ইমারজেন্সি পিলের দুটি ধরন। দুই ধরনের পিল দুইভাবে কাজ করে। এই দুটির ব্যবহারবিধিতেও কিছুটা পার্থক্য আছে। তবে এসব পিলের কোনোটিই শতভাগ কার্যকর নয়। প্রায়ই ব্যবহার করাও নিরাপদ নয়। ইমারজেন্সি পিলের নানা দিক সম্পর্কে বলছিলেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা.

আনিকা তাবাসসুম

কতটা কার্যকর

১২–২৪ ঘণ্টার মধ্যে খেলে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ইমারজেন্সি পিল কার্যকর হতে পারে। তবে কিছু গবেষণার ফলাফল বলছে, ইমারজেন্সি পিল ৫০–৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর। এর কারণ হলো, যদি এমন সময় শারীরিক সম্পর্ক হয়ে থাকে, যখন ওই নারীর ওভুলেশন হয়ে গেছে, অর্থাৎ ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণ হয়ে গেছে, তাহলে এসব পিল কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। সাধারণত পরবর্তী মাসিক শুরু হওয়ার ১৪ দিন আগে ওভুলেশন হয়ে যায়।

কতটা নিরাপদ

ইমারজেন্সি পিলে হরমোনের মাত্রা বেশি। তাই একটি ওষুধ সেবন করলেই একজন নারীর দেহে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি থাকে।

বমিভাব, বমি, মাথা ঘোরানো, মাথা ভার হয়ে থাকা, ঝিমুনি ভাব হতে পারে।

স্তনে বেশ ব্যথা হতে পারে।

মাসিকের চক্রে আসতে পারে পরিবর্তন।

কারও মাসিক হয়ে যেতে পারে সময়ের আগেই, কারও আবার তারিখ পেরিয়ে যাওয়ার বেশ কিছুদিন পর মাসিক হয়।

মাসিকের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কিংবা কম রক্তক্ষরণ হতে পারে, মাসিক ছাড়াও অন্য সময় অল্প অল্প রক্ত আসতে পারে।

আরও মারাত্মক ব্যাপার হলো, ইমারজেন্সি পিল গ্রহণ সত্ত্বেও যদি গর্ভধারণ হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে এই পিলের প্রভাবে জরায়ুর বাইরে অন্য কোথাও প্রোথিত হতে পারে ভ্রুণ। জরায়ুর নালি, ডিম্বাশয় বা পেটের অন্যস্থানে ভ্রুণ প্রোথিত হলে তা ওই নারীর জন্য মারাত্মক বিপদ বয়ে আনতে পারে।

আরও পড়ুনবার্লি দিয়ে তৈরি এই পানীয় খেলে পাবেন ৫টি বিশেষ উপকার০৬ আগস্ট ২০২৫জেনে নিন নিরাপদ মাত্রা

যত বেশি ইমারজেন্সি পিল সেবন করা হবে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি তত বাড়বে। তাই কেবল জরুরি পরিস্থিতিতে তা সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। ইমারজেন্সি পিলের একটি ধরনে থাকে লেভোনরজেস্ট্রেল। অন্যটিতে থাকে ইউলিপ্রিস্টাল অ্যাসিটেট। যেকোনো একটি বেছে নেওয়া যেতে পারে।

লেভোনরজেস্ট্রেল মাসে দুইবারের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। আর ইউলিপ্রিস্টাল অ্যাসিটেট মাসে একবারের বেশি ব্যবহার করা ঠিক নয়। যাঁর সপ্তাহে দুইবারের বেশি ইমারজেন্সি পিল সেবনের প্রয়োজন দেখা দেয়, তাঁর অবশ্যই এর পরিবর্তে একটি নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণপদ্ধতি বেছে নেওয়া উচিত।

কখন প্রয়োজন ইমারজেন্সি পিল

সন্তানধারণে অনিচ্ছুক নারী ও পুরুষ যদি কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণপদ্ধতি ছাড়াই শারীরিক সম্পর্কে জড়ান, তখন ইমারজেন্সি পিলের প্রয়োজন হয়।

