নেদারল্যান্ডসের স্মার্টফোন নিষিদ্ধ করায় স্কুলে পড়াশোনার পরিবেশ উন্নত হয়েছে বলে এক সরকারি গবেষণায় উঠে এসেছে।

নেদারল্যান্ডসের সেকেন্ডারি স্কুলগুলো জানিয়েছে, এখন শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বেশি মনোযোগী হতে পারছে (৭৫ শতাংশ), সামাজিক পরিবেশও আগের চেয়ে ভালো হয়েছে (৫৯ শতাংশ), এবং কিছু স্কুল জানিয়েছে, ফলাফলেও উন্নতি হয়েছে (২৮ শতাংশ)।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ক্লাসে ফোন নিষিদ্ধের জাতীয় নির্দেশনা জারির পর বেশিরভাগ স্কুলই সেটি মেনে নিয়েছে। এখন দেশটির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সেকেন্ডারি স্কুলে শিক্ষার্থীদের ফোন বাসায় রেখে আসতে বলা হয় বা লকারে রাখতে হয়। প্রতি পাঁচটি স্কুলের একটিতে ক্লাস শুরুর আগে ফোন জমা দিতে হয়।

সেকেন্ডারি স্কুলগুলো জানিয়েছে, এখন শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বেশি মনোযোগী হতে পারছে (৭৫ শতাংশ), সামাজিক পরিবেশও আগের চেয়ে ভালো হয়েছে (৫৯ শতাংশ), এবং কিছু স্কুল জানিয়েছে, ফলাফলেও উন্নতি হয়েছে (২৮ শতাংশ)।

গবেষক ড.

আলেকজান্ডার ক্রেপেল বলেন, 'সবচেয়ে ভালো উন্নতি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগে। এখন আর কেউ লুকিয়ে কারও ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপে ছড়াতে পারে না—এটা একটা বড় সামাজিক নিরাপত্তা। আগের মতো ব্রেক টাইমে সবাই ফোনে ডুবে থাকে না, এখন কথা বলতে হয়। মাঝে মাঝে ঝগড়া হলেও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলছে, এখন পরিবেশ অনেক ভালো।'

নেদারল্যান্ডসে ক্লাসে মোবাইল নিষিদ্ধের বিষয়ে শুরুতে স্কুল, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তবে এখন সবাই বেশ সন্তুষ্ট, এমনটাই জানিয়েছেন ভিও-রাদ (মাধ্যমিক শিক্ষা কাউন্সিল) মুখপাত্র ফ্রেয়া সিক্সমা।

তিনি বলেন, 'শুরুতে অনেক প্রশ্ন ছিল—এটা কীভাবে কাজ করবে, কে মানবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সবাই আসলে খুশি।'

গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষায়িত কিছু স্কুলে যদিও বিশেষ সহায়তার জন্য মাঝে মাঝে মোবাইল ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়, তবুও এসব স্কুলের অর্ধেকের বেশি জানিয়েছে—নিষেধাজ্ঞার ফলে ভালো প্রভাব পড়েছে।

দেশটির প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি এডুকেশন মন্ত্রী মারিয়েলে পল বলেন, এই জাতীয় নির্দেশনা শ্রেণিকক্ষে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়তা করেছে। আগে কোনো শিক্ষক ব্যক্তিগতভাবে ফোন নিষিদ্ধ করতে চাইলে তা নিয়ে বিতর্ক হতো। বিশেষ করে নতুন শিক্ষকরা সেটি প্রয়োগ করতে হিমশিম খেতেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

একে-অপরকে ‘আ.লীগ ঘনিষ্ঠ’ বললেন দুই ভাই

রাজশাহীতে দুই ভাই একে-অপরের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তারা একে-অপরের বিরুদ্ধে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তুলেছেন। প্রমাণ হিসেবে বড় ভাই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতার সঙ্গে ছোট ভাইয়ের ছবি দেখিয়েছেন। ছোট ভাই দেখিয়েছেন তার বড় ভাইকে দেওয়া জেলা আওয়ামী লীগের একটি প্রত্যয়নপত্র।

রাজশাহী নগরের শালবাগান এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান সিজার ও তার ছোট ভাই মাহমুদ হাসান শিশিল শনিবার (৫ জুলাই) পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তাদের বাবা প্রয়াত মাহবুব আলম রাজশাহীতে একনামে ‘মাহবুব কন্ট্রাক্টর’ নামে পরিচিত। মাহবুব আলমের মৃত্যুর পর তার সম্পত্তির বণ্টন নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধ চলছে।

