দালাই লামার উত্তরাধিকার নির্ধারণ নিয়ে চীন–ভারতের কথার লড়াই
Published: 5th, July 2025 GMT
তিব্বতি ধর্মগুরু দালাই লামার উত্তরাধিকার নিয়ে চীনের তীব্র আপত্তির মুখে ভারত জানিয়ে দিল, কারও ধর্মীয় বিশ্বাস বা আচরণের ক্ষেত্রে ভারত কোনো পক্ষ নেয় না। গতকাল শুক্রবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে এই কথা জানিয়ে বলেছে, ভারত সব সময় সবার ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার পক্ষে। এই অবস্থান অব্যাহত থাকবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই বিবৃতি এল সেই সময়, যখন উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় ম্যাকলয়েডগঞ্জ জনপদে চতুর্দশ দালাই লামার ৯০তম জন্মদিনে তাঁর উত্তরাধিকার নির্ধারিত হবে। আগামীকাল রোববার ৬ জুলাই, জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানে ভারত সরকারের দুই মন্ত্রী কিরেন রিজিজু ও রাজীব রঞ্জন সিং এবং অরুণাচল প্রদেশ ও সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী যথাক্রমে পেমা খানডু ও প্রেম সিং তামাং উপস্থিত থাকছেন।
হিমাচল প্রদেশ যাওয়ার আগে গত বৃহস্পতিবার কিরেন রিজিজু গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, উত্তরসূরি বাছাইয়ের কাজ প্রচলিত নিয়ম মেনে ও চতুর্দশ দালাই লামার ইচ্ছানুসারেই হবে। পরবর্তী দালাই লামা কে হবেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার অন্য কারও নেই।
রিজিজুর ওই মন্তব্য এবং ভারত সরকারের মন্ত্রীদের উপস্থিত থাকার খবরের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া দিয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং গতকাল শুক্রবার ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে ভারত যেন বিরত থাকে। তেমন করলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খারাপ হবে। ভারতের উচিত, তেমন কিছু না করা।
মাও নিং আরও বলেছিলেন, চতুর্দশ দালাই লামা চীনবিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী। ভারতের তা জানা উচিত। পাশাপাশি তিব্বত (সিজাং) নিয়ে ভারতের উচিত প্রতিশ্রুতি পালন করা। ভারতের উচিত কথায় ও কাজে সংযত ও সাবধানী থাকা। চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয় ও তিব্বত নিয়ে নাক না গলানো এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খারাপ হয় এমন কিছু করা একেবারেই ঠিক হবে না।
চীনের এই মন্তব্যের পরেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দালাই লামা–সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত অভিমত জানান।
চীনের এই মনোভাবের বিষয়ে কিরেন রিজিজু কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের হুঁশিয়ারি সম্পর্কে মন্তব্য না করে তিনি বলেন, ‘আমি ওই বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। আমি ভারত সরকারের হয়েও কিছু বলিনি। দালাই লামা প্রতিষ্ঠান–সংক্রান্ত বিষয়ে আমি যা কিছু বলেছি, তা ব্যক্তিগত ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে। আমি দালাই লামার অনুগামী।’
অরুণাচল প্রদেশের বিজেপি নেতা কিরেন রিজিজু বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। সেই রাজ্যের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী পেমা খানডুও বৌদ্ধ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ডাকসুর বিবৃতি: বিএনপি তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে
জুলাই সনদে সই করলেও বিএনপি ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে, এমন বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। রোববার বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার সম্মিলিত বিপ্লব। শুধু সরকার পরিবর্তন নয়, বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ ও একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোনো প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না। কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে সই করলেও বিএনপি ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে।
ডাকসুর বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে, যা সরাসরি ছাত্র-জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহাহিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়। কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে ছাত্র-জনতা সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে।