মামদানির ওপর চটেছে মোদির সমর্থকরামামদানির ওপর চটেছে মোদির সমর্থকরা
Published: 5th, July 2025 GMT
আগামী নভেম্বরে হতে যাওয়া নির্বাচনে জয়ী হলে জোহরান মামদানি নিউ ইয়র্ক সিটির প্রথম দক্ষিণ এশীয় মেয়র এবং প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়র হতে পারেন। তবে নির্বাচনের আগেই তাকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু করেছে হিন্দু ডানপন্থীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমালোচকরা হচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমর্থকরা, যারা ভারতে সংখ্যালঘুদের অধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত।
যেসব ইস্যুতে মামদানির সমালোচনা করা হচ্ছে সেগুলো মামদানির ধর্মের উপর নির্ভরশীল। ৩৩ বছর বয়সী মামদানি মুসলিম। হিন্দুত্ববাদীরা নিউ ইয়র্কের এই মেয়র প্রার্থীকে ‘জিহাদি’ এবং ‘ইসলামপন্থী’ বলে অভিযুক্ত করেছেন। অন্যরা তাকে হিন্দুবিরোধী এবং ভারতবিরোধী বলেছেন।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ অর্গানাইজড হেট এর গবেষণা পরিচালক কায়লা বাসেট জানান, মামদানির বিরুদ্ধে আক্রমণ মুসলিম সম্প্রদায়কে আরো বিস্তৃতভাবে আক্রমণ করার একটি মাধ্যম।
তিনি বলেন, “এটি কেবল একজন ব্যক্তির কথা নয়। এটি এমন একটি আখ্যান প্রচারের বিষয়ে যা মুসলিমদের সহজাতভাবে সন্দেহভাজন বা অ-আমেরিকান হিসাবে উপস্থাপন করে।”
এই আখ্যানটি সম্ভাব্যভাবে মামদানির প্রচারণার জন্য পরিণতি ডেকে আনতে পারে। কারণ তিনি নিউ ইয়র্কের ভোটারদের মধ্যে তার সমর্থন বাড়ানোর জন্য কাজ করছেন।
নভেম্বরের ভোটে আরো প্রতিষ্ঠিত নামীদামী ব্যক্তিদের সাথে মামদানির প্রতিযোগিতা হবে। চূড়ান্ত ভোটে তিনি বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসের মুখোমুখি হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো এখনো স্বাধীনভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি।
মেয়র পদপ্রার্থী মামদানি এর আগে গাজা এবং ভারতের মতো জায়গাগুলোসহ বিভিন্ন স্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা করেছেন। এই অবস্থান কেবল তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কাছ থেকে নয়, বিদেশ থেকেও তাকে সমালোচনার মুখে ফেলেছে।
উদাহরণস্বরূপ, মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সদস্যরা মামদানির মন্তব্যের নিন্দা এবং মেয়র পদের জন্য তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বিজেপির সংসদ সদস্য কঙ্গনা রানাউত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে লিখেছেন, মামদানিকে ‘ভারতীয় এর তুলনায় চেয়ে বেশি পাকিস্তানি শোনাচ্ছে।’
মামদানির মা পরিচালক মীরা নায়ারের হিন্দু পরিচয়ের দিকে ইঙ্গিত করে কঙ্গনা আরো লিখেছেন, “তার হিন্দু পরিচয় বা রক্তের বংশের যাই হোক না কেন, এখন তিনি হিন্দুত্ববাদকে নিশ্চিহ্ন করতে প্রস্তুত।”
মামদানির প্রাথমিক জয়ের পরপরই ভারতের বিজেপিপন্থী সংবাদ চ্যানেল, আজতাক দাবি করে, মামদানি ‘ভারতবিরোধী’ এজেন্ডা প্রচারকারী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে অর্থ পেয়েছেন। সংবাদমাধ্যমটি নিউ ইয়র্ক সিটিতে ক্রমবর্ধমান মুসলিম জনসংখ্যা সম্পর্কেও সতর্ক করে দিয়েছে।
ভারতের বাইরে নিউ জার্সিভিত্তিক ইন্ডিয়ান আমেরিকানস ফর কুওমো’ নিউ ইয়র্ক সিটির উপর দিয়ে একটি ব্যানার উড়ানোর জন্য তিন হাজার ৫৭০ ডলার খরচ করেছে যাতে লেখা ছিল-‘বিশ্বব্যাপী ইন্তিফাদা থেকে নিউ ইয়র্ক সিটিকে বাঁচাও। মামদানিকে প্রত্যাখ্যান করো।’
মামদানির ওপর হিন্দু জাতীয়তাবাদী এবং মোদির সমর্থকদের ক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ হচ্ছে, নিউ ইয়র্ক সিটির এই মেয়রপ্রার্থী ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কট্টর সমালোচক। অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের স্থানে হিন্দু মন্দির নির্মাণের প্রতিবাদে ২০২০ সালে মামদানি টাইমস স্কয়ারে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। ২০২৩ সালে, মামদানি মোদির নিউ ইয়র্ক সিটি সফরের আগে কারাবন্দী অধিকারকর্মী উমর খালিদের লেখা নোট উচ্চস্বরে পড়ে শুনিয়েছিলেন। মে মাসে মেয়র প্রার্থীদের একটি অনুষ্ঠানে মামদানিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছি, মোদি যদি আবার শহর পরিদর্শন করেন তবে তিনি কি তারসাথে দেখা করবেন? জবাবে মামদানি জানিয়েছিলেন, তিনি মোদির সাথে দেখা করবেন না।
(আল-জাজিরা থেকে সংক্ষেপিত)
