স্টিভ জবস ছিলেন বিতর্কপ্রবণ, অনমনীয় ও খুঁতখুঁতে। এই তিন শব্দে হয়তো তাঁকে বর্ণনা করা যায়। তবে ঠিক এই বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে ছিল তাঁর নেতৃত্বের বিশেষত্ব। অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা জবসকে ‘মানব ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কপ্রবণ ব্যক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন খ্যাতনামা প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী মার্ক আন্দ্রিসেন।

সম্প্রতি তাঁর বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আন্দ্রিসেন হোরোভিৎসের পডকাস্ট ‘এ১৬জেড’–এ অংশ নিয়ে স্টিভ জবস সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন আন্দ্রিসেন। তিনি বলেন, ‘আপনার সামনের টেবিলে রাখা গ্লাসটির আকার নিয়েও জবস তর্কে যেতেন। এমন কিছু ছিল না, যাঁর সঙ্গে তিনি বিনা প্রশ্নে একমত হতেন। তিনি সবকিছুকেই প্রশ্নবিদ্ধ করতেন, চ্যালেঞ্জ করতেন। সেটাই ছিল তাঁর সৃষ্টিশীলতার মূল ভিত্তি।’ আন্দ্রিসেনের মতে, জবস কখনোই প্রচলিত কোনো কিছুকে চোখ বন্ধ করে মেনে নিতেন না। তিনি বলেন, ‘স্থির অবস্থা কিংবা প্রচলিত চিন্তা তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। তিনি বরাবরই নতুন কিছু ভাবতেন, প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দিতে চাইতেন।’ তবে বিতর্কপ্রিয়তা বা তর্ক করার স্বভাবকে নেতিবাচক হিসেবে দেখেন না আন্দ্রিসেন। তাঁর মতে, এখান থেকেই জন্ম নিয়েছে জবসের ব্যতিক্রমী নেতৃত্বগুণ।

পডকাস্টে স্টিভ জবসকে ঘিরে গড়ে ওঠা জনমত ও প্রচলিত আলোচনা নিয়েও কথা বলেন মার্ক আন্দ্রিসেন। তাঁর মতে, জবসকে নিয়ে অধিকাংশ লেখা ও বক্তব্য দুটি মেরুতে অবস্থান করে। কিছু মানুষ তাঁকে পরম মহৎ চরিত্র হিসেবে তুলে ধরেন, আবার অনেকে দেখান ‘কঠিন স্বভাবের এক রাগী বস’ হিসেবে, যিনি কর্মীদের ওপর সভায় চিৎকার করতেন কিংবা হঠাৎ কাউকে ছাঁটাই করে দিতেন।

আন্দ্রিসেন বলেন, ‘বাস্তবতা ছিল এই দুই চিত্রের মাঝামাঝি। স্টিভ জবস যদি বুঝতেন, আপনি আপনার কাজ সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত, সব খুঁটিনাটি জানেন, পেশাগতভাবে আপনি নিজেকে সেরা পর্যায়ে নিয়ে গেছেন, তাহলে তিনি হতেন আপনার জীবনের সেরা ম্যানেজার। তাঁর নেতৃত্বে কাজ করাটা হয়ে উঠত দারুণ অনুপ্রেরণাদায়ী এক অভিজ্ঞতা।’ আন্দ্রিসেনের ভাষায়, কর্মদক্ষতা ও উৎকর্ষের প্রশ্নে কোনো ছাড় দিতেন না জবস। তাঁর প্রতিষ্ঠানে টিকে থাকতে হলে প্রত্যেককে সর্বোচ্চ মানের কাজ দেখাতেই হতো। তিনি বিশ্বাস করতেন, সেরা লোকদের পাশে সেরা লোকেরাই থাকতে চান। আর এর মাধ্যমেই একটি দল গড়ে ওঠে, যারা নিজেদের সেরাটা দিতে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা করে।

জবসের এই ‘উচ্চমাননির্ভর’ কর্মদর্শনই আন্দ্রিসেনের মতে, তাঁকে শুধু সফল উদ্যোক্তা নন, এক অনন্য ব্যবস্থাপক হিসেবেও প্রতিষ্ঠা করেছে। তাঁর সঙ্গে কাজ করা অধিকাংশ ব্যক্তি বিশ্বাস করেন, তাঁদের কর্মজীবনের সেরা কাজগুলো করেছেন তাঁকেই ঘিরে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ট ভ জবস করত ন

এছাড়াও পড়ুন:

সমর্থকদের তোপের জবাবে নাঈম, ‘ভালোবাসা চাই, ঘৃণা নয়’

সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দুইটি আলাদা ফ্লাইটে গতকাল দেশে ফেরেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। সন্ধ‌্যার পরপরই বড় বহর আসে। যেখানে ছিলেন নাঈম, মোস্তাফিজ, সাইফ, হাসান, রিশাদ, তানজিম, তাসকিনরা। 

দেশে পা রেখেই অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় তাদেরকে। বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পথে সমর্থকদের তোপের মুখোমুখি হতে হয় তাদেরকে। ভুয়া-ভুয়া স্লোগান, পরিবার তুলে গালাগাল চলতে থাকে। কিন্তু তারা কেউই ক্রিকেট সমর্থক ছিলেন না।

ঠিক ওই সময়ে একজন রাজনৈতিক নেতা ভিভিআইপি টার্মিনাল দিয়ে বের হচ্ছিলেন। তার আগমণ উপলক্ষ‌্যে কর্মীরা গিয়েছিলেন বিমানবন্দরে।  কিন্তু তারা যখন জানতে পারেন ক্রিকেটাররা ওই সময়ে বের হবেন তখনই ক্ষোভ উগড়ে দেন। 

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ খুবই খারাপ ক্রিকেট খেলছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে প্রচন্ড বাজেভাবে। সিরিজ হারের পর প্রথমবার হোয়াইটওয়াশ হয়েছে তাদের বিপক্ষে। শেষ ম‌্যাচে পরাজয়ের ব‌্যবধান ছিল ২০০। অলআউট হয় মাত্র ৯৩ রানে। এর আগে এশিয়া কাপেও ভালো করতে পারেনি। কিন্তু আফগানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছিল দল। পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে নুন‌্যতম লড়াই করতে না পারায় মূলত ক্ষোভ তৈরি হয়।

নাঈম বের হওয়ার সময় তার গাড়িতে আঘাত করেছেন তারা। তাসকিনের গাড়িতেও একই কাণ্ড হয়েছে। ব‌্যাটিংয়ে কেবল ভালো সময় কাটানো সাইফ হাসান স্ত্রী ও বাচ্চা নিয়ে ফিরেছিলেন। তাকেও এই রোষানলের শিকার হতে হয়। বিষয়গুলো একদমই ভালো ভাবে নেননি শেষ ওয়ানডেতে ২৪ বলে ৭ রান করা নাঈম শেখ। কঠিন এই সময়ে ভক্ত, সমর্থকদের সবাইকে পাশে চেয়েছেন তিনি।

নাঈম নিজের পোস্টে লিখেছেন, ‘‘আমরা যারা মাঠে নামি, আমরা শুধু খেলি না — আমরা দেশের নামটা বুকে নিয়ে নামি। লাল-সবুজ পতাকাটা শুধু শরীরে নয়, রক্তে মিশে থাকে। প্রতিটা বল, প্রতিটা রান, প্রতিটা শ্বাসে চেষ্টা করি সেই পতাকাটাকে গর্বিত করতে।’’

‘‘হ্যাঁ, কখনো পারি, কখনো পারি না। জয় আসে, পরাজয়ও আসে — এটাই খেলাধুলার বাস্তবতা। জানি, আমরা যখন হেরে যাই, তখন আপনাদের কষ্ট হয়, রাগ হয় — কারণ আপনারাও এই দেশটাকে আমাদের মতোই ভালোবাসেন।’’

‘‘কিন্তু আজ যেভাবে আমাদের প্রতি ঘৃণা, গাড়ীতে আক্রমণ করা হয়েছে, তা সত্যিই কষ্ট দেয়। আমরা মানুষ, ভুল করি, কিন্তু কখনো দেশের প্রতি ভালোবাসা-চেষ্টার ঘাটতি রাখিনা। প্রতিটা মুহূর্তে চেষ্টা করি দেশের জন্য,মানুষের জন্য,  আপনাদের মুখে হাসি ফোটাতে।’’

‘‘ভালোবাসা চাই, ঘৃণা নয়। সমালোচনা হোক যুক্তিতে, রাগে নয়। কারণ আমরা সবাই একই পতাকার সন্তান। জয় হোক, পরাজয় হোক — লাল-সবুজ যেন আমাদের সবার গর্ব থাকে, ক্ষোভের নয়।’’

‘‘আমরা লড়বো, আবার উঠবো — দেশের জন্য, আপনাদের জন্য, এই পতাকার জন্য।’’

ক্রিকেটাররা দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না। শনিবারই বাংলাদেশের ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে। 

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