চলতি বছরই চূড়ান্ত হচ্ছে ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
Published: 11th, November 2025 GMT
নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, “দেশের স্থল, নৌ ও সমুদ্র বন্দরসমূহের দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি শীর্ষক একটি জাতীয় কৌশলপত্র তৈরি করছে।”
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় আয়োজিত এবং জাপান সরকার ও জাইকার সহযোগিতায় প্রণীতব্য বাংলাদেশ ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি ২০২৫ চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
প্রাথমিকের শিক্ষকদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা
নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কার কোনো কারণ দেখি না: আসিফ নজরুল
ড.
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দেশের বন্দরসমূহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি দেশের জিডিপিতে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, গত ৫৪ বছরেও বাংলাদেশে কোনও সমন্বিত বন্দর ব্যবস্থাপনা কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়নি। প্রত্যেকটি বন্দর পৃথক পৃথকভাবে তাদের কার্যক্রম ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকে। উন্নত বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও আধুনিক বন্দর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকল্পে নৌপরিবহন এবং উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের সাথে সাথে ‘ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি’ প্রণয়ণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
উপদেষ্টা এ কৌশলপত্র প্রদানের লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করেন। উক্ত কমিটি বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের পোর্ট স্ট্র্যাটেজি পর্যালোচনা পূর্বক দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের থেকে প্রাপ্ত পরামর্শের ভিত্তিতে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রণীতব্য ‘ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি’ এর খসড়া প্রস্তুত করেছে।
বিশ্বের বিখ্যাত বন্দরগুলো এখন ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর ফলে সেখানে বেশি বেশি বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “আমাদের মেরিটাইম সেক্টরেও আরো বেশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে এবং একটি কার্যকর ও টেকসই বন্দর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সাথে সাথেই ‘ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি’ প্রণয়ণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।”
এই কৌশলপত্রের মাধ্যমে একটি সমন্বিত, শক্তিশালী ও যুগোপযোগী বন্দর কাঠামো গড়ে তোলা হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “বন্দরকেন্দ্রিক সব সেবাকে একটি প্ল্যাটফর্মে আনতে মেরিটাইম সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করা হবে। যেখানে ব্যবসায়ীরা স্বল্পতম সময়ের মধ্যে হয়রানিমুক্ত সেবা পাবে।”
ঢাকা/এএএম/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট ন পর বহন ক শলপত র উপদ ষ ট ব যবস গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে পেঁয়াজের দাম কেন বাড়ে
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দাম এখন কেজিপ্রতি ১১০ থেকে ১২০ টাকা। এক মাসে আগেও ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হতো। প্রতিবছরই অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। অক্টোবরে দাম বাড়তে শুরু করে এবং নভেম্বর ও ডিসেম্বরে এক কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। আবার প্রতিবছরই ভারত থেকে আমদানি করে দাম কমাতে হয়। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) সম্প্রতি স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিতে সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে। সেখানেও এই চিত্র ওঠে এসেছে। ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন অনুসারে, গত ৩ বছরে নভেম্বরে গড় দাম ছিল যথাক্রমে ২০২৩ সালে ১১৫ টাকা, ২০২৪ সালে ১৩০ টাকা ও চলতি বছরের নভেম্বর মাসে ১০৫ টাকা।
কেন দাম বাড়েঅক্টোবর-ডিসেম্বরে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির বেশ কিছু কারণ আছে। প্রথমত, উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য; দ্বিতীয়ত, পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভাব; তৃতীয়ত, মৌসুমের শেষ পর্যায়; চতুর্থত, বৃষ্টিতে পেঁয়াজের ক্ষতি।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছরই অক্টোবরের পর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। মৌসুমের শেষ পর্যায়ে কৃষকের হাতেও পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকে না। তাই দাম বাড়ে।
পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভাবপেঁয়াজ সংরক্ষণের মৌসুম হলো জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। সরকারি সংরক্ষণাগার না থাকায় কৃষকেরা নিজেরাই পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে থাকেন। পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে সরকারিভাবে সংরক্ষণের অভাবকে চিহ্নিত করেছে ট্যারিফ কমিশন। ট্যারিফ কমিশন বলেছে, বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বর্তমানে সরকারিভাবে পেঁয়াজ সংরক্ষণের হিমাগার নেই। কৃষক নিজের বাড়িতেই পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন।
মৌসুমের শেষ পর্যায়নভেম্বর ও ডিসেম্বর হলো পেঁয়াজের মৌসুমের শেষ পর্যায়। এই সময়ে কৃষকের ঘরে মজুত কম থাকে। সে কারণেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে মুড়িকাটা পেঁয়াজ (আগাম পেঁয়াজ) বাজারে আসতে শুরু করবে; তখন পেঁয়াজের দাম কমবে।
এখন বাজারে হালি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। গতকাল শনিবার পাবনায় এক মণ হালি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়। ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত পেঁয়াজের মৌসুম। এপ্রিল মাস থেকে পেঁয়াজ সংরক্ষণ শুরু হয়।
মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যকৃষকের কাছ থেকে বাজারে আসা পর্যন্ত পেঁয়াজের একাধিকবার হাত বদল হয়। প্রতি ধাপে মুনাফা করেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। প্রতিটি ধাপেই মধ্যস্বত্বভোগীরা তাঁদের নির্ধারিত মুনাফায় পেঁয়াজ বিক্রি করে থাকেন। মধ্যস্বত্বভোগীদের অতি মুনাফার কারণেও মৌসুমে পেঁয়াজের দাম বাড়ে।
বৃষ্টিতে পেঁয়াজ নষ্টপেঁয়াজ উৎপাদন হয়, এমন জেলা যেমন পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মেহেরপুরসহ একাধিক জেলায় গত দুই সপ্তাহে বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বিপুল পরিমাণ আগাম পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এটাও বাজারে পেঁয়াজে মূল্যবৃদ্ধির কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ বছর কোন মাসে কত দামচলতি বছরের জানুয়ারি থেকে পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। তবে নভেম্বরে ১ কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন অনুসারে, গত জানুয়ারিতে এক কেজি পেঁয়াজের গড় দাম ছিল ৬৫ টাকা। পরের মাসে তা ৫২ টাকায় নেমে আসে। মার্চ মাসে পেঁয়াজের দাম আরও কিছুটা কমে ৪২ টাকা হয়। এপ্রিল মাসে হয় ৪৮ টাকা। মূলত ওই চার মাস হলো পেঁয়াজের মৌসুম। এরপরের ৩ মাস পেঁয়াজের দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকার মধ্যেই ছিল। আগস্টে অবশ্য হঠাৎ পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকায় ওঠে। পরের দুই মাস কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ৭৫ টাকায় স্থির থাকে। চলতি নভেম্বরে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ৪০ শতাংশ বেড়ে ১০৫ টাকা হয়।
পেঁয়াজ আমদানি কি সমাধানপ্রতিবছর পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ইতিমধ্যে ট্যারিফ কমিশন পেঁয়াজ আমদানির সুপারিশ করে বাণিজ্যসচিব ও কৃষিসচিবকে চিঠি দিয়েছে।
বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানির প্রধান উৎস দেশ ভারত। পেঁয়াজের মোট আমদানির ৯৯ শতাংশই ভারত থেকে করা হয়। এ ছাড়া তুরস্ক, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন ও মিসর থেকেও পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। গত অর্থবছরে মোট ৪ লাখ ৮৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। বর্তমানে পেঁয়াজের ওপর মোট ১০ শতাংশ শুল্ক কর আছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন। তবে সংরক্ষণ সমস্যাসহ নানা কারণে পেঁয়াজ নষ্ট হয়। তাই গত অর্থবছরে ৩৩ লাখ টনের মতো পেঁয়াজ বাজারে এসেছে।
ট্যারিফ কমিশন প্রতিবছর নভেম্বর-ডিসেম্বর সময়ে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ঠেকানোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। এ ছাড়া বছরজুড়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য সরকারি পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে তারা।
ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান প্রথম আলোকে বলেন, পেঁয়াজের উচ্চ দামের সুবিধা কৃষক পাচ্ছেন না। মধ্যস্বত্বভোগীরা এই সুযোগ নিচ্ছেন। তাই পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ দিলে বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমে যাবে। ভোক্তারা যৌক্তিক মূল্যে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।