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম দ র সমর ম মদ ন র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের পাঁচটি সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র
সাম্প্রতিক যুদ্ধে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের অন্তত পাঁচটি সামরিক ঘাঁটিতে সরাসরি আঘাত হেনেছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ। হাতে আসা স্যাটেলাইট রাডার তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদমাধ্যমটি এমন দাবি করেছে।
এসব হামলার ঘটনা ইসরায়েল সরকার এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি। এ ছাড়া সামরিক বাহিনীর কড়া বিধিনিষেধের কারণে দেশটির কোনো সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে খবর প্রকাশ করতে পারেনি।
এমন তথ্য প্রকাশ্যে আসায় এখন প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পক্ষের মধ্যে কথার লড়াই আরও তীব্র হবে। ১২ দিনের এই যুদ্ধে ইসরায়েল ও ইরান উভয়ই চূড়ান্ত বিজয় দাবি করে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক রাডারচিত্রগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। এই গবেষকেরা স্যাটেলাইট রাডারের তথ্য বিশ্লেষণ করে যুদ্ধক্ষেত্রে বোমার ক্ষয়ক্ষতি শনাক্তে বিশেষজ্ঞ। তাঁরাই বিষয়টি টেলিগ্রাফকে জানান।
তথ্য অনুযায়ী, উত্তর, দক্ষিণ এবং মধ্য ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় পাঁচটি সামরিক স্থাপনায় ইরানের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, যে হামলাগুলোর তথ্য এর আগে প্রকাশ্যে আসেনি। এর মধ্যে একটি বড় বিমানঘাঁটি, একটি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ কেন্দ্র এবং একটি লজিস্টিক ঘাঁটি রয়েছে।
লজিস্টিক ঘাঁটি বলতে এমন একটি সামরিক ঘাঁটি বা কেন্দ্রকে বোঝানো হয়, যেখানে যুদ্ধ বা সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, রসদ, জ্বালানি, অস্ত্র, যানবাহন ও অন্যান্য সহায়ক উপকরণ মজুত, সংরক্ষণ ও বিতরণ করা হয়।
বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, ইসরায়েলের সরকারিভাবে যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির যে চিত্র তুলে ধরছে, প্রকৃত অবস্থা তার চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে।
দ্য টেলিগ্রাফের পক্ষ থেকে গত শুক্রবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) কাছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও ঘাঁটির ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
আইডিএফের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা বা ঘাঁটির ক্ষতির বিষয়ে কিছু বলব না। তবে যা বলতে পারি, তা হলো অভিযানের পুরো সময়জুড়ে সংশ্লিষ্ট সব ইউনিট কার্যক্রম চালু রাখতে সক্ষম ছিল।’
পাঁচটি সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইসরায়েলের আরও ৩৬টি স্থানে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হানার তথ্য পাওয়া গেছে, যা দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করে আবাসিক ও শিল্পকাঠামোতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতিসাধন করেছে।
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রে ইসরায়েলজুড়ে আবাসিক স্থাপনার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সত্ত্বেও দেশটির মাত্র ২৮ নাগরিক নিহত হয়েছেন। দেশটির উন্নত সতর্কতাব্যবস্থার পাশাপাশি জনগণের ধারাবাহিক ও সুশৃঙ্খলভাবে আশ্রয়কেন্দ্র (বোম্ব শেল্টার) ও নিরাপদ কক্ষ ব্যবহারের ফলে তুলনামূলক কম মানুষের প্রাণহানি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দ্য টেলিগ্রাফের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর অধিকাংশই ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করতে ব্যর্থ হলেও যুদ্ধের প্রথম আট দিন থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। তখন থেকে প্রতিহত হওয়া ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা কমে গিয়ে আঘাত হানার অনুপাত বাড়তে থাকে।
আরও পড়ুনইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, ইসরায়েলিদের কণ্ঠে আতঙ্ক-ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা১৪ জুন ২০২৫ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংসস্তূপে রূপ নিয়ে বহুতল ভবন। সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার তৎপরতায় ইসরায়েলি এক সেনাসদস্য। রিশন এলাকা, ইসরায়েল, ১৪ জুন, ২০২৫