এজবাস্টন টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের স্কোরকার্ড দেখেছেন? খেয়াল করলে দেখবেন, শূন্যের দাপট। ইংল্যান্ডের ১১ ব্যাটসম্যানের ৬ জনই কোনো রান করতে পারেননি। এক ইনিংসে ৬ ব্যাটসম্যানের শূন্য রানে আউট হওয়ার ঘটনা ইংল্যান্ডের ইতিহাসে এই প্রথম।

গতকাল ইংল্যান্ড–ভারত ম্যাচ টেস্ট ইতিহাসই দেখেছে আরও একটি ‘প্রথম’–এর ঘটনা। সেটিও এই শূন্য–সংশ্লিষ্ট। প্রায় দেড় শ বছরের টেস্ট ইতিহাসে ইংল্যান্ডই প্রথম দল, যাদের ৬ বা এর বেশি ব্যাটসম্যান শূন্য রানে ফেরার পরও দলীয় সংগ্রহ ৪০০ পেরিয়েছে।

বেশির ভাগ ব্যাটসম্যান শূন্য, তবু দলের রান কম নয়—এমন তালিকায় বাংলাদেশও আছে। মূলত, রেকর্ডটা এত দিন বাংলাদেশ দলেরই ছিল, যা এখন ইংল্যান্ড কেড়ে নিয়েছে।

২০২২ সালে ২৩ মে মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। সকালে ব্যাট করতে নামার পর বাংলাদেশের দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান ও তামিম ইকবাল দুজনই শূন্য রানে আউট হন। এরপর শূন্য রানে ফেরেন সাকিব আল হাসান, মোসাদ্দেক হোসেন, খালেদ আহমেদ ও ইবাদত হোসেনও।

কিন্তু এরপরও বাংলাদেশ দল প্রথম ইনিংসে অলআউট হওয়ার আগে তুলেছিল ৩৬৫ রান। ৬ জন্য ব্যাটসম্যান শূন্য রানে আউট সত্ত্বেও দলগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ছিল এটি। এবার ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ড সেই রান টপকে ৪০৭ রান করেছে। ইংল্যান্ডের ৪০৭ বা বাংলাদেশের ৩৬৫—দুটি ইনিংসেই দলীয় অবদানের চেয়ে ব্যক্তিগত ইনিংসের ভূমিকা বেশি।

কাল ভারতের বিপক্ষে ব্যক্তিগত ঝলক দেখিয়েছেন হ্যারি ব্রুক ও জেমি স্মিথ। দুজনে গড়েছেন ৩০৩ রানের জুটি, যা ইংল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসে ষষ্ঠ উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সেঞ্চুরিও পেয়েছেন দুজনই। ব্রুক ১৫৮ রান করে আউট হলেও স্মিথ অপরাজিত ছিলেন ১৮৪ রানে, টেস্টে ইংল্যান্ডের কোনো উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ।

ইংল্যান্ডের ৪০৭ রানের মধ্যে স্মিথ–ব্রুকেরই ৩৪২, যা দলগত রানের ৮৪ শতাংশ। বাকি ৯ জন আর অতিরিক্ত খাতের সম্মিলিত ফল ৬৫ রান। শূন্য রানে আউট হয়েছেন বেন ডাকেট, ওলি পোপ, বেন স্টোকস, ব্রাইডন কার্স, জশ টাং ও শোয়েব বশির।

তিন বছর আগে বাংলাদেশের হয়ে ব্রুক ও স্মিথের কাজটা করেছিলেন মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেদিন ২৪ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ২৭২ রানের জুটি গড়েন লিটন-মুশফিক। লিটন খেলেন ১৪১ রানের ইনিংস। ১৭৫ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। এই দুজনে মিলে রান করেন ৩১৬, যা দলের মোট রানের ৮৬.

৫৮ শতাংশ।

মিরপুরের ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কাই জিতেছিল। এজবাস্টনে কী হয় সময়ই বলবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব য টসম য ন র ন কর প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশকে জনবান্ধব ও মানবিক হিসেবে গড়ে তুলতে সংস্কারের বিকল্প নেই

বাংলাদেশ পুলিশকে সত্যিকার অর্থে জনবান্ধব ও মানবিক পুলিশ বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সংস্কারের বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি আয়োজিত ‘বাংলাদেশ পুলিশ সংস্কার: প্রেক্ষিত নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তাদের আলোচনায় এ বক্তব্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি ড. এম. আকবর আলীর সভাপতিত্বে শনিবার (৫ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

আরো পড়ুন:

নাসিরনগরে সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নিহত

পাট ক্ষেতে মিলল নিখোঁজ বৃদ্ধের মরদেহ 

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি ড. মো. মতিয়ার রহমান। মুখ্য আলোচক ছিলেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. মাহমুদুর রহমান।

বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি মো. আব্দুর রহমান খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা। গোলটেবিল বৈঠকে বিচারপতি, সরকারি চাকরিজীবী, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা এবং সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।

