সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন বলেছেন, দেখানোর জন্য যদি বিচার হয়, তখন অনেক ধরনের নতুন অন্যায়-অবিচার হয়ে যায়। যাঁরা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন, অবশ্যই তাঁদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে যে বিচার যেন সুষ্ঠু ও ন্যায় হয়। তা না হলে এ বিচার টিকবে না। আর যাঁরা বিচার চাইবেন, তাঁরাও সন্তুষ্ট হবেন না।

‘ট্রুথ অ্যান্ড হিলিং ইনিশিয়েটিভ ইন পোস্ট কনফ্লিক্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ কথাগুলো বলেন সারা হোসেন। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এই আলোচনা সভা হয়। যৌথ আয়োজক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি এবং বাংলাদেশ ২.

০ ইনিশিয়েটিভ।

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার প্রসঙ্গে সারা হোসেন বলেন, আলোচনায় গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের কথা এসেছে। কিন্তু গণগ্রেপ্তারের কথা আনা হবে কি না, একেকজনের বিরুদ্ধে যে একাধিক কিংবা শতাধিক মামলাও রয়েছে, এ ধরনের ঘটনাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের আওতায় রাখা হবে কি না, তা ভাবতে হবে। এ ঘটনা এখনো চলছে। বিচার বিভাগও বিষয়টি নিয়ে কোনো তোয়াক্কা করছে না।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের আর্থিক সহায়তার প্রসঙ্গ টেনে সারা হোসেন বলেন, ভুক্তভোগীদের সবার অবস্থা কিন্তু এক রকম না। একেকজনের একেক অঙ্গহানির ঘটনা ঘটেছে। সে জন্য সবার অবস্থা কিন্তু এক না। কেউ কেউ আছেন, যাঁরা দুই চোখ হারিয়েছেন। সে জন্য এটাকে (সহায়তা) যার যার জন্য আলাদা করে দেখার প্রয়োজন আছে।

আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, পতিত সরকারের আমলে যাঁরা গুম-খুনের ভুক্তভোগী, তাঁরা যখন কেঁদে মরছেন, তা দেখার কেউ নেই। এমনকি সহানুভূতিটুকুও হয়তো কারও কারও নেই।

শহিদুল আলম বলেন, ‘আমরা এখানে বারবার দাঁড়িয়ে সেমিনার করে যাচ্ছি। এটা কি আমরা করে যাব? ঘুরেফিরে আমরা সেমিনার করব, মিডিয়া আমাদের সামনে থাকবে, এটা একটা নাটকে পরিণত হোক—এটাই কি আমরা চাইব? এটা আমাদের মনে রাখতে হবে।’

রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে শহিদুল আলম বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে যেন রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য ব্যবহার করা না হয়। এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। এই সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে হবে। এখানে দ্রুত বিচারের কথা বলা হয়েছে। দ্রুত বিচার করতে গিয়ে যেন কারও সঙ্গে অন্যায় করা না হয়, সেটিও খেয়াল রাখতে হবে।

সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান, অন্তর্বর্তী সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য মুসতাইন বিল্লাহ, প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ জিয়ানুল কবির, ব্রিগেডিয়ার (অব.) হাসান নাসির, কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত সাইফ আরেফিন প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম নব ধ ক র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

যে রানিকে ‘জীবন্ত দেবী’ হিসেবে গণ্য করা হতো

প্রাচীন মিশরের ১৮তম রাজবংশের একজন শক্তিশালী রানী এবং ফারাও আখেনাতেনের প্রধান রাজমহিষী ছিলেন রানি নেফারতিতি ছিলেন। এই নারী তার সৌন্দর্যের কারণে অধিক পরিচিত। এ ছাড়া ইতিহাসে তার অবস্থান শক্তিশালী হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে, তিনি  মিশরে একেশ্বরবাদী  ধর্মীয় বিপ্লবে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন।

নেফারতিতি নামের অর্থ ‘‘একজন সুন্দরী নারী এসেছেন’’। নেফারতিতির জন্ম আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৭০ অব্দে। 

আরো পড়ুন:

সঞ্চয় করার কিছু কার্যকর উপায়

আজ পুরুষদের রান্না করার দিন

জানা যায়, নেফারতিতির বাবা ছিলেন ফারাও আখেনাতেনের উপদেষ্টা এবং তিনিই কিশোর রাজকুমার আখেনাতেনের দেখাশোনা করতেন। বাবার সুবাদে শৈশবেই রাজকুমারের সঙ্গে পরিচয় হয় নেফারতিতির এবং অল্প বয়সেই তিনি আখেনাতেনের সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্কে গড়ে তোলেন। ১৫ বছর বয়সে রাজকুমারের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। ক্রমে ফারাও আখেনাতেনের জীবনে অত্যন্ত গভীর প্রভাব বিস্তার করেন এই রানি। 

আখেনাতেন মিশরের ঐতিহ্যবাহী বহু-ঈশ্বরবাদী ধর্ম পরিবর্তন করে ‘আতেন’ বা সূর্য দেবতার একেশ্বরবাদী পূজার প্রচলন করেছিলেন। এই ধর্মীয় পরিবর্তনে নেফারতিতি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং তাকে জীবন্ত দেবী হিসেবে গণ্য করা হতো।

আখেনাতেনের রাজত্বকালে নেফারতিতি একজন ফারাওয়ের মতোই ক্ষমতা এবং মর্যাদা ভোগ করতেন। অনেক ভাস্কর্য ও চিত্রে তাকে ফারাওদের মতো ক্ষমতা প্রদর্শন করতে দেখা যায়। বার্লিনের একটি জাদুঘরে সংরক্ষিত নেফারতিতির একটি মার্জিত এবং রঙিন আবক্ষ মূর্তি প্রাচীন মিশরীয় শিল্পের অন্যতম পরিচিত নিদর্শন।

আখেনাতেনের রাজত্বের প্রায় ১২ বছর পর হঠাৎ করেই নেফারতিতি ইতিহাস থেকে অদৃশ্য হয়ে যান। তার মৃত্যু সম্পর্কে খুব কম তথ্য জানা যায় এবং তার সমাধি আজও আবিষ্কৃত হয়নি, যা প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে একটি অনেক বড় রহস্য। 

সূত্র: ব্রিটানিকা কিডস অবলম্বনে

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