আমাদের সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ। কিন্তু আমাদের শাসকেরা এই নীতি মান্য করেননি বলেই বাংলাদেশ বারবার রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে যে সমঝোতা ও সহিষ্ণুতা প্রত্যাশিত ছিল, তা তাঁরা কতটা প্রতিপালন করেছেন, সে প্রশ্ন না উঠে পারে না।

রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো সুদৃঢ় করতে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সংস্কারের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া, যার অংশ হিসেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে; যার সাফল্যের ওপরই ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক কাঠামো অনেকটা নির্ভর করছে। এ ক্ষেত্রে কেবল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে আন্তরিক হলেই হবে না, রাজনৈতিক দলগুলোকেও সমঝোতার মনোভাব পোষণ করতে হবে।

প্রত্যাশা ছিল, ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ দিবসের আগেই জাতীয় সনদের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাবে। দিনটি এ কারণে স্মরণীয় যে তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়, যা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটায়। তারপরও আমাদের প্রত্যাশা থাকবে জুলাইয়ের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত করার।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, সংসদে নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করা, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানো, সংসদে উচ্চকক্ষ গঠন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে কমিটি গঠন ইত্যাদি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মোটামুটি একমত হয়েছে। কিন্তু উচ্চকক্ষ ও নারী আসনের ভোটপদ্ধতি, রাষ্ট্রপতির নির্বাচনপদ্ধতি ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে মতভেদ থেকেই গেছে।

বহুদলীয় গণতন্ত্রে মত ও পথের পার্থক্য থাকবে, নীতি ও আদর্শের ফারাক থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোকে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। গণতন্ত্র মানে হলো একসঙ্গে চলা। সেখানে কাউকে যেমন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা যাবে না, তেমনি ‘সালিস মানি, তালগাছ আমার’ মনোভাবও পরিত্যাগ করতে হবে।

বিশেষ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় যেসব বিষয়ে মোটামুটি সমঝোতার কাছাকাছি পৌঁছানো গেছে, সেসব বিষয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না। সবকিছু আবার গোড়া থেকে শুরু করলে জটিলতা আরও বাড়বে। সম্প্রতি কোনো কোনো দল সংসদের উভয় কক্ষে আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কথা বলেছে।

ধারণাটি আমাদের দেশে নতুন ও এখনো পরীক্ষিত নয়। সে ক্ষেত্রে উভয় কক্ষে এই পদ্ধতি এখনই ব্যবহার না করে উচ্চকক্ষের জন্য গ্রহণ করা যেতে পারে। নারী আসনের নির্বাচনপদ্ধতি নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবে। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদে যদি প্রত্যক্ষ ভোটে নারী সদস্যরা নির্বাচিত হতে পারেন, এখন কেন পারবেন না? কেন তাঁদের দলীয় নেতৃত্ব ও সংসদ সদস্যদের কৃপার ওপর নির্ভরশীল হতে হবে?

আমরা যদি স্বৈরাচারী ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই, তাহলে বিভেদ ভুলে ঐক্যের ওপরই জোর দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে মনে রাখতে হবে, সমাজের কোনো অংশকেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা যাবে না। নারী-পুরুষ-ধর্ম-জাতিনির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মদানকে যদি আমরা অসম্মান না করতে চাই, তাহলে নির্বাচন ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে আসতেই হবে। এ ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণের সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক প রক র য় আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রকৃত গণতন্ত্র নিশ্চিত হলেই বৈষম্য নিরসন হয়: ডা. বিধান রঞ্জন

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, “যদি প্রকৃত গণতন্ত্র নিশ্চিত হয়, তাহলেই বৈষম্য নিরসন হয়।”

মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা ও প্রার্থনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, “রাষ্ট্র কখনো তার নাগরিককে বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে ভাগ করে তাদের অধিকারকে আলাদা করে না। একটি আধুনিক রাষ্ট্রের চোখে প্রতিটি নাগরিক সমান, গণতন্ত্রেরও মূল কথা সেটাই।”

আরো পড়ুন:

জাবির গণিত বিভাগের ভবন নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরুর দাবি শিক্ষার্থীদের

খুবিতে নবীনদের বরণে ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন

উপদেষ্টা আরো বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদরা যে কারণে আত্মত্যাগ করেছিলেন, আমাদের সেই স্পিরিট ধারণ করতে হবে। আমরা যদি বৈষম্যহীন একটি রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই, তাহলেই তাদের প্রতি প্রকৃত সম্মান জানানো হবে।”

মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের বাসুদেব ধর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা/এএএম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রতিবিপ্লবী রাজনীতি ও গণমাধ্যম
  • তিন যুগের লড়াইয়েও গণতন্ত্র অধরা মিয়ানমারে
  • সাংবিধানিক সংস্কার এবং গণতন্ত্রের ভবিষ‍্যৎ
  • জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা ‘মব’ না: তথ্য উপদেষ্টা
  • আনুপাতিক ভোট আরও বেশি স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দেবে: রিজভী
  • বাকশাল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের রচনা বিএনপি করেছে: তারেক রহমান
  • প্রকৃত গণতন্ত্র নিশ্চিত হলেই বৈষম্য নিরসন হয়: ডা. বিধান রঞ্জন
  • ঐক্য এবং গণতন্ত্রের প্রশ্নে আমাদের কোনো আপোস নেই: মির্জা ফখরুল
  • জুলাই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে: খালেদা জিয়া