আগামী ৩ আগস্ট দেশ পুনর্গঠনে ইশতেহার ঘোষণা করা হবে জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘২০২৪ সালে আমরা আন্দোলন করেছিলাম, গণ-অভ্যুত্থান করেছিলাম শেখ হাসিনা সরকারের পতনের জন্য। আমাদের এবারের আন্দোলন, এবারের কর্মসূচি নতুন দেশ গঠনের। কারণ, আমরা বলেছিলাম, শুধু শেখ হাসিনার পতন নয়, দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।’

আজ শনিবার বিকেলে জয়পুরহাট জেলা শহরের শহীদ ডা.

আবুল কাশেম ময়দানে এক পথসভায় নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন। জুলাই পদযাত্রার পঞ্চম দিনে জয়পুরহাট জেলা এনসিপি এ পথসভার আয়োজন করে।

পথসভায় নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘শুধু ক্ষমতার পরিবর্তন নয়, দলের পরিবর্তন নয়, মাফিয়া, দুর্নীতিবাজ সিস্টেমের পরিবর্তন করতে হবে। আমরা গত এক বছরে সেই সিস্টেমের পরিবর্তন দেখতে পাইনি। আমরা এলাকায় এলাকায় এখনো চাঁদাবাজি দেখি, সন্ত্রাসী দেখি, মাফিয়া সিস্টেম দেখি।’

এর আগে বিকেল সোয়া চারটার দিকে শহরের সিও কলোনি এলাকা থেকে পদযাত্রা শুরু করেন এনসিপির নেতা-কর্মীরা। পথসভায় বিপুলসংখ্যক লোকের সমাগম হয়। গণ-অভ্যুত্থানের নেতাদের দেখতে প্রধান সড়কের দুই পাশে প্রচুর মানুষ ভিড় করেন।

পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বিপ্লবীরা এখনো ঘুমায় নাই। জয়পুরহাটবাসী এখনো ঘুমায় নাই। প্রিয় বন্ধুগণ, ২০২৪-এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে এই জয়পুরহাটের সন্তানেরা শহীদ হয়েছে। শহীদ মেহেদী হাসান, শহীদ রিতা আক্তার, শহীদ নজিবুল সরকার, শহীদ মিনহাজসহ সব শহীদকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে এ জেলার যেসব সাহসী সন্তান আহত হয়েছিলেন। আরও স্মরণ করছি আমাদের নারীরা, আমাদের আলেম সমাজসহ যাঁরা গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আমরা যেভাবে এক দফার ঘোষণা দিয়েছিলাম, এ বছর শহীদ মিনারে ৩ আগস্ট একইভাবে বিচার, সংস্কার, নতুন সংবিধান এবং দেশ পুনর্গঠনে ইশতেহার ঘোষণা হবে। নিশ্চিতভাবে সেই ইশতেহারে জয়পুরহাটবাসীর ভবিষ্যৎ মুক্তির কথাও থাকবে। ইনশা আল্লাহ আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে শহীদ মিনারে।’

এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনীম জারাসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পথসভায় ফিরোজ আলমগীরকে এনসিপির জয়পুরহাট জেলা সমন্বয়কারী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।

বাংলার সাহসী সন্তানদের দেখতে এসেছেন তাঁরা

পথসভায় উপস্থিত অন্তত ২৫-৩০ জন মধ্যবয়সী নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, গত ১৫ বছর অনেকগুলো রাজনৈতিক দল আন্দোলন-সংগ্রাম করে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারেনি। ছাত্ররা আন্দোলন করে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলমের মতো আরও অনেক ছাত্ররা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁরা বাংলার এসব সাহসী সন্তানকে দেখতে এসেছেন।

সিরাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আখতার হোসেন, সামান্তা শারমিন, তাসনীম জারাকে নিজ চোখে দেখার ইচ্ছা ছিল। এ কারণে পথসভায় তাঁদের দেখতে এসেছেন।

গৃহবধূ তামান্না ইসলাম বলেন, ‘আমার মেয়ে সুমাইয়া ডা. তাসনীম জারাকে দেখবে। এ কারণে পথসভায় এসেছি। পথসভায় প্রচুর লোকসমাগম হয়েছে। এর মধ্যেই আমার মেয়ে তাসনীম জারার সঙ্গে সেলফি তুলেছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম ইশত হ র পথসভ য় প রহ ট এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প

ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিকোলাস মাদুরোর দিন ফুরিয়ে এসেছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। খবর বিবিসির। 

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ করতে যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিবিএস নিউজের ৬০ মিনিটসকে বলেন, “আমার সন্দেহ রয়েছে। আমার মনে হয় না। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করছে।”

আরো পড়ুন:

ক্যারিবীয় জাহাজে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩

নাইজেরিয়ায় হামলার হুমকি ট্রাম্পের

ক্যারিবীয় অঞ্চলে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে নৌযানগুলোতে মার্কিন হামলা অব্যাহত থাকার মধ্যে ট্রাম্পের এই মন্তব্য এলো। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে মাদকের প্রবাহ বন্ধ করার জন্য এই হামলা প্রয়োজনীয়।

ট্রাম্প এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান মাদক বন্ধ করার লক্ষ্যে নয়, বরং ট্রাম্প বিরোধী মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি ‘অনেক কিছু’ সম্পর্কে।

বিবিসির মার্কিন নিউজ পার্টনার সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ক্যারিবীয় ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন হামলায় কমপক্ষে ৬৪ জন নিহত হয়েছে।

সম্প্রতি ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “মার্কিন হামলায় আপনি যেসব নৌযানে বিস্ফোরণ হতে দেখেন, তার প্রতিটিতে অন্তত ২৫ হাজার মাদকদ্রব্য ধ্বংস হয়। এগুলো যুক্তরাষ্ট্রে মাদক সরবরাহের জন্য দায়ী।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্থলপথে ভেনেজুয়েলায় হামলার পরিকল্পনা করছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প তা উড়িয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, “আমি এটা বলতে চাই না যে আমি এটা করব...আমি ভেনেজুয়েলার সাথে কী করব, আমি তা করব কিনা, তা আমি বলব না।”

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করার অভিযোগ তুলেছেন। অন্যদিকে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রোর অভিযোগ, নৌযানগুলোতে হামলা চালানোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকায় ‘আধিপত্য বিস্তার’ করার চেষ্টা করছে।

ট্রাম্প জানান, তার সরকার ‘সারা বিশ্ব থেকে’ সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে ‘আসতে’ দেবে না।

তিনি বলেন, “তারা কঙ্গো থেকে আসে, তারা সারা বিশ্ব থেকে আসে, তারা আসছে, কেবল দক্ষিণ আমেরিকা থেকে নয়। তবে বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা- খারাপ। তাদের গ্যাং আছে।”

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্দিষ্ট করে ভেনেজুয়েলার ‘ট্রেন দে আরাগুয়ার’ নাম উল্লেখ করেন। তিনি এটিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ গ্যাং’ হিসেবে অভিহিত করেন।

জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার পর থেকে, ট্রাম্প প্রশাসন মেক্সিকো এবং ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি মাদক পাচারকারী সংগঠন ও অপরাধী গোষ্ঠীকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভেনেজুয়েলার ট্রেন দে আরাগুয়া এবং কার্টেল অব দ্য সানস, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট মাদুরো ও তার ঘনিষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা পরিচালনা করে। তবে কারাকাস সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