এ ছাড়া অন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করলেও যদি সেই পদ্ধতিতে কোনো সমস্যা হয়ে থাকে, তখন এই পিলের প্রয়োজন হতে পারে। যেমন কনডম ছিঁড়ে গেলে ইমারজেন্সি পিল কাজে আসতে পারে। এ ধরনের নির্দিষ্ট পরিস্থিতি ছাড়া ইমারজেন্সি পিল সেবন করতে নেই।

সেবনবিধি

ইমারজেন্সি পিলকে মর্নিং আফটার পিল বলা হয়ে থাকে। তবে পরদিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে দ্রুততম সময়েই তা সেবন করা উচিত।

যত দ্রুত সেবন করা হয়, পিল কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা তত বাড়ে। লেভোনরজেস্ট্রেল সেবন করতে হয় সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে। ইউলিপ্রিস্টাল অ্যাসিটেট সেবন করতে হয় সর্বোচ্চ পাঁচ দিনের মধ্যে।

আরও পড়ুনপুরুষের প্রোস্টেট স্ফীত হওয়ার সমস্যা২২ নভেম্বর ২০২৪জেনে রাখুন এসব বিষয়

কিছু লেভোনরজেস্ট্রেল পিলের একবারের ডোজ সম্পন্ন করতে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে তা দুইবার সেবন করতে হয়।

যেকোনো ইমারজেন্সি পিল সেবনের দু-তিন ঘণ্টার মধ্যে বমি হয়ে গেলে ওই ডোজ পুনরায় গ্রহণ করতে হবে।

যাঁদের ওজন অতিরিক্ত, তাঁদের ক্ষেত্রে ইমারজেন্সি পিলের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।

খিঁচুনি এবং যক্ষ্মার জন্য ব্যবহৃত কিছু ওষুধ সেবন করা হলে ইমারজেন্সি পিলের কার্যকারিতা কমে যায়।

ইমারজেন্সি পিল খাওয়ার পর মাসিকের সম্ভাব্য তারিখের সাত দিন পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও মাসিক না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

জরুরি পরিস্থিতিতে আরও কিছু উপায়

যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল রোজ সেবন করা হয় (কম্বাইনড ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল), ইমারজেন্সি পিলের পরিবর্তে সেই পিলের চারটি বা পাঁচটি একসঙ্গে সেবন করে নিলে তা ইমারজেন্সি পিল হিসেবে কাজ করতে পারে।

এ ছাড়া পাঁচ দিনের মধ্যে জরায়ুতে কপার টি ডিভাইস স্থাপনেরও সুযোগ আছে, যা পরবর্তী ৫–১০ বছর পর্যন্ত জন্মনিয়ন্ত্রণের কাজে আসবে।

আরও পড়ুনজন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ছেড়ে দেওয়ার পর শরীরে কি কোনো পরিবর্তন আসতে পারে১৭ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর স বন করত প ল স বন ক র যকর ন র পদ ন করত হওয় র

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলিম সভ্যতায় রসায়নের সোনালি যুগ

গোলাপজলের মিষ্টি সুবাস থেকে শুরু করে কেরোসিনের জ্বালানি শক্তি—মুসলিম সভ্যতার রসায়নবিদরা একটি সমৃদ্ধ রসায়নের জগত উপহার দিয়েছেন। নবম শতাব্দী থেকে তারা পাতন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবনকে আরও সুন্দর ও কার্যকর করেছেন। তাদের আবিষ্কার আধুনিক রসায়নের ভিত্তি স্থাপন করেছে, যা আজও আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়।

এই নিবন্ধে জাবির ইবন হাইয়ান, আল-রাজি ও আল-কিন্দির মতো পথপ্রদর্শকদের হাত ধরে মুসলিম সভ্যতার রসায়নের সোনালি যুগের সন্ধান করা হয়েছে।

পাতনের প্রথম ফল ছিল গোলাপজল, যা ছিল খাবার, পানীয়, সুগন্ধি ও প্রসাধনীতে অপরিহার্য। আল-কিন্দি সুগন্ধির রসায়ন বিষয়ে একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন, যাতে ছিল ১০৭টি ভিন্ন সুগন্ধির রেসিপি।পাতন প্রক্রিয়া: রসায়নের হৃৎপিণ্ড

