সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি শামসুল ইসলাম চৌধুরী হত্যা মামলায় তার ছেলেসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

মঙ্গলবার সকালে সিলেট বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. শাহাদত হোসেন প্রামাণিক ১৪ বছর আগের এ মামলার রায় ঘোষণা করেন বলে আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. আনছারুজ্জামান জানান।

দণ্ডিতরা হলেন- আইনজীবী শামসুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে মাসুদ আহমদ চৌধুরী মুন্না (৪৫), তার সহযোগী জাহের আলী (৩৫) ও আনসার আহমদ (২৫) ।

মামলার বরাতে পিপি আনছারুজ্জামান বলেন, ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে নামাজরত অবস্থায় সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি প্রবীণ আইনজীবী শামসুল ইসলাম চৌধুরীকে তার ছেলে মাসুদ আহমদ চৌধুরী মুন্না পেছন থেকে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। এতে শামসুল ইসলাম জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

পরে তাকে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে অচেতন অবস্থায় গাড়িতে তুলে সুনামগঞ্জের ছাতকের মল্লিকপুর এলাকার সুরমা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। কয়েকদিন পর সুনামগঞ্জের ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামে সুরমা নদীতে তার মরদেহ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় মুন্নাকে গাড়িচালকসহ তিনজন সহযোগিতা করেন।

মামলার রায়ে গাড়িচালক বোরহান উদ্দিনকে তিন বছরের সাজা দেয় আদালত। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা সবাই পলাতক রয়েছেন। মামলার ৩০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জন সাক্ষ্য দেন বলে জানান আনছারুজ্জামান জানান।

তিনি বলেন, অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম চৌধুরীর চার মেয়ে ও দুই ছেলের জনক ছিলেন। তার বড় ছেলে মাহমুদ আহমদ চৌধুরী এই মামলার বাদী। বাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন, অ্যাডভোকেট গোলাম এহিয়া চৌধুরী সোহেল।

সিলেটে মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট বদরুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বিভাগীয় বিশেষ আদালতের বিচারক মো.

শাহাদত হোসেন তার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, পৃথিবীতে বাবা-ছেলের মধুর সম্পর্ক থাকে। বৃদ্ধ বয়সে এসে বাবা ছেলের সহায়তা চেয়ে থাকেন। সে অবস্থায় আইনজীবী শামসুল ইসলাম চৌধুরীকে জমিসংক্রান্ত জের ধরে হত্যা করা হয়। এই রায়ের মাধ্যমে নির্মম হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা সাজা পাবেন।

সিলেট বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের পেশকার মো. আহমদ আলী বলেন, মুন্না তার বাবাকে বলেছিলেন, মীরবক্সটুলার বাসার সামনের অংশ তার নামে লিখে দিতে। কিন্তু শাহাদত হোসেন তাতে রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে মুন্না প্রায়ই তাকে মানসিক নির্যাতন করতেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইনজ ব

এছাড়াও পড়ুন:

তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল: সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ রায়ে অসংগতি তুলে ধরে আপিল মঞ্জুরের আরজি

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলে সর্বোচ্চ আদালতের সংক্ষিপ্ত রায় ও পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্যে অসংগতি রয়েছে দাবি করে ১৪ বছর আগে দেওয়া সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল মঞ্জুরের আরজি জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।

বিএনপির মহাসচিবের করা এ-সংক্রান্ত আপিল শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেছেন, সংক্ষিপ্ত রায় ও পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্যে অসংগতি রয়েছে। সংক্ষিপ্ত আদেশের ১৬ মাস পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠের এ রায় আইনের দৃষ্টিতে রায় নয়। আইনগতভাবে তা রিভিউর অপেক্ষা রাখে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে আজ মঙ্গলবার শুনানিতে এ কথা বলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর আজ সপ্তম দিনের মতো শুনানি হয়। আগামীকাল বুধবার আবার শুনানি হবে। গত ২১ অক্টোবর এই শুনানি শুরু হয়।

১৯৯৬ সালে সংবিধানে যোগ হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বাদ পড়ে। তার জন্য সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধন আনা হয়েছিল। ওই সংশোধনের ঠিক আগে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন। সর্বোচ্চ আদালতের ওই রায় হয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে।

গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেন। সেই আবেদনগুলোর ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।

‘ভোটাধিকার হরণ সংকটের কারণ’

বিএনপির মহাসচিবের পক্ষে আপিলের পক্ষে শুনানিতে আজ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুসও অংশ নেন। বিচারপতি খায়রুল হক দেওয়া রায় ‘ব্যক্তিগত ইচ্ছার প্রতিফলন’ দাবি করে তিনি বলেন, রায়ে বলা হয়েছে যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাঁরা জনগণের প্রতিনিধি নন এবং তাঁদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। আবার নির্বাচনের ৪২ দিন আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছেন। অর্থাৎ এই সময়ে অনির্বাচিত সরকার থাকতে পারে। এই রায় স্ববিরোধী। বিচারপতি খায়রুল হক শুধু আদালতের প্রতি নয়, বরং পুরো জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে—ওই রায়ের এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে এই আইনজীবী বলেন, দেশের মানুষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা চালু হওয়ার পর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নির্বাচনে ভোট দিতে পেরেছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে বিদ্যমান যে রাজনৈতিক সংকট, তার অন্যতম কারণ হচ্ছে জনগণকে তার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

রুহুল কুদ্দুস বলেন, যখন কোনো রায় হয়, তা পরবর্তী সময় থেকে কার্যকর হয়। আপিল বিভাগ যে রায়ই দেন না কেন, তা পরবর্তী সময় থেকে কার্যকর হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে, তাতে এই আপিল বিভাগের রায়ের প্রভাব পড়বে না। বরং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল হলে তা তার পরবর্তী নির্বাচন থেকে কার্যকর হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইনজীবীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, মেজবাহউদ্দীন ফরহাদকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান
  • পদে থেকেও নির্বাচন করা যায়: অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান
  • সিলেট চেম্বারের নির্বাচন দাবিতে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন
  • বাংলালিংক পরিদর্শনে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
  • তিন দশক পর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অ্যালামনাইয়ের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি
  • ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী: কে কেন কীভাবে
  • ভালো কাজের বিনিময়ে কারামুক্তি, কেমন আছেন তাঁরা
  • অনলাইন জুয়ায় জড়িতদের মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি সীমিত করার চিন্তা
  • সংবিধানের ৫৩ বছর: বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলের আহ্বান
  • তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল: সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ রায়ে অসংগতি তুলে ধরে আপিল মঞ্জুরের আরজি