্যবস্থা অচিরেই চালু হোক। অতীতে দেখা গেছে, অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন এবং শিক্ষকদের মধ্যে জনপ্রিয় প্রশাসকও সঠিকভাবে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড করতে পারেননি শুধু রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য। আমরা চাই, আগামীতে এই শিক্ষকপ্রিয়, শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষকরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসক হিসেবে নির্বাচিত হোন, তবে তা হতে হবে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের মাধ্যমে, তারপর মাননীয় চ্যান্সেলরের মাধ্যমে। সম্প্রতি রাকসু নির্বাচনের জন্য ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু হয়েছে। বর্তমান প্রশাসন সিনেট নির্বাচনের জন্যও ব্যবস্থা নেবে, আশা রাখছি। সব প্রত্যাশা একসঙ্গে পূরণ কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন যে ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, তাতে নিঃসন্দেহে বলা যায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়টিকে প্রকৃত অর্থে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসাবে রেখে যেতে পারবে।
মো. মাসুদ পারভেজ রানা: শিক্ষক, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়