মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে ধনকুবের দাবি করে আসলে তিনি কত শত কোটি ডলারের মালিক, তা নিয়ে নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সাংবাদিক ও হিসাবরক্ষকদের অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

ট্রাম্পের সম্পদের প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন। কারণ, ট্রাম্প পরিবারের ব্যবসা ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং তাঁরা তাঁদের আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত হিসাব প্রকাশ করেন না। ট্রাম্পের আয়ের কিছু অংশ আসে আবাসন ব্যবসা থেকে। তবে এসব সম্পদের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা কঠিন। এ ছাড়া পরিবারের সদস্য ও ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে কিছু সম্পদের যৌথ মালিকানায় রয়েছেন তিনি। ফলে সম্পদের কোন অংশটি একান্তভাবে তাঁর নিজের, তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন।

তবু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কিছু আর্থিক সম্পদ যেমন শেয়ারবাজার ও ক্রিপ্টোকারেন্সি খাতের তথ্য প্রকাশ্যে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রতিবছর দেওয়া বাধ্যতামূলক আর্থিক বিবরণীতে তাঁর ব্যবসার কিছু অস্পষ্ট দিকও প্রকাশ্যে এসেছে। এতে শোধ না করা ঋণের তথ্যের পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক কিছু বিচারিক সিদ্ধান্তের কথাও রয়েছে।

এসব তথ্য দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্পদের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এর পেছনে মূল অবদান ক্রিপ্টো বিনিয়োগের। ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমানে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার কোটি ডলার বা তারও বেশি হতে পারে। তবে এর বেশির ভাগই নগদ নয়। অর্থাৎ এই সম্পদ থেকে বাস্তব অর্থের হিসাব পেতে তাঁকে নানা বিনিয়োগ তুলে নিতে হবে এবং বিভিন্ন ব্যবসা থেকে নিজের অংশ বিক্রি করতে হবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে আমরা যা জানি এবং যা জানি না, তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখানে তুলে ধরা হলো।

ক্রিপ্টোকারেন্সি

(৭১০ কোটি ডলার পর্যন্ত)। ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রাম্প পরিবারের জন্য তুলনামূলক নতুন একটি খাত। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে ট্রাম্প ক্রিপ্টো খাতের বিভিন্ন শাখায় ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করেছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্রিপ্টো মুদ্রার দুনিয়ায় প্রবেশের আগে থেকেই তাঁর মোট সম্পদের বড় একটি অংশ আসত আবাসন ব্যবসা থেকে। হোটেল, আবাসিক ভবন, গলফ ক্লাব ও বাণিজ্যিক অফিস টাওয়ারের মতো সম্পদ থেকে তিনি আয় করতেন।

মিমকয়েন

ট্রাম্পের সম্পদের একটি বড় অংশ মাত্র ছয় মাসো পুরোনো। এটি ‘মিমকয়েন’ নামে পরিচিত। এটিকে $ট্রাম্পও বা ট্রাম্পকয়েনও বলা হয়। জানুয়ারিতে শপথ গ্রহণের কয়েক দিন আগে তিনি এ মিমকয়েন চালু করেন (মিমকয়েন হলো একধরনের ডিজিটাল মুদ্রা। সাধারণত অনলাইন রসিকতা বা প্রতীকী চরিত্রের সঙ্গে এগুলো সংশ্লিষ্ট)। সাধারণত দামের ওঠানামা পর্যবেক্ষণ বা অনুমানের বাইরে কোনো ব্যবহারিক কার্যকারিতা থাকে না)। এখন পর্যন্ত তৈরি হওয়া বেশির ভাগ ট্রাম্পকয়েনের মালিক ট্রাম্প এবং তাঁর অংশীদাররা।’

