জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনকে গণতন্ত্রের পুনঃপথযাত্রার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে দেখলেও নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়নি বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল। তাঁদের অভিযোগ, অব্যবস্থাপনা, কারচুপি, সমন্বয়হীনতা, বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো এবং একটি নির্দিষ্ট প্যানেলকে জয়ী করার জন্য পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার শিক্ষক লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন জাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা। শুরুতে জাকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীসহ অন্যদের প্রত্যাশার বিষয়টি তুলে ধরেন জাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে অংশ নেওয়া তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। এরপর সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী শেখ সাদী হাসান লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

লিখিত বক্তব্যে শেখ সাদী হাসান বলেন, ‘জাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়া আটটি প্যানেলের মধ্যে পাঁচটি প্যানেল বর্জন করেছে। দুজন নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করেছেন। ভোট চলাকালেই ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কারণে কয়েকজন শিক্ষক নিজেদের প্রত্যাহার করে নেন। একাধিকবার প্রশাসন ও দায়িত্বশীলদের অবহিত করেও আমাদের অভিযোগগুলোর কোনো সমাধান পাইনি।’

শেখ সাদী হাসান আরও বলেন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, অমোচনীয় কালি, ছবিসহ ভোটার তালিকার ব্যবস্থা না থাকায় জাল ভোটের সুযোগ ছিল অবারিত। ব্যালট বাক্স নির্বাচনের আগের রাতে পাঠানো হয়। কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের সংখ্যার চেয়ে বেশি ব্যালট পেপার পাঠানো হয় এবং অতিরিক্ত ৩ হাজার ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছাড়া ব্যালট বাক্স পাঠিয়ে ব্যালট বাক্স লুটের উদ্দেশ্যমূলক গুজব ছড়ানোর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। এ ছাড়া ফজিলাতুন্নেছা হল, জাহানারা ইমাম হল ও তাজউদ্দীন হলে জাল ভোটের অভিযোগ তোলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, অধিকাংশ পোলিং অফিসার নির্বাচনী আচরণবিধি জানতেন না, প্রার্থীদের এজেন্টদের নিয়ে টালবাহানা করা হয়েছে। প্রথমে এজেন্ট রাখা হবে না বলা হলেও পরে নির্বাচনের আগের রাতে এজেন্ট রাখার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। সকালে তাঁদের কেন্দ্রে ঢোকা নিয়ে হয়রানি করা হয়। প্রথম প্রায় দুই ঘণ্টায় হলগুলোতে এজেন্ট ছিল না এবং একটি নির্দিষ্ট প্যানেলের এজেন্টরা বিশেষ সুবিধা পেয়েছেন।

রফিক জব্বার হলে ৪৭০ ভোট পড়লেও ফলাফলে ৫১৩ ভোটের হিসাব দেখানো হয়েছে। মওলানা ভাসানী হলে নীলা অং মারমা নামের এক প্রার্থীর ভোট দেখানো হয় শূন্য, যা প্রশ্নবিদ্ধ বলে অভিযোগ করেন সাদী। এ বিষয়ে একজন ভোটার তাঁর ফেসবুক পোস্টে বলেন, তিনি নিজে নীলাকে ভোট দিয়েছেন। তিনি জানতে চান, তাঁর সেই ভোটের হিসাব কোথায়? কাজী নজরুল ইসলাম হলে জিএস পদে মোট ৬ জন প্রার্থীর ঘোষিত ভোটসংখ্যার যোগফল হয় ৭৫৬, অথচ মোট ভোট পড়ে ৮০৬। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে দেরিতে ভোট শুরু হয়। শেখ সাদী জানান, তাঁরা প্রশাসনের কাছে সব কেন্দ্রের ভোটার তালিকা ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেয়েছেন, কিন্তু নির্বাচন কমিশন তা সরবরাহ করছে না, বরং কালক্ষেপণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের অন্য প্রার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ৩৩ বছর পর ১১ সেপ্টেম্বর জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয় পায়। তাঁরা জাকসুর ২৫টি পদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক (জিএস), দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ (এজিএস) ২০টি পদে বিজয়ী হন। সহসভাপতি (ভিপি) পদে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থী। দুটি করে পদে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস)–সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল সমর থ ত প য ন ল য গ কর

এছাড়াও পড়ুন:

তৈরি পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে চায় আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সঙ্গে বৈঠক করেছে। এতে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তৈরি পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যতের ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে অবহিত হওয়ার চেষ্টা করে আইএমএফের প্রতিনিধিদল।

পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। এতে বলা হয়, রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএর কার্যালয়ে আজ বুধবার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিজিএমইএর নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইনামুল হক খান, সহসভাপতি মো. রেজোয়ান সেলিম, ভিদিয়া অমৃত খান, পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা, রশিদ আহমেদ হোসাইনী প্রমুখ। অন্যদিকে আইএমএফের প্রতিনিধিদলে ছিলেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ কিয়াও চেন, জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ রুইফেং ঝাং ও অর্থনীতিবিদ আয়া সাইদ।

উভয় পক্ষের আলোচনায় পোশাক রপ্তানিতে মার্কিন শুল্কের সম্ভাব্য প্রভাব, বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রভাব, শিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং মূল্য সংযোজিত পণ্য বৈচিত্র্যকরণের কৌশল গুরুত্ব পায়। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সম্ভাব্য প্রভাব, ব্যবসায়ের পরিচালন ব্যয় কমানো ও ব্যবসা সহজীকরণের জন্য করণীয় বিষয়েও আলোচনা হয়।

আইএমএফের প্রতিনিধিদের কাছে জাতীয় অর্থনীতিতে তৈরি পোশাকশিল্পের অবদানসহ শিল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিজিএমইএর নেতারা। তাঁরা শিল্পের কৌশলগত রূপকল্প তুলে ধরে জানান, পোশাকশিল্প বর্তমানে শ্রমনির্ভর মডেল থেকে বেরিয়ে এসে মূল্য সংযোজিত পণ্য, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত মানোন্নয়নের মাধ্যমে রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করছে। তারই অংশ হিসেবে কৃত্রিম তন্তু ও টেকনিক্যাল টেক্সটাইলভিত্তিক পোশাক তৈরির সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।

বিজিএমইএ নেতারা জানান, তাঁদের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ইতিমধ্যে তৈরি পোশাকশিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ, বন্দর ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার উন্নয়ন, কাস্টমস ও বন্ড প্রক্রিয়া সহজীকরণ, সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেছেন। এ ছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণের পর শুল্কসুবিধা বজায় রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ), যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) সই করার বিষয়ে সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ছয় নেতা–কর্মী গ্রেপ্তার
  • কাফনের কাপড় পরে মৌনমিছিল ৩ নেতার সমর্থকদের, প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি
  • কানাডায় তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়াতে সহায়তা দেবে বিবিসিসি, বিজিএমইএর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সই
  • রাউজানে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে ফের গোলাগুলি, গুলিবিদ্ধ পাঁচ নেতা-কর্মী
  • তৈরি পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে চায় আইএমএফ
  • পোশাকশিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিজিএমইএ-আইএমএফ বৈঠক