চাঁদপুরের ‘ক্ষুদে মেসি’ সোহানের দায়িত্ব নিল বিএনপি
Published: 8th, August 2025 GMT
চাঁদপুরের ‘ক্ষুদে মেসি’ হিসেবে খ্যাত অসাধারণ প্রতিভাবান ক্ষুদে ফুটবলার সোহানের দায়িত্ব নিয়েছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক চাঁদপুরে এসে ফুটবলের সরঞ্জাম ও নগদ অর্থ দিয়েছেন ৫ বছর বয়সী সোহানকে।
আমিনুল হক বলেছেন, “সোহানের দায়িত্ব এখন থেকে বিএনপি নিয়েছে। তারেক রহমানের নির্দেশেই তার দায়িত্ব নেওয়া হলো। সোহানের বয়স ৭ বছর হওয়ার পর বিকেএসপি কিংবা যেকোন ভালো মানের ফুটবল ক্লাবে তাকে ভর্তি করা হবে।”
আরো পড়ুন:
বিএনপি ভোটে জিতলে তারেক রহমান হবেন প্রধানমন্ত্রী: হুমায়ূন কবির
রাজশাহী নগর বিএনপির সম্মেলনে তারেক রহমান বক্তব্য দেবেন
তিনি বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে সোহানের ফুটবল খেলার দক্ষতা দেখেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার নির্দেশেই আমি দলের হয়ে সোহানের বাড়িতে ছুটে এসেছি। কিছু আর্থিক সহায়তা সোহানের জন্য দলের পক্ষে দেওয়া হলো। এখন থেকে প্রতি মাসে সোহানের জন্য আর্থিক সহায়তা পাঠানো হবে।”
আমিনুল হক আরো বলেন, “শুধু সোহান নয়, এরকম গ্রাম-গ্রামান্তরে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে নিয়ে কাজ করার মানসিকতা আছে বিএনপির। যদি আগামীতে রাষ্ট্রক্ষমতায় বিএনপি আসে, তাহলে অবশ্যই এর সুফল এই ক্ষুদে খেলোয়াড়রা পাবে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো সোহানদের পাশে সব সময় থাকব, এ আশ্বাস দিচ্ছি।”
২০১৯ সালের ২২ আগস্ট চাঁদপুরের মতলব উত্তরের জহিরাবাদ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাড়ে পাঁচ আনী গ্রামের প্রধানিয়া বাড়িতে মো.
মাত্র আড়াই বছর বয়সে দাদা মৃত শাহ আলম প্রধান একটি ফুটবল কিনে দেন সোহানকে। সেটা দিয়েই হয় তার ‘পায়ে খড়ি’। প্রতিদিন বাবার কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে সোহান।
মাত্র ছয় বছর বয়সে সোহানের ফুটবল খেলার স্কিল ও ড্রিবলিং দেখে অনেকেই অবাক হন। তার ড্রিবলিংয়ের একটি ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তা নজরে এসেছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হকের।
সোহানের বাবা মো. সোহেল প্রধান বলেছেন, “আমি এই দেশে জন্ম নিয়ে সার্থক। আমার ছেলেকে আজকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়েছে। আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই তারেক রহমান ও আমিনুল হককে। আমাদেরকে যে সম্মান দেওয়া হয়েছে, এটা কখনোই ভোলার নয়। সবার সহযোগিতা নিয়ে আমার ছেলে একদিন অনেক বড় ফুটবল খেলোয়াড় হবে।”
তিনি বলেন, “আমি ২৫ বছর ধরে সাইকেল মেকানিক হিসেবে কাজ করছি। এ আয় দিয়ে সংসার চালাচ্ছি। সোহানকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। সে বড় হয়ে একজন ভালো মানের ফুটবল খেলোয়াড় এবং দেশের সম্পদ হবে। কিন্তু, আর্থিক সঙ্কটে আমি ঠিকমতো সোহানের যত্ন নিতে পারছি না। তাই, সবার কাছে সহযোগিতা চাই, যাতে সোহানকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।”
শিশু সোহান বলে, “আমার বাবাই আমাকে ফুটবল খেলা শিখাচ্ছে। আমি নিয়মিত বাবার দোকানের সামনের রাস্তায় ও পাশের বালুর মাঠে ফুটবল খেলি। আমি যাতে একজন দক্ষ ফুটবল খেলোয়াড় হতে পারি, সেজন্য সবার কাছে দোয়া চাচ্ছি।”
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেছেন, “সোহানের ফুটবল দক্ষতা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে আমি অভিভূত। তার প্রতিভা যাতে কোনো সীমাবদ্ধতায় থেমে না যায়, সেজন্য তার ও তার পরিবারের পাশে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন থাকবে। তার জন্য কী করা যায়, সে বিষয়ে কাজ করব।”
ঢাকা/জয়/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ফ টবল ত র ক রহম ন ত র ক রহম ন ফ টবল খ ল ন র ফ টবল ব এনপ র র বয়স
এছাড়াও পড়ুন:
৪০ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন দেলোয়ার হোসেন
