বিদেশের মাটিতে হামলা দেশকে কলঙ্কিত করছে: সেলিমা
Published: 23rd, September 2025 GMT
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, “বিদেশের মাটিতে প্রধান উপদেষ্টার সফর সঙ্গীদের ওপর যারা চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে তারা দেশকে কলঙ্কিত করছে।”
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সংবিধান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আরো পড়ুন:
নির্দিষ্ট সময়ে ভোট হবে: ডা.
এ্যানিকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি, ধৃষ্টতা বলছে যুবদল-ছাত্রদল
তিনি বলেন, “সংবিধান সংরক্ষণের জন্য লড়াই চলছে। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পরেও তা বানচাল করার অপচেষ্টা করছে ৭১ এর পরাজিতরা। তারা অতীত আদর্শ ভুলতে পারছে না, তাই নির্বাচন বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপি তা হতে দেবে না। দেশে ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পরও বিএনপি এখনও দেশের মানুষদের ভোটাধিকারের জন্য, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে।”
সেলিমা রহমান বলেন, “পিআর সিস্টেম কি আমিই বুঝি না, দেশের জনগণ কীভাবে বুঝবে? পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে দেশের জনগণের ভোটাধিকার নষ্ট হবে।”
ঢাকা/রায়হান/সাইফ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের রায়ের পেছনে ছিল রাজনৈতিক বিদ্বেষ: অ্যাটর্নি জেনারেল
দেড় দশক আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে যে রায় সর্বোচ্চ আদালত দিয়েছিল, তার পেছনে রাজনৈতিক বিদ্বেষ ছিল বলে আদালতে শুনানিতে দাবি করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
আজ বুধবার আসাদুজ্জামান আপিল বিভাগে এ–সংক্রান্ত শুনানিতে বলেছেন, বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ‘শর্ট অর্ডার’ (সংক্ষিপ্ত রায়) যেদিন ঘোষণা করেন, সেদিনই রায়ের দিন। ঘোষিত রায় ১৬ মাস পর পরিবর্তন করা হয়। এ ক্ষেত্রে আইন ও রীতি অনুসরণ করা হয়নি। ঘোষিত রায় নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়াই পরিবর্তন করা হয়েছিল, যা দণ্ডবিধির ২১৯ ধারার অপরাধ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে আজ অষ্টম দিনের মতো শুনানি হয়। গত ২১ অক্টোবর এই শুনানি শুরু হয়েছিল। পরবর্তী শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন রাখা হয়েছে।
১৯৯৬ সালে সংবিধানে যোগ হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বাদ পড়ে। তার জন্য সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধন আনা হয়েছিল। ওই সংশোধনের ঠিক আগে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন।
ওই রায় হয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। সংক্ষিপ্ত রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আরও দুটি নির্বাচনের জন্য রাখার বিষয়টি সংসদ বিবেচনা করতে পারে বলে উল্লেখ ছিল। তবে পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ বিষয়ে কিছু ছিল না।
আজ শুনানিতে সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ‘দেশের মেঠো পথ ধরে যারা হাটে যায়, তারাও জানে হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। হুকুমটা নড়ানোর জন্য যে পদ্ধতি আছে, সেই পদ্ধতি অবলম্বন করে হুকুম নড়াতে হয়। উনি (খায়রুল হক) হুকুম নাড়িয়ে দিয়েছেন। এ জন্য প্রক্রিয়া আছে। সংক্ষুব্ধ পক্ষ রিভিউ করতে পারে কিংবা আদালত সুয়োমটো (স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে) পারে। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের রুলস ভঙ্গ হয়েছে। আইন ও রীতি অনুসারে হয়নি। এই রায় আইনের দৃষ্টিতে অকার্যকর।’
আসাদুজ্জামান বলেন, কোনো সরকারি কর্মচারী যদি দুর্নীতিগ্রস্ত বা বিদ্বেষপূর্ণভাবে এমন কোনো প্রতিবেদন, আদেশ, রায় বা সিদ্ধান্ত প্রদান করে, যা সে জানে যে আইনের পরিপন্থী, তাহলে তাঁকে সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
অ্যাটর্নি জেনারেলের শুনানি শুরুর আগে শুনানিতে অংশ নেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০১১ সালের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেন। সেই আবেদনগুলোর ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। তারপর এই শুনানি শুরু হয়।
‘সামরিক শাসনে মানুষের মুক্তি বিরল ঘটনা’
গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা মৌলিক অধিকার উল্লেখ করে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংবিধান গৃহীত হলে আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের হাঁটা শুরু হয়েছিল। দুই বছরের মাথায় গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। বাক্স্বাধীনতার কণ্ঠরুদ্ধ করা হয়। জনগণ তখন ফুঁসে উঠেছিল।
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘তখন গণতন্ত্র হত্যার সাথে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁরা বললেন, আমরা যেটা বলব, সেটাই গণতন্ত্র, একদলীয় শাসন থাকবে। আমি যেটা বলব, সেটা গণতন্ত্র, আমি রাষ্ট্রপতি যেটা বলব, সেটি বিচার বিভাগ। আইনের শাসন বলতে আমি যেটা বলব, বাকশাল রক্ষীবাহিনী যেটা বলবে, সেটা আইনের শাসন। কথা বলবেন, আপনার কণ্ঠ রুদ্ধ করা হবে। সব পত্রিকার স্বাধীনতা হরণ করলেন। প্রতিবাদ উঠেছিল, প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বিগত দুই বছর সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম বিরল ঘটনা সামরিক শাসনে সেই মানুষকে মুক্তি দিয়েছিলেন।’
১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন নিয়ে মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘১৯৭৫ সালের একটি পর্বের পরে দেশের মানুষকে মুক্তি দিয়েছিলেন একটি সামরিক শাসন। গণতন্ত্রের স্বাদ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আজকের আওয়ামী লীগ, সেটা কিন্তু সামরিক শাসনের করুণায়।’
পদ ছেড়ে ভোট করবেন আসাদুজ্জামান
পদ ছেড়ে দিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান। আজ বুধবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পাওয়া আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি ভোট করব। আমি নমিনেশন ওখানে চেয়েছি। আমি ভোট করব, আমি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আছি এখনো। আমার অ্যাটর্নি জেনারেল পদ ছেড়ে গিয়ে আমি ভোট করব। যখন সময় আসবে, তখন করব।’
গত বছরের ৮ আগস্ট রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পান আসাদুজ্জামান। তিনি বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
তাহলে এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল কে হচ্ছেন, এমন প্রশ্নে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ যাকে মনে করে।’
আরও পড়ুনতত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল: সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ রায়ে অসংগতি তুলে ধরে আপিল মঞ্জুরের আরজি০৪ নভেম্বর ২০২৫