বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদে প্রথমবারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বম শিক্ষার্থী
Published: 23rd, September 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এক বম শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো বম শিক্ষার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁর নাম লালত্লান সাং বম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি চাকসু নির্বাচনে খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট পাঁচজন বম জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এর মধ্যে চারজনই শারীরিক শিক্ষা ও স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের। আরেকজন বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের। লালত্লান সাং বম ছাড়া বাকিরা হলেন লালরিন কম বম, লালখুম সাং বম, ফুংলিয়ান কাপ বম ও বেনদিকার বম। তাঁদের মধ্যে লালখুম সাং বম বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের।
লালত্লান সাং বম বামপন্থী শিক্ষার্থীদের সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটসহ কয়েকটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন। তিনি যে পদে নির্বাচন করছেন, এতে তিনি ছাড়াও আরও ১০ জন প্রার্থী রয়েছেন। ১১টি ধর্ম ও জাতিসত্তার শিক্ষার্থীদের প্যানেল হওয়ায় ‘বৈচিত্র্যের ঐক্যকে’ বেছে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন লালত্লান সাং। তিনি বান্দরবানের রুমার পাইন্দু ইউনিয়নের জুরভারং পাড়ার বাসিন্দা তনথাং বমের ছেলে। তিনি মা লালঠাজিং বম, দাদু ও সাত ভাই–বোনের সঙ্গে বড় হয়েছেন।
পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই খেলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন লালত্লান। এর পর থেকে আঞ্চলিক পর্যায়ে নানান খেলায় অংশ নিয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যান্ডবল দলেও তিনবার খেলার সুযোগ পেয়েছেন। এ কারণে খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদটিই বেছে নিয়েছেন। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্ধুদের অনুপ্রেরণায় নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো বম জাতিসত্তার শিক্ষার্থী নির্বাচন করছে। চাকসু নিয়ে আমি খুব আগ্রহী। এখন প্রচার চলছে। আশা করছি জয়ী হব। ’
‘বন্ধুদের অনুপ্রেরণায় নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো বম জাতিসত্তার শিক্ষার্থী নির্বাচন করছে। চাকসু নিয়ে আমি খুব আগ্রহী। এখন প্রচার চলছে। আশা করছি জয়ী হব।’লালত্লান সাং বম, খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক প্রার্থী, চাকসুলালত্লান বলেন, পড়াশোনা ও খেলাধুলার শুরু থেকেই তাঁকে বম পরিচয়ের কারণে নানা কটূক্তি সহ্য করতে হয়েছে। কিছুদিন আগেও নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে এমনভাবে দেখছিলেন, যেন তিনি সন্ত্রাসী। তাঁর বিভাগের মৌখিক পরীক্ষাতেও একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। সবকিছুর পরও তিনি আশাবাদী। এত বছর পর চাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন, এটাও ভালো অনুভূতি দিচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৫৯ বছরে হয়েছে মাত্র ছয়বার চাকসু নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। সে নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য প্যানেল বিজয়ী হয়েছিল। এরপর ছাত্রসংগঠনগুলোর দ্বন্দ্ব, অস্থিরতা আর প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় দীর্ঘ বিরতি ছিল। নিয়ম অনুযায়ী, চাকসু নির্বাচন প্রতিবছর হওয়ার কথা রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দীর্ঘ আন্দোলন ও কর্মসূচির একপর্যায়ে চলতি বছরের ২৮ আগস্ট নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ অক্টোবর নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও, তা পিছিয়ে ১৫ অক্টোবর করা হয়েছে।
আরও পড়ুনবামধারার প্যানেলে ভিপি প্রার্থী ধ্রুব, আছেন ১১ পাহাড়ি শিক্ষার্থী১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫নির্বাচনে অংশ নিতে ইতিমধ্যে ৯৩১ জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে চাকসুতে ২৬ পদের বিপরীতে ৪২৯ জন আর হল সংসদে ১৯৬টি পদের বিপরীতে ৪৮১ জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত সূচি অনুযায়ী, গতকাল চাকসুর মনোনয়ন ফরম যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ থাকছে। আগামী বৃহস্পতিবার প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে। ১৫ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট শেষে গণনা শুরু হবে।
আরও পড়ুনছাত্রদল–শিবিরসহ আলোচনায় ৪ প্যানেল ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথমবারের মতো সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট প্রকাশ করলো এনআরবিসি ব্যাংক
টেকসই উন্নয়ন, সামাজিক ও পরিবেশবান্ধব অর্থায়নকে গুরুত্ব দিয়ে প্রথমবারের মতো ‘সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট-২০২৪’ প্রকাশ করেছে এনআরবিসি ব্যাংক। গ্লোবাল রিপোর্টিং ইনিশিয়েটিভ (জিআরআই) স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী প্রণীত প্রতিবেদনের মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘অন্তর্ভূক্তিমূলক অর্থায়নে সবুজ আগামী’।
বুধবার (৫ নভেম্বর) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদনের মোড়ক আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. মো. তৌহিদুল আলম খান। এসময় ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিএফও হারুনুর রশীদ, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিওও মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম খানসহ সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্টিং কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ড. তৌহিদুল আলম খান বলেন, “জিআরআই গাইডলাইন্স অনুসরণ করে সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট প্রকাশ এনআরবিসি ব্যাংকের আর্থিক স্থিতি, পরিবেশগত দায়িত্ববদ্ধতা এবং সামাজিক ন্যায়ের প্রতি দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।”
তিনি আরো বলেন, “ভবিষ্যতে গ্রিন ব্যাংকিং, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত, সামাজিক কল্যাণে অতিক্ষুদ্র খাত এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের সহযোগিতা ও অর্থায়ন বাড়ানো হবে।”
রিপোর্টে বলা হয়েছে, এনআরবিসি ব্যাংক পরিবেশ, সামাজিক উন্নয়ন ও সুশাসনকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ২০২৪ সালে ব্যাংকটি গ্রিন ও সাসটেইনেবল ফাইন্যান্সিং খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি-দক্ষ প্রযুক্তি, টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সবুজ স্থাপনা এবং জলবায়ু সহনশীল কৃষি উদ্যোগে অর্থায়নের মাধ্যমে এনআরবিসি ব্যাংক কৃষক ও জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়নে সরাসরি অবদান রাখছে।
রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, টেকসই ব্যাংকিং মানেই শক্তিশালী ও ভালো ব্যাংকিং। এনআরবিসি ব্যাংকের এই পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের সুফল গ্রাহক, ঋণগ্রহীতা ও শেয়ারহোল্ডাররা পাবেন। স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল ব্যাংকিং সেবার কারণে সবুজ অর্থায়ন প্রকল্পগুলো গুরুত্ব পাবে, এতে উদ্যোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদে খরচ কমবে এবং মুনাফা বাড়বে। আমানতকারী এবং শেয়ারহোল্ডাররা নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন যে, তাদের জমানো অর্থ ও বিনিয়োগ পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ খাতে ব্যবহার করা হচ্ছে না।
ঢাকা/ইভা