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণের পত্রিকা বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন (৬৩) অসুস্থ থাকেন প্রায়ই। পায়ে পানি নামে, ফুলে যায়। হৃদ্যন্ত্রে সমস্যা। আছে উচ্চ রক্তচাপসহ আরও নানা শারীরিক সমস্যা। তবু বয়স ও শারীরিক অসুস্থতা পাশ কাটিয়ে প্রতিদিন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে হেঁটে হেঁটে পাঠকদের কাছে বিভিন্ন খবরের কাগজ বিলি করেন তিনি। একটানা প্রায় ৪০ বছর ধরে এ কাজ করে চালাচ্ছেন সংসারের খরচ।
দেলোয়ার হোসেনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার অলিপুর গ্রামে। পাঁচ ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। মতলব দক্ষিণ উপজেলার টিঅ্যান্ডটি এলাকায় বসবাস করেন দেলোয়ার। স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। মতলব দক্ষিণ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৯৮৫ সাল থেকে হেঁটে হেঁটে জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকা বিলি করছেন তিনি।
মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরের কলেজ গেট এলাকায় হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিক্রির সময় কথা হয় দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। অভাবের টানাপোড়েনে তেমন লেখাপড়া করতে পারেননি। ধরতে হয় সংসারের হাল। কিছু একটা করে জীবিকা চালাতে ১৯৮৫ সাল থেকে সামান্য কিছু টাকা জোগাড় করে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করেন।
প্রথম দিকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানার ভবেরচর এলাকা থেকে ১৩ কপি জাতীয় পত্রিকা এনে মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরে হেঁটে বিক্রি করতেন। কয়েক বছর পর কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর এলাকা থেকে পত্রিকা আনতে শুরু করেন। সকাল ৬টা থেকে বিকেল পর্যন্ত হেঁটে বিভিন্ন দপ্তরে ও বাড়িতে পৌঁছে দেন পত্রিকা। এখন প্রতিদিন গড়ে বিলি করেন প্রায় ২৫০ জাতীয় পত্রিকা। কিছু আঞ্চলিক পত্রিকাও বিলি করেন। পত্রিকা বিক্রি করে প্রতিদিন গড়ে আয় হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এ টাকায় চলে সংসারের খরচ। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ মিটিয়েছেন পত্রিকা বিক্রির টাকায়। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। নিজের ছোটখাটো একটি বাড়িও বানিয়েছেন।
দেলোয়ার হোসেন বলতে থাকেন, রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই প্রতিদিন পত্রিকা বিলি করেন তিনি। তাঁকে কিছুটা সহযোগিতা করেন তাঁর সম্বন্ধীর ছেলে রাকিব হোসেন। দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে ভুগছেন। তবু প্রতিদিন সকাল থেকেই কাজে নামেন। কয়েক বছর আগেও এক হাজারের বেশি জাতীয় পত্রিকা বিক্রি করতেন। এখন পত্রিকার পাঠক আগের চেয়ে অনেক কম। অধিকাংশ লোকই অনলাইনে পত্রিকার খবর দেখেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য আগেভাগেই জেনে যান। পত্রিকা বিক্রি কমে যাওয়ায় তাঁর আয়ও কমেছে। এর ওপর ১২ টাকার পত্রিকা কিনে অনেকে ১০ টাকা দিয়ে চলে যান। বাকির ঝামেলা তো আছেই।
কিছুটা হতাশা ও কষ্ট নিয়ে দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত কষ্ট কইরা প্রতিদিন পত্রিকার খবর মানুষের কাছে পৌঁছাই, কিন্তু আমাগো খবরই তেমনভাবে কেউ রাখে না। এ ছাড়া যেভাবে দিন দিন পত্রিকার পাঠক কমতাছে, তাতে কত দিন এই কাম চালাইতে পারুম তা উপরওয়ালাই জানেন।’
মতলব সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অশোক কুমার রায় বলেন, দেলোয়ার হোসেন তাঁর খুবই প্রিয় ও পরিচিত মানুষ। হকার হলেও খুব বড় মনের মানুষ তিনি। বৃদ্ধ বয়সে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে যেভাবে তিনি পাঠকের কাছে খবরের কাগজ নিয়মিত পৌঁছে দিচ্ছেন, তা তাঁর অদম্য মানসিকতার পরিচায়ক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমজাদ হোসেন বলেন, তাঁর কার্যালয়ে প্রতিদিন দেলোয়ার সঠিক সময়ে পত্রিকা পৌঁছে দেন। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও থেমে নেই তাঁর পত্রিকা বিলির কাজ। বয়স তাঁর কাছে একটা সংখ্যা মাত্র। তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।