নবম শতকের মাঝামাঝি মুসলিম রসায়নবিদরা স্ফটিকায়ন, জারণ, বাষ্পীভবন, পরিশোধন ও ফিল্টারেশনের মতো প্রক্রিয়া সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। (১০০১ ইনভেনশনস: দি এন্ডিউরিং লিগ্যাসি অব মুসলিম সিভিলাইজেশন, ৪র্থ সংস্করণ, পৃ. ৯০)

তাদের পরীক্ষাকে নির্ভুল করতে তারা সূক্ষ্ম দাঁড়িপাল্লা আবিষ্কার করেন, যা রাসায়নিক নমুনা ওজনের জন্য ব্যবহৃত হতো। এই পরীক্ষাগুলোর পাশাপাশি তারা নতুন তাত্ত্বিক ধারণা ও রাসায়নিক ধারণা প্রবর্তন করেন, যার কিছু কিছু টিকে ছিল শতাব্দীর পর শতাব্দী। পাতন প্রক্রিয়া ছিল তাদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান, যা তরল পদার্থকে ফুটিয়ে তার বিশুদ্ধ উপাদান আলাদা করার একটি শিল্প ছিল।

পাতনের প্রথম ফল ছিল গোলাপজল, যা ছিল খাবার, পানীয়, সুগন্ধি ও প্রসাধনীতে অপরিহার্য। আল-কিন্দি সুগন্ধির রসায়ন বিষয়ে একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন, যাতে ছিল ১০৭টি ভিন্ন সুগন্ধির রেসিপি। (১০০১ ইনভেনশনস: দি এন্ডিউরিং লিগ্যাসি অব মুসলিম সিভিলাইজেশন, ৪র্থ সংস্করণ, পৃ. ৯১)

এই প্রক্রিয়া আধুনিক সুগন্ধি শিল্পের ভিত্তি স্থাপন করেছে।

আরও পড়ুনমুসলিম সমাজকে বিজ্ঞানমুখী করার উপায়০২ আগস্ট ২০২৫জাবির ইবন হাইয়ান: রসায়নের পথিকৃৎ

জাবির ইবন হাইয়ান (৭২২-৮১৫), পশ্চিমে গেবার নামে পরিচিত, ছিলেন রসায়নের জনক। কুফায় একজন ওষুধ ব্যবসায়ীর পুত্র হিসেবে তিনি পরিশোধন, স্ফটিকায়ন, পাতন, জারণ ও ফিল্টারেশনের মতো প্রক্রিয়াগুলো উন্নত করেন। (আর. আরনালদেজ-এল. ম্যাসিগনন, ইন অ্যানসিয়েন্ট অ্যান্ড মেডিয়েভাল সায়েন্স, লন্ডন: থেমস অ্যান্ড হাডসন: ১৯৬৩, পৃ. ৪১৩)

তিনি এমন কাগজ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন যা পুড়ত না এবং এমন কালি যা অন্ধকারে পড়া যায়।

তিনি অ্যালেম্বিক স্টিল ব্যবহার করে পাতন প্রক্রিয়া পরিচালনা করতেন, যা তরলকে ফুটিয়ে বিশুদ্ধ উপাদান সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হতো। তিনি এমন কাগজ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন যা পুড়ত না এবং এমন কালি যা অন্ধকারে পড়া যায়।

জাবির পদার্থের শ্রেণিবিভাগ ও রাসায়নিক জ্ঞান সংগঠনের নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলো পরবর্তী শতাব্দীতে ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয় এবং ১৭শ শতাব্দী পর্যন্ত পুনঃপ্রকাশিত হয়। (১০০১ ইনভেনশনস: দি এন্ডিউরিং লিগ্যাসি অব মুসলিম সিভিলাইজেশন, ৪র্থ সংস্করণ, পৃ. ৯৩)

তাঁর কাজ আধুনিক রসায়নের ভিত্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মদ পাতন করে বিশুদ্ধ অ্যালকোহল তৈরি

সম্পর্কিত নিবন্ধ