১ জুলাই পূর্বাঞ্চলীয় সময় অনুযায়ী দুপুর ১২টায় প্রায় ৮৬৭ কোটি ডলার বাজারমূল্যে ট্রাম্পের হাতে থাকা এই কয়েনের মোট বাজারমূল্য দাঁড়ায় আনুমানিক ৬৯০ কোটি ডলার। তবে এই সম্পদ ‘তরল’ নয়। অর্থাৎ ট্রাম্প বর্তমানে এসব কয়েন বিক্রি করতে পারবেন না। আর একসঙ্গে বেশি পরিমাণ কয়েন বিক্রির চেষ্টা করলে এর মূল্যে ধস নামতে পারে, তা ছাড়া এই কয়েনের মধ্যে কতটা ট্রাম্পের নিজের আর কতটা তাঁর অংশীদারদের, সেটাও স্পষ্ট নয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মালিকানাধীন ট্রাম্পকয়েনের মূল্য ছাড়াও মিমকয়েনের প্রতিটি লেনদেন থেকে তিনি লেনদেন ফি উপার্জন করেন। ক্রিপ্টো বিশ্লেষণ সংস্থা চেইনঅ্যানালিসিসের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত এই ফি কমপক্ষে ৩২ কোটি ডলার হয়েছে। এসব অর্থ ট্রাম্প পরিবার তাদের ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেন।

ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফিন্যান্সশিয়াল

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য ক্রিপ্টো খাতে ঢোকা অত্যন্ত লাভজনক বলে প্রমাণিত হয়েছে। শুধু মিমকয়েনের মালিকানার জন্য এমনটা ঘটেনি। গত বছর নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি ‘ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফিন্যান্সিয়াল’ নামের ক্রিপ্টো প্রতিষ্ঠান খুলতে সহযোগিতা করেছিলেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি তাদের নিজস্ব ডিজিটাল টোকেন (ডব্লিউএলএফআই নামে যা পরিচিত) বিক্রি করে উল্লেখযোগ্য অর্থ আয় করেছে।

টোকেন বিক্রির আয় ৩ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেলে এবং আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দেওয়ার পর ট্রাম্প পরিবারের মালিকানাধীন ব্যবসাটি ওই আয়ের ৭৫ শতাংশ পাবে।

মার্চ মাসে ওয়ার্ল্ড লিবার্টি জানিয়েছিল, তারা ৫৫ কোটি ডলারের টোকেন বিক্রি করেছে। এরপর আরও ২ কোটি ৫ লাখ ও ১০ কোটি  ডলারের অতিরিক্ত বিক্রির তথ্যও প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। ধারণা করা হচ্ছে, টোকেন বিক্রির মাধ্যমে ট্রাম্পের ৩০ কোটি ডলার বা তারও বেশি আয় হয়েছে। যদিও প্রেসিডেন্টের প্রকৃত আয় পরবর্তী বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগে জানা যাবে না।

ওয়ার্ল্ড লিবার্টির ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বেশি টোকেনের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ট্রাম্পের কাছে। তাঁর সর্বশেষ আর্থিক বিবরণীতে এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। তবে এসব টোকেন এখনো লেনদেনযোগ্য নয়, ফলে এর প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করা কঠিন। আপাতত এই টোকেনের মাধ্যমে শুধু ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফিনান্সিয়ালের কিছু ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তে ভোট দেওয়ার অধিকার আছে।

তবে ক্রিপ্টো ফরেনসিক সংস্থা ন্যানসেনের তথ্য বলছে, কিছু টোকেন শুরুর দিকে প্রতি পিস ১ দশমিক ৫০ সেন্ট দামে বিক্রি হয়েছিল। এ দাম গত বছর ওয়ার্ল্ড লিবার্টির পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া মূল্য–সংক্রান্ত তথ্যের সঙ্গে মিলে যায়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর নাম ব্যবহার করে নানা ভোক্তা পণ্যের বিপণনে অংশ নিয়েছেন। এসব পণ্যের বিপণন চুক্তি থেকে তিনি নিয়মিত রয়্যালটি আয় করে থাকেন। তাঁর আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, ২০২৪ সালে শুধু এই খাত থেকেই ট্রাম্পের আয় হয়েছে ১‍১ মিলিয়ন ডলারের বেশি।

সেই হিসাবে, ট্রাম্পের টোকেনের আনুমানিক মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

এমন সম্ভাবনা রয়েছে যে ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ভবিষ্যতে টোকেনগুলোকে লেনদেনযোগ্য করে তুলতে পারে। তখন এর মূল্য হু-হু করে বেড়ে যেতে পারে। কোম্পানি বলেছে, তারা টোকেনকে ‘ট্রান্সফারেবল’ (অর্থাৎ স্থানান্তরযোগ্য) করার উদ্যোগ নিচ্ছে, যদিও এই শব্দের সুনির্দিষ্ট অর্থ এখনো স্পষ্ট নয়। গত ২৫ জুন নিউইয়র্কে এক ক্রিপ্টো সম্মেলনে ওয়ার্ল্ড লিবার্টির সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ফোকম্যান ইঙ্গিত দিয়েছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে। তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘সবাই খুব, খুব খুশি হবে।’