শিশিল রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি। গত বৃহস্পতিবার তার নেতৃত্বে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা নগরের পদ্মা পারিজাত এলাকার একটি বহুতল ভবন ঘেরাও করেন। প্রচার করা হয়, এই ভবনে নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি অবস্থান করছেন। পরে ষষ্ঠতলার একটি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালানো হয়। এই ফ্ল্যাটে থাকেন সিজারের শ্বাশুড়ি হাবিবা আক্তার মুক্তা। 

আরো পড়ুন:

৪৪তম বিসিএসে ক্যাডার হয়েছেন রাবির অন্তত ৬০ শিক্ষার্থী

রাবি ফোকলোর বিভাগ সংস্কারের দাবিতে ফের বিক্ষোভ

সেখানে তল্লাশি চলাকালেই যুবলীগ নেতা রনি জেলা যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ফায়সাল সরকার ডিকোকে ফোন করেন। বলেন, “এত কষ্ট করে লাভ নেই। আছেন অনেক দূরে।” এরপরই রনিকে ধরার ওই অভিযান শেষ হয়। 

তারপর হাবিবা আক্তার মুক্তা অভিযোগ তোলেন, যুবলীগ নেতা রনিকে ধরতে এই তল্লাশি নয়। তার জামাতা সিজারের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে তাদের ভয় দেখাতে ‘মব’ সৃষ্টি করা হয়েছে। তল্লাশির নামে বাড়িতে চালানো হয়েছে লুটপাট। এ অভিযোগে গত শুক্রবার দুপুরে শিশিলসহ কয়েকজনের নামে তিনি থানায় মামলাও করেছেন। 

আজ শনিবার সকালে নগরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন হাবিবা আক্তার মুক্তা ও তার জামাতা সিজার। আর বিকেলে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন শিশিল।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন শিশিল 

সকালে সংবাদ সম্মেলনে সিজার দাবি করেন, তার ভাই বাবার রেখে যাওয়া প্রায় ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার সম্পদ একাই ভোগদখল করছেন। তাকে কিছুই দেওয়া হয়নি। এমনকি তার বাবার দুইটি আগ্নেয়াস্ত্রও নিয়েছেন ছোটভাই শিশিল। একজন দুইটি অস্ত্র না পেলেও আওয়ামী লীগ নেতা ও রাজশাহীর সাবেক সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ডিও লেটার দিয়েছিলেন শিশিলের পক্ষে। ফলে জেলা প্রশাসন দুইটি আগ্নেয়াস্ত্রই শিশিলকে দিয়েছে। 

এ সময় ভাইকে ‘আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ’ প্রমাণ করতে নিষিদ্ধ নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজীবসহ কয়েকজন নেতার সঙ্গে শিশিলের ছবি দেখান সিজার।

বিকেলে মহানগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন শিশিল। সেখানে তিনি ভাইয়ের তোলা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, তার ভাই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ করতেন। তার ভাই ২৮তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। তখন তার জন্য সুপারিশ করে প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক। এই প্রত্যয়ন পত্রে সিজারকে ছাত্রলীগ বলে উল্লেখ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রত্যয়ন পত্রটি দেখান শিশিল।

তিনি দাবি করেন, ‘মব’ সৃষ্টি করে ভয় দেখাতে তারা তার ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি যাননি। তারা খবর পান, ওই বাড়িতে যুবলীগ নেতা অবস্থান করছেন এবং কিছু মানুষ ভবনটি ঘেরাও করেছেন। ‘উত্তেজনা প্রশমিত’ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে তারা সেখানে যান। যাওয়ার পরে তারা জানতে পারেন এটি বড় ভাইয়ের শ্বশুরের ফ্ল্যাট। দায়ের করা মামলাটি মিথ্যা দাবি করে তিনি দ্রুত সেটি প্রত্যাহারেরও দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে শিশিলের সঙ্গে মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম রবি, জেলা যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-আহ্বায়ক ফায়সাল সরকার ডিকো, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মীর তারেক, সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান জনি, নগর ছাত্রদলের সভাপতি আকবর আলী জ্যাকি, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান সৌরভ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