মূল প্রবন্ধে ড. মতিয়ার রহমান বলেন, “পুলিশ বাহিনীর বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ হলো, ঔপনিবেশিক আইন ও কাঠামো, মানবসম্পদ ও প্রযুক্তিগত ঘাটতি, দুর্নীতি ও জবাবদিহিতার অভাব এবং কর্মচাপ ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা।”

তিনি বলেন, “এজন্য প্রয়োজন আধুনিক ও গণমুখী আইন প্রণয়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, পেশাগত প্রশিক্ষণ ও মনোভাব পরিবর্তন, পুলিশকে অযাচিত রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা, কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার বাস্তবায়ন, প্রযুক্তির ব্যবহার ও দক্ষতা বৃদ্ধি, সুশৃঙ্খল ও মানবিক বাহিনী এবং পুলিশের সেবামুখিতা অর্জন।”

তিনি বলেন, “পুলিশ বাহিনীর কাজের ওপর নিরপেক্ষভাবে নজরদারি নিশ্চিত করতে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি। এ কমিশনে সাবেক ও বর্তমান বিচারপতি, সরকারি কর্মকর্তা, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও নারীসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি থাকবেন।”

তিনি বলেন, “স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মানবাধিকারসম্মত এবং জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী গড়ার মধ্যে নিহিত রয়েছে একটি নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও উন্নত বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।”

মুখ্য আলোচক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, “পুলিশ সংস্কার করতে হলে পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে, পুলিশ সদস্যদের বেঁচে থাকার মতো সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে, পুলিশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে, পুলিশের প্রশিক্ষণ আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে হবে, র‍্যাব থেকে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করতে হবে।”

তিনি এ সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পুলিশের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা কমিটি গঠনেরও সুপারিশ করেন।

তিনি বলেন, “রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে পুলিশের অধঃপতন হয়েছে। আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হলে পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে আনতে হবে।” তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, “শেখ হাসিনার সময় পুলিশে ‘চেইন অব কমান্ড’ ছিল না। জুলাই বিপ্লবের পূর্বে পুলিশ ছিল দানবীয়। আজ পুলিশ মনোবলহীন। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হলে পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। এটাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।”

নিজের রিমান্ডকালিন অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, “পুলিশ আজ যে ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে এজন্য কি পুলিশ দায়ী? তখন যারা ডিবিতে ছিলেন তারা হয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় অথবা অন্যান্য পর্যায়ে নেতা। জুলাই বিপ্লব এজন্য অনিবার্য ছিল।”

তিনি বলেন, “এখন আমাদের টার্গেট হলো আরেকটা ফ্যাসিবাদ যেন আবার ফিরে না আসে সে ব্যবস্থা করা।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. বোরহান উদ্দিন বলেন, “পুলিশের পদোন্নতি, পোস্টিংয়ের জন্য আলাদা আইন থাকা প্রয়োজন। কোনো সরকারই পুলিশ কমিশন করতে চাইবে না।”

পুলিশকে মিলিটারি ইকুইপমেন্ট ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের সাধারণ সম্পাদক ড. আহমেদ আবদুল কাদের বলেন, “পুলিশকে কখনো ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থ রক্ষার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। এজন্য পুলিশের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।”

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য জারিফ রহমান বলেন, “ঐকমত্য কমিশন থেকে পুলিশ সংস্কারকে বাদ দেওয়া জুলাই আন্দোলনের সাথে এক ধরনের বেঈমানি।”

সাবেক বিচারপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, “বিগত সরকারের আমলে পুলিশের ভূমিকার কারণেই পুলিশ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। পুলিশ বাহিনীর সংস্কার আজ অনিবার্য।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “পুলিশকে শুধু ব্যবহার করা হয়। পুলিশে অনেক ভাল মানুষ আছেন তারা পরিবর্তন চায়। পুলিশকে ভালো হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।”

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, “পুলিশের নিয়োগ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। পুলিশ সদস্যদের সম্মানজনক বেতন-ভাতাদি দিতে হবে। ঐকমত্য কমিশনে পুলিশ সংস্কার বিষয়ে আলোচনা করা হবে,” বলে তিনি আশ্বাস দেন।

বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, “শেখ হাসিনা পুলিশকে গণশত্রুতে পরিণত করেছিল।”

তিনি পুলিশ সদস্যদের পদায়নের ক্ষেত্রে ফিট লিস্ট করার সুপারিশ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, “ঔপনিবেশিক আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে পুলিশ সংস্কার করতে হবে। শুধু পুলিশ সংস্কার করলেই হবে না, প্রশাসনও সংস্কার করতে হবে।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, “পুলিশের নিয়োগ ও পদোন্নতি হতে হবে মেধার ভিত্তিতে।”

সভাপতির বক্তব্যে ড. এম. আকবর আলী বলেন, “১৮৬১ সালের পুলিশ আইনে নিয়ন্ত্রণের কথা বলা আছে। পুলিশের জনসম্পৃক্ততার কথা নেই। পুলিশকে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের আওতায় আনতে হবে। পুলিশের মনোবল বৃদ্ধির জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।”

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