স্টক, বন্ড ও নগদ অর্থ

ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপের আর্থিক মূল্য অন্তত ২২০ কোটি ডলার।

মিমকয়েনের পরেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্পদের সবচেয়ে বড় উৎস হলো ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ নামে তাঁর নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গড়ে তোলার উদ্যোগ। ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ নামে একটি পাবলিক কোম্পানি এটি পরিচালনা করে। ট্রাম্প এই কোম্পানির ১১ কোটি ৫০ লাখ শেয়ারের মালিক। বর্তমানে শেয়ারের যে দাম, তা হিসাব করলে এসব শেয়ারের মোট মূল্য প্রায় ২০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি।

তবে যতক্ষণ না ট্রাম্প এসব শেয়ার বিক্রি করছেন, ততক্ষণ শুধু কাগজে-কলমে এই সম্পদের মূল্য বিদ্যমান। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প মিডিয়ার শেয়ারের দাম নাটকীয়ভাবে পড়ে যায়। শেয়ারের সর্বোচ্চ দামের সময়ে কোম্পানিটিতে ট্রাম্পের মালিকানা ছিল প্রায় ৬০০ কোটি ডলার সমপরিমাণ।

ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতীকী ছবি এবং পেছনে পতনশীল শেয়ারবাজার সূচকের গ্রাফ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট র ম প পর ব র কয় ন র ম পর ব র র ন ব যবস ল নদ ন আর থ ক প রক শ ব বরণ

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাবিতে সপ্তাহব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভাস্কর্য বিভাগের উদ্যোগে চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে সপ্তাহব্যাপী ‘বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী’ শুরু হয়েছে।

রবিবার (২ নভেম্বর) চারুকলা অনুষদের ওসমান জামাল মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। 

আরো পড়ুন:

জাবি অধ্যাপককে হুমকি গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থি: ইউট্যাব

ঢাবি উপ-উপাচার্যের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারম্যান নাসিমুল খবিরের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম শেখ, শিল্পাচার্য তনয় প্রকৌশলী ময়নুল আবেদিন, ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক লালা রুখ সেলিম এবং শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আহ্বায়ক ড. নাসিমা হক মিতু।

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী পুরস্কারপ্রাপ্তদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “শিল্পের কোন সীমা নেই। এর একটি শাশ্বত ভাষা রয়েছে। এই শৈল্পিক ভাষা ও শিল্পকর্মের মাধ্যমে শিল্পীরা মানুষের মনে স্থান করে নেন।”

শিক্ষার্থীদের ১ বছরের শ্রেণির কাজ থেকে বাছাইকৃত শিল্পকর্ম নিয়ে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। প্রদর্শনীটি প্রয়াত ভাস্কর অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান স্মরণে উৎসর্গ করা হয়েছে। এতে ৪৩ জন শিল্পীর ৭১টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্মের জন্য ছয়জন শিল্পীকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। তাদের সনদ ও পুরস্কার প্রদান করেন। পরে তিনি সেরা শিল্পকর্মের জন্য ছয়জনকে সনদ ও পুরস্কার প্রদান করেন প্রধান অতিথি।

পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীরা হলেন- প্রত্যয় সাহা (শিল্পী আনোয়ার জাহান স্মৃতি পুরস্কার), চিন্ময় ঘোষ (অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক স্মৃতি পুরস্কার), অলি মিয়া (ভাস্কর নভেরা আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার), মৃধা মো. রাইয়ান আযীম (অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান স্মৃতি পুরস্কার), সুমিত রায় (মাধ্যম শ্রেষ্ঠ পুরস্কার) এবং সুপ্রিয় কুমার ঘোষ (নিরীক্ষামূলক শ্রেষ্ঠ পুরস্কার)।

আগামী ৮ নভেম্বর পর্যন্ত এ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী চলবে । প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