অমিতাভ বচ্চনের শুভেচ্ছাবার্তার পর জয়া আহসানের প্রতিক্রিয়া
Published: 5th, July 2025 GMT
সফল অভিনয়জীবন। গল্প, চরিত্র নির্বাচন থেকে শুরু করে অনিন্দ্য অভিনয়ের জন্য বরাবরই সাধারণ দর্শক ও চলচ্চিত্রবোদ্ধার প্রশংসা কুড়িয়ে আসছেন জয়া আহসান। এবারের ঘটনাটি শুধু এই অভিনেত্রী নন, অনেকের জন্যই ছিল চমকে দেওয়ার মতো। বলিউড শাহেনশাহখ্যাত কিংবদন্তি অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনের কাছ থেকে এলো জয়ার সিনেমার জন্য শুভেচ্ছাবার্তা।
জয়া আহসানের পাশাপাশি ভারতের আনন্দবাজারসহ একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আসছে ১৮ জুলাই মুক্তি পাচ্ছে অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী পরিচালিত সিনেমা ‘ডিয়ার মা’। দীর্ঘ ১০ বছর পর আবার বাংলা সিনেমা নির্মাণ করেছেন অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী। যে কারণে এই সিনেমাটি ঘিরে ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে উত্তেজনা। জোরকদমে চলছে সিনেমার প্রচার। ‘ডিয়ার মা’র মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান। তাঁর সহশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছেন চন্দন রায় স্যান্যাল, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
যে সব বাঙালি পরিচালক বাংলা সিনেমার পাশাপাশি হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সমানভাবে সফল, তাদের মধ্যে অনিরুদ্ধ অন্যতম; যার সুবাদে মুক্তির আগে এই নির্মাতার নতুন সিনেমা নিয়ে অমিতাভ বচ্চনের কাজ থেকে এলো শুভেচ্ছাবার্তা।
সংবাদমাধ্যমগুলো আরও জানিয়েছে, প্রকাশ করা হয়েছে ‘ডিয়ার মা’ সিনমার ট্রেলার। সিনেমার পোস্ট প্রোডাকশন নিয়ে এই মুহূর্তে ব্যস্ততা তুঙ্গে পুরো টিমের। এরই মধ্যে শুক্রবার সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকের নজর কাড়ে একটি পোস্ট। বলিউড মহাতারকা অমিতাভ বচ্চন নিজেই শেয়ার করেছেন ‘ডিয়ার মা’-এর ট্রেলার। এক মুহূর্তের জন্য যেন সবকিছু থমকে গিয়েছিল পরিচালক ও অভিনেত্রীর। বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, সব ঠিক দেখছেন তো?
সিনেমার ট্রেলার শেয়ার করে অমিতাভ বচ্চন লিখেছেন, ‘টনিদা, আমার অনেক শুভেচ্ছা রইল।’ সাতসকালে এমন শুভেচ্ছায় খানিক বাকরুদ্ধ পরিচালক। পুরো টিমের কাছেই এটি বড় প্রাপ্তি বলেও মনে করেন তিনি।
অনিরুদ্ধর কথায়, ‘এটি শুভেচ্ছা নয়, আমাদের কাছে আশীর্বাদ। পুরো টিমের জন্য খুব বড় প্রাপ্তি। এমন একজন মানুষের আশীর্বাদ পেলাম, যা সত্যিই অনুপ্রেরণার। এই আনন্দ ভাগ করার কোনো ভাষা নেই আমার। ঠিক যেন কাঁধে হাত রেখে কেউ একজন বললেন এগিয়ে যেতে। মনটা ভরে গিয়েছে।’
একই সময়ে বিমানবন্দরে বসে তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর পর এক শুভেচ্ছাবার্তা পড়ে যাচ্ছিলেন অভিনেত্রী জয়া অহসান।
তিনি বলেন, ‘আমি ভাষাহীন। এমন একজন মানুষ আমাদের সিনেমার জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন এবং নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করেছেন, আমি তো বলব এটি পরম পাওয়া। পাশাপাশি বাংলা সিনেমার জন্যও খুব বড় প্রাপ্তি। অমিতাভ বচ্চনের সিনেমা দেখে কত মানুষ ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছেন। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের বড় হয়ে ওঠা তাঁকে দেখে। তিনি তো মেগাস্টার। আজ সেই মানুষটা আমার কাজের জন্য আশীর্বাদ করছেন, এটি যে কত বড় আনন্দের বলে বোঝাতে পারব না।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জয় আহস ন ম র জন য অন র দ ধ কর ছ ন পর চ ল আহস ন
এছাড়াও পড়ুন:
আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা শিশুদের পাঠদান আবার শুরু, স্থানীয় শিক্ষকদের পুনর্বহালের আশ্বাস
প্রায় এক মাস বন্ধ থাকার পর কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের চার হাজার লার্নিং সেন্টার (শিক্ষাকেন্দ্র) আবার চালু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এসব শিক্ষাকেন্দ্রে আবারও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গা শিক্ষাকেন্দ্রগুলোয় প্রায় চার রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরকে পাঠদান করা হয়। ছাঁটাইয়ের মুখে পড়া বাংলাদেশি শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে গত ৪ জুন আশ্রয়শিবিরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর গত বুধবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সভায় বন্ধ থাকা শিক্ষাকেন্দ্রগুলো আবার চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রতিনিধি, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ইউনিসেফসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে শিক্ষাকেন্দ্রগুলো হঠাৎ বন্ধ হয়ে পড়ায় চার লাখ রোহিঙ্গা শিশু-কিশোর অলস সময় পার করছে এবং তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কার কথা উঠে আসে। আন্দোলনরত শিক্ষকেরা বৈঠকে বলেন, তহবিল–সংকটের কথা বলে ইউনিসেফ ও সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশি ১ হাজার ১৭৯ শিক্ষককে ছাঁটাই করলেও কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শিক্ষক দিয়ে শিক্ষাকেন্দ্রগুলো চালু রেখেছিল। এটি বৈষম্য। তাই তাঁরা আন্দোলন শুরু করেছেন। বাংলাদেশি শিক্ষকদের বাদ দিয়ে শিক্ষাকেন্দ্র চালু রাখতে দেবেন না তাঁরা।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় আগামী এক মাসের মধ্যে ছাঁটাই হওয়া শিক্ষকদের পুনর্বহালের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করবে ইউনিসেফ। বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তহবিল–সংকটের কারণে ১ হাজার ১৭৯ জন স্থানীয় (বাংলাদেশি) শিক্ষকের চাকরির চুক্তি শেষ হয়। কিন্তু শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে আশ্রয়শিবিরের সব শিক্ষাকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। বুধবারের বৈঠকে বন্ধ শিক্ষাকেন্দ্রগুলো পরদিন থেকে চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আপাতত রোহিঙ্গা শিশুদের পাঠদান শুরু হলেও ইউনিসেফের তহবিল–সংকট রয়েছে। এক মাস সময়ের মধ্যে তহবিল সংগ্রহ করতে পারলে বাংলাদেশি ১ হাজার ১৭৯ শিক্ষকের চাকরি হবে। তহবিল সংগ্রহ না হলে রোহিঙ্গা শিশুদের পাঠদান আবার বন্ধ হয়ে যাবে, এমন অনিশ্চয়তাও রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষকনেতা বলেন, এক মাস সময়ের মধ্যে তাঁদের পুনর্বহাল না করলে আবারও তাঁরা কর্মসূচি জোরদার করবেন। তাঁদের বাদ দিয়ে কোনো শিক্ষাকেন্দ্র চালু রাখতে দেবেন না।
৪ জুন সকাল সাতটা থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উখিয়ার কোর্টবাজার পেট্রলপাম্প এলাকায় টানা ছয় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন ছাঁটাই হওয়া শিক্ষকেরা। এ সময় সড়কের দুই পাশে কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়ে। একই সময় আশ্রয়শিবিরে কর্মরত দেশি-বিদেশি শতাধিক বেসরকারি সংস্থার কাউকে আশ্রয়শিবিরে ঢুকতে দেননি আন্দোলনকারীরা। পরে ওই দিন বিকেল চারটার দিকে আশ্রয়শিবিরের সব শিক্ষাকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ইউনিসেফ ও সেভ দ্য চিলড্রেন।
উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে বর্তমানে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখ ৮০ হাজারের বেশি। আশ্রয়শিবিরগুলোর শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের আট হাজার শিক্ষকের মধ্যে চার হাজার বাংলাদেশি। তবে সম্প্রতি ১ হাজার ১৭৯ বাংলাদেশি শিক্ষককে ছাঁটাই করা হয়।
আরআরআরসি কমিশনারের কার্যালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে আশ্রয় শিবিরগুলোয় থাকা ১৪ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশু-কিশোরের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ৫৫ হাজার। তাদের মধ্যে প্রায় চার লাখ শিশু-কিশোর শিক্ষাকেন্দ্রে পড়াশোনা করছে।
আশ্রয়শিবিরের শিক্ষাকেন্দ্রগুলো বাঁশ ও টিনের ছাউনি দিয়ে গড়া। প্রতিটা কেন্দ্রে ৬-১৪ বছর বয়সী ৪০ শিশু মেঝেতে বসে পড়াশোনা করে। রোহিঙ্গা শিশুদের এলসি লেভেল-১ ও লেভেল-২—এই দুই ভাগে ইংরেজি, বর্মিজ ভাষা, গণিত ও লাইফ স্কিল বিষয়ে পড়ানো হয়। দুটি পালায় ৮০ শিশুকে সপ্তাহের ছয় দিন (শুক্রবার বন্ধ) পড়ানো হয়। প্রতিটি শিক্ষাকেন্দ্রে নিয়োজিত রাখা হয় দুজন শিক্ষক। যার মধ্যে একজন বাংলাদেশি ও একজন রোহিঙ্গা।
বালুখালী আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা মদিনা খাতুন বলেন, তাঁদের শিবিরে ১৪-১৫ বছর বয়সী এক হাজারের বেশি মেয়ে রয়েছে। টানা এক মাস শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ থাকায় বহু মেয়ে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা জালাল আহমদ বলেন, শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় এক মাস বন্ধ থাকায় রোহিঙ্গা কিশোরদের অনেকেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছে। শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে অপরাধ বেড়ে যাবে।